শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১২

নির্বাহী কমিটির সভা নিয়ে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ : কার্যকর বিরোধী দলের চেহারায় ফিরতে কৌশল নেবে বিএনপি



মাহাবুবুর রহমান,আমারদেশ ০৭ এপ্রিল ২০১২
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তৃতীয় সভা বসবে আগামীকাল। কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ সভায় দলটির পাঁচ শতাধিক নেতা অংশ নেবেন। গত এক বছরের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা শেষে আগামী দিনে দলের সার্বিক রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হবে।
আগামী ১০ জুনের আল্টি মেটাম সরকার না মানলে কোন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত হবে তা নিয়েও তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। নির্বাহী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণ ও সক্রিয়-নিষ্ক্রিয়দের মূল্যায়নের বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
সরকারের সোয়া তিন বছরের শাসনে রাজপথে কঠোরতা দেখাতে পারেনি প্রধান এই বিরোধী দল। তবে রোডমার্চ ও জনসভার মাধ্যমে অসম্ভব জনপ্রিয়তা দেখিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। রোববারের নির্বাহী কমিটির সভায় তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ নিয়ে আন্দোলনের নতুন নির্দেশনা দেয়া হবে। নবকৌশলে বিএনপি কার্যকর ও শক্তিশালী বিরোধী দলের চেহারায়
ফিরবে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাহী কমিটিতে ফেলে আসা বছরের কর্মকাণ্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। আর সারা দেশ থেকে আসা নেতাদের কাছ থেকে তৃণমূলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর ও ভবিষ্যত্ কর্মসূচি সম্পর্কে মতামত নেয়া হয়। এবারও এভাবেই সবকিছু হবে। তবে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া আগামী ১০ জুনের আল্টিমেটামের বিষয়টি রোববারের সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। আল্টিমেটাম অনুযায়ী সরকার তত্ত্বাবধায়কে ফিরলে কিংবা না ফিরলে বিএনপির পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের পরামর্শ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাকে সামনে রেখে নড়েচড়ে উঠেছেন দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা। দেশজুড়ে নির্বাহী কমিটির সভার বাতাস লেগেছে। পদাধিকার বলে সদস্য ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা শাখার নেতারা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। আজ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা তাদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করবেন।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিল অধিবেশনের পর ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। ২০১০ সালের ৩১ জুলাই নতুন নির্বাহী কমিটির প্রথম এবং ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ জন সদস্য, নির্বাহী কমিটির ৩৮৩ সদস্য, চেয়ারপার্সনের ৩৫ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল এবং ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিরা অংশ নিতে পারবেন।
এদিকে নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দলে পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয় এবং কাজ না করে শুধু ঘোরাঘুরি করেন, এমন নেতাদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৃতীয় সভাকে সামনে রেখে এ তালিকা প্রণয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পদ রক্ষায় সবাই ছুটছেন দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে। ওইদিন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এ তালিকা অনুযায়ীই কেউ কমিটিতে থাকবে কেউ বাদ যাবে। যারা বাদ যাবেন তারা যেন মন খারাপ না করেন। আর যারা থাকবেন তারা নিজ যোগ্যতা বলেই টিকবেন।’
‘বিএনপির নির্বাহী কমিটির শতাধিক নেতা নিষ্কিয়’ সংবাদের প্রতিবাদ : গতকাল দৈনিক আমার দেশ-এর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিএনপির নির্বাহী কমিটির শতাধিক নেতা নিষ্কিয়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন একজন সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক এবং চারজন নির্বাহী সদস্য। তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শাহ শরীফ কামাল তাজ সম্পাদকীয় পদে বিভিন্ন কাজের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ সহ-শ্রমিক বিষয়ক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে শ্রমিক দলের সভাপতি হওয়ায় সেখানে সার্বক্ষণিক দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। হরতালসহ সব কর্মসূচিতেই রাজপথে থাকি।’ নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন খান বরিশালে, অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী সুনামগঞ্জে, ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন ময়মনসিংহে নিজ নিজ সংসদীয় আসনে এবং অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব আদালত অঙ্গনে দলের পক্ষে কাজ করছেন। হরতালসহ সব কর্মসূচিতে তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্রিয় ভূমিকা রাখেন বলে আমাদের প্রতিনিধিরাও জানিয়েছেন।
প্রতিবেদকের বক্তব্য : প্রকাশিত সংবাদে উপদেষ্টা ও সম্পাদকীয় পদে মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর তাদের কার্যক্রমে শিথিলতা কিংবা পুরোপুরি অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। একইভাবে হরতালসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে জাতীয় নির্বাহী শতাধিক নেতার দুর্বল অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads