হা সা ন হা ফি জ
বাংলার মাটিতে চাঁদাবাজি ব্যাপারটা ডাল-ভাতের মতো। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক। আকছারই ঘটছে। সব ঘটনা খবরের কাগজে ওঠে না। থানা-পুলিশ পর্যন্তও গড়ায় না। ভুক্তভোগী পাবলিক বড়ই হতভাগা। কিল খেয়ে কিল হজম করতে হয় তাদের।
আজ আমরা অভিনব এক চাঁদাবাজির ঘটনা জানব। চান্দাবাজ দলটিতে নারীও ছিল। পিছিয়ে থাকবে কেন তারা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাদের পক্ষে বলেই গেছেন তার কবিতায়। বড় যুঁত্সই, বড়ই দূরদর্শী সেই কবিতা পঙিক্ত—বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
নারীরা আসুক না এগিয়ে। আসছেও তারা। না এলেই হ্যাঙ্গাম। জেন্ডার ইকুইলিব্রিয়াম থাকে না। পুরুষদের জন্য সব একতরফা হয়ে যায়। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। নারী চান্দাবাজ—চমক বা নতুনত্ব নেই তাতে। তারা যেটা করেছে, সেটা পিলে চমকে দেয়ার মতো ঘটনা। তাদের শিকার একজন এমপি সাহেব। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক একটি দলের এমপি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক জেলা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নাম-ঠিকানা প্রকাশ থেকে বিরত রইলাম। শরমের ব্যাপার। পাঠকমনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কার শরম? এমপি সাবের? না রে ভাই। এই অধম কলাম লেখকের। রাজনীতিকদের লাজ-শরম কতটা অবশিষ্ট আছে, সেটাই কথা। মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন।
নারী চাঁদাবাজেরা যে কৌশল নিয়েছে, তাতে নতুনত্ব আছে। টেকনিক না বদলিয়ে উপায়ই বা কী? দিন বদলানির তুফানি হাওয়া বইছে দেশে! কৌশলটি হলো গিয়ে ‘বিবস্ত্র কৌশল’। এই চান্দাবাজ চক্র টার্গেট করে শাঁসাল কোনো মক্কেলকে। ইনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বা বিত্তবান কেউ। তার সঙ্গে মোলাকাতের পর শুরু হয় মূল নাটক। নারীরা বিবস্ত্র হয়। টার্গেটকেও বিবস্ত্র হতে বাধ্য করে তারা। ভাবখানা এমন, আমরা পাগল হয়েছি—তোমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়ব। হুঁ হুঁ বাছাধন, ঘুঘু দেখেছ বাট ফাঁদ দ্যাখোনি। সেই ফাঁদই তোমাকে দেখানো হচ্ছে দিন বদলের স্টাইলে। দুই পার্টিই জন্মদিনের পোশাকে ফিরে গেল। নারী চান্দাবাজের সহযোগীরা কি বসে থাকতে পারে? নিশ্চয়ই না। তারা ভিডিওতে ধারণ করে এইসব মনোলোভা (!) উমদা (!) দৃশ্য। তারপর জিম্মি করা হয় টার্গেটকে। ব্যাটা যাবি কোথায়? চান্দা দে লাখ লাখ টাকা। ভিডিও হামারা পাস হ্যায়।
অতি সম্প্রতি এই চাঁদাবাজ চক্রের হাতে দুর্ভাগা (!) এমপি সাব নাকাল, নাজেহাল হয়েছেন। এমন মহা (!) সম্মানী একজন ল’ মেকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল নাদান চান্দাবাজরা। এমপি বলে কথা। পুলিশের কোনো উপায় নেই। হেঁজিপেঁজি লোক হলে তারা ওভারলুক করত। কিংবা ‘উদাসীন’ থেকে কালক্ষেপণ করত। সেরকমই বোধহয় নিয়ম। সেটা হতে পারেনি। অনিচ্ছায় হলেও তত্পর হতে হয়েছে পুলিশকে। ছয় আসামিকে পাকড়াও করা হয়েছে অলরেডি। এমপি সাবের নাম ধাম পার্টি পরিচয় বলিনি। ক্রিমিনালদের নাম বয়স জানিয়ে দিচ্ছি এ সুযোগে। ধরা খেয়েছে বৃষ্টি ওরফে কোহিনূর আক্তার (২০), শাহনাজ জামান ওরফে জুঁই (৪২), মেহেরুন নেছা (৫০)। পুলিশ আরও পাকড়াও করেছে অপু ওরফে সোহরাব হোসেন (৩৮), রাসেল (৩৫) এবং আসাদুজ্জামানকে (৩২)। তারা অপারেশন চালিয়েছিল রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে।
পুলিশ তাদের হাতকড়া পরাল। ছাড়া কখন কোন কৌশলে পেয়ে যায়—সেটাই দেখার বিষয়। আবার এমনও হতে পারে যে, তারা ঠিকই শ্রীঘর থেকে মুক্তি পেয়ে গেল—কাক পক্ষীটিও টের পেল না। আমরা এইসব হাইপোথিসিসকে গুল্লি মারি। ধরা তো বেটা-বেটিরা পড়ল, মাগার মালমাত্তা কী কী পাওয়া গেল? সেটাই কাজের প্রশ্ন। পেল নগ্ন ভিডিও ছবিঅলা পেন ড্রাইভ, হুমকির কাজে (মহত্ কর্ম সন্দেহ নেই) ব্যবহার করা তিনখান মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, একখান ভিডিও ক্যামেরা। আর? আর নগদ টাকাকড়ি। বেশি না, মাত্র ১ লাখ ৮৬ হাজার। কালো বিড়ালকে ধরতে চেয়ে বিখ্যাত মন্ত্রী (এখন দফতরবিহীন) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের কাছে পাওয়া গিয়েছিল ৭০ লাখ টাকা মাত্র!! সেই তুলনায় এই টাকা তো নস্যি। হাতের ময়লা। ছ্যা: ছ্যা: ছ্যা:। রোজা-রমজানের দিনে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করেছে পাকসাফ পুলিশ ভাইরা। বড়ই আফসোসের বিষয় জনাব।
তিন নারী গুলশানে এমপি সাহেবের অফিসে যায়। একজনকে চাকরি দেয়ার জন্য তারা তদবির শুরু করে। এক পর্যায়ে তিন ব্যাটাছেলে সহযোগী অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ধাম করে বন্ধ করে দেয় দরজা। ক্যামেরা রেডি... অ্যাকশান...। ভিডিও ধারণ করা হয়ে গেল। এরপর তাত্ক্ষণিক ব্ল্যাকমেইলিং। নগদ ৫০ লাখ টাকা খসাতে হবে। নাহলে ভিডিও...। মোক্ষম হুমকি। ভয়ে আতঙ্কে এমপি সাহেবের আত্মা উড়ে গেছে। এই উড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি কাল্পনিক। কারণ আমরা স্পটে উপস্থিত ছিলাম না। সুড়সুড় করে নগদ ১৮ লাখ টাকা দিয়ে দিলেন এমপি সাব। মান-ইজ্জতের প্রশ্ন। আপদ বিদায় করে নিস্তার পেলেন। আদৌ পেলেন কি? পরে দুষ্টচক্র ফের হুমকি দিল মোবাইলে। সরাসরি হানা দেয়া হলো তার অফিসেও। চান্দার অঙ্ক বেড়ে গেছে। অবিশ্বাস্য রেট। বঙ্গীয় জনসংখ্যা বা শেয়ারবাজারে মহাপতনের যে হার, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বেশি। দুই কোটি টাকা। ডিজিটাল রেট। বিষিয়টি জানানো হলো ডিবি পুলিশকে।
আমাদের রাজনীতির অঙ্গনেও কি এইরকম ব্ল্যাকমেইলিং চলছে না? খোলাসা করে বলার ফুরসত/প্রয়োজন কোনোটাই নাই। সমঝদারকে লিয়ে ইশারায়ে কাফি...। তবে শানদার চান্দাবাজদেরও ধরা খেতে হয় শেষমেশ। চোরের দশদিন সাধুর একদিন...।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
hasanhafiz51@gmail.com
আজ আমরা অভিনব এক চাঁদাবাজির ঘটনা জানব। চান্দাবাজ দলটিতে নারীও ছিল। পিছিয়ে থাকবে কেন তারা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাদের পক্ষে বলেই গেছেন তার কবিতায়। বড় যুঁত্সই, বড়ই দূরদর্শী সেই কবিতা পঙিক্ত—বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
নারীরা আসুক না এগিয়ে। আসছেও তারা। না এলেই হ্যাঙ্গাম। জেন্ডার ইকুইলিব্রিয়াম থাকে না। পুরুষদের জন্য সব একতরফা হয়ে যায়। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। নারী চান্দাবাজ—চমক বা নতুনত্ব নেই তাতে। তারা যেটা করেছে, সেটা পিলে চমকে দেয়ার মতো ঘটনা। তাদের শিকার একজন এমপি সাহেব। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক একটি দলের এমপি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক জেলা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নাম-ঠিকানা প্রকাশ থেকে বিরত রইলাম। শরমের ব্যাপার। পাঠকমনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কার শরম? এমপি সাবের? না রে ভাই। এই অধম কলাম লেখকের। রাজনীতিকদের লাজ-শরম কতটা অবশিষ্ট আছে, সেটাই কথা। মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন।
নারী চাঁদাবাজেরা যে কৌশল নিয়েছে, তাতে নতুনত্ব আছে। টেকনিক না বদলিয়ে উপায়ই বা কী? দিন বদলানির তুফানি হাওয়া বইছে দেশে! কৌশলটি হলো গিয়ে ‘বিবস্ত্র কৌশল’। এই চান্দাবাজ চক্র টার্গেট করে শাঁসাল কোনো মক্কেলকে। ইনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বা বিত্তবান কেউ। তার সঙ্গে মোলাকাতের পর শুরু হয় মূল নাটক। নারীরা বিবস্ত্র হয়। টার্গেটকেও বিবস্ত্র হতে বাধ্য করে তারা। ভাবখানা এমন, আমরা পাগল হয়েছি—তোমাকেও পাগল বানিয়ে ছাড়ব। হুঁ হুঁ বাছাধন, ঘুঘু দেখেছ বাট ফাঁদ দ্যাখোনি। সেই ফাঁদই তোমাকে দেখানো হচ্ছে দিন বদলের স্টাইলে। দুই পার্টিই জন্মদিনের পোশাকে ফিরে গেল। নারী চান্দাবাজের সহযোগীরা কি বসে থাকতে পারে? নিশ্চয়ই না। তারা ভিডিওতে ধারণ করে এইসব মনোলোভা (!) উমদা (!) দৃশ্য। তারপর জিম্মি করা হয় টার্গেটকে। ব্যাটা যাবি কোথায়? চান্দা দে লাখ লাখ টাকা। ভিডিও হামারা পাস হ্যায়।
অতি সম্প্রতি এই চাঁদাবাজ চক্রের হাতে দুর্ভাগা (!) এমপি সাব নাকাল, নাজেহাল হয়েছেন। এমন মহা (!) সম্মানী একজন ল’ মেকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল নাদান চান্দাবাজরা। এমপি বলে কথা। পুলিশের কোনো উপায় নেই। হেঁজিপেঁজি লোক হলে তারা ওভারলুক করত। কিংবা ‘উদাসীন’ থেকে কালক্ষেপণ করত। সেরকমই বোধহয় নিয়ম। সেটা হতে পারেনি। অনিচ্ছায় হলেও তত্পর হতে হয়েছে পুলিশকে। ছয় আসামিকে পাকড়াও করা হয়েছে অলরেডি। এমপি সাবের নাম ধাম পার্টি পরিচয় বলিনি। ক্রিমিনালদের নাম বয়স জানিয়ে দিচ্ছি এ সুযোগে। ধরা খেয়েছে বৃষ্টি ওরফে কোহিনূর আক্তার (২০), শাহনাজ জামান ওরফে জুঁই (৪২), মেহেরুন নেছা (৫০)। পুলিশ আরও পাকড়াও করেছে অপু ওরফে সোহরাব হোসেন (৩৮), রাসেল (৩৫) এবং আসাদুজ্জামানকে (৩২)। তারা অপারেশন চালিয়েছিল রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে।
পুলিশ তাদের হাতকড়া পরাল। ছাড়া কখন কোন কৌশলে পেয়ে যায়—সেটাই দেখার বিষয়। আবার এমনও হতে পারে যে, তারা ঠিকই শ্রীঘর থেকে মুক্তি পেয়ে গেল—কাক পক্ষীটিও টের পেল না। আমরা এইসব হাইপোথিসিসকে গুল্লি মারি। ধরা তো বেটা-বেটিরা পড়ল, মাগার মালমাত্তা কী কী পাওয়া গেল? সেটাই কাজের প্রশ্ন। পেল নগ্ন ভিডিও ছবিঅলা পেন ড্রাইভ, হুমকির কাজে (মহত্ কর্ম সন্দেহ নেই) ব্যবহার করা তিনখান মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, একখান ভিডিও ক্যামেরা। আর? আর নগদ টাকাকড়ি। বেশি না, মাত্র ১ লাখ ৮৬ হাজার। কালো বিড়ালকে ধরতে চেয়ে বিখ্যাত মন্ত্রী (এখন দফতরবিহীন) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের কাছে পাওয়া গিয়েছিল ৭০ লাখ টাকা মাত্র!! সেই তুলনায় এই টাকা তো নস্যি। হাতের ময়লা। ছ্যা: ছ্যা: ছ্যা:। রোজা-রমজানের দিনে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করেছে পাকসাফ পুলিশ ভাইরা। বড়ই আফসোসের বিষয় জনাব।
তিন নারী গুলশানে এমপি সাহেবের অফিসে যায়। একজনকে চাকরি দেয়ার জন্য তারা তদবির শুরু করে। এক পর্যায়ে তিন ব্যাটাছেলে সহযোগী অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ধাম করে বন্ধ করে দেয় দরজা। ক্যামেরা রেডি... অ্যাকশান...। ভিডিও ধারণ করা হয়ে গেল। এরপর তাত্ক্ষণিক ব্ল্যাকমেইলিং। নগদ ৫০ লাখ টাকা খসাতে হবে। নাহলে ভিডিও...। মোক্ষম হুমকি। ভয়ে আতঙ্কে এমপি সাহেবের আত্মা উড়ে গেছে। এই উড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি কাল্পনিক। কারণ আমরা স্পটে উপস্থিত ছিলাম না। সুড়সুড় করে নগদ ১৮ লাখ টাকা দিয়ে দিলেন এমপি সাব। মান-ইজ্জতের প্রশ্ন। আপদ বিদায় করে নিস্তার পেলেন। আদৌ পেলেন কি? পরে দুষ্টচক্র ফের হুমকি দিল মোবাইলে। সরাসরি হানা দেয়া হলো তার অফিসেও। চান্দার অঙ্ক বেড়ে গেছে। অবিশ্বাস্য রেট। বঙ্গীয় জনসংখ্যা বা শেয়ারবাজারে মহাপতনের যে হার, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বেশি। দুই কোটি টাকা। ডিজিটাল রেট। বিষিয়টি জানানো হলো ডিবি পুলিশকে।
আমাদের রাজনীতির অঙ্গনেও কি এইরকম ব্ল্যাকমেইলিং চলছে না? খোলাসা করে বলার ফুরসত/প্রয়োজন কোনোটাই নাই। সমঝদারকে লিয়ে ইশারায়ে কাফি...। তবে শানদার চান্দাবাজদেরও ধরা খেতে হয় শেষমেশ। চোরের দশদিন সাধুর একদিন...।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
hasanhafiz51@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন