বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

রাজনৈতিক পরিচয়ে সন্ত্রাস মানুষ দুর্বিষহ শিকার


সন্ত্রাসীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। প্রকৃতপক্ষে তারা দেশ ও জনগণের শত্রু। জনগণের জানমালের হেফাজত ও নিরাপত্তার জন্য সবার পক্ষ থেকে তাদের প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি কাম্য। কোনো গোষ্ঠী বা গ্রুপ এদের প্রশ্রয় দিলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস'া নিতে কোনো ধরনের কসুর করা উচিত নয়। এ ধরনের পরিসি'তিতে সন্ত্রাসীরা কোনো রকমেই বুক উঁচিয়ে চলতে পারে না। তাদের ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক কার্যক্রম কেবল গোপনে চলতে পারে বা একেবারেই সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে এর ঠিক উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা আজ বুক ফুলিয়ে খুন, রাহাজানি ও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ একেবারেই অসহায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে সন্ত্রাসীদের তটস' থাকার কথা হলেও দুঃখজনক হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের ভয়ে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাই উল্টো তটস' থাকে। নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে প্রকাশ, সন্ত্রাসীদের এ বেপরোয়া উপসি'তি সম্ভব হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচিতি ব্যবহারের কারণে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সময়ে কিভাবে সন্ত্রাসীদের পোয়াবারো হতে পারে? 
চাঁদাবাজি, মানুষকে হুমকি-ধমকি, ছিনতাই ও খুন করছে সন্ত্রাসীরা। ধানমন্ডি এলাকায় এক ডেভেলপার কোম্পানির মালিক সমপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন। তার প্রতিষ্ঠানে এসে এক যুবক নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় তার ভবনের কাজ বন্ধ করে দেয় ওই যুবক। ওই ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে ওই যুবকের নিজের দেয়া নাম প্রকাশ করেছে। রাজধানীতে খোদ সরকারদলীয় নেতা খুন হওয়ার পর অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেছে। অবিশ্বাস্যভাবে এখানে সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টি বিচারের ক্ষেত্রে কাজ করেছে। পুলিশ এদের সমীহ করে চলছে। পরিসি'তি এমন হয়েছে তারা এখন সরকারি দলের লোক পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এমনকি নিজ দলের লোক ও পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়েও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকারদলীয় লোক পরিচয় দেয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে ভয় পায়। এ ধরনের অনুকূল পরিসি'তিতে রাজধানীতে পেশাদার সন্ত্রাসীর সংখ্যা বাড়ছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলোও এরূপ তথ্য দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেক উঠতি মাস্তানও রয়েছে, কয়েক বছর আগে যাদের নাম- নিশানাও ছিল না।
সমপ্রতি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশ সদস্যরা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাধারণ ডায়েরি হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সাহস পাচ্ছে না। তারা প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি থানায় গিয়েও আড্ডা মারছে। কিন' পুলিশ তাদের কিছুই বলতে পারছে না। গণতান্ত্রিক সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন হওয়ার কথা। তাহলে এ ধরনের পরিসি'তিকে কিভাবে গণতান্ত্রিক বলা যেতে পারে?
রাজধানীসহ সারা দেশে অসংখ্য খুন ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। এগুলোর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তারকা সাংবাদিক জুটি হত্যার পর বিদেশী কূটনীতিক হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে সবাই। এ ধরনের হাইপ্রোফাইল ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো কূলকিনারা হয়নি। এগুলো আইনশৃঙ্খলা পরিসি'তির বিপর্যয়ের উদাহরণ। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের পোয়াবারো অবস'াও এর থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সন্ত্রাসীরা অবাধে কর্মকাণ্ড চালাবে কি না, সে বিষয়ে। অপরাধকারীদের কোনো দল নেই- সরকারকে এই নীতিতে অটল থাকতে হবে। তবেই পরিসি'তির উন্নতি সম্ভব।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads