বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১২

কঠিন শর্তে আইএমএফ-এর ১০০ কোটি ডলার ঋণ



শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল ২০১২
মানবজমিন ডেস্ক: কঠিন শর্ত মেনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল আইএমএফ-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশের জন্য ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এই ঋণ অনুমোদন করেছে। এ বিষয়টি এক বছর ঝুলে থাকার পর পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঋণের অর্থ তিন বছরের মধ্যে কয়েক ধাপে ছাড় করা হবে। এর প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশ পাবে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। লেনদেন ভারসাম্য নিয়ে সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশ সরকার এক বছরের বেশি সময় ধরে আইএমএফ-এর এই ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে বাংলাদেশের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আইএমএফ বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, অবস্থান সুসংহত করে আরও এগিয়ে নেয়া এবং প্রবৃদ্ধির ধারা আরও শক্তিশালী করার কাজে সহযোগিতা দিতেই বাংলাদেশকে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। বিডিনিউজ জানায়, আইএমএফ-এর ‘প্রেসক্রিপশন’ মেনে সরকার গত এক বছরে কয়েক দফা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরও বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় এ দাতা সংস্থা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ বলে- জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সারের দাম সমন্বয়ে বিলম্ব এবং আমদানি ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় আর্থিক খাত ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। পরিচালনা পর্ষদের সভার পর আইএমএফ-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে থাকা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নায়োকি শিনোহারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম ও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের সংকুলানমুখী মুদ্রানীতির কারণে ২০১০ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে ঋণ পাওয়ার তিন বছরে সরকারকে দেশের আর্থিক খাতে গতিশীলতা আনা, সম্পদের সংগ্রহ বাড়ানো, সামাজিক ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ঘাটতি কমিয়ে আনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য চারটি খাতে সংস্কার চালাতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এই চারটি খাত হলো- আর্থিক নীতি, মুদ্রানীতি ও বিনিময় হার, আর্থিক খাত ও বিনিয়োগ খাত। আইএমএফ-এর ঋণ অনুমোদনের খবরে গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, আইএমএফ এই অনুমোদন দেয়ার ফলে অন্য দাতা সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে। এর ফলে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই ঋণের অর্থ দিয়ে লেনদেন ভারসাম্য অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। ফলে আন্তর্জাতিক ঋণমান সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। আইএমএফ-এর পূর্বাভাস ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ধারণা, এই হার হবে ৬.২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করেছে। আইএমএফ-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ভর্তুকি এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে বড় মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতির কারণে সরকারের আর্থিক খাত চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে, সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে, উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন অব্যাহত থাকলে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও আগামী অর্থবছর থেকে চাপ কাটিয়ে উঠতে শুরু করবে বলে আইএমএফ-এর ধারণা। নায়োকি শিনোহারা বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে নীতি ও কাঠামোর সময়োচিত সংস্কার করা হচ্ছে কিনা- তার ওপর। আইএমএফ-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১২ সালের শেষ ভাগে মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসতে পারে, গত মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী যা ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বিনিময় হার আরও শিথিল করে নীতি বাস্তবায়নে কঠোর হলে ২০১৩ নাগাদ লেনদেন ভারসাম্য উদ্বৃত্তে পৌঁছাতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads