বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১২

ইলিয়াস আলী গুম : সরকার জড়িত : বিএনপি, প্রতিবাদে আজ সিলেট বিভাগে ও রোববার সারাদেশে হরতাল



স্টাফ রিপোর্টার,আমারদেশ ১৯,০৪,২০১২
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির অবিসংবাদিত নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কোনো এক সময় গাড়িচালক আনসারসহ ইলিয়াস আলী গুম হন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, গোয়েন্দা পুলিশ কেউই সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীকে আটক কিংবা গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেনি। স্বামীর সন্ধান চেয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার খোঁজ করছেন বলে দাবি করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার খবরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো সিলেট বিভাগ। দুর্বার আন্দোলনে গতকাল অচল ছিল সিলেট। ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে সেখানে আজ ডাকা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। হরতালের কারণে সিলেট বিভাগে আজকের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। 
এদিকে দলের নেতা ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপার্সনের উপস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠকে রোববার হরতাল ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৮ দলের জোটের নেতাদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে হরতাল সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 
ওদিকে গতরাত সাড়ে ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ইলিয়াস আলীর বনানীর বাসায় যান। এ সময় তার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন।
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবি করেছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের এজেন্সি ও র্যাবের লোকজন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে। তাকে নেয়ার সময় কিছু মানুষ দেখেছে। তার সন্ধান না পেলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ইলিয়াসের কিছু হলে তার দায় সরকারের ওপরই বর্তাবে। কিন্তু র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে তারা গ্রেফতার করেননি। ইলিয়াস আলী তাদের হেফাজতে নেই। রাতে বিএনপির ৭ এমপি উত্তরায় র্যাব-১-এর কার্যালয়ে যান। র্যাব কর্মকর্তারা তাদের জানান, ইলিয়াস আলী সেখানে নেই। তারা তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ উত্কণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উত্কণ্ঠায় পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। তারা নানাভাবে জানতে চাইছেন এই বিএনপি নেতার খবর। কিন্তু ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে গতরাত পর্যন্ত কোনো সুসংবাদ শোনাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 
ইলিয়াস আলীর পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। রাত দেড়টার দিকে বনানী থানা পুলিশ বাসার অদূরে প্রাইভেটকারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। তখন গাড়িটির দুপাশের দরজা খোলা ছিল। গাড়ি থেকে চালকের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মোবাইল থেকে ফোন করে পুলিশ গাড়ি উদ্ধারের খবর দেয়। এ ঘটনায় গতকাল বনানী থানায় একটি জিডি করেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার তাহসিনা রুশদী লুনা জানান, তার স্বামী ইলিয়াস আলী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি নিয়ে বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সাড়ে ১১টার পর থেকে হঠাত্ তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে চালক আনসারের মোবাইলে ফোন করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর যতবার ফোন করা হয়েছে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এতে তার সন্দেহ হয়। মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ফোন করে খোঁজ নেয়া হয়। কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি। একপর্যায়ে বাসার লোকজন ও ঘনিষ্ঠজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। তারা রাস্তায় বেরিয়ে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। এরই মধ্যে রাত ১টা ৩০ মিনিটে বনানী থানার এএসআই মাহবুব মোবাইল দিয়ে ফোন করে জানতে চান এ নম্বরটি কার। তাহসিনা রুশদী লুনা নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, কী ঘটনা জানতে চান? এএসআই মাহবুব জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার রাস্তায় পড়ে আছে। গাড়ি নম্বর (ঢাকা মেট্রো-২৯-৪৪১৫)। গাড়িতে কোনো লোকজন নেই। কথা শুনেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী রুশদী। এএসআই মাহবুব বলেন, বনানী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পাশে গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। গাড়িতে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বলেন, পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েই বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হয়। পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তিনি বিষয়টি জানান। তিনি দু্রত ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন প্রাইভেটকারটির পেছনের বাঁপাশের দরজা খোলা। পেছনের বাম্পার ভেঙে ঝুলে আছে। গাড়ির পেছনের অংশে অন্য গাড়ি দিয়ে ধাক্কা লাগানোর মতো দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার দাগ রয়েছে। পরে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এএসআই মাহবুব জানিয়েছেন, তিনিসহ বনানী থানার একটি দল রাতে টহল ডিউটি করছিল। একপর্যায়ে বনানী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনের রাস্তায় একটি গাড়ি দেখে সেখানে যান। সেখানে দেখতে পান প্রাইভেটকারটির দরজা খোলা। ভেতরে লোকজন নেই। একটি মোবাইল ফোন চালকের সিটে পড়ে আছে। এ অবস্থায় পুলিশের সন্দেহ হলে পড়ে থাকা মোবাইল ফোনের লিস্ট থেকে একটি নম্বরে ফোন করা হয়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, রাত আনুমানিক ১২টার দিকে সাদা রঙের প্রাইভেটকারটি স্কুলের কাছে পৌঁছলে পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকারটি থামিয়ে দেয়। কয়েকজন সাদা পোশাকধারী লোক প্রাইভেটকারে থাকা ব্যক্তি ও চালককে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। ওই সময় গাড়ির ভেতর থাকা ব্যক্তিরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিত্কারও করেছেন। কিন্তু অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের ভয়ে কেউ এগিয়ে যাননি। ওই গাড়িটির পেছনের একটি গাড়িতে আরও কয়েকজন সাদা পোশাকধারী লোক বসা ছিল। তারা আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান করছিল। তবে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি। 
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ইলিয়াস আলী সপরিবারে বনানী ২/১ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসা সিলেট হাউসের চারতলায় থাকেন। ইলিয়াস আলী গত সোমবার সকালে তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে যান। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, জালালাবাদ ও সদর থানায় দায়ের করা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় হাজিরা দিয়ে বেলা ২টার ফ্লাইটে ঢাকা ফিরে আসেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বাসায় ছিলেন। রাতে পূর্বনির্ধারিত বিএনপির বৈঠকে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হন; কিন্তু ওই বৈঠকে তিনি যাননি। 
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে গুম করেছে। গুম হওয়ার স্থানটিও বাসার কাছাকাছি। ঘটনার সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শী না রাখার জন্য চালক আনসারকেও গুম করা হয়েছে। গাড়িতে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। চালকের মোবাইল পাওয়া গেলেও ইলিয়াস আলীর মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। 
গতকাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাহসিনা বলেন, আমার স্বামী মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতেন। তিনি অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন। মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক ছিল। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। সবার সামনে থেকে এভাবে একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষকে ধরে নিয়ে যাবেতা বিশ্বাস করতে পারছি না। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, তিনি স্বজন হারানোর বেদনা বোঝেন। তাই তার কাছে বিনীত নিবেদন, তিনি যেন আমার স্বামীর দ্রুত খোঁজ দেন। সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে নিখোঁজ মানুষের সন্ধান দিতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গতকাল ইলিয়াস আলীর সিলেট হাউস নামের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বাসার প্রধান মানুষটি বের হয়ে গুম হওয়ায় তারা চরম উদ্বিগ্ন। তিনি কোথায়, কী অবস্থায় আছেন কেউ জানে না। কারা, কী কারণে ইলিয়াস আলীকে আটক করেছেকেউ কোনো কিছু বলতে পারছে না। ইলিয়াস আলীর বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তাহমিনা আক্তার বলেন, তার ভাইয়ের ব্যক্তিগত কোনো শত্রু নেই। কখনও কেউ তাকে হুমকিও দেয়নি। রাজনৈতিক কারণে তার সঙ্গে অনেকেরই শত্রুতা থাকতে পারে। তিনি কখনও নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করেননি। তিনি এমন ঘটনার শিকার হবেন এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেননি। তার যদি এমন ভয় থাকত তাহলে একা চলাফেরা করতেন না। তার একা বের হওয়ার সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে গুম করা হয়েছে।
ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এম ইলিয়াস আলী। তিনি সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য নেতা। তার নেতৃত্ব সিলেটে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সিলেটের প্রাণ সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উজানে ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে তিনি তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। এছাড়া অপদখলীয় ভূমি হস্তান্তরের নামে বাংলাদেশের জমি ভারতের কাছে তুলে দেয়া, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জমি দখল, সিলেটের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন ইলিয়াস আলী। এসব কারণে তিনি সরকারের রোষানলে পড়েন ও টার্গেটে পরিণত হন। এছাড়া ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কোনো শত্রুতা তার রয়েছে বলে কেউ জানাতে পারেনি। 
থানায় জিডি : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ঘটনায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বনানী থানায় একটি জিডি করেছেন। পরে তিনি মামলা করবেন বলে জানান। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার স্বামী এম ইলিয়াস আলী (সাবেক সংসদ সদস্য) সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। পিতা মরহুম ওয়াসিব আলী এ/পি, বাসা নম্বর-৩, রোড ২/১ বনানী আবাসিক এলাকা। স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম-রামধান, থানা বিশ্বনাথ, জেলা সিলেট। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টা ৪৫ মিনিটে নিজ বাসা বনানী থেকে চালক আনসারকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৪৪১৫ যোগে বাসা থেকে হয়ে যান। রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের সময় বনানী থানা থেকে জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-মেট্রো গ-২৯-৪৪১৫ নম্বর একটি গাড়ি আমাদের থানায় উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়িটি আপনাদের কিনা? আমি গাড়ির নম্বর শোনার পর বলি গাড়িটি আমাদের। আমি এ ঘটনা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি এবং বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে আমার স্বামী এম ইলিয়াস আলী ও চালক আনসারের সন্ধান না পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার স্বামী এম ইলিয়াস আলীকে না পাওয়ার বিষয়টি জানাই। আমি এখন পর্যন্ত আমার স্বামী এম ইলিয়াস আলী ও চালক আনসারের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না।
নানা রকম বক্তব্য : এদিকে সকাল থেকেই বিভিন্নস্থান থেকে আমার দেশ কার্যালয়ে ফোন করে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন। একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, র্যাব সদস্যরা ইলিয়াস আলীকে বনানী থেকে আটক করে নিয়েছে। আবার অপর একটি সূত্র জানায়, তাকে আটক করে র্যাব-১-এ নিয়ে রাখা হয়েছে। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে নিয়েছে বলেও তথ্য দেয়া হয়। এসব তথ্য কতটুকু সত্য তা জানতে র্যাবকে ফোন করলে র্যাবের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য : ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার বিষয়ে গুলশান জোনের পুলিশের ডিসি চৌধুরী লুত্ফুল কবীর জানান, ‘আমরা বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ব্যাপারে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডির তদন্ত করার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করছে।বনানী থানার ওসি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়িচালকের ঘটনার তদন্ত চলছে। তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে ওসি সংবাদমাধ্যমেরও সহযোগিতা চেয়েছেন।গতকাল এ বিষয়ে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী তাদের হেফাজতে নেই। থানা পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি। তবে তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে এবং গাড়িচালককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। 
র্যাব অফিস থেকে হতাশ হয়ে ফিরেছি ৭ এমপি : উত্তরা র্যাব-১-এর অফিস থেকে ফিরে এসে বিএনপির ৭ এমপি বলেছেন, তারা হতাশ হয়ে ফিরেছেন। র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী সেখানে নেই। খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ইলিয়াস আলী র্যাব-১-এর অফিসে আছেন। এমপিরা জানান, র্যাব কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এমপিদের মধ্যে ছিলেন শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আখতার, রেহানা আকতার রানু ও নিলুফার চৌধুরী মণি।
শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জানান, র্যাব অফিস থেকে ফিরে এসে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তারা বিষয়টি অবহিত করেছেন।
র্যাবের বক্তব্য : ইলিয়াস আলীকে র্যাব গ্রেফতার করেনি বলে দাবি করেছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। র্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমান বলেন, র্যাব ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি। র্যাবের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। র্যাব কাউকে গোপনে আটক করে রাখে না বলে দাবি করেন মোখলেছুর রহমান। এদিকে র্যাব-১ থেকে জানানো হয়, এটা গুজব। র্যাব ইলিয়াস আলীকে গ্রেফতার করেনি। 
ইলিয়াস নিখোঁজের বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ও র্যাবের মুখপাত্র এম সোহায়েল গতরাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইলিয়াস আলীকে র্যাব গ্রেফতার কিংবা আটক করেনি। তার নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর র্যাব নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই তদন্ত শুরু করেছে।এজন্য র্যাবের একটি বিশেষ দল কাজ করছে বলে জানান তিনি। কাজের অগ্রগতি শীর্ষ কর্মকর্তাদের সময় সময় অবহিত করতে হচ্ছে। 
অন্যান্য সংস্থা : এছাড়া এনএসআই, সিআইডি, ডিজিএফআইসহ প্রায় সব গোয়েন্দা সংস্থার সম্ভাব্য কর্মকর্তাদের কাছে খোঁজ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউই ইলিয়াস আলীর বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। সবাই বলছেন, তারা মিডিয়ার মাধ্যমে গুম হওয়ার বিষয়ে জেনেছেন। 
দেশ-বিদেশে উত্কণ্ঠা : প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ঘটনায় সারাদেশের মানুষের মধ্যে যেমন উত্কণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি প্রবাসীদের মধ্যেও উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ পত্রিকা অফিসে ও সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে ইলিয়াস আলীর খবর জানতে চান। কারা কী উদ্দেশ্যে ইলিয়াস আলীকে গুম করেছেএসব বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, এমনকি গ্রামের মানুষও ফোন করে ইলিয়াস আলীর খবর জানতে চান এবং তাদের উদ্বেগের কথা জানান। 
এদিকে ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার খবরে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সিলেটের বাসিন্দা অধ্যুষিত লন্ডন থেকে সর্বাধিক ফোন আসে পত্রিকা অফিসে। এছাড়া নিউইয়র্ক, সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম, মক্কা, মদিনা, কাতার, ওমান, দুবাই থেকে ফোন করে ইলিয়াস আলীর খবর জানতে চাওয়া হয়। মালয়েশিয়া, স্পেন, সিঙ্গাপুরসহ যেখানেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন, সেখান থেকেই ফোন করে ইলিয়াস আলীকে পাওয়া গেছে কিনা, কেন কী কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছেএসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। 
রোববার সারাদেশে হরতাল : ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এবং তার সন্ধানের দাবিতে আগামী রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল ডেকেছে বিএনপি। গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এছাড়া আজ ঢাকা মহানগরসহ সব বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে এবং শনিবার ঢাকা মহানগরের সব থানাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি সফল করতে নতুন গঠিত ১৮ দলীয় জোটও নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করবে বলে আশা করছেন মির্জা ফখরুল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা। 
আজ সিলেটে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত : আজ অনুষ্ঠিতব্য সিলেট বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীন সারাদেশের এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান গতকাল এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপি আজ সিলেট অঞ্চলে হরতাল ডেকেছে। মূলত এ কারণেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ : ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কথা বলতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে দেখা করবে। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কথা বলবে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। 
বিভিন্ন শহরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ
ইলিয়াস আলীর সন্ধান না দিলে চট্টগ্রাম অচল করে দেয়া হবে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের হুশিয়ারি : সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধান না দিলে চট্টগ্রাম অচল করে দেয়া হবে। ঢাকায় বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের মতো সিলেটের ইলিয়াস আলীকে গুম করার উদ্দেশ্যে সরকার তুলে নিয়ে গেছে। শেখ মুজিবের শাসনামলের মতো বর্তমানেও শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলের রাজনীতি ও নেতাদের নির্মূল করতে গুম-খুন করে যাচ্ছে। 
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতাদের গুম-খুন করে হাসিনা সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে বর্বর সরকারকে বিদায় জানানো হবে। 
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দিতে হবে রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতারা : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার খবরে রাজশাহী মহানগর বিএনপি গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দুপুরে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ও নগর যুবদল আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিশাল মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেববাজারে সমাবেশ করে। 
অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, আসলাম সরকার, ওয়ালিউল হক রানা, ছাত্রদল নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট, মাহফুজুর রহমান রিটন প্রমুখ। 
গণতন্ত্রের লেবাসে আওয়ামী লীগ নািসবাদ কায়েম করেছে খুলনায় বিএনপি নেতারা : এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খুলনা বিএনপি নেতারা সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, গণতন্ত্রের লেবাসে আওয়ামী লীগ নািসবাদ কায়েম করেছে। বিরোধী দলের রোডমার্চ কর্মসূচির সূচনায় সিলেটে সফল আয়োজন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিকের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলা, সর্বোপরি এ জালিম সরকারের মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছিলেন ইলিয়াস আলী। যে কারণে দুদকের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে দমন করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গুম করা হয়েছে। মহাজোট সরকারের সোয়া তিন বছরের শাসনামলে হত্যা, গুম, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অপশাসন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। খুলনা বিএনপি নেতারা অনতিবিলম্বে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, এভাবে দুঃশাসন কায়েম করে ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকা যাবে না।
অবিলম্বে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলন বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে গুমের প্রতিবাদে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা এবং মহানগর বিএনপি। এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ইলিয়াস আলী গুম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়। 
ময়মনসিংহে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল ময়মনসিংহে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন।
শেরপুরে আহত ১৩ : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে শেরপুর জেলা বিএনপির মিছিলে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেলসহ ১৩ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এক সাংবাদিক ও পুলিশ কনস্টেবল এ সময় আহত হন। পুলিশ ঘটনার পর দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads