শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১২

আবার টাকার লিপ্সায় পেয়েছে এরশাদকে!




টাকার লিপ্সায় পেয়ে বসেছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম দিনেই তাকে দেয়া হয়েছে একটি ব্যাংক। এরশাদকে দেয়া ইউনিয়ন ব্যাংক নামে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে শহিদুল আলম। সঙ্গে এরশাদ সরকারের কাছে বিদেশি দুটি বিমান সংস্থার জিএসএ (জেনারেল সেলস এজেন্ট বা বিক্রয় প্রতিনিধি) ব্যবসা চেয়েছেন। আগেই এ বিষয়ে আবেদন করলেও ব্যবসাটি বাগিয়ে নিতে সম্প্রতি সরকারের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি করেছেন এরশাদ।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত বছরের ৬ জুন পাঠানো পত্রে এরশাদ অভিযোগ করেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে তাকে জিএসএ ব্যবসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। যদিও তদন্তে দেখা গেছে, বিদেশি এয়ারলাইনস তার জিএসএ কাকে নিয়োগ করবে, তা ওই প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। এতে বাংলাদেশ সরকার, সিভিল এভিয়েশন বা মন্ত্রণালয়ের কিছু করণীয় নেই। তার পরও এরশাদের আবদার তাকে এই ব্যবসা দিতে হবে।
এরশাদ চিঠিতে দাবি করেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে ইত্তেহাদ এয়ারলাইনস ও এয়ার আরাবিয়ার জিএসএ হওয়ার জন্য এরশাদকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এরপর তিনি বিমান সংস্থা দুটির অবতরণ অনুমতির জন্য তত্কালীন বিমানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তখন বাংলাদেশ বিমান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (সিভিল এভিয়েশন) আপত্তির কারণে সেটা আর হয়নি। পরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইনস দুটির জিএসএ পায়। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির (সিএমইউ) আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এমিরেট এয়ারলাইনস, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ ও এয়ার এরাবিয়াকে তাদের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা হিসেবে মনোনয়ন করে। এতে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজকে ২০০৬ সালের ১ মার্চ ঢাকা-আবুধাবি-ঢাকা রুটে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি এয়ার এরাবিয়াকে চট্টগ্রাম-শারজাহ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ভূতপূর্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহোদয়ের এয়ার এরাবিয়া কিংবা ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের জিএসএ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কোনো তথ্য অত্র কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তদুপরি তিনি কখনও জিএসএ হিসেবে নিয়োগ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা তথ্যও অত্র কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করেন নাই।’
কমিটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে জিএসএ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার অধিকার একমাত্র সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাই রাখে। এরশাদ হঠাত্ করে বিদেশি বিমান সংস্থার জিএসএ পেতে কেন তত্পর হয়েছেন তার রহস্য এখনও জানা যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরশাদকে নানা প্রলোভন দিয়ে মহাজোটে ভেড়ানো হয়েছিল। তাকে রাষ্ট্রপতি করা, রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদায় বিশেষ দূত করা ইত্যাদি অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনোটিরই শিকা ছেঁড়েনি এরশাদের পক্ষে। এতে এরশাদ উচ্ছৃংখল আচরণও শুরু করেন। মহাজোটের বিরুদ্ধে ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিতে শুরু করেন। পরে আবার ব্যাংক দেয়াসহ এরশাদকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে সুবোধ বালকের মতো চুপসে যান এরশাদ। তিনি এখনও নানান আবদার অব্যাহত রেখেছেন শেখ হাসিনার কাছে।
রসিক পাঠক এরশাদের সমালোচনা করে বলেন, রাজনীতির অপর নাম যে ব্যবসা, এ কথাটি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। মান-সম্মানের মাথা খেয়ে শেষমেশ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। নতুন ধান্ধা নতুন লিপ্সা তাকে পেয়ে বসেছে। মনমানসিকতা হয়েছে আরও টাকা কামাতে হবে। নতুন ব্যাংক হয়েছে। এর পর হবে ঢাউস ব্যবসা।
তারা সমালোচনা করে আরও বলেন, রাজনীতির জোরে সরকারি ট্যাক্স না দিলেও হবে, তাই এরশাদ লাভজনক এসব ব্যবসা নিতে চাইছেন। সব দিক থেকেই সুবিধা আর সুবিধা। তার ওপর মহাজোটের সরকার। একেবারে ধরাছোঁয়ারই বাইরে তিনি। সমালোচকরা বলেন, এরশাদ ও মহাজোটের মন্ত্রী-এমপিদের নীতি-নৈতিকতা যেন হারিয়েই গিয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মা আজ করুণ নেত্রে চেয়ে আছে। এ জন্যই কি একদিন তারা প্রাণ দিয়েছিল? এসব লোভী নারীলিপ্সু-অর্থলিপ্সু ব্যক্তিদের জন্য? ধিক্কার তাদেরকে, ধিক্কার তাদের রাজনীতিকে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads