শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১২

প্রধানমন্ত্রীকে লুনা, নাটক প্রমাণ করুন


শনিবার, ২১ এপ্রিল ২০১২
স্
টাফ রিপোর্টার: ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী ‘নাটক’ উল্লেখ করায় হতাশা প্রকাশ করেছে তার পরিবার। নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পরও তার সন্ধান না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেছেন, কেউ ‘নাটক’ সাজিয়ে থাকলে তাকে (ইলিয়াস) খুঁজে বের করে নাটক প্রমাণ করতে হবে সরকারকেই। এই দায়িত্ব সরকারের। তিনি বলেন, আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের আশার কথা শোনাবেন। কিন্তু তিনি বলেছেন এই ঘটনা নাকি ‘নাটক’। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আমরা হতাশ। তারপরও বলবো, সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে আমার স্বামীকে খুঁজে বের করতে পারবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমি সরকারের কাছে আমার স্বামীর সন্ধান চাইছি। গতকাল দুপুরে বনানীর ২ নম্বর সড়কের সিলেট হাউজের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটেই এসব কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ইলিয়াস আলী ছেলেমেয়ের খবর নেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। লুনা বলেন, যে জায়গা থেকে গাড়ি পাওয়া গেছে, ওখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। অপরাধীরা এখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে না। তবে এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলেও তো তা খুঁেজ বের করা যায়।
সদ্য ওঠা বনানীর বাসায়ই গতকালও দিনভর অস্থির সময় কাটিয়েছেন লুনা। বাবাকে ফিরে পাওয়ার আশায় পথ চেয়ে আছে ইলিয়াস আলীর তিন সন্তান। তাদের মুখেও ভাষা নেই। আট বছরের সাইয়ারা নাওয়াল অ্যালবামে বাবার ছবি দেখছে আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে। পিতা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে মুখে খাবারও নিচ্ছে না সে। ইলিয়াস আলীর দুই ছেলে আবরার ইলিয়াস অর্ণব ও লাবিব সায়ার পিতার নিখোঁজের পর থেকে যেন অসীম শূন্যতায় নিজেদের ঠিকানা খুঁজছে। অর্ণব নটর ডেম কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পিতা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরীক্ষা নিয়ে তার কোন চিন্তাই নেই। অনেকটা আনমনা হয়ে আছে অর্ণব। একা একা পড়ার টেবিলে বসে থাকছে। গতকাল অর্ণব জানায়, মঙ্গলবার সিলেট থেকে বাসায় এসে তার বাবা পরীক্ষার খোঁজখবর নেন। পরীক্ষা ভাল হয়েছে জানালে তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে বাকি পরীক্ষার জন্য ভাল করে প্রস্তুতি নিতে বলেন। পিতার সঙ্গে এরপর আর কথা হয়নি তার। লাবিব সায়ার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে। পিতা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কথাই বলতে পারছে না লাবিব। ছোট মেয়ে নাওয়াল মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। পিতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ছোট্ট নাওয়াল হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না সে। মাঝেমধ্যে ছবির অ্যালবাম নিয়ে পিতার ছবি দেখছে। আর বাড়ির লোকজনদের তা দেখায়। লোকজনের ভিড় দেখলেই জানতে চায় বাবা এসেছে কি না? গতকালও সকাল থেকে ইলিয়াস আলীর বাসায় দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনরা ভিড় করেন। তারা অনেকে ইলিয়াস আলীর স্মৃতিচারণ করেন। আত্মীয়স্বজনরা সংবাদ মাধ্যমের কাউকে দেখলেই তারা জানতে চান ইলিয়াস আলীর কোন সংবাদ আছে কি না?
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনাও স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রহর গুনছেন। দুপুরে এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথমে জানতে চান ইলিয়াস আলীর কোন খবর আছে কি না গণমাধ্যমের কাছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম চাইলে সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে। তিনি বলেন, তিনি (ইলিয়াস আলী) নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা চেয়ে আছি সরকারের দিকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে খুঁজে বের করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনে মনে হচ্ছে তাকে খুঁজে বের করতে সরকার আন্তরিক নয়। তিনি বলেন, আমার বাচ্চারা তাদের বাবার জন্য পথ চেয়ে আছে। খাবার খাচ্ছে না। চারদিকে নানা আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। তারপরও আমরা আশায় আছি তিনি ফিরে আসবেন।
গতকাল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও সন্তানদের দেখতে দলের বেশ কয়েকজন নেতা ইলিয়াস আলীর বনানীর বাসায় যান। নেতাদের মধ্যে সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম তরিকুল ইসলাম, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা ইলিয়াস আলীর বাসায় যান।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads