রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১২

বিশ্বদরবারে অপমানিত বাংলাদেশ



অলিউল্লাহ নোমান
রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের নিত্যসঙ্গী। দেশটি জন্মের পর থেকে যেন ক্রান্তিকাল আর কাটছে না। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বাংলাদেশ কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ক্রান্তিকাল যেন আর শেষ হচ্ছে না। নেতানেত্রীদের বক্তৃতায় ক্রান্তিকাল লেগেই থাকে। বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রান্তিকাল গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে গোটা জাতিকে। পুরনো সমস্যার সঙ্গে একের পর এক যোগ হচ্ছে নতুন সঙ্কট।
চলমান সঙ্কট ও বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডেরই অংশ। দেশ পরিচালনা করেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। রাজনৈতিক নেতৃত্বই সঙ্কট ও অস্থিরতা তৈরির নেপথ্যে কাজ করে। এর জন্য ভুক্তভোগী হন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। একটু পেছনের ফিরে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার ভয়াবহ রূপ কেমন ছিল তা দেখা গেছে ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এক সময়ে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা। তাদের কর্মসূচির কারণে তখন পুরো দেশ ছিল অচল। শুধু তাই নয়, অনেক প্রাণহানিও ঘটেছে সে আন্দোলনে। সেই আন্দোলনে হরতাল চলাকালে সচিবালয়ে আসার পথে পিকেটাররা দিগম্বর করেছেন অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তখন সাফ কথা ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোনো ফর্মুলা মানব না।’ আর এখন তার সুর একেবারে উল্টো। তিনি এখন বলছেন, কোনো অবস্থায়ই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে। খুবই সুন্দর বক্তব্য। সংবিধানের প্রতি তার প্রকট দরদ। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ২৫ মার্চ রাতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা করা হয়। তখন কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের প্রতি এতটা দরদ দেখাননি। তখন তিনি বলেছিলেন, জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত তাই করতে হয়েছিল।
সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের ফর্মুলার প্রস্তাব তখনও ছিল। কমনওয়েলথ মহাসচিব স্যার নিনিয়ানসহ দেশি-বিদেশি বহু মধ্যস্থতাকারী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। বিচার মানি তবে তালগাছ আমার অবস্থানের কারণে কোনো কিছুই ফলপ্রসূ হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কিছুই মানতে রাজি ছিলেন না। তার দাবি ছিল একটাই—তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। আর এই দাবি আদায়ের জন্য তিনি তখন কাছে টেনে নিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার এরশাদ ও হালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে যাদের বিচারের তোড়জোড় চলছে সেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের। তাদের সঙ্গে তিনি এক টেবিলে বসে বৈঠকই শুধু করেননি, একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। ১৯৯৪ সালে ২৭ জুন জাতীয় সংসদে তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর এক টেবিলে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেদিন তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার এক পাশে বসেছিলেন পর্যায়ক্রমে সাজেদা চৌধুরী, তত্কালীন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর তত্কালীন সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, রেলওয়ের কালো বিড়াল খ্যাত বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। অপর পাশে বসেছিলেন পর্যায়ক্রমে মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ, তত্কালীন এনডিপি নেতা বর্তমানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে নির্দলীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনার দাবি ছিল তখন অভূতপূর্ব। কিন্তু তত্কালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোর অদ্ভুত এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে তথাকথিত সুশীলরা।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের নামে তখন দেশ অচল করে দেয়া হয়েছিল। অপূরণীয় অনেক ক্ষতি হয়েছিল দেশের। আমদানি-রফতানির মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর অচল করে রাখা হয়েছিল দিনের পর দিন। এতে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তখন। একপর্যায়ে তত্কালীন বিএনপি সরকার এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে বিএনপি সরকার। এই সংশোধনীর ৩ দিনের মাথায় বিএনপি সরকার পদত্যাগ করলে দায়িত্ব নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি লেখালেখির মাধ্যমে ভারতের পক্ষে ওকালতি করছেন। ১৯৯৬ সালে ১২ জুন এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
২০০৫ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন তত্কালীন বিরোধী দল আবারও আন্দোলনে। সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে যিনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা তাকে মানতে নারাজ। এ নিয়েও তুমুল আন্দোলন। আওয়ামী লীগের দাবি ছিল বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্যই বিচারপতিদের চাকরির বয়স ২ বছর বাড়িয়েছেন চারদলীয় জোট সরকার। তাই এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন। লগি-বৈঠা দিয়ে রাজপথে মানুষ পিটিয়ে হত্যাযজ্ঞে উম্মত হয়ে উঠে কথিত আন্দোলনকারীরা। তাদের এ আন্দোলনেও আকুণ্ঠ সমর্থন দেয় আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও কথিত সুশীলরা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়ের দিনে রাজপথে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে প্রাণ হারান ৫ জন। শুধু প্রাণ হারাননি, তাদের লাশের ওপর লাফিয়ে উন্মত্ত নৃত্যে মেতে উঠেছিল লগি-বৈঠাধারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে জরুরি আইনের সরকার। সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত জরুরি আইনের সরকারকে স্বাগত জানান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মিত্ররা। কথিত সুশীল সমাজও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত জরুরি আইনের সরকারকে স্বাগত জানায়। জরুরি আইনের সরকার প্রতিষ্ঠা তাদের আন্দোলনের ফসল বলেও তখন দম্ভোক্তি করেছিলেন অনেক সুশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথায় কথায় বলতেন জরুরি আইনের সরকার হচ্ছে তাদেরই আন্দোলনের ফসল। টানা দুই বছর দেশজুড়ে মইন উদ্দিন ও ফখরুদ্দীনের জরুরি আইনের সরকার দোর্দণ্ড প্রতাপে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। একপর্যায়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় এসেই আদালতের একটি রায়ের অজুহাতে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি উঠিয়ে দেয়। এর স্থলে যা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা রীতিমত ভয়াবহ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে সংশোধিত সংবিধানের বিধানটি হচ্ছে—মেয়াদোত্তীর্ণের ৩ মাস আগে জাতীয় সংসদ বহাল রেখে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রীরা মন্ত্রী থাকবেন, এমপিরা এমপি থাকবেন। এই অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এমন বিধান নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অদ্ভুত বিধানটি সংবিধানে সংযোজন করে ক্ষমতাসীনদের মনে উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে জানান দিয়েছেন। তারা নির্বাচন-পরবর্তীতে ক্ষমতা ছাড়তে চান না। ভিশন ২০/২১ বলে তাদের যে প্রচারণা রয়েছে সে পর্যন্ত যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চান। নতুন দুনিয়ার কোনো দেশে যে রকম নিয়ম নেই, সেই বিধান কেন সংবিধানে জুড়ে দিলেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীতে একই সঙ্গে সংবিধানের আরও কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে, যা আরও ভয়াবহ। সব কাজে সর্বশক্তিমান আল্লার ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের যে মূলনীতি সংবিধানে ছিল সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডগুলোকে আওয়ামী সমর্থক মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও কথিত সুশীলরা এখনও সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ সমর্থন করেছিলেন, তারাই এখন আবার এই ব্যবস্থাটির বাতিল করাকেও সমর্থন করছেন বা চুপ করে নীরব সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। সৌভাগ্যবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সমর্থক মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা সব কাজেই তাকে সমর্থন দিচ্ছেন, বাহবা দিয়ে উত্সাহ যোগাচ্ছেন।
প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে উচ্চ আদালতের ঘোষিত রায়ের কপি এখনও বের হয়নি। বিচারকদের স্বাক্ষর হয়নি রায়ের কপিতে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে খয়রাতির ১০ লাখ টাকা ত্রাণ গ্রহণকারী বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হঠাত্ করেই মামলাটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়। কোনো কথা নেই, বার্তা নেই হঠাত্ করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বিশেষ বৃহত্তর বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা দীর্ঘদিনের পুরনো আপিলটি শুনানির তালিকায় উঠে আসে। হাইকোর্ট বিভাগে ৩ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। রায়ে বলা হয়েছিল, এটি মূল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ ৪ জন বিচারক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি বাতিল করে দেয়। তবে আপিল বিভাগের অপর ৩ জন বিচারক হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের পক্ষে অভিমত দেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের অভিমতে হাইকোর্ট বিভাগের রায়টি বাতিল হয়ে যায়। আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্তের পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধন করে নিয়েছে সরকার। অথচ রায়ে এখনও বিচারকরা স্বাক্ষর করেননি বলে জানা গেছে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর রায়টি লিখেছেন। অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পর আর শপথের মধ্যে থাকেন না। শপথের বাইরে গিয়ে কেউ রায় লিখতে পারেন কি-না এটি এখন বিতর্কিত বিষয়। তার লেখা রায়কে কর্মরত বিচারপতিরা সমর্থন করেন কি-না সেটা এখনও জানা যায়নি। যারা হাইকোর্ট বিভাগের রায়কে সমর্থন জানিয়েছেন তাদের অভিমতও লেখা হয়নি। অর্থাত্ পুরো রায়টি এখনও অদৃশ্য।
এখানে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সূত্রগুলোর খণ্ডিত কয়েকটি চিত্র উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়। এসব সিদ্ধান্ত বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে গভীর সঙ্কটে ঠেলে দেয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও বিপন্ন করে তুলছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত তোষণনীতি অনুসরণ করছে। বিনা মাশুলে ভারতকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদানসহ চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে আমাদের তিতাস নদীসহ ১৮টি নদী-খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরির মাধ্যমে ভারতের যান চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়। নদী-খাল হত্যার মাধ্যমে তৈরি রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে ভারতীয় যান বাংলাদেশের ভেতরে যাতায়াত করেছে। অতি সম্প্রতি বিনা মাশুলে নৌ-ট্রানজিট চলাচলের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ভারতীয় এসব যানে কী ধরনের পণ্য এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে পৌঁছানো হয় তা দেখার ও জানার কোনো সুযোগ আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর নেই। এতে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক নিরাপত্তা কতটা হুমকির মুখে পড়েছে তা নতুন করে ভাবতে হবে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই সেটা হচ্ছে, আমাদের সীমান্তে প্রতিদিন ভারত গুলি চালাচ্ছে। ভারতীয় হানাদার বাহিনীর বিএসএফের গুলিতে নিহত হচ্ছেন নিরীহ বাংলাদেশী নাগরিক। ভারতের কাঁটাতারে কিশোরী ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ গোটা দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছিল। এই মর্মান্তিক দৃশ্য শুধু হৃদয়স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও এরই মধ্যে দাবি তুলেছে। তারপরও টনক নড়ছে না ভারতীয় সরকার ও বিএসএফের। এর কারণ একটাই; বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের ভারত তোষণনীতি।
পরিশেষে বলা যায়, এই সরকারের দুর্নীতি আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকেও অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে লক্ষ-কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মারোয়ারি ব্যবসায়ীরা। পথে বসেছে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তহবিল প্রত্যাহার করেছে। অর্থমন্ত্রী পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক পুরো জাতিকে বিশ্ব দরবারে অপমানিত করেছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলতে চাই—সরকারের দুর্নীতির দায়ে অপমানের বোঝা পুরো জাতি বহন করতে পারবে না। আমরা নিরীহ জনগণ পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, সরকারের মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয়দের দুর্নীতির অপমানের দায় নিতে চাই না। বিশ্বের সামনে আর জাতি অপমানিত হোক—সেটাও কাম্য নয়। যারা এই অপমান অর্জনের জন্য দায়ী তাদের বিচার ও শাস্তি চাই।
লেখক : সাংবাদিক, বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক আমার দেশ

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads