মাসের পর মাস পেরুলো। বছরের পর বছর। অবশেষে ‘মৃত’ মোসলেমুদ্দিন সরকার ফিরলেন। ২৩ বছর পর স্বদেশের মাটিতে মঙ্গলবার পা ফেলে তার বুক উথলে উঠল। আবেগ থামাতে পারলেন না। বললেন, আপনাদের সব বলবো পরে। আগে আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিন। নিজের অজান্তেই তার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। ঢাকায় শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আপন ভাই সেকান্দার তাকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মোসলেমুদ্দিন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ছোটভাইয়ের দিকে। তার ভাইটি কত বুড়িয়ে গেছে। মাথার চুল পেকে গেছে। দাড়ি সাদা হয়ে গেছে। গায়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। মোসলেমুদ্দিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে যখন এসব কথা ভাবছেন তখন তিনি পাকিস্তানের কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পার করে এসেছেন ২৩টি বছর। এতটা সময় পর তিনি ভাইকে ফিরে পেয়ে যেন ভুলে গেছেন নিজেই তার চেয়ে বেশি বুড়িয়ে গেছেন। সব মিলে বিমানবন্দরে যেন রচিত হয় বাস্তব জীবনের এক নিরেট কঠিন ছবি, চলচ্ছিত্রের আবেগঘন কাহিনী। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত জনতারও চোখ ভিজে আসে। সেকান্দার আলী তার ভাইকে দেখামাত্র দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। অঝোর ধারায় কেঁদে কেঁদে বলেন- আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি বেঁচে আছো। তুমি ফিরে এসেছো! তখন মোসলেমুদ্দিনের চোখ থেকে নীরবে, একেবারে চুপিসারে ঝরছে অশ্রু। সেকান্দার তা দেখছেন। আর বলছেন- ভাই, বাড়ি চলো। মা তোমার অপেক্ষায় আছেন। মার কথা শুনেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মোসলেমুদ্দিন। তার কল্পনার জগতে উঁকি দেয় ২৩ বছর আগে ফেলে যাওয়া সেই স্মৃতি। তখনও তিনি কাজে বেরুলে মা তার পথ চেয়ে থাকতেন। সেই মার মুখটা গত ২৩টা বছর তিনি দেখতে পাননি। মোসলেমুদ্দিন সরকার ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের একজন ডক শ্রমিক। ১৯৮৯ সালের এক সকালে তিনি কাজে যাওয়ার কথা বলে বের হন। তারপর থেকে নিখোঁজ। তার কোন খোঁজ মেলেনি। এ খবর পাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরা ডক ইয়ার্ডে গিয়েছেন। কিন্তু তাদের বলা হয়েছে, তিনি কাজে যাননি। আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে খোঁজ করা হয়েছে। কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে পরিবারের সদস্যরা কষ্টের পাথর বুকে চেপে মেনে নেন মোসলেমুদ্দিন মারা গেছেন। সেই ‘মৃত’ মোসলেমুদ্দিন যখন জীবিত দেশে ফিরলেন তখন তার পরিবারে যেন ঈদের আনন্দ। মা খুশিতে নফল নামাজ আদায় করছেন। ভাইকে ফিরে পেয়ে সেকান্দার আলী বললেন- আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমরা তো তার জন্য মাস, বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছি। শেষ পর্যন্ত ধরেই নিয়েছিলাম সে মারা গেছে। যদি সে বেঁচেই থাকতো তাহলে তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। মোসলেমুদ্দিন সরকার দেশে ফিরে তার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই না বলা অধ্যায় খুলে ধরলেন। বললেন, ১৯৮৯ সালে আমি সীমান্ত পেরিয়ে ভারত চলে গিয়েছিলাম। চলে যাই দিল্লি। তারপর কয়েক মাস অবস্থান করি আসাম, মেঘালয়ে। এক পর্যায়ে দিল্লিতে বিয়ে করি। ১৯৯৭ সালে আমি পাকিস্তান প্রবেশের চেষ্টা করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ধরা পড়ি। আমার কাছে তখন বৈধ কোন কাগজপত্র ছিল না। এরপর তিনি আর কোন ব্যাখ্যা দিলেন না। বললেন, তাকে তারপর পাকিস্তানের জেলে কাটাতে হয়েছে ১৫ বছর। এখন মার সঙ্গে দেখা করাই হবে আমার প্রথম কাজ। এ নিয়ে তারপরেই আমি আপনাদের বিস্তারিত বলবো। মোসলেমুদ্দিন সোমবার রাতে পাকিস্তানের জেল থেকে ছাড়া পান। পরের দিন মঙ্গলবার তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশে। তার আগেই তার পরিবারকে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোনে বলা হয়- তিনি বেঁচে আছেন। রয়েছেন পাকিস্তানে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করতে হবে। তারা ওই নম্বরে বারবার ফোন করেন। কিন্তু জবাবে বলা হয়, এই নম্বরটি এখন আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। তারা জানতে পারেন, রেডক্রস হারানো বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সহায়তা করে। তারা ঢাকাস্থ রেডক্রসের দ্বারস্থ হন। রেডক্রস পাকিস্তানে তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা মোসলেমুদ্দিন সরকারকে খুঁজে পায় করাচির একটি জেলে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পরই মোসলেমুদ্দিনের গ্রামের বাড়ি বিষ্ণুরামপুরে উৎসব শুরু হয়ে যায়। গ্রামবাসী ২৩ বছর পর মোসলেমুদ্দিনকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, তাকে ফিরে পেয়ে পুরো গ্রাম যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। এ এক বিরল ঘটনা।
বাংলা ভুলে গেছেন: শরীরে আঘাতের চিহ্ন, পাকিস্তানে দুই যুগ কারাবাসের পর মোসলেম বাংলা ভুলে গেছেন। শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মঙ্গলবার রেডক্রসের সহযোগিতায় পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি বাড়িতে আসার পর তার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা মূর্ছা গেছেন বারবার। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণুরামপুর গ্রামের মোসলেমের (৫২) বাড়িতে এখন শত দর্শনার্থীর ভিড়। ১৯৮৯ সালে মোসলেম উদ্দিন সরকার চট্টগ্রামে একটি জাহাজ কোম্পানিতে কাজ করার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে আর তার কোন খোঁজ ছিল না। জেল জীবন নিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান পুলিশ বাঙালি হওয়ায় তাকে শত্রু মনে করতো। প্রায় দিন করতো নির্যাতন। গত মঙ্গলবার রেডক্রসের সহায়তায় পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে মোসলেম উদ্দিন বাড়িতে ফিরে যান। দুই যুগ ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা জয়নাব বিবি (৮০) ছেলেকে দেখে মূর্ছা যান।
বাংলা ভুলে গেছেন: শরীরে আঘাতের চিহ্ন, পাকিস্তানে দুই যুগ কারাবাসের পর মোসলেম বাংলা ভুলে গেছেন। শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। মঙ্গলবার রেডক্রসের সহযোগিতায় পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি বাড়িতে আসার পর তার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা মূর্ছা গেছেন বারবার। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের বিষ্ণুরামপুর গ্রামের মোসলেমের (৫২) বাড়িতে এখন শত দর্শনার্থীর ভিড়। ১৯৮৯ সালে মোসলেম উদ্দিন সরকার চট্টগ্রামে একটি জাহাজ কোম্পানিতে কাজ করার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে আর তার কোন খোঁজ ছিল না। জেল জীবন নিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান পুলিশ বাঙালি হওয়ায় তাকে শত্রু মনে করতো। প্রায় দিন করতো নির্যাতন। গত মঙ্গলবার রেডক্রসের সহায়তায় পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে মোসলেম উদ্দিন বাড়িতে ফিরে যান। দুই যুগ ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা জয়নাব বিবি (৮০) ছেলেকে দেখে মূর্ছা যান।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন