রাজনীতিতে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ দল বিএনপি ৩৪ বছর পূর্ণ করল। আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলটি ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭৮ সালের এই দিনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন উপস্থাপন করে ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ১৯ দফা ছিল মূলত উন্নয়ন ও উত্পাদনের রাজনীতির একটি কর্মসূচি। তিন দশকেরও বেশি সময়
ধরে বিকশিত হয়ে বিএনপি এখন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৫টি সরকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে বিএনপি বরাবরই দেশের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি বেশকিছু বড় ধরনের সঙ্কট মোকাবিলা করে আসছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি চক্রান্তে দেশকে রাজনীতিকশূন্য করার ধারাবাহিকতায় যে নির্যাতনের স্টিমরোলার চলে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশিসংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া দল আওয়ামী লীগের দলীয় ও প্রশাসনিক নির্যাতনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দলটির শীর্ষ থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পরও ক্ষমতাসীন দলকে সরকার পরিচালনায় সহযোগিতার নীতি ঘোষণা করেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। তার এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই নজিরবিহীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় বিএনপি। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনেই যোগ দেয় তারা। কিন্তু একের পর এক হামলা-মামলা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সরকারি দলের অসৌজন্যমূলক বক্তব্য সংসদ অধিবেশনে না যাওয়ার দিকেই ঠেলে দেয় বিএনপিকে। মীমাংসিত বিষয় খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির লিজ বাতিল করে দেয়া, সংসদে বিরোধী দল উপস্থিত না থাকলেও জিয়াউর রহমানের লাশ শেরেবাংলা নগরের মাজারে নেই বলে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের আস্ফাালন এবং খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দেয়ার বিষয়গুলো বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়। সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার সফল হোক, আমরা চাই। সেজন্য এক বছরের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কোনো কর্মসূচি দেইনি। গত মঙ্গলবার বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে দু’মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে। এ কর্মসূচিকে অনেকেই নরম কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছে। তবে বিএনপি বলেছে, কর্মসূচির নামে জনগণকে অযথা কষ্টা দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু নরম কর্মসূচিবর অর্থ এই নয় যে, আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়া; বরং এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জনগণকে আমাদের দাবির সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে পারব। তারপরই হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। তবে দেশ ও জনগণ শান্তিতে নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের তাণ্ডব এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দেশ বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে চলে গেছে। এতে আমাদের কর্মসূচি দেয়া ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নেই। এরপরই বিএনপি একদিনের হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ হরতাল ছিল স্মরণকালের সফলতম। বিরোধী দল যাতে সরকারবিরোধী আর কোনো সফল কর্মসূচি করতে না পারে, তার জন্য দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের এমন দমন-পীড়ন নতুন কিছু নয়। তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আনুকূল্যে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি সংস্কারপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি করে দলকে দুই ভাগে বিভক্তের চক্রান্ত হয়। এ কাজে সমর্থন দেয় নির্বাচন কমিশন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের অ্যাফিডেভিট, এমনকি কারাগার থেকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ইসিকে চিঠি দেয়ার পরও দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সংলাপের জন্য চিঠি দেয়া হয়নি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে স্থায়ী কমিটির নামে বৈঠক করে বিএনপির আলাদা কমিটি করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এ কমিটি আখ্যা পায় ‘সংস্কারপন্থীদের কমিটি’ হিসেবে। ঘরোয়া রাজনীতি চালু করার পর সব রাজনৈতিক দলের অফিস খোলার অনুমতি পেলেও বিএনপির অফিস দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রেখে সংস্কারপন্থীদের হাতে অফিসের চাবি তুলে দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবাদ করার পরও দলটি যেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভালো করতে না পারে, সেজন্য জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, প্রশাসনের বিমাতাসুলভ আচরণ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের মূল কারণ। এর আগেও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বেশ কয়েকবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর দলকে দুর্বল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদও বিএনপিকে ধ্বংস করতে তত্পর হয়ে ওঠে। দলে অন্তত তিনবার ভাঙন সৃষ্টি করে অনেক নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এমন এক সঙ্কটময় মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনীতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক ছিল না—শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসে। তার আপসহীন নেতৃত্বে একদিকে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধে, অন্যদিকে দল প্রতিষ্ঠিত হয় একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। ’৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো দলটি ক্ষমতায় যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যায় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাস করার কিছুদিন পরই সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। একই বছরের ১২ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে যে ষষ্ঠ সংসদ গঠিত হয় তাতে বিএনপি প্রথমবারের মতো বিরোধীদলের আসনে বসে। এ সংসদে ১১৬টি আসন নিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বিরোধীদলের মর্যাদা পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়।
এ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। ওই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়।
বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপি তার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৩১ আগস্ট প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও দোয়া করা হবে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। একই দিন মহানগর বিএনপির উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হবে।
বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশব্যাপী বিএনপির জেলা, মহানগর, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলো স্ব-স্ব উদ্যোগে বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন এবং যথাসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
খালেদা জিয়ার বাণী : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল এক বাণীতে দলের দেশে বিদেশে অবস্থানরত সব সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাদের অব্যাহত সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বাণীতে তিনি বলেন, আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তিনি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কিংবা প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে যেসব নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন এবং যারা স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা হয়। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তত্পর, যখন দেশের তত্কালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতাত্তোর তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজককালে সিপাহি জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উত্পাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন।
তিনি বলেন, আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন, নির্যাতনের মহোত্সব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করে নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে নিপীড়িত জনমানুষের আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথও রুদ্ধ। প্রশাসন হয়ে পড়েছে স্থবির। এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বিএনপি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জনগণের অধিকার আদায়ে, তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি আবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার যে নীল নকশা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাকে প্রতিহত করতে সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। আজকের এ শুভদিনে সেই দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণের জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
অনুরূপভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
১৯৭৮ সালের এই দিনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন উপস্থাপন করে ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ১৯ দফা ছিল মূলত উন্নয়ন ও উত্পাদনের রাজনীতির একটি কর্মসূচি। তিন দশকেরও বেশি সময়
ধরে বিকশিত হয়ে বিএনপি এখন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৫টি সরকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে বিএনপি বরাবরই দেশের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি বেশকিছু বড় ধরনের সঙ্কট মোকাবিলা করে আসছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি চক্রান্তে দেশকে রাজনীতিকশূন্য করার ধারাবাহিকতায় যে নির্যাতনের স্টিমরোলার চলে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশিসংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া দল আওয়ামী লীগের দলীয় ও প্রশাসনিক নির্যাতনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দলটির শীর্ষ থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পরও ক্ষমতাসীন দলকে সরকার পরিচালনায় সহযোগিতার নীতি ঘোষণা করেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। তার এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই নজিরবিহীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় বিএনপি। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনেই যোগ দেয় তারা। কিন্তু একের পর এক হামলা-মামলা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সরকারি দলের অসৌজন্যমূলক বক্তব্য সংসদ অধিবেশনে না যাওয়ার দিকেই ঠেলে দেয় বিএনপিকে। মীমাংসিত বিষয় খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির লিজ বাতিল করে দেয়া, সংসদে বিরোধী দল উপস্থিত না থাকলেও জিয়াউর রহমানের লাশ শেরেবাংলা নগরের মাজারে নেই বলে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের আস্ফাালন এবং খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দেয়ার বিষয়গুলো বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়। সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার সফল হোক, আমরা চাই। সেজন্য এক বছরের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কোনো কর্মসূচি দেইনি। গত মঙ্গলবার বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে দু’মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে। এ কর্মসূচিকে অনেকেই নরম কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছে। তবে বিএনপি বলেছে, কর্মসূচির নামে জনগণকে অযথা কষ্টা দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু নরম কর্মসূচিবর অর্থ এই নয় যে, আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়া; বরং এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জনগণকে আমাদের দাবির সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে পারব। তারপরই হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। তবে দেশ ও জনগণ শান্তিতে নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের তাণ্ডব এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দেশ বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে চলে গেছে। এতে আমাদের কর্মসূচি দেয়া ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নেই। এরপরই বিএনপি একদিনের হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ হরতাল ছিল স্মরণকালের সফলতম। বিরোধী দল যাতে সরকারবিরোধী আর কোনো সফল কর্মসূচি করতে না পারে, তার জন্য দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের এমন দমন-পীড়ন নতুন কিছু নয়। তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আনুকূল্যে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি সংস্কারপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি করে দলকে দুই ভাগে বিভক্তের চক্রান্ত হয়। এ কাজে সমর্থন দেয় নির্বাচন কমিশন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের অ্যাফিডেভিট, এমনকি কারাগার থেকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ইসিকে চিঠি দেয়ার পরও দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সংলাপের জন্য চিঠি দেয়া হয়নি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে স্থায়ী কমিটির নামে বৈঠক করে বিএনপির আলাদা কমিটি করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এ কমিটি আখ্যা পায় ‘সংস্কারপন্থীদের কমিটি’ হিসেবে। ঘরোয়া রাজনীতি চালু করার পর সব রাজনৈতিক দলের অফিস খোলার অনুমতি পেলেও বিএনপির অফিস দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রেখে সংস্কারপন্থীদের হাতে অফিসের চাবি তুলে দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবাদ করার পরও দলটি যেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভালো করতে না পারে, সেজন্য জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, প্রশাসনের বিমাতাসুলভ আচরণ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের মূল কারণ। এর আগেও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বেশ কয়েকবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর দলকে দুর্বল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদও বিএনপিকে ধ্বংস করতে তত্পর হয়ে ওঠে। দলে অন্তত তিনবার ভাঙন সৃষ্টি করে অনেক নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এমন এক সঙ্কটময় মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনীতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক ছিল না—শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসে। তার আপসহীন নেতৃত্বে একদিকে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধে, অন্যদিকে দল প্রতিষ্ঠিত হয় একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। ’৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো দলটি ক্ষমতায় যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যায় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাস করার কিছুদিন পরই সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। একই বছরের ১২ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে যে ষষ্ঠ সংসদ গঠিত হয় তাতে বিএনপি প্রথমবারের মতো বিরোধীদলের আসনে বসে। এ সংসদে ১১৬টি আসন নিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বিরোধীদলের মর্যাদা পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়।
এ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। ওই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়।
বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপি তার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৩১ আগস্ট প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও দোয়া করা হবে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। একই দিন মহানগর বিএনপির উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হবে।
বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশব্যাপী বিএনপির জেলা, মহানগর, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলো স্ব-স্ব উদ্যোগে বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন এবং যথাসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
খালেদা জিয়ার বাণী : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল এক বাণীতে দলের দেশে বিদেশে অবস্থানরত সব সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাদের অব্যাহত সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বাণীতে তিনি বলেন, আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তিনি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কিংবা প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে যেসব নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন এবং যারা স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা হয়। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তত্পর, যখন দেশের তত্কালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতাত্তোর তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজককালে সিপাহি জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উত্পাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন।
তিনি বলেন, আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন, নির্যাতনের মহোত্সব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করে নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে নিপীড়িত জনমানুষের আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথও রুদ্ধ। প্রশাসন হয়ে পড়েছে স্থবির। এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বিএনপি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জনগণের অধিকার আদায়ে, তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি আবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার যে নীল নকশা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাকে প্রতিহত করতে সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। আজকের এ শুভদিনে সেই দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণের জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
অনুরূপভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন