সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১২

আগামী সংসদ নির্বাচন ভোটিং মেশিনে হচ্ছে না : কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর কী হবে



রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটা অভিনন্দনযোগ্য। এর ফলে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান ঘটবে। পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহলের জোরালো আপত্তি সত্ত্বেও কেন যে ইভিএমের সাহায্যে ভোটগ্রহণের জন্য গোঁ ধরেছিল তা তারাই ভালো জানে। এর পেছনে টাকার শ্রাদ্ধও কম হয়নি। শেষ পর্যন্ত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ইভিএম বিতর্কের ইতি ঘটবে বলে আশা করা যায়। রোববার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দিন আহমদ ইভিএম প্রসঙ্গ ছাড়া আরও জানিয়েছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ঈদের পরই নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান ও ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রাপ্ত আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে হালনাগাদ ভোটার তালিকার কাজ শেষ এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী অক্টোবর মাসে নির্বাচনী আইন সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশন।
এ তো গেল একটা দিক। ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলেছেন। সংশোধিত সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ গঠনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। অর্থাত্ একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জাতি মেনে নিয়েছে। সুতরাং সে অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী যে জাতি মেনে নিয়েছে, একথা নির্বাচন কমিশন জানল কীভাবে। জাতির পক্ষ থেকে কি কেউ এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে এটা মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে এসেছে? বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর ক্রমাগত সমালোচনা করছে, আন্দোলন করছে, এগুলো কি নিছক ছেলেখেলা? নির্বাচন কমিশন কি জানে না স্বয়ং অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব পঞ্চদশ সংশোধনীতে ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করেছেন? মহাজোটের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা রাশেদ খান মেনন এমপিও সংসদে দাঁড়িয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর নানা ভুলত্রুটি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এরপরও নির্বাচন কমিশন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জাতি মেনে নিয়েছে—এমন সিদ্ধান্তে কীভাবে উপনীত হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আরও একটা কথা আছে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ কমিশনের সদস্যদের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার আছে কিনা বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। জাতি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মেনে নিয়েছে অথবা মেনে নেয়নি—এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক বক্তব্য। রাজনৈতিক নেতারা এ নিয়ে কথা বললে মানায়। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত কেউ যদি রাজনীতিকদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে নিজেরা রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে শুরু করেন, তবে কিন্তু ভয়ের কথা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads