মাহমুদুর রহমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৫ জন সঙ্গী-সাথীর বিরাট বহর নিয়ে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করে দু’দিন আগে দেশে ফিরেছেন। এবারের অলিম্পিকে মাঠে বাংলাদেশের প্রতিযোগীর সংখ্যা সাকুল্যে ৫ জন। তাদের দেখভাল করার জন্য ২২ জন কর্মকর্তার এক বিশাল বহর লন্ডনে গেছে! আর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উত্সাহ দিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ঘুরে এলেন ৫৫ জন সঙ্গী নিয়ে। আমার ধারণা, এমন কাণ্ড কেবল বাংলাদেশেই ঘটতে পারে। পুত্রসহ বিদেশে বসবাসকারী পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে লন্ডনে দেখা হওয়ায় ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীর ৫ দিনের অবকাশ যাপন আনন্দেই কেটেছে। বিশেষ করে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন পালনের সুযোগ নিশ্চয়ই মা হিসেবে শেখ হাসিনার জন্য বাড়তি পাওয়া ছিল।
তবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার একটি নালিশ আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ জোগানের জন্য যেখানে শিশুদের পর্যন্ত টিফিনের পয়সা বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, সে অবস্থায় জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর অলিম্পিক দেখার বিলাস ত্যাগ করাটা শোভনীয় ছিল। যাই হোক, আনন্দ ভ্রমণ শেষে প্রধানমন্ত্রী এখন আবার পূর্ণোদ্যমে দেশের উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্বের আর খুব একটা সময় অবশিষ্ট নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণতা, গুম, ক্রসফায়ারসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগসহ সর্বত্র নির্বিচার দলীয়করণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং সর্বোপরি বল্গাহীন দুর্নীতির জন্য মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনামল দেশে ও বিদেশে একবাক্যে নিন্দিত হয়েছে। দেখা যাক বাকি সোয়া বছরে সরকার তার ক্ষয়প্রাপ্ত বিকট ভাবমূর্তির খানিকটা অন্তত মেরামত, চুনকাম, ইত্যাদি করতে পারে কি না। যাকগে, এবারের লন্ডন সফরে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন, তারই কয়েকটি নিয়ে এ সপ্তাহের মন্তব্য-প্রতিবেদন লিখতে বসেছি।
পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালনা বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কৌশল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দৃশ্যত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন। ২৫ জুলাই পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সম্ভাবনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এক সরকারি তথ্য বিবরণী প্রকাশ করেন। সেই আনুষ্ঠানিক দলিলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি না করার প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বশংবদ আমলা, কথিত স্বাধীন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও তার আগের অবস্থান থেকে ইউটার্ন দিয়ে ‘কাকতালীয়ভাবে’ একই দিনে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, তিনিও এখন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির যৌথ তদন্তে সম্মত আছেন। এই গোলাম রহমান জুলাই মাসের ১ তারিখে সরকারের প্রায় প্যারালাল (ঢ়ধত্ধষষবষ) অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা পালনকারী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে পাশে বসিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেদিন দু’জনই আইনের নানারকম ভাষা প্রয়োগে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য ছিল, ‘কিন্তু, বিশ্বব্যাংক এক্সটার্নাল প্যানেল অব ইনভেস্টিগেটিভ এক্সপার্ট নিয়ে এলো। আমরা বললাম, আমাদের আইনে এটা হয় না। আমরা বিশ্বব্যাংককে তথ্য দিতে পারি। কারণ তারা আমাদের কাছে নালিশ করেছে। আমাদের আইনে আছে যে, আমাদের যে তদন্ত সেটা আমরা জানাতে বাধ্য। কিন্তু অ্যাডভাইজারি কমিটিতে নয়।’ কী আশ্চর্য, মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের চাপের কাছে দুদককে নতিস্বীকার করতে আইন আর বাধা হয়ে দাঁড়াল না!
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকায় খবর বের হলো যে, ওই দিনেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। আমরা ভাবলাম বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বোধহয় তলে তলে একটা রফা হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিদেশ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল সরকার হয়তো বিশ্বব্যাংকের যাবতীয় শর্ত পূরণে রাজি হয়েছে। অদ্ভুত বাংলায় কাব্য করে কথা বলায় খ্যাত বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবেগের ঠেলায় মন্তব্য করলেন, পদ্মা সেতুতে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার দিন খুব দূরে নয়। দেশবাসী আর এক জ্যোত্স্নাপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করে ধন্য হলেন। কিন্তু, দেশবাসীকে চমকে দিয়ে অর্থমন্ত্রীর নতুন উদ্যোগ এবং ওবায়দুল কাদেরের কাব্যিক আবেগে বরফ ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নিলেন না স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুলাই সকালেই লট-বহর নিয়ে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন। বিকেলে লন্ডন পৌঁছে সন্ধ্যাতেই সেখানে বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বোমা ফাটানো বক্তব্য রাখেন। দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে সদ্য পদত্যাগী, দেশে-বিদেশে মহা-বিতর্কিত মন্ত্রী আবুল হোসেনকে তিনি একেবারে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট দেন। এ রকম একজন সাহসী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিককে কেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো, সে বিষয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ দেয়ার তদবির করার অভিযোগ আনেন এবং পার্সেন্টেজ খাওয়ার দাবি করেন। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কোন কর্মকর্তা পার্সেন্টেজ খেতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়টি শেখ হাসিনা আর খোলাসা করেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য লজ্জা-শরম শিকেয় তুলে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বিষোদগার বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধের চিত্রকেই বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দেশবাসীকে চমকে দেয়া এই কার্যকলাপে অনুমিত হচ্ছে যে, তিনি আর পদ্মা সেতু প্রকল্পে উত্সাহী নন। নইলে অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ উদ্যোগকে এভাবে ভেস্তে দিতে পারতেন না। প্রশ্ন হলো, দরিদ্র দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নবিরোধী এমন হঠকারী ভূমিকায় কেন অবতীর্ণ হয়েছেন? নিন্দুকরা বলছে যে, তিনি কিছুতেই বিশ্বব্যাংকের যৌথ তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্ত মেনে নিতে পারছেন না। এখানে উল্লেখ্য, নিক্সন চৌধুরী নামের যে ব্যক্তিকে দুদক ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে শোনা যায়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করলে এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, নিক্সন চৌধুরী কি ঘুষের অর্থ নিজে নিচ্ছিলেন নাকি তিনি সরকারের আরও শীর্ষ পর্যায়ের কারও এজেন্ট হিসেবে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে লেনদেন করেছেন? স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের এমন ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নেয়া সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়।
ঘটনার এই নাটকীয়তার প্রেক্ষাপটে যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন অথবা উভয়কে গত সাত দিনে পদত্যাগ করতে হতো। কিন্তু, বাংলাদেশ বলে কথা! প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত পরদিন রাগত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানালেন, ইআরডি থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে কোনো পত্র নাকি প্রেরণ করা হয়নি। এসব আজগুবি সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর খানিকটা রাগও ঝাড়লেন বিব্রত অর্থমন্ত্রী। সুতরাং, পদ্মা সেতু আপাতত সেই তিমিরেই। সেতুতে বসে দোল খেতে খেতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে আরও কতদিন বাকি, সেটা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই ভালো বলতে পারবেন। এদিকে অবশ্য দুর্নীতির আর এক বরপুত্র, কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানের দাবি করেছেন। হতে পারে তারা হয়তো এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর চাইতেও বেশি ওয়াকিবহাল। হীরক রাজার দেশে আমজনতার গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কী?
ইলিয়াস আলী গুম : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন। বিএনপি আমলে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী নেতা জামালউদ্দিনের গুম প্রসঙ্গ টেনে তিনি ইলিয়াসের গুমের ঘটনাকে প্রকারান্তরে সমর্থন করে দাবি করেন, বিএনপি গুম চালু করে দিয়ে গেছে, এখন রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই ভেবে অবাক লাগে যে, একই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও শিশুকন্যা সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি শিশুটিকে আদর করে তার পিতাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন তো শেখ হাসিনা যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতনের তত্ত্ব হাজির করেননি। নাকি ইলিয়াসের কন্যার সঙ্গে তার আচরণ কেবল রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ ছিল? আসল মানুষটিকে লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেই শুধু দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আরও একটি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যেদিন ইলিয়াসের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল সেদিন কি তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতার পরিণতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন? তিনি কি জানতেন যে ইলিয়াস আলীর পতন হয়ে গেছে? পতনের নির্দেশটিও কি তারই ছিল? যাই হোক, ইলিয়াস আলীর প্রতি না হয় ধরেই নিলাম রাজনৈতিক কারণে তার ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। সুতরাং ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়ায় তিনি কিছুমাত্র ব্যথিত নন এবং তাকে খুঁজে বের করার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দায়িত্ববোধ তাকে পীড়িত করে না। ঢাকা মহানগরীর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের গুম হওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের দায়দায়িত্বের ব্যাপারটি হয়তো তিনি স্বীকার করতে চাইবেন না। কিন্তু, ইলিয়াস আলী এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গাড়ির দরিদ্র চালকদ্বয় অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের সঙ্গে তো ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির’ কন্যা, দেশরত্ন ও জননেত্রী উপাধিতে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার কথা নয়। তাহলে তার আমলে এদেরকে কেন গুম হতে হলো? সরকারের বিশেষ বাহিনীর এই চরম নিন্দনীয় দুষ্কর্মকেও কি প্রধানমন্ত্রী ন্যায্য বলে মনে করেন? তিনি দাবি করছেন রাতারাতি নাকি অবস্থার উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর রাতারাতি কত বছরে হয়, সেটা আমার জানা নেই। তবে তার সরকারের প্রায় চার বছর যে পার হয়ে গেছে, সে কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমাদের সরকারপ্রধানরা তাদের আমলের সব ব্যর্থতার জন্য পূর্ববর্তী সরকারকে দোষারোপ করার মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। এ দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভাব দেশকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছে বলেই আমার ধারণা। আমাদের কোনো ভুল হতে পারে না, এজাতীয় বিকৃত দর্শন থেকে তারা মুক্ত হতে না পারলে দেশের মুক্তিও সুদূর পরাহত। রাজনীতিকরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্লেষণের অভ্যাস করতে পারলে জনগণের অনেক মুশকিল আসান হয়ে যেত।
আগামী নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন থেকেই যে দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন করিয়ে ফেলতে চান, এ বিষয়টি বিএনপির কয়েকজন অতি আশাবাদী নেতা ব্যতীত দেশের সবাই বোঝেন। সম্প্রতি তিনি বলতে শুরু করেছেন যে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে তিনি সম্ভবত ভারত, যুক্তরাজ্য ইত্যাদিকে বুঝিয়েছেন। প্রথম কথা হলো ওইসব রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেভাবে বিকাশ লাভ করেছে তার শতকরা এক ভাগও বাংলাদেশে আমরা করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার অসুস্থ মানসিকতা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনীতিকদের নেই। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, গণবিরোধী পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বাংলাদেশে কোনো প্রকার গণতান্ত্রিক নির্বাচন করাই সম্ভব নয়। সংবিধানের বর্তমান অবস্থায় এদেশে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন অনুষ্ঠিত হতে পারে মাত্র, যার মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকার আরও ৫ বছর তাদের অপশাসন অব্যাহত রাখার বৈধতা পাবে।
যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম শুনলেই ক্ষমতাসীনরা অনেকটা জলাতঙ্ক রোগীর মতো আচরণ করে থাকেন, তারই কাছাকাছি একটি পদ্ধতি পাকিস্তানের মতো সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রও সম্প্রতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং সেক্যুলার সুশীলদের(?) মধ্যে পাকিস্তান নামটিতে এক প্রকার এলার্জি থাকলেও সাম্প্রতিককালে ওই দেশটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অন্তত একটা প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার বিপরীতে এক-এগারো পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করা হয়েছে। নির্লজ্জ দলীয়করণের বিষময় প্রতিক্রিয়ায় আমার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের অবস্থা দেশবাসী দেখতে পাচ্ছেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং দলবাজ উপাচার্য এই ত্রয়ী মিলে কেমন করে ধ্বংস করছেন, এ নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হতে পারে। যাই হোক, নির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
লন্ডন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের বিষয়ে তার পুরনো কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই অবস্থান থেকে তিনি এক চুলও সরেননি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ কী হতে চলেছে, সেটি নির্ভর করবে বিরোধী দলের আগামী আন্দোলনের সফলতা অথবা ব্যর্থতার ওপর। সরকারের হাতে এখন অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, স্পিকার আবদুল হামিদ এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মধ্যে যে কোনো একজনকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব বিরোধী দলের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কোনো বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করায় বাধা রয়েছে। তবে বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যারই কিছুমাত্র ধারণা রয়েছে, তিনিই বুঝবেন চারটি বিকল্পেরই মূল কথা কিন্তু অভিন্ন। অর্থাত্ যে কোনো বিকল্পেই নির্বাচনের সময়ে প্রকৃত ক্ষমতা থাকছে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার হাতেই। বিএনপি একটি বিকল্পেও সম্মতি না জানালে তখন তাদের বিরুদ্ধে একগুঁয়েমির অভিযোগ তোলা অত্যন্ত সহজ হবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রেখে লে. জে. এরশাদকে দিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টি করারও একটা সুযোগ শেখ হাসিনা গ্রহণ করতে পারেন। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যে সেই অপচেষ্টায় ২০০৭ সালের মতো শক্তভাবে বাধা দেবে, সেরকম আলামত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আগামী বছর মার্চে একটি আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথাও বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে একটি ক্ষুদ্রকায় স্বল্পকালীন মন্ত্রিসভার অধীনে নির্বাচন হওয়াও অসম্ভব নয়। সরকারি দলের এতগুলো বিকল্পের বিপরীতে বিরোধী দলের করণীয় আমি অন্তত মাত্র একটিই দেখতে পাচ্ছি। গত পৌনে চার বছরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যেসব বেশুমার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাজোট জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়েছিল, সেগুলোর কোনোটি বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা স্বল্পবিত্ত শ্রেণীর জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। একটিমাত্র ডিমের দাম ১০ টাকা, এক হালি কলার দাম ৫০ টাকা, এই দ্রব্যমূল্যের চাপ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। সুতরাং, জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করা ভিন্ন বিরোধী দলের হাতে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। ২০১৩ সালের অন্তিম লগ্নে সময়-সুযোগমত আন্দোলনের আশায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বসে থাকলে তাদের হয়তো কষ্ট করে আর কোনো আন্দোলন করার প্রয়োজনই পড়বে না। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হলে দলটির সাময়িক অবকাশ তখন চিরস্থায়ী অবকাশে রূপ নিতে পারে।
পাদটীকা : লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গানের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। খানিকটা আদিরসাত্মক গানটি হলো, কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে শ্যামে পাইলো ভ্রমরা, ময়ূর বেশেতে সাজন রাধিকা। প্রধানমন্ত্রী যখন গানটি গাওয়া শুরু করেন তখন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারাও নাকি কণ্ঠ মিলিয়েছেন। রাধা-কৃষ্ণের উদ্দাম ও অবৈধ প্রেম সম্পর্কিত গান একজন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে গাইতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তুলে লাভ নেই। তার রুচিবোধ যে ভিন্ন প্রকৃতির, সে প্রমাণ তিনি সংসদে বহুবার রেখেছেন। একমাত্র আমার দেশ ব্যতীত বাংলাদেশের মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর গান গাওয়ার সংবাদটি সেলফ সেন্সর করেছে। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত মিতভাষী একজন রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এমন কাণ্ড তার পক্ষে ঘটানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তবু, তিনি যদি এরকম কোনো আচরণ করেই ফেলতেন তাহলে বাংলাদেশের কতগুলো পত্রিকায় সেই সংবাদ শিরোনাম হতো, সেটাই ভাবছি। আমার দেশ পত্রিকা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর প্রধানমন্ত্রী কি সাধ করে রুষ্ট হন?
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
তবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার একটি নালিশ আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ জোগানের জন্য যেখানে শিশুদের পর্যন্ত টিফিনের পয়সা বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, সে অবস্থায় জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর অলিম্পিক দেখার বিলাস ত্যাগ করাটা শোভনীয় ছিল। যাই হোক, আনন্দ ভ্রমণ শেষে প্রধানমন্ত্রী এখন আবার পূর্ণোদ্যমে দেশের উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্বের আর খুব একটা সময় অবশিষ্ট নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণতা, গুম, ক্রসফায়ারসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগসহ সর্বত্র নির্বিচার দলীয়করণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং সর্বোপরি বল্গাহীন দুর্নীতির জন্য মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনামল দেশে ও বিদেশে একবাক্যে নিন্দিত হয়েছে। দেখা যাক বাকি সোয়া বছরে সরকার তার ক্ষয়প্রাপ্ত বিকট ভাবমূর্তির খানিকটা অন্তত মেরামত, চুনকাম, ইত্যাদি করতে পারে কি না। যাকগে, এবারের লন্ডন সফরে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন, তারই কয়েকটি নিয়ে এ সপ্তাহের মন্তব্য-প্রতিবেদন লিখতে বসেছি।
পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালনা বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কৌশল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দৃশ্যত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন। ২৫ জুলাই পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সম্ভাবনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এক সরকারি তথ্য বিবরণী প্রকাশ করেন। সেই আনুষ্ঠানিক দলিলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি না করার প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বশংবদ আমলা, কথিত স্বাধীন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও তার আগের অবস্থান থেকে ইউটার্ন দিয়ে ‘কাকতালীয়ভাবে’ একই দিনে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, তিনিও এখন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির যৌথ তদন্তে সম্মত আছেন। এই গোলাম রহমান জুলাই মাসের ১ তারিখে সরকারের প্রায় প্যারালাল (ঢ়ধত্ধষষবষ) অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা পালনকারী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে পাশে বসিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেদিন দু’জনই আইনের নানারকম ভাষা প্রয়োগে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য ছিল, ‘কিন্তু, বিশ্বব্যাংক এক্সটার্নাল প্যানেল অব ইনভেস্টিগেটিভ এক্সপার্ট নিয়ে এলো। আমরা বললাম, আমাদের আইনে এটা হয় না। আমরা বিশ্বব্যাংককে তথ্য দিতে পারি। কারণ তারা আমাদের কাছে নালিশ করেছে। আমাদের আইনে আছে যে, আমাদের যে তদন্ত সেটা আমরা জানাতে বাধ্য। কিন্তু অ্যাডভাইজারি কমিটিতে নয়।’ কী আশ্চর্য, মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের চাপের কাছে দুদককে নতিস্বীকার করতে আইন আর বাধা হয়ে দাঁড়াল না!
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকায় খবর বের হলো যে, ওই দিনেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। আমরা ভাবলাম বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বোধহয় তলে তলে একটা রফা হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিদেশ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল সরকার হয়তো বিশ্বব্যাংকের যাবতীয় শর্ত পূরণে রাজি হয়েছে। অদ্ভুত বাংলায় কাব্য করে কথা বলায় খ্যাত বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবেগের ঠেলায় মন্তব্য করলেন, পদ্মা সেতুতে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার দিন খুব দূরে নয়। দেশবাসী আর এক জ্যোত্স্নাপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করে ধন্য হলেন। কিন্তু, দেশবাসীকে চমকে দিয়ে অর্থমন্ত্রীর নতুন উদ্যোগ এবং ওবায়দুল কাদেরের কাব্যিক আবেগে বরফ ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নিলেন না স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুলাই সকালেই লট-বহর নিয়ে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন। বিকেলে লন্ডন পৌঁছে সন্ধ্যাতেই সেখানে বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বোমা ফাটানো বক্তব্য রাখেন। দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে সদ্য পদত্যাগী, দেশে-বিদেশে মহা-বিতর্কিত মন্ত্রী আবুল হোসেনকে তিনি একেবারে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট দেন। এ রকম একজন সাহসী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিককে কেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো, সে বিষয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ দেয়ার তদবির করার অভিযোগ আনেন এবং পার্সেন্টেজ খাওয়ার দাবি করেন। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কোন কর্মকর্তা পার্সেন্টেজ খেতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়টি শেখ হাসিনা আর খোলাসা করেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য লজ্জা-শরম শিকেয় তুলে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বিষোদগার বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধের চিত্রকেই বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দেশবাসীকে চমকে দেয়া এই কার্যকলাপে অনুমিত হচ্ছে যে, তিনি আর পদ্মা সেতু প্রকল্পে উত্সাহী নন। নইলে অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ উদ্যোগকে এভাবে ভেস্তে দিতে পারতেন না। প্রশ্ন হলো, দরিদ্র দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নবিরোধী এমন হঠকারী ভূমিকায় কেন অবতীর্ণ হয়েছেন? নিন্দুকরা বলছে যে, তিনি কিছুতেই বিশ্বব্যাংকের যৌথ তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্ত মেনে নিতে পারছেন না। এখানে উল্লেখ্য, নিক্সন চৌধুরী নামের যে ব্যক্তিকে দুদক ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে শোনা যায়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করলে এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, নিক্সন চৌধুরী কি ঘুষের অর্থ নিজে নিচ্ছিলেন নাকি তিনি সরকারের আরও শীর্ষ পর্যায়ের কারও এজেন্ট হিসেবে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে লেনদেন করেছেন? স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের এমন ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নেয়া সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়।
ঘটনার এই নাটকীয়তার প্রেক্ষাপটে যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন অথবা উভয়কে গত সাত দিনে পদত্যাগ করতে হতো। কিন্তু, বাংলাদেশ বলে কথা! প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত পরদিন রাগত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানালেন, ইআরডি থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে কোনো পত্র নাকি প্রেরণ করা হয়নি। এসব আজগুবি সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর খানিকটা রাগও ঝাড়লেন বিব্রত অর্থমন্ত্রী। সুতরাং, পদ্মা সেতু আপাতত সেই তিমিরেই। সেতুতে বসে দোল খেতে খেতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে আরও কতদিন বাকি, সেটা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই ভালো বলতে পারবেন। এদিকে অবশ্য দুর্নীতির আর এক বরপুত্র, কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানের দাবি করেছেন। হতে পারে তারা হয়তো এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর চাইতেও বেশি ওয়াকিবহাল। হীরক রাজার দেশে আমজনতার গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কী?
ইলিয়াস আলী গুম : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন। বিএনপি আমলে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী নেতা জামালউদ্দিনের গুম প্রসঙ্গ টেনে তিনি ইলিয়াসের গুমের ঘটনাকে প্রকারান্তরে সমর্থন করে দাবি করেন, বিএনপি গুম চালু করে দিয়ে গেছে, এখন রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই ভেবে অবাক লাগে যে, একই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও শিশুকন্যা সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি শিশুটিকে আদর করে তার পিতাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন তো শেখ হাসিনা যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতনের তত্ত্ব হাজির করেননি। নাকি ইলিয়াসের কন্যার সঙ্গে তার আচরণ কেবল রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ ছিল? আসল মানুষটিকে লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেই শুধু দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আরও একটি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যেদিন ইলিয়াসের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল সেদিন কি তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতার পরিণতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন? তিনি কি জানতেন যে ইলিয়াস আলীর পতন হয়ে গেছে? পতনের নির্দেশটিও কি তারই ছিল? যাই হোক, ইলিয়াস আলীর প্রতি না হয় ধরেই নিলাম রাজনৈতিক কারণে তার ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। সুতরাং ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়ায় তিনি কিছুমাত্র ব্যথিত নন এবং তাকে খুঁজে বের করার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দায়িত্ববোধ তাকে পীড়িত করে না। ঢাকা মহানগরীর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের গুম হওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের দায়দায়িত্বের ব্যাপারটি হয়তো তিনি স্বীকার করতে চাইবেন না। কিন্তু, ইলিয়াস আলী এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গাড়ির দরিদ্র চালকদ্বয় অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের সঙ্গে তো ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির’ কন্যা, দেশরত্ন ও জননেত্রী উপাধিতে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার কথা নয়। তাহলে তার আমলে এদেরকে কেন গুম হতে হলো? সরকারের বিশেষ বাহিনীর এই চরম নিন্দনীয় দুষ্কর্মকেও কি প্রধানমন্ত্রী ন্যায্য বলে মনে করেন? তিনি দাবি করছেন রাতারাতি নাকি অবস্থার উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর রাতারাতি কত বছরে হয়, সেটা আমার জানা নেই। তবে তার সরকারের প্রায় চার বছর যে পার হয়ে গেছে, সে কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমাদের সরকারপ্রধানরা তাদের আমলের সব ব্যর্থতার জন্য পূর্ববর্তী সরকারকে দোষারোপ করার মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। এ দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভাব দেশকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছে বলেই আমার ধারণা। আমাদের কোনো ভুল হতে পারে না, এজাতীয় বিকৃত দর্শন থেকে তারা মুক্ত হতে না পারলে দেশের মুক্তিও সুদূর পরাহত। রাজনীতিকরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্লেষণের অভ্যাস করতে পারলে জনগণের অনেক মুশকিল আসান হয়ে যেত।
আগামী নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন থেকেই যে দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন করিয়ে ফেলতে চান, এ বিষয়টি বিএনপির কয়েকজন অতি আশাবাদী নেতা ব্যতীত দেশের সবাই বোঝেন। সম্প্রতি তিনি বলতে শুরু করেছেন যে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে তিনি সম্ভবত ভারত, যুক্তরাজ্য ইত্যাদিকে বুঝিয়েছেন। প্রথম কথা হলো ওইসব রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেভাবে বিকাশ লাভ করেছে তার শতকরা এক ভাগও বাংলাদেশে আমরা করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার অসুস্থ মানসিকতা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনীতিকদের নেই। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, গণবিরোধী পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বাংলাদেশে কোনো প্রকার গণতান্ত্রিক নির্বাচন করাই সম্ভব নয়। সংবিধানের বর্তমান অবস্থায় এদেশে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন অনুষ্ঠিত হতে পারে মাত্র, যার মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকার আরও ৫ বছর তাদের অপশাসন অব্যাহত রাখার বৈধতা পাবে।
যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম শুনলেই ক্ষমতাসীনরা অনেকটা জলাতঙ্ক রোগীর মতো আচরণ করে থাকেন, তারই কাছাকাছি একটি পদ্ধতি পাকিস্তানের মতো সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রও সম্প্রতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং সেক্যুলার সুশীলদের(?) মধ্যে পাকিস্তান নামটিতে এক প্রকার এলার্জি থাকলেও সাম্প্রতিককালে ওই দেশটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অন্তত একটা প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার বিপরীতে এক-এগারো পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করা হয়েছে। নির্লজ্জ দলীয়করণের বিষময় প্রতিক্রিয়ায় আমার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের অবস্থা দেশবাসী দেখতে পাচ্ছেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং দলবাজ উপাচার্য এই ত্রয়ী মিলে কেমন করে ধ্বংস করছেন, এ নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হতে পারে। যাই হোক, নির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
লন্ডন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের বিষয়ে তার পুরনো কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই অবস্থান থেকে তিনি এক চুলও সরেননি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ কী হতে চলেছে, সেটি নির্ভর করবে বিরোধী দলের আগামী আন্দোলনের সফলতা অথবা ব্যর্থতার ওপর। সরকারের হাতে এখন অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, স্পিকার আবদুল হামিদ এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মধ্যে যে কোনো একজনকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব বিরোধী দলের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কোনো বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করায় বাধা রয়েছে। তবে বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যারই কিছুমাত্র ধারণা রয়েছে, তিনিই বুঝবেন চারটি বিকল্পেরই মূল কথা কিন্তু অভিন্ন। অর্থাত্ যে কোনো বিকল্পেই নির্বাচনের সময়ে প্রকৃত ক্ষমতা থাকছে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার হাতেই। বিএনপি একটি বিকল্পেও সম্মতি না জানালে তখন তাদের বিরুদ্ধে একগুঁয়েমির অভিযোগ তোলা অত্যন্ত সহজ হবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রেখে লে. জে. এরশাদকে দিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টি করারও একটা সুযোগ শেখ হাসিনা গ্রহণ করতে পারেন। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যে সেই অপচেষ্টায় ২০০৭ সালের মতো শক্তভাবে বাধা দেবে, সেরকম আলামত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আগামী বছর মার্চে একটি আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথাও বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে একটি ক্ষুদ্রকায় স্বল্পকালীন মন্ত্রিসভার অধীনে নির্বাচন হওয়াও অসম্ভব নয়। সরকারি দলের এতগুলো বিকল্পের বিপরীতে বিরোধী দলের করণীয় আমি অন্তত মাত্র একটিই দেখতে পাচ্ছি। গত পৌনে চার বছরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যেসব বেশুমার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাজোট জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়েছিল, সেগুলোর কোনোটি বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা স্বল্পবিত্ত শ্রেণীর জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। একটিমাত্র ডিমের দাম ১০ টাকা, এক হালি কলার দাম ৫০ টাকা, এই দ্রব্যমূল্যের চাপ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। সুতরাং, জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করা ভিন্ন বিরোধী দলের হাতে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। ২০১৩ সালের অন্তিম লগ্নে সময়-সুযোগমত আন্দোলনের আশায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বসে থাকলে তাদের হয়তো কষ্ট করে আর কোনো আন্দোলন করার প্রয়োজনই পড়বে না। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হলে দলটির সাময়িক অবকাশ তখন চিরস্থায়ী অবকাশে রূপ নিতে পারে।
পাদটীকা : লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গানের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। খানিকটা আদিরসাত্মক গানটি হলো, কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে শ্যামে পাইলো ভ্রমরা, ময়ূর বেশেতে সাজন রাধিকা। প্রধানমন্ত্রী যখন গানটি গাওয়া শুরু করেন তখন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারাও নাকি কণ্ঠ মিলিয়েছেন। রাধা-কৃষ্ণের উদ্দাম ও অবৈধ প্রেম সম্পর্কিত গান একজন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে গাইতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তুলে লাভ নেই। তার রুচিবোধ যে ভিন্ন প্রকৃতির, সে প্রমাণ তিনি সংসদে বহুবার রেখেছেন। একমাত্র আমার দেশ ব্যতীত বাংলাদেশের মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর গান গাওয়ার সংবাদটি সেলফ সেন্সর করেছে। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত মিতভাষী একজন রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এমন কাণ্ড তার পক্ষে ঘটানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তবু, তিনি যদি এরকম কোনো আচরণ করেই ফেলতেন তাহলে বাংলাদেশের কতগুলো পত্রিকায় সেই সংবাদ শিরোনাম হতো, সেটাই ভাবছি। আমার দেশ পত্রিকা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর প্রধানমন্ত্রী কি সাধ করে রুষ্ট হন?
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন