শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মুদি দোকানি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, হলমার্ক কেলেঙ্কারির নায়ক তানভীরের বিলাসী জীবন



মাত্র এক দশক আগে আগারগাঁও তালতলা বাজারে ছোট একটি মুদি দোকান ছিল তার। এ দোকান চালাতেন পিতাকে সঙ্গে নিয়ে। এতে সংসার চলতো না তাদের। এক সময় সংসারের অভাব অনটন ঘোচাতে মাত্র ৩০০০ টাকা বেতনে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন। মাত্র এক দশক পরে সেই গার্মেন্ট শ্রমিক এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজকীয়, বিলাসী জীবন তার। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় আলীশান বাড়ি। চোখ ধাঁধানো সেই বাড়ির অন্দরমহল। আর বাড়ির পাশেই গাড়ির গ্যারেজ। তার নিজের ২৭টি পাজেরো, প্যারাডো, ল্যান্ড ক্রুজার ও প্রাইভেট কার। সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখার হলমার্ক কেলেঙ্কারির নায়ক হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ তফসিরই হলেন সেই মুদি দোকানি- গার্মেন্ট শ্রমিক। এখন যিনি হাজার কোটি টাকার মালিক।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর হলমার্ক ও তানভীর এখন দেশব্যাপী আলোচনায়। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রায় অর্ধেকই নিয়েছেন তিনি। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় চোখ ধাঁধানো রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি। বাড়ির ভেতরটা যেন স্বর্গপুরী। বিদেশী সব কারুকার্য খচিত ফিটিংস, ঝাড়বাতি। ঝকঝকে তকতকে দামি সব গাড়ি। শেওড়াপাড়ার এ বাড়ির পাশেই বিশাল গাড়ির গ্যারেজ। পাজেরো, প্যারাডো, ল্যান্ড ক্রুজার মিলে বড় গাড়ি ১৫টি। প্রাইভেট কার ১২টি। যখন যেটি পছন্দ হয় সেটি নিয়ে বের হন। তানভীর চলেন, রাজকীয় স্টাইলে। রাজপথে তার গাড়ির আগে পিছে থাকে ১০টি গাড়ি। এসব গাড়িতে থাকে তার সশস্ত্র ক্যাডার। এরা সবাই তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। মানুষকে খাওয়ানোর জন্য কখনও একটি দু’টি গরু কিনেন না, গরু ক্রয় করেন ট্রাক ভরে। এখন গ্রামের বাড়িতে যান ঘন ঘন। সেখানে উৎসব করেন মানুষকে খাওয়ান, সংবর্ধনা নেন। চলাফেরা করেন ক্ষমতাধর বড় বড় লোকদের সঙ্গে। তার ২০৫/৪ রোকেয়া সরণি শেওড়াপাড়ার কার্যালয়ে মাঝেমধ্যে আসেন বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা, একজন প্রতিমন্ত্রী কয়েকজন এমপি। এখন তার বিলাসী জীবন হলেও মাত্র এক দশক আগেও ছিলেন কপর্দকশূন্য। থাকতেন শেওড়াপাড়ার ভাড়ার বাসায়।
২০০১ সালেও আগারগাঁও তালতলা বাজারে ছোট্ট একটি মুদি দোকান ছিল তানভীরের পিতার। সকালে-বিকালে মুদি দোকানে পিতার সহযোগী ছিলেন তিনি। সংসারের নিদারুণ অভাব অনটন ঘোচাতে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন তানভীর। তার উত্থান শুরু তত্ত্বাবধায়ক জমানার শেষ দিকে। গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে নিজে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি দেন। ওই সময় তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় সোনালী ব্যাংক শেরাটন শাখার সে সময়ের ম্যানেজারের সঙ্গে। ওই ম্যানেজারকে ধরে অল্প কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাবসা শুরু করে করেন, সেটা ২০০৬ সাল। ২০০৮ সালে সরকার পরিবর্তন হলে তানভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার সঙ্গে। ওই উপদেষ্টাকে তিনি তার প্রতিষ্ঠান হলমার্কের উপদেষ্টা করেন। ২০০৯ সাল থেকে সোনালী ব্যাংকে তানভীরের ঋণ বর্ধিত হতে শুরু করে অস্বাভাবিকভাবে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে।
ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেয়ে তানভীর বেশি নজর দেন জমি কেনার দিকে। মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায়। একের পর এক জমি কিনতে থাকেন বেশি দামে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তানভীর কম করে হলেও ত্রিশটি দামি গাড়ি উপহার দিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের বড় বড় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের। দেড় শ’ জন আনসার পাহারা দেয় রোকেয়া সরণীর হলমার্কের প্রধান কার্যালয় সহ তানভীরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তানভীরের নিজের কাছে থাকে একটি পিস্তল। সব সময় চলেন বিশাল বহর নিয়ে। মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকা এবং সাভারের হেমায়েতপুরে আছে তার বিশাল সমর্থক ক্যাডার বাহিনী। শেওড়াপাড়া এলাকার তার এক প্রতিবেশী জানান, তানভীর তার বর্তমানের রাজকীয় বাড়িতে উঠেছেন মাত্র ২ বছর হলো, এর আগে ওই মহল্লারই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সপরিবারে। নতুন বাড়িতে ওঠার পর গত দুই বছর ধরে ঈদের সময় এক এলাহী কাণ্ড দেখা যায় তার বাড়ির সামনে। পুরো রমজান মাস ধরে গরু, মহিষ, উট আসে ট্রাক বোঝাই করে। ওই সব গরু, মহিষ, উট জবাই করে খাওয়ানো হয় রোজাদারদের। দান খয়রাতও করেন যথেষ্ট।
মিরপুর এলাকার মানুষ জানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সে কারণে এখন ঘন ঘন এলাকায় যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী



রাজনীতিতে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ দল বিএনপি ৩৪ বছর পূর্ণ করল। আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দলটি ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭৮ সালের এই দিনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন উপস্থাপন করে ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ১৯ দফা ছিল মূলত উন্নয়ন ও উত্পাদনের রাজনীতির একটি কর্মসূচি। তিন দশকেরও বেশি সময়
ধরে বিকশিত হয়ে বিএনপি এখন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৫টি সরকার। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে বিএনপি বরাবরই দেশের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি বেশকিছু বড় ধরনের সঙ্কট মোকাবিলা করে আসছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি চক্রান্তে দেশকে রাজনীতিকশূন্য করার ধারাবাহিকতায় যে নির্যাতনের স্টিমরোলার চলে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে বিএনপি। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশিসংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া দল আওয়ামী লীগের দলীয় ও প্রশাসনিক নির্যাতনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে দলটির শীর্ষ থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পরও ক্ষমতাসীন দলকে সরকার পরিচালনায় সহযোগিতার নীতি ঘোষণা করেছিলেন দলটির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। তার এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই নজিরবিহীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয় বিএনপি। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনেই যোগ দেয় তারা। কিন্তু একের পর এক হামলা-মামলা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সরকারি দলের অসৌজন্যমূলক বক্তব্য সংসদ অধিবেশনে না যাওয়ার দিকেই ঠেলে দেয় বিএনপিকে। মীমাংসিত বিষয় খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির লিজ বাতিল করে দেয়া, সংসদে বিরোধী দল উপস্থিত না থাকলেও জিয়াউর রহমানের লাশ শেরেবাংলা নগরের মাজারে নেই বলে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের আস্ফাালন এবং খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা দেয়ার বিষয়গুলো বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়। সম্পাদকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার সফল হোক, আমরা চাই। সেজন্য এক বছরের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কোনো কর্মসূচি দেইনি। গত মঙ্গলবার বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলনে দু’মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে। এ কর্মসূচিকে অনেকেই নরম কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছে। তবে বিএনপি বলেছে, কর্মসূচির নামে জনগণকে অযথা কষ্টা দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু নরম কর্মসূচিবর অর্থ এই নয় যে, আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়া; বরং এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জনগণকে আমাদের দাবির সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে পারব। তারপরই হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। তবে দেশ ও জনগণ শান্তিতে নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের তাণ্ডব এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দেশ বিপর্যস্ত অবস্থার দিকে চলে গেছে। এতে আমাদের কর্মসূচি দেয়া ছাড়া সামনে কোনো বিকল্প নেই। এরপরই বিএনপি একদিনের হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ হরতাল ছিল স্মরণকালের সফলতম। বিরোধী দল যাতে সরকারবিরোধী আর কোনো সফল কর্মসূচি করতে না পারে, তার জন্য দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের এমন দমন-পীড়ন নতুন কিছু নয়। তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আনুকূল্যে আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি সংস্কারপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি করে দলকে দুই ভাগে বিভক্তের চক্রান্ত হয়। এ কাজে সমর্থন দেয় নির্বাচন কমিশন। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের অ্যাফিডেভিট, এমনকি কারাগার থেকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ইসিকে চিঠি দেয়ার পরও দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সংলাপের জন্য চিঠি দেয়া হয়নি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রছায়ায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে স্থায়ী কমিটির নামে বৈঠক করে বিএনপির আলাদা কমিটি করা হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এ কমিটি আখ্যা পায় ‘সংস্কারপন্থীদের কমিটি’ হিসেবে। ঘরোয়া রাজনীতি চালু করার পর সব রাজনৈতিক দলের অফিস খোলার অনুমতি পেলেও বিএনপির অফিস দলের মূলধারার নেতাকর্মীদের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি। পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রেখে সংস্কারপন্থীদের হাতে অফিসের চাবি তুলে দেয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবাদ করার পরও দলটি যেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভালো করতে না পারে, সেজন্য জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, প্রশাসনের বিমাতাসুলভ আচরণ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের মূল কারণ। এর আগেও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বেশ কয়েকবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর দলকে দুর্বল করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলে। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদও বিএনপিকে ধ্বংস করতে তত্পর হয়ে ওঠে। দলে অন্তত তিনবার ভাঙন সৃষ্টি করে অনেক নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এমন এক সঙ্কটময় মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনীতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক ছিল না—শহীদ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসে। তার আপসহীন নেতৃত্বে একদিকে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধে, অন্যদিকে দল প্রতিষ্ঠিত হয় একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। ’৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো দলটি ক্ষমতায় যায়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যায় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাস করার কিছুদিন পরই সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। একই বছরের ১২ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে যে ষষ্ঠ সংসদ গঠিত হয় তাতে বিএনপি প্রথমবারের মতো বিরোধীদলের আসনে বসে। এ সংসদে ১১৬টি আসন নিয়ে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বিরোধীদলের মর্যাদা পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩০টি আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়।
এ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। ওই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপার্সন হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়।
বিএনপির কর্মসূচি : বিএনপি তার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৩১ আগস্ট প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও দোয়া করা হবে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। একই দিন মহানগর বিএনপির উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হবে।
বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশব্যাপী বিএনপির জেলা, মহানগর, উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলো স্ব-স্ব উদ্যোগে বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিএনপি এবং এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন এবং যথাসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
খালেদা জিয়ার বাণী : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল এক বাণীতে দলের দেশে বিদেশে অবস্থানরত সব সদস্য, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি তাদের অব্যাহত সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
বাণীতে তিনি বলেন, আজ ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তিনি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কিংবা প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে যেসব নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন এবং যারা স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা হয়। যখন আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে তত্পর, যখন দেশের তত্কালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী স্বাধীনতাত্তোর তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় কর্তৃত্বমূলক শাসন জারি করে মানুষের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, যখন হত্যা ও খুন রাজনীতির জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা যখন চরমভাবে বিপন্ন ঠিক সেই অরাজককালে সিপাহি জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অর্জিত স্বাধীনতাকে আর কেউ যাতে বিপন্ন করতে না পারে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোনো অপশক্তি ধ্বংস করতে না পারে সেই দৃঢ়প্রত্যয় নিয়েই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করে। তিনি বিএনপিকে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, উত্পাদন ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার উপযুক্ত করে গড়ে তোলেন।
তিনি বলেন, আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিদ্যুত্-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে চলছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন, নির্যাতনের মহোত্সব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করে নির্লজ্জ দলীয়করণের মাধ্যমে নিপীড়িত জনমানুষের আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথও রুদ্ধ। প্রশাসন হয়ে পড়েছে স্থবির। এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বিএনপি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। জনগণের অধিকার আদায়ে, তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি আবারও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার যে নীল নকশা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাকে প্রতিহত করতে সবাইকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। আজকের এ শুভদিনে সেই দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণের জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই।
অনুরূপভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আজ বি,এন,পি'র গৌরবময় ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।


বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ : দেশপ্রেমিকদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া




বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে নিজেদের মাথাব্যথার প্রকাশ ঘটিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ২৯ আগস্ট দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, এসব সংস্থার ধারণা, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জিতে বেগম খালেদা জিয়াই ক্ষমতায় আসবেন। বিএনপির নেত্রী যে ভারতের ‘মিত্র’ নন এবং তিনি যে ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্ককে ‘তাঁবেদারি’ হিসেবে তুলে ধরছেন রিপোর্টে তারও উল্লেখ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার সরকারের মাধ্যমে ভারতের গত কয়েক বছরের সব অর্জনই নস্যাত্ হয়ে যাবে। ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড শুরু করবে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নামার এবং বিএনপির সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র যুদ্ধকে পর্যুদস্ত করাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে ভারতকে ‘অভূতপূর্ব সহযোগিতা’ করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে তিস্তাচুক্তিসহ কিছুই অর্জন করতে পারেননি। সে কারণে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায়ই শুধু ধস নামেনি, ভারতের প্রতিও বাংলাদেশীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব শক্তিশালী হয়েছে। এমন অবস্থার সুযোগেই বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে পারেন। কারণ, জনগণের মধ্যে তার ভারতবিরোধী পরিচিতি রয়েছে। রিপোর্টে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবশ্য বিপরীত কিছু সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছে। তাদের ধারণা, বিভিন্ন মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড হতে পারে। তাছাড়া আগামী বছরের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদেরও দণ্ড দেয়া হবে। ফলে নির্বাচনে তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। তেমন অবস্থাতেই শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব।
আমরা মনে করি, ক্ষমতার পালাবদলসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই রিপোর্ট শুধু আশঙ্কাজনক নয়, আপত্তিজনকও। এটা অবশ্য নতুন খবর নয় যে, এসব সংস্থা বাংলাদেশে সব সময়ই তত্পরতা চালাচ্ছে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও তথাকথিত সুশীল সমাজসহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের এজেন্ট ও সেবাদাসদের সংখ্যাও হাজার হাজার। সুতরাং বাংলাদেশের সব বিষয়ই তাদের নখদর্পণে থাকার কথা। রয়েছেও। প্রশ্ন উঠেছে অন্য একটি বিশেষ কারণে। কারণটি হলো, ক্ষমতার পালাবদলের মতো অত্যন্ত গুরুতর বিষয় সংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট যেখানে গোপন রাখার কথা, সেখানে সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে তার ব্যাপক প্রচার করানো হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সুচিন্তিত কৌশল ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারকরা একই সঙ্গে কয়েকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছেন। মন্ত্রিত্বসহ ক্ষমতার ভাগ পাওয়া-না পাওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে আওয়ামী মহাজোটের শরিকদের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ প্রশমিত করে দলগুলোকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করা একটি প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতীয়দের পরিষ্কার বার্তা হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে মহাজোটের কোনো নেতাই রেহাই পাবেন না। জেনারেল এরশাদকে তো বটেই, ইনু-মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার মতো অনেক নেতাকেও জেলের ঘানি টানতে হবে। সুতরাং বৃদ্ধ বয়সে জেল খাটার পরিণতি এড়ানোর জন্য হলেও নেতাদের উচিত মহাজোটকে শক্তিশালী করা, শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বিএনপির জন্যও বার্তা রয়েছে। বিএনপিকে বুঝতে হবে, ভারতের প্রতি ‘বন্ধুসুলভ’ না হওয়া পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সহজে সম্ভব হবে না। এর মাধ্যমে বিএনপিকে প্রকৃতপক্ষে ভারতের অধীনতা স্বীকার করে নেয়ার জন্যই চাপ দেয়া হয়েছে। এরপরও বিএনপি যদি ঘাড় বাঁকিয়ে রাখে তাহলে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কেও স্পষ্ট আভাস রয়েছে রিপোর্টে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হবে, তারা নির্বাচনেই দাঁড়াতে পারবেন না। ওদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকেও ছিটকে পড়তে হবে। এভাবে কথার মারপ্যাঁচে একই সঙ্গে আওয়ামী মহাজোট এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নগ্নভাবে ভয় দেখানো হয়েছে। রাজনীতিতে এ ধরনের কৌশলকে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ বলা হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’-ই করতে চেয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
আমরা রিপোর্টটির নানামুখী উদ্দেশ্যকে গুরুতর মনে না করে পারি না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রিপোর্টের কোথাও কিন্তু আওয়ামী লীগকে আবারও জিতিয়ে আনার জন্য হলেও বাংলাদেশের কোনো দাবি পূরণের ব্যাপারে সামান্য তাগিদ দেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বতোভাবে শুধু ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্যে রেখেছে। ভারতীয়দের জন্য সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। একই কারণে বাংলাদেশের জনগণেরও উচিত এখনই সতর্ক হওয়া, ভারতের পাশাপাশি আওয়ামী মহাজোটের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং যথাসময়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করার প্রস্তুতি নেয়া।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বাচন নিয়ে কোলাহল নেই যে দেশে-



 বাংলাদেশ আর ভুটানের নির্বাচন প্রায় একই সময়ে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সেখানে নেই কৌতূহল, কোলাহল। চায়ের দোকানের আড্ডায়ও নেই নির্বাচন প্রসঙ্গ। ছিমছাম ছোট জেলা শহর পারো। দেড়-দুই কিলোমিটারের সিটি সেন্টার। হাজার দুয়েক লোকের বাস। আর ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দশ হাজার লোকের বাস। গণতন্ত্রের সূচনালগ্নে পারোর বাসিন্দাদের দিন কেমন কাটছে? সোনামস ট্রফেল হোটেলের মালিক ও তার কন্যার প্রতিক্রিয়া ছিল দুই মেরুর। মা একেবারেই রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন। রাজার শাসনেই তিনি ভাল আছেন। মেয়ে উইকলি বিজনেস ভুটানে কাজের সুবাদে জানেন অনেক কিছুই। আগামী বছর নির্বাচন জানাতেই, পাল্টা প্রশ্ন, তোমাদের এখানে রাজার পছন্দের দল কি ক্ষমতায় আসবে? রাজা কি অনুঘটক হিসেবে পর্দার আড়ালে কাজ করে না? প্রশ্ন শুনে অবাক উইকলি। না, তা হবে কেন? নির্বাচন নির্বাচনের মতো। রাজা এসব নিয়ে কখনও মাথা ঘামান না। কে ক্ষমতায় এলো তা নিয়ে রা নেই রাজ অন্দরমহলের কারও। একই রকম সুর পারো ক্যান্টিনের পাফিরও। মাঝারি গোছের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। বিকিকিনির ফাঁকে ফাঁকেই কথা হচ্ছিল রাজনীতি নিয়ে। পারো শহরে এক যুগের বেশি সময় গাড়ি চালাচ্ছে সোনম নামগেলে। তারও ভাষ্য হচ্ছে, গণতন্ত্র হোক আর রাজতন্ত্র হোক আমরা বুঝি রাজাকেই। কিং ইজ কিং। আর রয়্যাল ভুটানিয়ান গভর্নমেন্টের ফরেস্টার ওয়াংচকের মন্তব্য প্রজারা গণতন্ত্র চাননি। রাজা নিজেই বছরের পর বছর গণতন্ত্র শিখিয়েছেন প্রজাদের। গণতন্ত্র এলেই দেশে অশান্তি শুরু হবে। অপরাধ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল আর পাকিস্তানের মতো হবে। কিন্তু চতুর্থ রাজা জিগমে সিগমে ওয়াংচুক প্রজাদের বুঝিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্বকে মোকাবিলায় গণতন্ত্র দিতে চাই। দূর অতীতের রাজতন্ত্র এশিয়ান জাতিগোষ্ঠীর জন্য উত্তম শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। ভারত ও চীনের মতো পরাক্রমশালী দু’টি দেশের বাইরে নিজেদের এক স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে পরিচিত করতে সত্যিকার গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে দুনিয়ার তাবৎ মিডিয়াও।
১৯০৭ সালে ওজেন ওয়াংচুক প্রথম রাজা হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। তার শতবর্ষ পালিত হয় ২০০৭ সালে। ১০১ বছরে দেশটির রাজতন্ত্র ভেঙে রাজা নিজেই বিকেন্দ্রিকরণে কঠিন সিদ্ধান্ত নেন। রাজতন্ত্রের শতবর্ষ পূরণের অনেক আগেই তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক দেশে রাজতন্ত্র বিলোপের আওয়াজ দেন। একই সঙ্গে দাসপ্রথাও নিষিদ্ধ করেন। প্রগতিশীল আগ্রগামী চিন্তার জন্য তাকে আধুনিক ভুটানের জনকও বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পুত্র চতুর্থ রাজা জিগমে সিগমে ওয়াংচুক ছুটে যান মাইলের পর মাইল। উদ্দেশ্য একটাই- দেশবাসীকে গণতন্ত্রমনা করা। প্রজাদের নানা আপত্তি। তাতে একটুও দমেননি জিগমে। তারও এক যুগ আগে ১৯৯৬ সাল থেকেই শক্তিশালী রাজতন্ত্র থেকে উত্তরণে সংবিধান সংশোধনের কাজ শুরু করেন। শান্তিপ্রিয় ভুটানজুড়ে গণতন্ত্র নামক শাসনকেও যুক্ত করতে থাকেন। দিনের শুরু আর দিন শেষে রাজবাড়ির সামনে রাজা আর ধর্মগুরুর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বেজে ওঠে বিউগল। সামরিক কায়দা মেনে ড্রাগন অঙ্কিত পতাকা উত্থিত-অবনমিত হয়। এই যেন রীতি। পুরো ভুটানের সবখানে তা বিচারালয় বা ধর্মালয় যা-ই হোক রাজার ছবি শোভা পাচ্ছে। আবার বৃটিশ কায়দায় শিশু গণতন্ত্রও কাজ করছে। নব্বইয়ের দশকে নেপালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসে। জাদুঘরে পাঠায় রাজপরিবারকে। কিন্তু ভুটানে উল্টো চিত্র। হাত ধরে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। রাজা ডেকে ক্ষমতায়ন করেন প্রজাদের। সংবিধানে রাজাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলা হলেও, দেশ পরিচালনার নির্বাহী দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের ওপরই। একেবারেই নতুন ধাঁচের এই রীতি মেনে নিতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ভুটানের রাজা-প্রজা উভয়কেই। ভুটানের জনগণ রাজাকে যে ঈশ্বর বলে মানে। তারা কোনভাবেই তাকে ছাড়তে রাজি নন। দূরদৃষ্টি নিয়ে জিগমে ২০০৭ সালে থিম্পুতে পরীক্ষামূলক নির্বাচনের আয়োজন করেন। এর আগে ২০০৫ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ শেষ করেন। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীকেও দায়িত্ব দেন। পরীক্ষামূলক নির্বাচনটি মক ইলেকশন নামেই পরিচিত। ২০০৭-এর ২২শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে এক লাখ পঁচিশ হাজার ভুটানি অংশ নেয়। মক নির্বাচনে অংশ নেয়া পার্টিগুলো ছিল দ্রুক ব্লু, দ্রুক গ্রিন, দ্রুক রেড, দ্রুক ইয়েলো। পরীক্ষামূলক নির্বাচন শেসে প্রাথমিক পর্যায়ে দু’টি পার্টি রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। দল গঠন করে। যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী জিগমে থিনলে। পার্টির নাম দ্রুক পয়েনসাম থুকপা (ডিপিটি)। অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন সাঙ্গে নেদুপ। পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)। দুটোই ২০০৭-এ কাজ শুরু করে। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলও এই দুটোই। সবশেষ গত ক’বছরে আরও কিছু নতুন রাজনৈতিক দল ভুটানে কাজ শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ভুটান ডেমোক্রেটিক স্যোসাল পার্টি, ভুটান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ভুটান গোর্কা ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ভুটান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ভুটান পিপল পার্টি, ভুটান টাইগার্স পার্টি, ভুটান ন্যাশনাল পার্টি।
২০০৮-এর মার্চের ২৪ তারিখ। দিনটি ছিল ভুটানের ইতিহাসে অনন্য। অন্যরকম উৎসবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটি অনুষ্ঠিত হয়। দুনিয়ার বাঘা বাঘা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের এ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক কিছুই লেখার ছিল না। তিন লাখ এক হাজার এক শ’ পঁয়ষট্টি ভোটার ভোট দিতে গিয়ে বাতিল হয়েছিল ২২২ ভোট। ৪৭ আসনের পার্লামেন্টে দ্রুক পয়েনসাম থুকপা (ডিপিটি) পেয়েছিল ৪৫ আসন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থিনলের নেতৃত্বে বিশ সদস্যের মন্ত্রিসভা দেশ পরিচালনায় রাজার সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করছে। পিডিপি দুই আসন পেয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে আছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ভুটানের নির্বাহী বিভাগে উচ্চ কক্ষ পঁচিশ সদস্যের। তার মধ্যে বিশটি জেলা বা জং থেকে থাকেন বিশ প্রতিনিধি। আর রাজার মনোনীত পাঁচ প্রতিনিধি। এই নিয়ে পঁচিশ জনের উচ্চকক্ষ বা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ভুটান। যা গঠিত হয় ২০০৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর। আর সংসদ বা ন্যাশনাল এসেম্বলি অব ভুটান গঠিত হয় ৪৭ সদস্য নিয়ে। 

বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

যে দেশের মানুষ অশান্তি শব্দের সঙ্গে পরিচিত নয়


 অশান্তি কি? মিথ্যা কি? অসততা কি? জানে না সে দেশের মানুষ। অপরাধ অরাজকতা যেখানে অকল্পনীয়। এমন দেশও আছে পৃথিবীতে? পাহাড়-পর্বত আর সবুজ বনানী ঘেরা ৩৮ হাজার
বর্গমাইলের সে এক দেশ। যেখানে পথে পথে আপেল আঙুর আর কমলার বাগান। হিমালয়ের শীতল জলধারা সেখানে আলো দেয়। দেয় স্নিগ্ধতা। দেয় সুশীতল বায়ু। যেখানে নাগরিকদের ছুটোছুটি নেই। নেই অস্থিরতা। মহামতি বুদ্ধ যাদের টপ হিলে বসে খেয়াল রাখছেন সবকিছু। সাত লাখ মানুষের বাস। বাংলাদেশের পাশেই সে দেশ। ভুটান। পুরোনাম কিংডম অব ভুটান। প্রাচীন নাম দ্রুক ইয়ল। ইংরেজিতে বলে ‘দ্য ল্যান্ড অব থান্ডার ড্রাগন’। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে ড্রাগনের পাখায় ভর করে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিচ্ছে সেই দেশ। যেখানের শতভাগ মানুষই সুখী। প্রাচীন মহাযান বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ভুটানে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় জাতিগতভাবে তারা কতটা সুখী তার ওপর। দুই পরাক্রমশালী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ, নাগরিকদের জাতীয় সুখ, পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এক অনন্য দেশের মর্যাদায় টিকে আছে দ্রুক ইয়ল। জাতীয় শুমারি জরিপে সে দেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কি সুখী? ৯৭ ভাগ নাগরিক এক কথায় জবাব দিয়েছেন, সুখী। জরিপে মোট প্রশ্ন সংখ্যা ছিল ৩০০। তার বেশির ভাগই ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে। মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের উত্তর ছিল অস্পষ্ট। আর তা নিয়েই ভুটান রাজার যত দুশ্চিন্তা। কেন এই তিন ভাগ নাগরিক সুখী নন। তারই উত্তর খোঁজা হচ্ছে দেশটির ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস কমিশন’-এর মাধ্যমে। জরিপে দেখা যায়, ভুটানের তিরিশ ভাগ মানুষেরই দৈনিক উপার্জন এক ডলারের বেশি নয়। অথচ তারা সুখী। কারণ, এরা বিশ্বাস করে অর্থ কাউকে সুখী করতে পারে না। ভুটানের সরকারি করপোরেশন প্রকাশিত পত্রিকা কুয়েনশেলের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৫ দিনে পুরো ভুটানে পুলিশের নথিভুক্ত অপরাধ হয়েছে মাত্র ১৪টি। পুরো মাসে হয়েছে ৫১টি। এই চিত্রটিও সেখানে অস্বাভাবিক। এতে কোন বয়সীরা জড়িত, কেন এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা নিয়ে দেশটিতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
পেছনে ফিরে তাকালে আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে। চারদিনের ভুটান সফরে জাতীয় সুখ যেভাবে জাতীয় প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করে তা জানার চেষ্টা করেছি। দর্শনীয় স্থানসমূহে, রাজধানীর সিটি সেন্টারে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এই সুখ তত্ত্ব। বর্তমানে পঞ্চম রাজার শাসন চলছে। ক্ষমতায় আছেন জিগমে খেসাড় নামগেল ওয়াংচুক। সমপ্রতি তার অভিষেক হয়েছে। ২৫ হাজার ভুটানের উপস্থিতিতে নতুন রাজা ঘোষণা করেন, আমি পিতার মতোই রক্ষা করবো, ভাইয়ের মতো যত্ন নেবো এবং সন্তানের মতো সেবা করবো। আমি আজন্ম সেবা বিলিয়ে দেবো, বিনিময়ে নেবো না কিছুই। নিঃশর্ত এই সেবা বিলিয়ে দিতেই আমি আপনাদের রাজার দায়িত্ব নিয়েছি। নতুন রানী জেটসান পেমাকে নিয়ে সুখেই দিনাতিপাত করছেন ২৬ বছর বয়সের অক্সফোর্ডে পড়ুয়া এ রাজা। পূর্ববতী তৃতীয় ও চতুর্থ রাজার রেখে যাওয়া তত্ত্বের ঝাণ্ডা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস তত্ত্বের উদগাতা প্রয়াত দ্রুক ইয়ল্পো জিগমে দর্জি ওয়াংচুক। তিনি তৃতীয় রাজা। বর্তমান রাজার পিতামহ ও পূর্বতন রাজা জিগমে সিগমে ওয়াংচুকের পিতা। সত্তরের দশকে তৃতীয় রাজা দর্জি ওয়াংচুক এই তত্ত্ব প্রথম জনগণকে জানান। জাতিসংঘের অধিবেশনে ১৯৭১ সালে দেয়া ভাষণেও তিনি এ বিষয়টির উল্লেখ করেন। তখন থেকেই বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। হয়েছে অনেক হাসি-তামাশাও। দুনিয়ার বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদগণ ভুটান রাজার এই বক্তব্য নিয়ে তর্ক করেছেন। খোদ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা জাতীয় প্রবৃদ্ধির মানদণ্ড নির্ণয়ে জাতীয় সুখকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ায় প্রশ্নও তুলেছিল। কিন্তু প্রয়াত এই রাজা ছিলেন একাট্টা। তার জাতিকে তিনি এক অনন্য দর্শন উপহার দিয়েছেন, যা তাকে দিয়েছে বিশ্ব দরবারে অমরত্ব। প্রয়াত পিতা জীবদ্দশায় এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন না দেখে গেলেও পুত্র চতুর্থ রাজা জিগমে সিগমে ওয়াংচুক পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় এর বাস্তবায়ন করেছেন। ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় এসেই অভিষেক গ্রহণের দিনই ঘোষণা দিয়েছেন এটাই ভুটানের মূল রাষ্ট্রীয় নীতি। জাতীয় উৎপাদন নয়, জাতীয় সুখই হবে আমাদের মূল নীতি। তিনি জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হলেন, কোন ব্যক্তি কতটা ধনী তা দিয়ে সুখ নির্ধারিত হতে পারে না। প্রচুর ধনসম্পদ সবসময় সুখ বয়ে আনে না। বরং অন্তর্গতভাবে প্রতিটি নাগরিক কি পরিমাণ সুখী তা দিয়ে জাতীয় সুখ নির্ধারণ করা যায়। ওয়াংচুক নীতি বাস্তবায়নে করলেন কমিশনও। নাম দিলেন গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস কমিশন। চারটি মূল নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে এই কমিশন। সমতার ভিত্তিতে আর্থ-সমাজিক উন্নয়ন, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চেতনা সংরক্ষণ এবং প্রচার, পরিবেশ রক্ষা, সৌজন্যবোধ-বিনয়-সঙ্গতিপূর্ণ জীবনধারা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এই চার নীতি বাস্তবায়নে রাজা ছুটেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ভুটানের জাতীয় ভিত্তিকে সামগ্রিক সুখের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। চার দশক আগেও যারা এর বিরোধিতা করেছিলেন তারাই আজ তার প্রচার-প্রসারে এগিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘসহ বিশ্বের শান্তিপ্রিয় অনেক দেশ এই তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার শিক্ষা নিচ্ছেন। যে দেশের শিল্প বলতে কিছু নেই, যাদের অর্থনীতির মৌল ভিত্তি বেশির ভাগই ভারত নির্ভর। তাতেও সে দেশের নাগরিকদের সুখের কমতি নেই। তীব্র নিয়মানুবর্তী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় নাগরিক মাত্রেই সচেতন। জাতীয় পোশাক পুরুষদের গো ও নারীদের কিড়া পরিধান বাধ্যতামূলক। না করলে সাড়ে সাত রুপি জরিমানা। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বা যে কোন প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পোশাক পরাই রীতি। পরিবেশ রক্ষায় কঠোর আইন রয়েছে ভুটানে। দেশটির ৬০ ভাগ ঘন বৃক্ষে ছেয়ে আছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ নিয়ে হইচইয়ের বাইরে যায়নি ভুটান সরকার। গ্রিন হাউজ এফেক্ট থেকে দেশ রক্ষায় সপ্তাহে একদিন করে ভুটানের সব শহরেই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। কথা থাকে, সে সময় বেড়াতে আসা পর্যটকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে কিনা। না, ভুটান সরকার এ বিষয়েও সচেতন। একটি নির্দিষ্ট নম্বরের গাড়ি সেদিন চলাচলের জন্য সীমিত সংখ্যায় অনুমতি দেয়া আছে। জ্বালানি নির্গমনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই এ ব্যবস্থা। বিস্তীর্ণ পাহাড়ে অসংখ্য পাম গাছ দাঁড়িয়ে আছে শ’ শ’ বছর ধরে। গাছ কাটায় রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। নাগরিকদের গৃহনির্মাণ ও অন্য কোন প্রয়োজনে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের যৌক্তিকতা বিবেচিত হলেই গাছ কাটা যাবে না। সেখানে আইনের লোকজনের উপস্থিতিতে তবেই গাছ কাটা যাবে। তামাক বিক্রয় ও সেবন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বিমান পথে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার আগেই লিখে জানাতে হয়, তিনি কোন গাছ অথবা গাছের বীজ বহন করছেন কিনা? কারণ, ভুটান থেকে যে কোন ধরনের গাছ বা বীজ বাইরে নেয়ায় রয়েছে নিষিধাজ্ঞা। পর্যটক নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে নানা বিধি-নিষেধ। ভুটানে অবাধে পর্যটক প্রবেশ বন্ধে সার্কভুক্ত দেশসমূহের বাইরের পর্যটকদের জন্য রয়েছে ট্যারিফ। একেক দিন ভুটানে অবস্থানের জন্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ দুনিয়ার তাবৎ পর্যটকদের ২০০ ডলার করে দিতে হয়। অবাধে পর্যটকরা ভুটানে এলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই এই সংরক্ষণ নীতি। তাছাড়া বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় ঐতিহ্য সমৃদ্ধ স্থানগুলো ভ্রমণে নিতে হয় বিশেষ অনুমতি। পর্যটক আকর্ষণে নেই অবাধে নাচ-গানের ব্যবস্থা। হিমালয় কন্যা নেপালে যেমনটি রয়েছে। সেখানের রীতিই সুরিয়া অস্ত, নেপাল মস্ত। কিন্তু ভুটান একেবারেই ভিন্ন। নিজস্বতায় বিশ্বাসী অনন্য এক জাতি। দুনিয়ার সর্বত্র ভারতীয় ছবি দর্শক মাতালেও ভুটান একেবারেই ভিন্ন। স্থানীয়রা সিনেমা হলে কোন ভারতীয় ছবি দেখে না। কেবল বিশেষ কোনও প্রদর্শনী বা দিবসে এর ব্যতিক্রম ঘটে। কোন শহরেই ভারতীয় ছবির পোস্টার বা সিডি বিক্রয় হচ্ছে- তেমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়েনি। নিজস্ব সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়েই তারা সগৌরবে এগিয়ে চলেছে। 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

খালেদার ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত



খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে উদ্বেগ বাড়ছে। ২০১৪
সালের দিকে ঢাকায় ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। তাই আওয়ামী লীগের পড়ে যাওয়া জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে তীব্র আগ্রহ দেখাচ্ছে তারা। এ জন্য তারা বছরজুড়ে তৎপরতা বাড়াবে। তাদের আশঙ্কা, ক্ষমতার এই পালাবদল ঘটলে বাংলাদেশকে ভারতবিরোধী শক্তিগুলো ফের ব্যবহার করবে এবং আগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাবে। গতকাল অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়াতে ‘ইন্ডিয়া ইজ ওরিস কুড মাউন্ট উইথ খালেদা জিয়াস এক্সপেক্টেড রিটার্ন টু পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এর লেখক ভারতী জৈন। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে যেসব সন্ত্রাসী সংগঠন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল শেখ হাসিনা সরকার তাদের ঘাঁটি ভেঙে দিয়েছে। তার সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল একটি বহুল পরিচিত নীতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক তীব্র প্রতিপক্ষ বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরবেন বলেই মনে হচ্ছে। খালেদা জিয়া ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নন বলে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে তিনি শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদের ভুলত্রুটিকে পুঁজি করে এগোচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ভারতের আজ্ঞাবাহী হিসেবে দেখাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। জঙ্গি সংগঠন ও বিএনপি’র অংশীদার জামায়াতে ইসলামীর মতো বাংলাদেশভিত্তিক রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতীয় জঙ্গি গ্রুপগুলোর কর্মকাণ্ডে তাদের সমর্থন ও আশ্রয় দেয়া শুরু করতে পারে। তারা প্রতিবেশী দেশকে নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও তারা পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে অনুপ্রবেশের একটি পথ করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশী যোগসূত্র আছে এমন সন্ত্রাসী ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতীয় জঙ্গিরা যে নিরাপদ স্বর্গ রচনা করেছিল তা ভেঙে দিতে হাসিনা সরকারের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা পেয়েছে। হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা যখন ডুবে যাচ্ছে তখন সেই জনপ্রিয়তা চলে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র ঘরে। তাই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা- খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় ফেরেন তাহলে গত কয়েক বছরে যে অর্জন হয়েছে তা উল্টে যাবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে- ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে পাকিস্তান ভিত্তিক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানি তানজিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন হুজি। ভারতে আইএসআই মদতপুষ্ট অনেক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। যারা এ হামলা চালিয়েছে তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে না হয় হামলার পর তারা পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেখানে চলে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে আইএসআই’র সম্পর্ক থাকার আরও অনেক ঘটনা আছে। যেমন- ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী খরচ সরবরাহ করেছে আইএসআই। এ কথা প্রকাশ করেছেন অন্য কেউ নন, আইএসআই’র সাবেক প্রধান আসাদ দুরানি। ১৯৯৬ সালের মার্চে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকা থেকে ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর ক্যাডাররা পাকিস্তানে যায়। আইএসআই মদতপুষ্ট কারিগরি বিশেষজ্ঞরা অভিযান পরিচালনায় উলফাকে প্রশিক্ষণ ও নাগাল্যান্ডে যোগাযোগ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠায় সরঞ্জাম দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। অস্ত্রের একটি চালান পর্যবেক্ষণ শেষে করাচি থেকে ফেরার পথে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে এনএসসিএন (আই-এম) প্রধান টি মাউভাহ’কে গ্রেপ্তার করা হয় ব্যাংকক বিমানবন্দরে। আটক করা হয় অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ)-এর বেশ কয়েকজন ক্যাডারকে। এতে প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, ১৯৯৭ সালে আফগানিস্তানের কান্দাহারে এটিটিএফ-এর ৮ ক্যাডেটকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও এ সংগঠনের ৫৮ লাখ রুপির তহবিলে ২০ হাজার ডলার আর্থিক সহায়তা দেয় আইএসআই। এতে অভিযোগ আছে- মালটা, মালফা, সিমি ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের মতো কট্টর ইসলামপন্থি গ্রুপগুলোকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে আইএসআই ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী।
অবশ্যই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ধস ঠেকাতে ভারতীয় মহলগুলোর তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের নেতিবাচক দিককে পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কমই সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতকে বড় ধরনের কোন সমঝোতায় রাজি করাতে পারেননি বলে বাংলাদেশে একটি নেতিবাচক ধারণা আছে। সেই ধারণাকে সংশোধন করতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে সহায়তা ও ছিটমহল বিনিময় ইস্যুতে ইতিবাচক অগ্রগতি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আর এটা শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার তাদেরকে বিপদে ফেলা শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে তিস্তা ও ছিটমহল ইস্যুতে কট্টর অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি করাতে পারবে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার পায়ের তলা থেকে সরে যাওয়া মাটি ফিরিয়ে আনতে বছরজুড়ে প্রচেষ্টা তীব্র করা হবে। এসব কথা বলেছেন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং এর নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি তার জোটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে নির্বাচনের আগে বদলে দিতে পারে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সোনালী ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারি : অর্থমন্ত্রী আসলে ঠিক কী চান?



গত চার বছর ধরে লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি কীভাবে ছড়িয়েছে সেটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। লাগামহীনভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটা এখন পুরনো হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার লুটের ঘটনায় সরকারের ভূমিকাও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার। সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও সুপারিশে যাদের কথা উঠে এসেছে, অর্থমন্ত্রী তাদের নাম প্রকাশ করেননি, তারা এতই প্রভাবশালী। এছাড়া দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর এখন শুরু হয়েছে ভৌতিক বিলের ছড়াছড়ি। আর দেশজুড়ে টেন্ডারবাজি, চাকরিতে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, সরকারি দান-অনুদান এমনকি দুস্থ ভাতা লুটপাটের ঘটনাও অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। সরকারের মেয়াদ লক্ষ্য করে মানুষ মুখিয়ে আছে শেষ জবাব দিতে। এ অবস্থায় ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের টাকার ওপর নজর পড়েছে লুটেরাদের। ঋণখেলাপি হওয়ার ঝামেলা এড়িয়ে এখন সরাসরি জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া যে মোটেই কঠিন কিছু নয়, সেটাই প্রমাণ হলো সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাত্ করার ঘটনা থেকে। চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে তদন্তের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩০ জনের বেশি ব্যাংকার অভিযুক্ত হন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। এর পরদিন এই জালিয়াতির কারণে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব থেকে মনে হয়েছিল দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটু নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আগের মতোই এক বোমা ফাটানো মন্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি সোনালী ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি দেয়াকে সরাসরি এখতিয়ার বহির্ভূত বলে ব্যাংক জালিয়াতদের মনে সাহস জুগিয়েছেন বলাটা মোটেই অসত্য হবে না। কেন অর্থমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন সেটা অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৫, ৪৬ ও ৪৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এই সুযোগে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে স্থান হয় সরকারদলীয় ব্যক্তিদের। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে দলবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট কীভাবে শিকড় গেড়েছে সেটা কারও অজানা থাকার কথা নয়। তবে এবারের ঘটনা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে যেখানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি, সেখানে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে মাত্র দুই বছরেই জালিয়াতির মাধ্যমে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা এক কথায় ভয়াবহ বলাটা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় এখতিয়ার নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে তাতে জনগণের মাথা ব্যথা না থাকাই স্বাভাবিক। কারা ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা আত্মসাত্ করেছে তদন্তে সেটা জানাজানি হওয়ার পরও কেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। চুরি যাওয়া জনগণের টাকা ফেরত আনাটাও জরুরি। যাদের মুখে জনগণের স্বার্থ রক্ষা, আইনের শাসন নিয়ে তুবড়ি ছোটে, এত কিছুর পরও তাদের নিশ্চুপ থাকাটা সবারই চোখে পড়তে বাধ্য। মানুষ ভুলে যায়নি, বিগত অসাংবিধানিক জরুরি অবস্থার সরকারের আমলে বিএনপির অনেক নেতাকে টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে প্রথমেই গ্রেফতার করে দুদক মামলার পথ ধরেছিল। তাহলে এখন এত বড় জালিয়াতি নিয়ে দুদকের তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যাবে না কেন? অর্থমন্ত্রী উল্টাপাল্টা কথা বলে শেয়ারবাজার লুটেরাদের মতো এই ব্যাংক জালিয়াতদেরও কি বাঁচাতে চাইছেন? উনি ও আওয়ামী মহাজোট সরকার কি এ ধরনের বিশাল দুর্নীতি নিয়ে কেউ কথা না বলুক এটাই চান? এভাবে ব্যাংকের টাকা লুটপাট অব্যাহত থাকুক এটাই কি তাদের কাম্য? এই লুটেরারা কি সরকারের এতই কাছের মানুষ যে তাদের রক্ষার দায়িত্ব খোদ অর্থমন্ত্রীর ওপর বর্তেছে!

সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কঠিন সংগ্রামে নামতে হবে



আ তা উ স সা মা দ
একেকটা দিন যাচ্ছে আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশে একটা নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম যেদিন অধিবেশনে বসে, সেদিন থেকেই তার পাঁচ বছরের মেয়াদ গোনা শুরু হয়ে যায়। তবে প্রথম দিকে এই মেয়াদ হিসাব করার তাগিদ কারও তেমন থাকে না। সে সময় জনসাধারণ দেখতে থাকে কারা মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা কেমনভাবে সরকার চালাচ্ছেন, মন্ত্রীরা জাতীয় সংসদে কতখানি জবাবদিহি করছেন, সংসদ কেমনভাবে চলছে, যে জাতীয় সংসদের ওপর সাধারণ মানুষ এত ভরসা করে ভোট দিয়েছেন, সেটি তাদের কোনো কাজে এলো কিনা ইত্যাদি।
তবে জাতীয় সংসদের বয়স আড়াই বছর পার হয়ে গেলে ভোটাররা স্বাভাবিকভাবেই হিসাব-নিকাশ শুরু করেন যে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত সরকারটি দশ ও দেশের জন্য কতটুকু কাজ করল, সরকারটি আদৌ যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারল কি-না, মন্ত্রিসভা কি দুর্নীতিপরায়ণ না সত্, প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের নীতি ও দেশের আইন মেনে চলেন নাকি তিনি স্বৈরাচারী এবং ক্ষমতাসীন দল কি শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাকি তারা নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী। তখন থেকেই শুরু হয় চিন্তা-ভাবনা যে, পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলকে আবার সরকারে ফিরিয়ে আনা হবে নাকি একে বিদায় করতে হবে এবং এই সময়টা থেকেই আগ্রহ বাড়তে থকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য। বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংসদের পুরো মেয়াদ শেষ হতে অবশিষ্ট আছে আর মাত্র ষোলো মাস। দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে এই ক’টা দিন। এবার এই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসবের মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি সরকার কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং নির্বাচিত সরকারটি আইনের শাসন কায়েম করবে তা নিশ্চিত করা যায়।
২০০৬ সালে সংবিধানের তত্কালীন বিধান মোতাবেক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন—একদিকে সেই প্রশ্নে চারদলীয় জোট তথা ওই জোটের প্রধান দল বিএনপির একগুঁয়েমি ও ভুলের জন্য এবং অন্যদিকে একই সময়ে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের লগি-বৈঠার সহিংস আন্দোলনকে তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন দেশে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সারা দেশ এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে পড়ে। সেই সময় রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তড়িঘড়ি করে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে বসে পড়লেন নিজের কর্মক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো মনোবল আছে কিনা সেকথা বিবেচনা না করেই। ফলে তার প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে ভুল হতে লাগল ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে থাকল। একই সঙ্গে বিচারপতি আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোটার লিস্ট তৈরির কাজে তালগোল পাকিয়ে ফেলল। অসংখ্য ভুয়া ভোটার আছে এবং বহু প্রকৃত ভোটার নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন—এই কারণ দেখিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র দাখিল করেও নির্বাচন বয়কট করে বসল। একইসঙ্গে জেনারেল এরশাদের মনোনয়নপত্রও বাতিল করার প্রতিবাদে তার জাতীয় পার্টিও নির্বাচন বর্জন করল। তার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বলে বসল তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না। অতঃপর তত্কালীন সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে ধমক দিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়ে ২২ জানুয়ারি ২০০৭ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন বাতিল করিয়ে দিলেন। তিনি অবশ্য অজুহাত দেখালেন, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে দেশে যে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা সামাল দিতে সশস্ত্র বাহিনীকে সরকার আহ্বান জানালে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না বলে জাতিসংঘের মহাসচিব তাকে জানিয়েছেন। এভাবেই তিনি ক্ষমতা দখল করলেন তবে সুশীল সমাজের একজন খ্যাতনামা সিএসপি (সাবেক) প্রতিভূকে সঙ্গে করে। অতঃপর আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দাবি মোতাবেক সচিত্র ভোটার তালিকা তৈরির নামে দুই বছর রাজত্ব করলেন তারা।
এ সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ ও অন্যান্য মামলায় বিএনপির জাতীয় এবং স্থানীয় নেতাদের দলে দলে জেলে ঢুকিয়ে ডিজিএফআই, টাস্কফোর্স ইত্যাদি নানা সংস্থার লোকদের দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছিল ওই ক্ষমতাদখলকারী অসাংবিধানিক, অতএব অবৈধ সরকার। তাদের অবৈধ শাসনের একপর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেও বন্দি করে। আওয়ামী লীগেরও কয়েকজন নেতা এবং আরও কয়েকজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী গ্রেফতার হন ওই সরকারের অত্যাচারী হাতে। কিন্তু জেনারেল মইন ও সিএসপি (সাবেক) ফখরুদ্দীনের সরকারের বেশিরভাগ কর্মকাণ্ড ছিল বিএনপির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অভাবনীয় ভরাডুবি এবং আওয়ামী লীগের বিস্ময়কর সংখ্যাধিক্য আসনে জয়লাভের পেছনে বিএনপির ছত্রভঙ্গ ও হতোদ্যম অবস্থা এবং দলটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ছদ্মবেশী সামরিক সরকারটির অবিশ্রান্ত প্রচারণা দুটি বড় কারণ। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৭ ও ২০০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক নামধারী অসাংবিধানিক সরকারটি রাজনীতিবিদদের ওপর যে নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায় এবং যে অপকর্ম সমর্থন করে কোনো কোনো সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল চরম নীতিহীনভাবে উল্লাস প্রদর্শন করে, তার প্রধান হোতারা—জেনারেল, মেজর জেনারেল, ব্রিগেডিয়াররা (সবাই বর্তমানে অবসরে) ও সিএসপি (সাবেক)-গণসহ, বর্তমানে স্বেচ্ছানির্বাসনে আছেন। তাদের এই পরবাসই সাক্ষ্য দেয় যে তারা অবৈধ কাজ করেছেন আর সেজন্য ধিক্কার পেয়েছেন বলেই স্বদেশে বসবাস করতে সাহস পাচ্ছেন না, এমনকি বর্তমান সরকার তাদের কাজকর্মকে বৈধতা দেয়া সত্ত্বেও।
নিকট অতীতের এসব পীড়াদায়ক ঘটনাবলি আজকে পুনরুল্লেখ করতে হচ্ছে এজন্য যে, রাজনৈতিক ভ্রান্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অযোগ্যতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সংকীর্ণতা এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও এসব কুকর্ম সম্পর্কে আমাদের বর্তমান ক্ষমতাধরদের স্মৃতি ক্রমাগতই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে এবং তাদের ভ্রান্তিবিলাস দূর হচ্ছে না। অন্যদিকে একই সময়ে বর্তমান শাসকদের দুর্নীতি বাংলাদেশকে শুধু বিশ্বব্যাপী দুর্নামের ভাগীদারই করছে না, তা আমাদের দেশটিকে নির্দয়ভাবে কুরে কুরে খাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষমতাসীনদের ফ্রন্টম্যানদের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করা, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র ব্যক্তিখাতে আমদানি করিয়ে সেগুলোকে ভর্তুকি দেয়ার নামে সরকারের কোষাগার লুণ্ঠন, ড্রেজার কেনায় মিথ্যাচার, সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়োগ-বাণিজ্য, এমপিওভুক্তি বাণিজ্য, টেন্ডারবিহীন ক্রয়, বাংলাদেশ রেল ও বাংলাদেশ বিমানের মুখ থুবড়ে পড়া, দলীয় ঠিকাদাররা কাজ শেষ না করেই সম্পূর্ণ বিল তুলে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়া, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি গত সাড়ে তিন বছর ধরে এ সবকিছুই চলেছে বাধাহীনভাবে ও অবিরাম। ফলে দেশের দৃশ্যমান অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে (রেলপথ ও সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থা যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ), ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি মানা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে, ক্ষমতাসীনদের যে যেভাবে পারে সেভাবে টাকার পাহাড় বানাচ্ছে, এই লুটপাটের একটি বিষময় ফল হিসেবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্নীতিপরায়ণ, লুটেরা ও ঘুষখোরদের দাপটের ফলে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল বিত্তহীন, বুভুক্ষু ও জীবন সংগ্রামে পরাজিত শ্রেণীর। বাংলাদেশে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, অতীতের বৈষম্যের সব কাহিনী লোকে ভুলতে বসেছে। এ এক অতি দুঃখজনক পরিস্থিতি, কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুই হয়েছিল বৈষম্য ও বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচার দাবি তোলায়। তখন বৈষম্যের সুবিধাভোগী ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারত থেকে আগত উদুভাষী নওয়াবজাদা ও ব্যবসায়ীরা।
আজকে এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা সবাই জানেন বা উপলব্ধি করছেন। তবে এবার ঈদের ছুটিতে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো প্রসঙ্গে দেশের ক্রমাবনতিশীল সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তার কথা বললেন। তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যখন-তখন চাঁদাবাজদের হুমকির কথা বললেন। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথাও বললেন অনেকে। তাই ঈদের ছুটি কাটল ভারাক্রান্ত মনে, আর এখন কাজে ফিরে কেবলই মনে হচ্ছে যে আমরা দুঃশাসন ও দুর্নীতির আবর্তে পড়ে ক্রমেই কঠিন সঙ্কটের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছি।
এরকম অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়তো ব্যর্থ, অসহিষ্ণু, মিথ্যাচারী, অত্যাচারী, চরম দুর্নীতিগ্রস্ত, লুটেরা ও আইনের শাসন ধ্বংসকারী বর্তমান শাসকদের হাত থেকে আমাদের নিজেদের ও দেশকে বাঁচানোর একটা উপায় হতে পারত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল যেভাবে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করলেন এবং তারা এখনও যেভাবে আওয়ামী লীগের অধীনেই সংসদ নির্বাচন করতে ধনুর্ভঙ্গ পণ করে বসে আছেন, তাতে দেশে শান্তি থাকবে কিনা এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে জনগণকে দেশ, গণতন্ত্র ও নিজেদের রক্ষা করার জন্য কঠিন সংগ্রামে নামতে হবে আর তা হতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই। কারণ, ওই নির্বাচন হতে হবে দুঃশাসনের অবসান করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার, দুর্নীতি হঠিয়ে সততা ও ন্যায়নীতি প্রচলনের, নাগরিক জীবনে অশান্তির বদলে শান্তি প্রতিষ্ঠার এবং নিগৃহীত, বঞ্চিত ও শোষিত অসহায় জনগোষ্ঠীর বাঁচার সুযোগ করে দেয়ার পথ।

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রাজধানীতে নিজ বাসার বেডরুমে ঠিকাদার খুন


রাজধানীর কলাবাগানে জিয়াউল ইসলাম রিপন (৩৫) নামে এক ওয়াসার ঠিকাদার খুন হয়েছেন। গতকাল সকালে ভাড়া বাসা থেকে তার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
কলাবাগান থানার ওসি এনামুল হক জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে নিহতের বড় ভাই নাসিরুল ইসলাম রানা তার ৫৯ নম্বর গ্রিন রোডের দ্বিতীয় তলার বাসার দরজায় তালা বন্ধ দেখতে পায়। পরে তার কাছে থাকা অপর একটি চাবি দিয়ে তালা খোলেন। ভেতরে ঢুকে তিনি দেখতে পান মেঝেতে জিয়াউল ইসলামের হাত বাঁধা লাশ পড়ে আছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। নিহতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বেলপুকুর গ্রামে।
জানা গেছে, নিহত রিপন স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ওয়াসার প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ছিলেন। তবে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। নিহতের বড় ভাই নাসিরুল ইসলাম রানা জানান, ৩ দিন ধরে তার ভাইয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে জিয়াউল ইসলাম ছিলেন অবিবাহিত। কলাবাগানের একটি বাড়ির কক্ষ ভাড়া নিয়ে একাই থাকতেন।
পুুলিশ জানায়, ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর খুনিরা বাসার বাইরে থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায়। পরিচিত কেউ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ। ওসি এনামুল জানান, চুরি বা ডাকাতির কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটলে হত্যার পর কক্ষের বাইরে থেকে তালা মেরে যাওয়ার কথা নয়। তাই পরিচিত কেউ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই নাসিরুল ইসলাম বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারি চাঁদাবাজি



নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশে ও প্রবাসে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছেন সরকারি কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে চলছে এই চাঁদাবাজি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ডিও লেটার দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তারা মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। জোর করে চাঁদা আদায় করলেও স্বপ্রণোদিতভাবে চাঁদা প্রদান করার কথা বলা হচ্ছে অফিসিয়ালি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য কোথাও কোথাও করা হয়েছে কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা আদায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে, চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বিদেশযাত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেও প্রতি কলে ২৫ পয়সা কেটে রেখে রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে পদ্মা সেতুর নামে ভয়ানক চাঁদাবাজিতে নেমেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশে কর্মরত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এক মাসের বেতন কেটে রাখা হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের নামে। পার পাচ্ছেন না দারোয়ান-পিয়নরাও। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নিম্ন পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ-দাফতরিক কর্মচারীদের দিতে হচ্ছে এক দিনের বেতন।
গত ১ আগস্ট উপপুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান এআইজিকে (অর্থ ও বাজেট) চিঠি দিয়ে এ অর্থ প্রদানের কথা জানান। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘উপযুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সদয় সিদ্ধান্তের আলোকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রথম শ্রেণীর সব কর্মকর্তা তাদের এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এবং দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নিম্ন পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ-দাফতরিক কর্মচারীরা তাদের এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ স্বপ্রণোদিতভাবে প্রদানের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এ বিষয়ে প্রাপ্ত অর্থ যথাসময়ে প্রেরণ করা হবে।’
উপপুলিশ কমিশনারকে (ফাইন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) চিঠিটির অনুলিপি দেয়া হয়। ওই অনুলিপিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে এবং অন্যদের এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহপূর্বক যথাসময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে প্রেরণ করতে হবে।
পদ্মা সেতুর জন্য এক মাসের বেতন কেটে রাখার সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। সত্ পুলিশ অফিসাররা এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর জুলুম বলে মন্তব্য করেছেন। এদিকে এ সিদ্ধান্তের পর পুলিশ সদস্যদের অনেকে তোলা তুলতে শুরু করেছেন।
সাবেক সচিব বদিউর রহমান এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, আইনের দৃষ্টিতে কারও বেতন সারেন্ডার করার জন্য অর্ডার দিতে পারে না। স্বপ্রণোদিত হয়ে এক মাসের বেতন দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া যায় না। এমন নির্দেশনা দেয়া মানেই পরোক্ষভাবে চাঁদা দিতে বাধ্য করা। আইন থেকে বাঁচার জন্য স্বপ্রণোদিত শব্দটি লেখা হয়েছে। আর এক মাসের বেতন তো কিছুতেই চাইতে পারেন না।
এদিকে ১৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া এক আধাসরকারি পত্রে সচিব কমিটির সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সরকারের সচিবগণ একটি উত্সব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করবেন। অনুদানের এই অর্থ একত্র করে চেকের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করবেন। সকল/মন্ত্রণালয় বিভাগ স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাদের আওতাধীন সকল দপ্তর, সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ইচ্ছানুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদানের পরিমাণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অনুদান বৈদেশিক মুদ্রায় সংগ্রহ করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়নে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
৫ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস মোহাম্মদ আবদুল লতিফ সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে আরেকটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের প্রেরিত ৫ আগস্ট ২০১২ তারিখের আধা সরকারি পত্রের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সরকারের সচিবগণ একটি উত্সব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করবেন। অনুদানের এই অর্থ একত্র করে চেকের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন।’ কিন্তু এরই মধ্যে অর্থ বিভাগের ৫ আগস্ট ২০১২ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তর থেকে প্রাপ্ত অনুদান জমা রাখার জন্য স্থানীয় মুদ্রায় ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ শীর্ষক একটি হিসাব এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদান জমা রাখার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (অনিবাসী)’ শীর্ষক আরেকটি হিসাব খোলা হয়েছে। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে প্রদেয় স্বেচ্ছা অনুদানের অর্থ ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ শীর্ষক হিসেবের অনুকূলে ক্রসড চেক/ব্যাংক ড্রাফট মারফত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের দফতরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
এ চিঠি পাওয়ার পর সচিবদের অনেকে দ্রুত চাঁদা জমা দিতে থাকেন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির দফতরে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সচিবরা ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে চেকে এ টাকা জমা দিচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছ থেকে আসা অনুদান চেকগুলো গ্রহণ করছেন। জমা নেয়া চেকের বিপরীতে রশীদও বুঝিয়ে দিচ্ছেন। যাতে লেখা রয়েছে, ‘এটা হিসাবের বিপরীতে শুধু অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯ জন সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদ্মা সেতুর জন্য তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক, প্রেসিডেন্টের সচিব শফিউল ইসলাম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব মাহফুজুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব রফিফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম শহীদ খান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহিলা ও শিশুবিষযক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার, বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর মহাপরিচালক শফিক আলম মেহেদী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার ও শিল্প সচিব মাসুদ সিদ্দিকীসহ ১৯ জন সচিব।
সচিবরা প্রত্যেকে ঈদুল ফিতরের উত্সব ভাতার অর্ধেক অর্থাত্ ২০ হাজার টাকার ক্রস চেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৮০ হাজার টাকার চেক সচিবদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণা না থাকলেও হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে পদ্মা সেতুর নামে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে এ টাকা আদায় শুরু হয়েছে। এ টাকা ছাড়া বিমান কর্তৃপক্ষ কোনো যাত্রীর বোর্ডিং পাস ছাড় করছে না। বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, বাড়তি এ টাকা আদায় নিয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিমানবন্দরে এলে হঠাত্ করেই টাকা নেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের ৫০০ টাকা দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না। তাদের বিদায় জানাতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে কেউ কেউ এ টাকা সংগ্রহ করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে সৌদি আরব, ওমান, দুবাই ও মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় নিয়ে প্রায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। ধাক্কাধাক্কি থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটেছে।
ওমানগামী যাত্রী আবছার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস নিতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হয় ৫০০ টাকা দিতে হবে। কেন টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে বলা হয়, পদ্মা সেতুর জন্য। দুবাইগামী বাবুল মিয়া জানান, পদ্মা সেতুর নামে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। এ সময় তার কাছে বাংলাদেশী কোনো টাকা ছিল না। ছিল না ফোনও। পরে অন্য একযাত্রীকে অনুরোধ করে তার ফোন থেকে এক আত্মীয়কে ফোন করেন। তিনি এসে ৫০০ টাকা দিয়ে গেলে তার পর বোর্ডিং পাস মেলে।
বাড়তি টাকা আদায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রসিদের ব্যবস্থা করেছে। এতে লেখা আছে-ডিআইএসএস অব ইউটি ট্যাক্স। বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে স্পষ্ট সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা বলেন, আমরা জানি, বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্য নয়। এ নিয়ে যাত্রীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।
সিলেটে এমএজি ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একই ভাবে পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সম্প্রতি জোর করে সিলেট-ঢাকা-দুবাই ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা হাতিয়ে নেন ওসমানি বিমানবন্দরের বোর্ডিং কার্ড প্রদানকারী কাউন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এ সময় যাত্রীরা এর জোর প্রতিবাদ জানালে তাদের বোর্ডিং কার্ড আটকে দেয়ার হুমকি দেন ওই কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী যাত্রীর ভাই জানান, পদ্মা সেতুর নামে টাকা নেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও কোনো কর্ণপাত করেননি দায়িত্বরত কর্মকর্তা। একপর্যায়ে যাত্রীরা সরকারি নির্দেশনার সার্কুলার দেখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা দেখাতে বাধ্য নন বলে জানান। শেষমেশ যাত্রীদের চাপের মুখে টাকা গ্রহণের একটি রসিদ দিতে বাধ্য হন ওই কর্মকর্তা। টাকা গ্রহণের ওই রসিদে ‘ট্যাক্স’ হিসেবে দেখানো হয়েছে—যদিও বলা হয়েছে পদ্মা সেতুর সারচার্জ।
পদ্মা সেতুর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের চাপে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে রাজধানীর স্কুলগুলোতেও। রাজধানীর মনিপুর স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক চাঁদা নেয়া হচ্ছে। চাঁদার টাকা নিয়ে না যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা এবং পিটুনিও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এক ধরনের অতি উত্সাহী সুবিধাভোগী শিক্ষক পদ্মা সেতুর নামে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
রাজধানীর মিরপুরের মণিপুরীপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইব্রাহিমপুর শাখা ও মূল শাখার কয়েক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক ফোন করে জানিয়েছেন, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। কয়েক ছাত্র চাঁদার টাকা নিয়ে না যাওয়ায় তাদের বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর আগে পদ্মা সেতুর চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
পদ্মা সেতুর নামে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছেন বলে সেখানকার প্রবাসীরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর এইচ মিয়া এক ই-মেইল বার্তায় জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন মিলে একযোগে আমেরিকাজুড়ে প্রবাসীদের নিকট ‘পদ্মা ব্রিজ বন্ড’ জনপ্রিয় করার জন্য এক বিশেষ প্রচারণা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রবাসীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ কর্মসূচিতে যথারীতি দেশের মতো এ প্রবাসেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ছাত্রলীগ।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ৩৫ লাখ টাকা তুলে দেন এ ফান্ডের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একই কাজ করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও চাঁদা তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ পরিচালক মীর আবুল কাশেমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য এ অর্থ উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে প্রদান করেন লোক প্রশাসন বিভাগ। টাকা প্রদানের সময় ওই বিভাগের সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান, অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার এবং বিভাগের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে তহবিল সংগ্রহে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের নামে রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজির প্রস্তাব দিয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।
পদ্মা সেতু নিয়ে সম্প্রতি সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে স্পিকার বলেন, আমার একটা প্রস্তাব আছে। প্রত্যেক কলে ২৫ পয়সা নিয়ে দেশকে সেতু নির্মাণে সহায়তা করা যায়। এতে অনেক পয়সা আসবে। এ ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য আহ্বান জানান স্পিকার।
পদ্মা সেতুর নামে চাঁদা তোলা প্রসঙ্গে সাবেক ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান আমার দেশকে বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তুলতে হলে আইন করতে হবে। অন্যথায় এটা বৈধ হবে না। স্বেচ্ছায় কেউ এ ফান্ডে টাকা দিতে পারেন। কিন্তু নির্দেশনা দিয়ে বেতনের টাকা কেটে রাখা যাবে না।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৯ জুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। একই অভিযোগে ঋণচুক্তি বাতিল করে এডিবি। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু করার পক্ষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ঘোষণা আসার পর পরই চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের পথ ধরে চাঁদা তুলতে নেমে পড়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও।

বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং কবিতা ও গানে তারেক রহমান



২০০৪ সালের গোড়ার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে বিএনপির ততকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান সারাবিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইন্টারনেট এবং ফোনের মাধ্যমে প্রায় দু ঘন্টা সময় ধরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। যদিও সেই সময় দেশে কথিত “ডিজিটাল বাংলাদেশ“ নামে কোন শ্লোগান ছিলোনা। তবে তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে একটি আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কার্যকর পদক্ষেপ ছিলো। ছিলো বাংলাদেশকে ই-গভার্নেন্স এর আওতায় আনার বাস্তবমূখী উদ্যোগ। 
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে বসেই জনতার রায়ে বিএনপিকে বিজয়ী করার সকল পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ করা হয়। ওই নির্বাচনে বিপুল জয় পায় বিএনপি। এর মাধ্যমে একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ রাজনীতিক হিসেবে দল ও জনগণের কাছে নিজেকে সফলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হন তৃনমুল থেকে রাজনীতি শুরু করা তারেক রহমান। 
সঙ্গত: কারণেই বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। হাওয়া ভবন এবং তারেক রহমানের কার্যক্রম সম্পর্কে দেশে বিদেশে অনেকের মনেই ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। জন্ম নেয় অনেক ইতিবাচক নেতিবাচক প্রশ্নেরও। ফলে সকল কার্যক্রমে সদা সতর্ক ছিলেন তারেক রহমান।
কেউ যেনো তার কিংবা হাওয়া ভবনের নাম ভাঁঙ্গিয়ে সরকারে কিংবা প্রশাসনে অন্যায় সুবিধা নেয়ার চেষ্টা না করতে পারেন সে ব্যাপারে যথাযথ তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সরকার গঠনের মাত্র এক বছরের মাথায়ই ২০০২ সালের জুন মাসে হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি তার ফোন এবং ফ্যাক্স নম্বর মিডিয়ায় সরবরাহ করে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তার নাম ভাঁঙ্গিয়ে কেউ কোথাও কোন দূর্নীতি কিংবা অনিয়মের আশ্রয় নিলে তাকে জানাতে। স্পষ্ট করেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, হাওয়া ভবন কোন তদবির কিংবা কারো উপর খবরদারির জায়গা নয়। এটি ¯্রফে দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও বর্তমানে দেশে-বিদেশে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্ষমতায় থাকার প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনা তার ফোন এবং ই-মেইল নম্বর দেশের জনগণকে জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, কেউ তার ও তার পরিবারের নামে দূর্নীতি কিংবা অবৈধ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে তাকে যেন জানানো হয়। মজার বিষয় হলো, জনগণের উদ্দেশ্যে নিজের  ফোন ও ফ্যাক্স নাম্বার জানিয়ে দেয়ার এই কাজটি এখন থেকে ঠিক দশ বছর আগে ২০০২ সালেই হাওয়া ভবনে বসে করেছিলেন তারেক রহমান।  
যাইহোক, ২০০১ সালে ব্এিনপি সরকার গঠনের পর তারেক রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে তার কাজের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছিলেন। সারাদেশ ঘুরে বেড়িয়ে তৃনমুল পর্যায়ের জনগনের চাহিদা এবং জনপদের মৌলিক সমস্যাগুলোর  চিহ্নিত করেছিলেন। এরপর হাওয়া ভবনের কার্যালয়ে বসে একটি ডাটাবেইস তৈরী করে ওইসব সমস্যাগুলো প্রায়োধিকার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ততকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দলের পক্ষ থেকে তুলে দিয়েছেন।  বিএনপি চেয়ারপার্সনকে সহায়তা করার জন্য দেশের প্রতিটি জেলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার চালচিত্র,সমস্যা ও সম্ভাবনা, দলের সর্বস্তরের নেতাদের নাম ঠিকানা সবকিছুই তিনি কম্পিউটারে সংরক্ষণ করেছিলেন। প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে দলের সর্বস্তরের নেতৃত্বকে কিভাবে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় সেই পলিসি নির্ধারণ করেছিলেন। সারাদেশে নিজ দলের রাজনৈতিক শক্তিকে সামাজিক বিপ্লবের হাতিয়ারে পরিণত করে কিভাবে প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায় সেই পথ বাতলে দিয়েছেন। যৌতুকের অভিযোগ থেকে সমাজকে মুক্তি দেয়া, জন্ম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভ’মিকা রাখা, অযথা রাজনৈতিক বিতর্কে লিপ্ত না হয়ে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় করার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে ইতিবাচক ভ’মিকা পালন করতে পারে সেই কাজগুলো সারাদেশে দলের নেতাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। সারাদেশে দলের নেতাদের কাজে বার্তা পৌছে দিয়ে বলেছেন, শুধু কথা নয় কাজ, শুধু স্বপ্ন দেখা নয় প্রয়োজন স্বপ্নের বাস্তবায়ণ, রাজনীতিই একমাত্র পেশা হতে পারেনা বরং প্রত্যেকেরই বৈধ আয়ের একটি উতস থাকা চাই। তিনি মনে করেন, রাজনীতি মানে শুধু নেতাদের বক্তৃতাবাজি নয়, বরং দেশের প্রতিটি এলাকার প্রতিটি স্তরের নেতারা তার স্বীয় এলাকার মানুষের সকল সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভ’মিকা রাখবেন। রাজনৈতিক স্বার্থের চেয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জনগণের সেবার এগিয়ে যাবেন, এভাবেই রাজনীতিকে গণমুখী করতে হবে। তার বাংলাদেশের ৫৪ হাজার বর্গমাইলের সীমানাতেই তার রাজনৈতিক চিন্তার গন্ডি সীমাবদ্ধ ছিলোনা। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন তিনি বলেন, যৌক্তিক ও আইনগতভাবেই বাংলাদেশের সীমানা আরো বাড়ার সুযোগ রয়েছে। তার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রীয় কোন দায়িত্বে না থেকেও তিনি তার কাজেকর্মে একজন ভিশনারী রাজনৈতিক নেতার পরিচয় রেখেছেন। তার দল ক্ষমতায় থাকার সময় স্বল্প কয়েকটি বিদেশ যাত্রায় বাংলাদেশের উন্নয়ণে তিনি তার প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়েছেন। ওই সময়টিতে তিনি একবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সেই সফরকে প্রমোদভ্রমনে রুপান্তরিত না করে বরং কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। একান্ত বৈঠক করেছেন মাইক্রোসফটের রাজা বিল গেটসের সঙ্গে। এখানেই তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্য অনেক রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে তিনি ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির গুনগত সংস্কার এবং তৃনমুল জনগণের জীবনমাণ উন্নয়ণে তার ইতিবাচক চিন্তা দেশে বিদেশে তাকে তৃতীয় বিশ্বের ভিন্নধর্মী একজন রাজনৈতিক নেতার ইমেজ এনে দিয়েছিলো। ফলে দেশে বিদেশে তার কার্যক্রম মানুষের মধ্যে যেমন আগ্রহের সৃষ্টি করেছে একইসঙ্গে নিন্দুকের নিন্দাবাণেও জর্জরিত হয়েছেন তিনি। এমনই এক পরিস্থিতিতে তারেক রহমান ২০০৫ সালে হাওয়া ভবনে বসেই মুখোমুখি হন প্রবাসী বাংলাদেশীদের।
প্রবাসীদের সঙ্গে তারেক রহমানের সেই বৈঠকটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাতিক্রম এবং নানা বৈশিষ্টের কারণেই অনন্য। বরং বলা যেতে পারে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বাস্তব মহড়া ছিলো হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওই বৈঠকটি। এ কারণেই ওই বৈঠকটি সম্পর্কে একটু বিস্তারিত উল্লেখ করা প্রয়োজন বলেই মনে করি।
হাওয়া ভবনে প্রবাসী বাংলাদেশীদেও বৈঠকটি ছিলো অনলাইনে। প্রত্যেক প্রবাসীই যিনি যার নিজ নিজ দেশ থেকে তারেক রহমানকে ফোনে কিংবা ইন্টারনেটে সরাসরি প্রশ্নœ করেছেন নি:সংকোচে। অনলাইনেই তাতক্ষনিক জবাবও পেয়েছেন প্রতিটি প্রশ্নের। দু একটি প্রশ্ন শুনতে খানিকটা অপ্রিয় মনে হলেও তারেক রহমান জবাব দিয়েছেন সাবলীলভাবে। ২০০১ সালে বিএনপি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর এক পর্যায়ে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয়। এ নিয়ে বিরোধীমহলে কানাঘুষা ছিলো। অনলাইনে একজন প্রশ্নকর্তা সরাসরি তারেক রহমানকে জিজ্ঞেস করেন কিভাবে তিনি হঠাত করেই দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে তারেক রহমান জবাব দেন, তিনি হঠাত করেই দলের যুগ্ম মহাসচিব হননি। তিনি প্রথমে নিজ জেলা বগুড়ায় বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। তারপর একজন কর্মী হিসেবে  দলের জন্য বছরের পর বছর কাজ করেন। এরপর ২০০২ সালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এক বৈঠকে তাকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রস্তাব যথানিয়মে দলের চেয়ারপার্সনের অনুমোদন পায়। 
‘কবিতা ও গান ডটকম‘ নামে ওয়েব ভিত্তিক একটি সংগঠন তারেক রহমানের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওই অনলাইন বৈঠকটির আয়োজন করেছিলো। নিউইয়র্কে বসে “কবিতা ও গান ডটকম“ সংগঠনটির অধিকর্তা প্রবাসী সাংবাদিক আমান-উদ-দৌলা পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালণা করেন। একইসময় হাওয়া ভবনে বসে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন “কবিতা ও গান ডটকম“ এর অপর সংগঠক বিশিষ্ট গীতিকার জুলফিকার রাসেল। প্রবাসী প্রশ্নকর্তারা ছাড়াও হাওয়া ভবনে তিনজন সাংবাদিকের একটি প্যানেল ছিলো। সাংবাদিক প্যানেলে ছিলেন সেই সময় এনটিভির বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার, অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের চীফ রিপোর্টার মেসবাহ আহমেদ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও বার্তা সংস্থা ইউএনবি‘র সিনিয়র করেসপনডেন্ট সালেহ শিবলী। সাংবাদিকরাও প্রশ্ন করেন তারেক রহমানকে।  হাওয়া ভবনে সকাল পৌনে এগারোটা শুরু হয়ে থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই অনলাইন বৈঠকটি চলে। ওই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানী, সুইডেন, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইউক্রেইন, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তারেক রহমানকে প্রশ্ন করেন। সবমিলিয়ে তারেক রহমান কমপক্ষে ২৫টি প্রশ্নের জবাব দেন। এরমধ্যে ছিলো তারেক রহমানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, তার বিরুদ্ধে কেন দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ, প্রবাসীদের জন্য সরকারের উদ্যোগসহ প্রিয় অপ্রিয় অনেক প্রশ্ন।
ততকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তার (তারেক রহমানের) বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ করেছেন, অভিযোগটি কিভাবে খন্ডাবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, পত্র পত্রিকায় দেখেছি, শেখ হাসিনা একবার বলেন আমি বিদেশে ১১ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছি, আবার বলেন ১৭শ হাজার কোটি টাকা, আবার বলেন ৩৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ সেই সময় বাংলাদেশের উন্ন্য়ণ বাজেটই ছিলো মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, নিজের পদমর্যাদার কারণেই বিরোধী দলীয় নেত্রীর অভিযোগের মধ্যেও দায়িত্বশীলতা থাকা দরকার। তারপরও শেখ হাসিনা যেহেতু অভিযোগ করেছেন, প্রমাণ করার দায়িত্বও তার। তবে আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশে থাকেন না, তারা সবাই বাংলাদেশেই থাকেন। বাংলাদেশই তাদের প্রিয় মাতৃভ’মি। বিদেশে তাদের বাড়ী নেই। অতএব তাদের টাকা বিদেশে পাচারেরও প্রয়োজন নেই। অনলাইনে প্রবাসীদের সঙ্গে তারেক রহমানের এই ব্যতিক্রমধর্মী সওয়াল জওয়াব সেই সময় দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলো।
ওয়েব ভিত্তিক সংগঠন “কবিতা ও গান ডটকম“ কোন সংবিধিবদ্ধ নিউজ মিডিয়া কিংবা বার্তা সংস্থা নয়। তবুও কেন ওই সংগঠনের মাধ্যমে অনলাইনে প্রবাসীদের মুখোমুখি হলেন তারেক রহমান এমন প্রশ্নেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেই সময় হাওয়া ভবনের মুখপাত্র আশিক ইসলাম। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক আমান-উদ-দৌলা এবং সাংবাদিক গীতিকার জুলফিকার রাসেলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তারা তারেক রহমানকে প্রবাসীদের মুখোমুখি করতে চান। তবে সেটি সামনাসামনি নয়। অনলাইনে, “কবিতা ও গান ডটকম“ নামক সংগঠনের মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে প্রথমেই আলোচনায় আসে “কবিতা ও গান ডটকম“ কোন সংবাদ সংস্থা নয় কিংবা কোন প্রথাগত নিউজ মিডিয়া নয়। অতএব এই  সংগঠনের মাধ্যমে তারেক রহমান প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুখোমুখি হলে জনগণ বিষয়টি কিভাবে নেবে? তারপরও “কবিতা ও গান ডটকম“ সংগঠনটির মাধ্যমেই তােেরক রহমান প্রবাসীদের মুখোমুখি বসতে রাজী হন বিশেষত: দু‘টি কারণে। এক, বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে একটি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছিলো, গঠন করেছিলো পৃথক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে কম্পিউটার দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করানোর পাশাপাশি সরকার ও প্রশাসনকেও তথ্য ও প্রযুক্তির আওতায় আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ইন্টারনেট সুবিধা সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহজলভ্য করতেও গ্রহণ করেছিলো বাস্তবমুখী  পদক্ষেপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে “কবিতা ও গান ডটকম“র মাধ্যমে অনলাইনে সারাবিশ্বের প্রবাসীদের মুখোমুখি হওয়া মানে শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দেয়াই নয় বরং এই উদ্যোগটির মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির বার্তাটিও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে পৌছে দেয়ার সুযোগ ঘটবে। দুই, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের উন্নয়ণে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখছে। সঙ্গতকারণেই মাতৃভ’মি ছেড়ে দুর দেশে থাকা প্রবাসীদের মনে নিজ দেশ সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, ওইসব প্রশ্নের জবাব তারা অনেক সময়্ই সহজে পায়না। সুতরাং তাদের সকল প্রশ্নেরও জবাব দেয়া যাবে।
এই চিন্তা থেকেই “কবিতা ও গান ডটকম“ নামক সংগঠনটির মাধ্যমে তারেক রহমান অনলাইনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একইযোগে বিশ্বের কমপক্ষে ১৯টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের মুখোমুখি হন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ“ শ্লোগাণের বিপরীতে বরং এখন থেকে অরো অর্ধযুগ আগেই ২০০৪ সালে  নিজের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে অধুনালুপ্ত হাওয়া ভবনে বসেই তারেক রহমান কবিতা ও গান ডটকম নামক ওয়েব ভিত্তিক সংগঠনটির মাধ্যমে কথিত ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বাস্তব নমুনা দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু তারেক রহমানের কোন সাফল্যই মানেই যেন আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। এ কারণে ২০০১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের দিনই প্রধান বিরোধীদল হুমকী দেয়, একদিনের জন্যও বিএনপিকে শান্তিতে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবেনা। গোড়া থেকেই বিএনপি সরকারের প্রতি অসহযোগিতা শুরু করে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার সরকারতো বটেই একইসঙ্গে বিএনপি তথা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির আগামী দিনের কান্ডারী তারেক রহমান আওয়ামী লীগ এবং এর সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত প্রতিহিংসার টার্গেটে পরিণত হন। কিভাবে দেশে বিদেশে তারেক রহমানের ইমেজ নষ্ট করা যায় সেই মিশন নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকেন শেখ হাসিনা এবং তার দল। এমনও লক্ষ্য করা গেছে, বিএনপি সরকারের সমালোচনার চাইতেও কখনো কখনো ব্যাক্তি তারেক রহমানই মনে হয়েছে শেখ হাসিনার সমালোচনার প্রধান শিকার। সেই শুরু থেকেই শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা তারেক রহমান সম্পর্কে দূর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের কল্পিত অভিযোগ করতে থাকেন। তারেক রহমান বরাবরই এসব অভিযোগের সঠিক তথ্য প্রমান চাইলেও সেই পথে কখনোই হাটেননি শেখ হাসিনা কিংবা তার দলের নেতারা।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখন থেকে কমপক্ষে আট বছর আগে ২০০৪ সালেই যেখানে তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা উত্থাপিত টাকা পাচারের অভিযোগের জবাব প্রমাণের জন্য শেখ হাসিনাকে আহবান জানিয়েছিলেন, আজো সেই অভিযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি তারেক রহমানের উপর ব্যাপক নির্যাতন নীপিড়ন  করলেও ২০০৭ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করা উদ্দিন চক্রের দুই বছরের অনিয়মতান্ত্রিক সরকারও তার বিরুদ্ধে কোন দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। 

২.
কথা রেখেছেন শেখ হাসিনা। পুরো পাঁচ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও অনেক অশান্তি সৃষ্টি করেছেন শেখ হাসিনা ও তার দল। ইতিহাস সাক্ষী, সেই সুপরিকল্পিত অশান্তির পথ ধরেই উদ্দিন চক্র ২০০৭ সালে ক্ষমতা দখল করে। বাংলাদেশে আমদানী হয় ঘোড়া। সেই ঘোড়ায় চড়ে তথাকথিত “ডিজিটাল বাংলাদেশ“ শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতার দখল নেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে কি বোঝায় এটি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের কাছেও এখনো পরিষ্কার নয়। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে কিছু ব্যাক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ এখন মানুষের মুখে মুখে। “সাপোর্ট টু ডিজিটাল“ বাংলাদেশ নামে সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ইনফো সেন্টার খোলার নামে সরকারের ভান্ডার থেকে শতশত কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে কিনা ভবিষ্যতে দুদকের নতুন কোন চেয়ারম্যানের সময় হয়ত এ বিষয়ে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তথ্য বেরিয়ে আসবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে “ইনোভেশন ফেয়ারের“ নামে কোন বিশেষ ব্যক্তিকে “ইনোভেট“ করা হয়েছে নাকি আসলেই আইটি সেক্টরে কাজের কাজ কিছু হয়েছে।  “ডিজিটাল বাংলাদেশ“ এর অগ্রগতি প্রমাণ করতে ঢাকডোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি কম্পিউটার প্রকল্প উদ্বোধন করে জানিয়েছেন, এখন থেকে নাকি স্বল্পমূল্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কম্পিউটার পাওয়া যাবে। সাম্প্রতিক সময়ের খবর হলো, ওই প্রকল্পটি এখন চলছেনা।
অপ্রিয় হলেও সত্য বর্তমান সরকারের “ডিজিটাল“ গণনার গোড়ায়ই গলদ। ২০০৮ সালে ঘোড়া মইন পরিচালিত হুদার নেতৃত্বে বেহুদা নির্বাচনে এমনও দেখা গেছে, কোন কোন কেন্দ্রের মোট ভোটারের চেয়ে ভোটের সংখ্যা বেশী। নির্বাচনে নাটের গুরু মইন উ এমনভাবে ডিজিটাল ক্যু করেছেন যাতে নির্বাচনের পর সুযোগমতো নিরাপদে দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। তবে গোড়ায় গলদ থাকার কারণে সরকারের ডিজিটাল অনেক ক্ষেত্রেই ঠিকমতো কাজ করছেনা। চারদিকেই হযবরল অবস্থা। তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে সরকার। শেখ হাসিনা ক্রমেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন নিজের দল, দেশ এবং আন্তর্জাতিকমহল থেকে। তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সিলেটের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলা এখন চলছে হালাকু কিংবা চেঙ্গিস খাঁদের আদর্শে। ছাত্রলীগের অত্যাচার নির্যাতনের বিরক্ত বিব্রত ও অসহায় শেখ হাসিনা ক্ষমতারোহণের বছর খানেকের মধ্যেই বলতে বাধ্য হয়েছিলেন “ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই“। অবস্থা বেগতিক দেখে এবার ক্ষমতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় নিজেকে পরিবারের নিকটজন থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, তিনি এবং তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের সন্তানরা ছাড়া আর কেউ তার পরিবারের সদস্য নয়। শেখ হাসিনা এখন আর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, মাশরুর হোসেন, ব্যারিস্টার তাপস কিংবা শেখ সেলিমসহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দায়িত্ব নিতেও রাজী নন বলে মনে হচ্ছে। অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের হাতে সরকারের মন্ত্রীর দূর্নীতি হাতেনাতে ধরা পড়ার পর সরকারের এখন ত্রাহি অবস্থা। শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মুখে স্বভাবসুলভ বিষ ছড়ালেও তাদের রাগ ভাঁঙ্গাতে আবুল মন্ত্রীকে কোরবানী দিয়েও রেহাই মিলছেনা। আর নোবেলজয়ী ড. ইউনুস ইস্যুটি এখন সরকারের গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত। এই সরকারের জন্য এখন কোথাও কোন সুখবর নেই। এই অবস্থায় অমুক কিংবা তমুককে দোষ দেয়া বা ষড়যন্ত্র খোজা অথবা গলাবাজি করে দম নেয়া ছাড়া সরকারের কাছে আপাতত: আর কোন পথ খোলা নেই বলেই মনে হয়। অতএব সরকার যখন গলাবাজি করে সার্বিক পরিস্থিতির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বোঝানোর চেষ্টায় লিপ্ত ঠিক এমনি এক সময় সরকারের প্রিয় মানুষ ড. এটিএন মাহফুজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন “বাচাল“। তবে পত্রিকার খবর বেরিয়েছে, অপ্রিয় সত্য কথা বলার মর্ম টের পেয়ে ড. মাহফুজ আদালতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে “বাচাল“ বলেননি বরং তিনি নিজেকেই নিজে “বাচাল“ বলেছেন। যাইহোক, কে “বাচাল“ আপাতত: এই বিতর্কে না গিয়ে একটি বিষয় দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায়, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গঠনের জন্য কাজ শুরু করার পথে বিএনপি‘র বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমান এই ধরনের  বাচালতারই নির্মম শিকার।  
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এরশাদের দিল্লি বেড়ানোর নেপথ্যে



সৈয়দ আবদাল আহমদ
পতিত স্বৈরশাসক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাম্প্রতিক দিল্লি সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখরোচক আলোচনা চলছে। ঢাকায় এরশাদের সহাস্য অবতরণের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং লীগের বহির্ভূত ভারতপন্থী রাজনৈতিক মহলেও চাপা উল্লাস লক্ষণীয়। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ভারতীয় মিডিয়ার বক্তব্য এবং জাপা চেয়ারম্যানের বিবৃতিতে এ ধারণাই তৈরি হয়েছে যে, বাংলাদেশে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চলতে থাকবে এবং ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি। বাংলাদেশের জনগণের করার কিছু নেই। সুযোগসন্ধানী এই পতিত স্বৈরশাসককে দিল্লিতে প্রায় সরকারপ্রধানের মর্যাদায় বেড়িয়ে আনাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে অপমান করারই অপচেষ্টা। দিল্লিতে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতারাও আজ পর্যন্ত প্রবেশ ঘটেনি। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, জাপা চেয়ারম্যান জাতীয় স্বার্থের তুলনায় তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক লাভালাভ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আশাও পেয়েছেন ইতিবাচক। যিনি তিস্তার পানির জন্য রংপুরে লংমার্চ করেছিলেন, তিনি দিল্লিতে গিয়ে বলে এসেছেন—পানির পরিমাণ নয়, চুক্তিই হলো গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি স্থগিতের পর বিলাতের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট ‘হ্যালো দিল্লি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশবিনাশী হাসিনা সরকারের লাগাম টেনে ধরতে দিল্লিকে আহ্বান করেছিল। অনেকের মতে, দিল্লি এই অনুরোধকে পাশ কাটিয়ে উল্টো মহাজোট সরকারের অগণতান্ত্রিক যাত্রাকে দীর্ঘায়িত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনা সরকার যে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে চলেছে, তাতে এরশাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট হলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এরশাদের গাঁটবন্ধনকে পোক্ত রাখাটাই দিল্লির কাছে এখন প্রধান এজেন্ডা। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছ থেকে সবকিছু আদায় করে নেয়ার পর তা রক্ষা করতে ভারতের একশ্রেণীর রাজনীতিক মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে মনে হচ্ছে।
ছিয়াশির মতো আরেকটি সাজানো নির্বাচনের আশঙ্কা জেগে উঠছে। ভারত-পছন্দ আরেক রাজনীতিক হাসানুল হক ইনু যখন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার কথা বলেন, তখন এরশাদের দিল্লি বেড়ানোর গোমর বুঝতে বাকি থাকে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ অধ্যাপক মন্তব্য করেছেন, স্বৈরশাসক এরশাদ এতই ভাগ্যবান যে, পতন হতে হতেও তার পতন হয় না। ভারতের কোচবিহারে জন্ম নেয়া সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পাক মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের প্রধান ছিলেন। অথচ তার এই অপরাধ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধের কথিত চেতনাবাদীরা নীরব। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানফেরত এরশাদকে ভারতের দেরাদুনে এনডিসি কোর্সে অংশ নিতে পাঠিয়ে দেন এবং সেখানে থাকা অবস্থায়ই তার পদোন্নতি ঘটে। ভারতীয়দের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে সখ্য। বাংলাদেশের বেশ কতকগুলো উচ্চপর্যায়ের হত্যাকাণ্ডে যার নামটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে, তা উল্লেখ না করেই বলা যায়, বিএনপির নির্বাচিত সরকারকে বন্দুকের নলে অপসারণ করে এরশাদ যখন দায়িত্ব নেন, ভারত এবং তদানুগত আওয়ামী লীগ তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের ক্ষমতা দখল সম্পর্কে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’—আমি অখুশি নই। আওয়ামী লীগের মুখপত্র বাংলার বাণী এরশাদের সামরিক শাসনকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। ক্ষমতা দখলের পর এরশাদ সরকার দেশকে ভারতমুখী করে তোলে এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের করা গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি থেকে গ্যারান্টি ক্লজ তুলে নেয়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে তার ঐতিহাসিক পতন ঘটলেও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির নির্বাচিত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এরশাদ পার পেয়ে যান। অথচ তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী স্বৈরাচারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একমঞ্চে আসার সুযোগ ছিল না। প্রায় সবসময়ই কোচবিহারের এ সন্তান ভারতের রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট থেকেছেন, যার জন্য এখন বাংলাদেশের রাজনীতির পার্শ্বচরিত্র হিসেবে তিনি টিকে আছেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখন ভারত প্রকাশ্যে নাক গলাতে চাইছে কয়েকটি কারণে— এক. উল্লেখযোগ্য কিছু না দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছ থেকে প্রায় সব সুবিধা ভারত নিয়ে গেছে। সেসব রক্ষার জন্য ভারত আগ্রহী। মহাজোট সরকারকে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে জেতাতে ভারত যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেছে, তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় রাখতে চায়। ভারতের সাবেক এক সেনাপ্রধান তখন মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। দুই. দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক মুরব্বি হিসেবে ভারত আর যোগ্য নয়—এমন ধারণা পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ভারতের ব্যর্থতা তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এরই মধ্যে বলেছেন, বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতার চুক্তিও সই হয়েছে; যার ফলে দু’দেশের সেনারা এখন যৌথ মহড়া শুরু করতে যাচ্ছেন। এসব কারণে ভারত শঙ্কিত। তিন. বাংলাদেশের রাজনৈতিক ওলট-পালট হতে পারে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত বছর প্রকাশ্যেই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃশাসনের জন্য এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়ার গঠনমূলক রাজনীতি ও ইতিবাচক ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের জনগণ সহাস্যেই সরকারের বিপক্ষে চলে গেছে এবং সরকারের পতন ঘটাতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় দিল্লিতে এরশাদের গুরুত্ব বেড়েছে। চার. বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যে কোনো মূল্যে নিরাপত্তা-সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চায়। দিল্লিতে এরশাদের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক সেজন্যই। কিন্তু এক্ষেত্রে পতিত স্বৈরাচারের প্রতি ভারতের নির্ভরতা ভ্রান্তিবিলাসেরই নামান্তর। বাংলাদেশের স্বৈরশাসকদের কেন জানি ভারতের পছন্দ। ওয়ান-ইলেভেনের পর বাংলাদেশের দুই নেত্রী যখন জেলে, তখন এই এরশাদের হোতা জেনারেল মইনকে ভারত দাওয়াত দিয়ে নিয়ে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিল। ঘোড়া উপহার দিয়েছিল। এমনকি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর ভারতের বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা বাংলাদেশ সফরে এসে বিমানবন্দর থেকে সোজা সেনানিবাসে গিয়ে সেনাপ্রধান মইনের অফিসে চলে যান।
বাংলাদেশের জনগণের দুর্বার আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র যদি ফ্যাসিবাদ জারি রেখে শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা বানাতে চায়, তবে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ আসন্ন। এ মত একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার।
এরশাদের ভারত কানেকশন
এরশাদের ভারত কানেকশন বহু পুরনো। প্রত্যক্ষদর্শী একজন প্রবীণ সাংবাদিকের এ নিয়ে একটি মজার কাহিনী আছে। ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্টের। ওই সাংবাদিক পাকিস্তান ও ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করতে দেশ দুটি সফর করেছিলেন। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে লাহোর থেকে তিনি ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে ১৫ আগস্ট গিয়েছিলেন দিল্লি। সেখানে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান দেখে তিনি দিল্লি ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টে ফ্লাইটের অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বিমানবন্দরের একজন শিখ কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা বলার সুযোগ হয়। বাংলাদেশী সাংবাদিক পরিচয় জেনে ওই কর্মকর্তা তাকে বলেন, আপনি দারুণ একটি বিষয় মিস করেছেন। একটু আগে এলেই আপনার দেশের প্রেসিডেন্টকে পেতেন। ওই সময় এরশাদের ভারত আসার কথা ছিল না। তার ভারত সফরের শিডিউলও ছিল না। দিল্লির কর্মকর্তাটি বললেন, খুব ভোরে এয়ারফোর্সের একটি বিমানে করে এরশাদ দিল্লি আসেন এবং ৩-৪ ঘণ্টা পর আবার চলে যান। শিখ কর্মকর্তা এটাও বললেন, এমন শিডিউলবিহীন সফরে এরশাদ প্রায়ই দিল্লি আসেন।
ক্ষমতায় থাকাকালে এবং ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সব সময় এরশাদ ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে আস্থায় আছেন। প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিক তিনি ভারত সফরে যান। এরশাদ তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সব সময়ই বলে থাকেন দিল্লির নেক নজর ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকা কোনোটাই সম্ভব নয়। এরশাদের রাজনৈতিক উত্থান এবং এখনও রাজনীতিতে টিকে থাকার পেছনে দিল্লির আশীর্বাদ রয়েছে।
চতুর একনায়ক, বহুরূপী রাজনীতিক
বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ‘প্রিয় দেশবাসী’ বলে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদ। চতুর এই সামরিক একনায়ক এরশাদ একনাগাড়ে দেশ শাসন করেন নয় বছর। দেশ পিছিয়ে যায় অনেক বছর। ক্ষমতা দখলের একপর্যায়ে রাজনীতিতেও জড়ালেন। দলছুট আদর্শহীন বিভিন্ন মতের নেতাদের নিয়ে দল গঠন করলেন, নাম দিলেন জাতীয় পার্টি। এরশাদ ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করেন, গুলি ও ট্রাক চালিয়ে। তিনি প্রকাশ্যে রাজপথে ঘটিয়েছেন অসংখ্য হত্যাকাণ্ড। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙেচুরে নিঃশেষ করে দেন। নির্বাচনকে তিনি পরিণত করেন হাস্যকর বিষয়ে। এরশাদ দুর্নীতি করেছেন সপরিবারে। তার চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ‘ফার্স্ট লেডি’ রওশন এরশাদ দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি করেছেন প্রত্যক্ষভাবে। ওই সময় বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল পারিবারিক রাষ্ট্রে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মী, মন্ত্রী-আমলা। দুর্নীতিকে এরশাদই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।
একনায়ক এরশাদের ৯ বছরের শাসনামল বিশৃঙ্খলার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। এরশাদ নিজে যেমন দুর্নীতি করেছেন, অন্যকেও দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। তার ইঙ্গিতে একদিকে গুলি করে ট্রাক চালিয়ে যেমন ছাত্র হত্যা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তিনি টুপি মাথায় ছুটে গেছেন মসজিদে।
রাজনীতিতে এরশাদ একেবারেই অবিশ্বস্ত। অনেকেই এরশাদকে বলেন, রাজনীতির ‘আনপ্রেডিক্ট্যাবল ক্যারেক্টার’ বা অনুমান অসম্ভব চরিত্র। এরশাদের প্রকৃত রূপ বোঝাতে প্রখ্যাত শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান একটি বিখ্যাত কার্টুন এঁকেছিলেন। সেই কার্টুনের ক্যাপশন ছিল—‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে।’

বুধবার, ২২ আগস্ট, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সাংবাদিক নির্যাতন কুষ্টিয়া স্টাইল



সাংবাদিক নির্যাতনের নতুন স্টাইল চালু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। সংবাদ প্রকাশিত হলে বা সংবাদ প্রকাশ করার উদ্যোগ নিলেই মামলা, হামলা হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনকে ব্যবহার করে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ, পত্রিকা বন্ধের জন্য নোটিশ দেয়া হচ্ছে। চলতি মাসেই কুষ্টিয়াতে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ সাংবাদিককে। প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে একটি স্থানীয় দৈনিকের। কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত আরেকটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদককে নোটিশ দেয়া হয়েছে পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করতে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে থানার ভেতরে ওসির সামনে। এখানকার সাধারণ মানুষ এটাকে আখ্যা দিয়েছে সাংবাদিক নির্যাতনের কুষ্টিয়া স্টাইল হিসেবে। 
১৪ই আগস্ট। রাত সাড়ে নটায় ভেড়ামারা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে দৈনিক মানবজমিনের ভেড়ামারা প্রতিনিধি শাহজামালকে। গ্রেপ্তারের সময় তাকে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। ১২ই আগস্ট দুপুর বেলায় শাহজামাল ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিনের খবর পত্রিকার ভেড়ামারা প্রতিনিধি ওয়ালিউল ইসলাম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহ করতে যান। ওই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি মনঃপূত হয়নি কর্তাব্যক্তিদের। ১৩ই আগস্ট ওই প্রকল্পের ভেড়ামারা উপজেলা কর্মকর্তা তহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় সাংবাদিক শাহজামাল ও ওলিউল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করলে পুলিশ শাহজামালকে গ্রেপ্তার করে। ওলিউল ইসলাম এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 
ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১৯শে আগস্ট রাতের বেলা কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার সম্পাদক এম যোবায়ের রিপন ও ওই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমারকে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার পর থানায় মামলা রেকর্ড করে বলে অভিযোগ আছে। ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলা করেছেন কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রবিউল ইসলাম। মামলা দায়ের করার একদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় তাদের সম্পাদিত পত্রিকায়। ওই দুই সাংবাদিক এখন কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। কেবল তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সাংবাদিক যোবায়ের রিপনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। 
এ ঘটনার সাত দিন আগে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখনও হাজতবাসে আছেন মোহনা টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মওদুদ রানা ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দিনের খবরের সম্পাদক ফেরদৌস রিয়াজ জিল্লু। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন আসিবুর রহমান রিজু। দৈনিক দিনের খবরের সম্পাদক ফেরদৌসকে কেবল গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হননি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, দৈনিক দিনের খবর পত্রিকাটির প্রকাশনাও বাতিল করেছেন। জেলা প্রশাসক পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করতে নোটিশ দিয়েছেন ড. আমানুর রহমানকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক কুষ্টিয়া থেকে ডেইলি কুষ্টিয়া নামে একটি ইংরেজি দৈনিক প্রকাশ করে আসছিলেন। এর আগে কুষ্টিয়া সদর থানার অভ্যন্তরে ওসির সামনে সন্ত্রাসীরা হামলা করে মারধর করে দৈনিক সমকাল পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানাকে। গত শবেবরাতে কুষ্টিয়া সদর থানায় ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ। ওই মামলার শিকার হন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, সমকালের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা, স্থানীয় দৈনিক দেশ তথ্যের সম্পাদক হালিমুজ্জামান এবং ওই পত্রিকার সাংবাদিক মোমেসুর রহমান। 
হাজী রবিউল ইসলামের ও আসিবুর রহমানের দায়ের করা মামলায় নাম উল্লেখ না করে আরও  অজ্ঞাত কয়েক জনের নাম উল্লেখ থাকায় আতঙ্কে আছেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা। অনেকই জানিয়েছেন, তারা রাতে বাড়িতে ঘুমান না। দিনের বেলায় চলেন সতর্ক হয়ে শহরের অলিগলি দিয়ে। তাদের আশঙ্কা- যে কোন সময় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হতে পারেন তারা। তাদের ওপর নেমে আসতে পারে নির্যাতন। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক মানবজমিনকে বলেন, আমার জানা মতে চাঁদাবাজি মামলায় মাত্র একজন সাংবাদিক জেলে আছে। অন্য চার জনের কথা আমি জানি না। তাছাড়া আমি তো মামলা করি না, পাবলিকে মামলা করলে আমি কি করতে পারি? মানবজমিনের ভেড়ামারা প্রতিনিধি শাহজামালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার নাম তহিদুল ইসলাম। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মামলা করতে হলে তো বিভাগীয় অনুমতি নেয়ার বিধান আছে। জেলা প্রশাসক বলেন, আমি ওই তহিদুল ইসলামকে চিনিই না। তিনি বলেন, দৈনিক দিনের খবরের প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে তার কাগজপত্র জাল বলে। এখানে সাংবাদিকদের ওপর কোন নির্যাতন হচ্ছে না। সাংবাদিকরা ভাল আছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশি তদন্ত শেষে মামলা গ্রহণ করার কথা? কিন্তু কুষ্টিয়াতে তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা নেয়া হচ্ছে? জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা তদন্ত করেই মামলা নিচ্ছি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা বলে রাজনৈতিক চাপে মামলা নিয়েছেন কিনা? এসপি বলেন, ঠিক তা নয়। আমরা আমাদের গতিতেই কাজ করছি। তবে আমি বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখবো।

Ads