॥ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ॥
পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে সরকার এখন বেসামাল। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি বেসামাল হয়েছেন বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী এমন একটা ভাব করছেন যাতে মনে হতে পারে, তিনি নিজেই যেন বিশ্বব্যাংকের মালিক। বিশ্বব্যাংককে দেখে নেয়া হবে, জবাবদিহি করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এমন সব উদ্ভট, আজগুবি ও অদূরদর্শী বক্তব্য পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যেন ভেবেছেন, এটিও একটি গ্রামীণ ব্যাংক। ইচ্ছা করলে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধানকেও যেকোনো মুহূর্তে কলমের এক খোঁচায় বের করে দিতে পারেন। এর পরিণাম কী হতে পারে? এর ফলে বিশ্বের অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী রূপ দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট কোনো ধারণা আছে এমনটা মনে হচ্ছে না। তবে এই পদ্মা সেতুর বিষয়ে লণীয় শেয়ালের হুক্কা হুয়া ধ্বনির মতো সারা দেশে রোয়াব ওঠেনি। সাধারণত দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী সত্য-মিথ্যা যাই বলেন, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সবাই শতমুখে সেই কথার প্রতিধ্বনি ফুটাতে থাকেন। এই যাত্রায়ই তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেল। এমনকি যেসব মন্ত্রী-নেতা তাদের অভব্য মন্তব্য করার জন্য বিশেষভাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, তারাও বলতে গেলে চুপ মেরেই আছেন।
দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রণালয় হারানো খামাখা মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাধারণত তার বিরক্তিকর অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করেন তিনিও খামোশ মেরে গেছেন। তবে তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নে ‘অবস্থা বুঝে’ ফিরে আসবে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, সব দাতাগোষ্ঠীর সাহায্য দরকার। এডিবি, আইডিবি ও জাইকাকে সাথে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করা হবে। আমরা সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। তবে এডিবিও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়েছে। জাইকাও বোধ করি একই রকম সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এদের যদি সাথে নিতে হয়, তার অর্থ হলো এদের অর্থ সাহায্য দরকার। যেকোনো প্রকল্পেই অল্প কিছু নিজস্ব ফান্ড থাকতেই হয়। আর শুধু সেটুকু দিয়ে পদ্মা সেতুর দু-চারখানা পিলারও নির্মাণ করা যাবে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন, আর কারো কাছে হাত পাতা হবে না, টাকা চাওয়া হবে না, নিজস্ব অর্থায়নে তিনি নির্মাণ করবেন। তখন সুরঞ্জিত বাবু কিভাবে অমন কথা বললেন সেটি প্রণিধানযোগ্য।
বেদিশা অর্থমন্ত্রী কখন কী বলে বসেন তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। প্রথম দিকে তিনি বলেছিলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে ফয়সালা হয়ে যাবে। তারপর বললেন, পদ্মা সেতু ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংককে আর কোনো অনুরোধ করা হবে না। গত বুধবার বলেন, বিশ্বব্যাংকের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে, শিগগিরই তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং অর্থায়ন চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করবে। বিশ্বব্যাংকের কাছে ধরনা দেয়া হবে না। এ কথা বলার ছয় ঘণ্টা পরই জেলা প্রশাসক সম্মেলন থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয় বিশ্বব্যাংককে আর অনুরোধ করা হবে না এটা ঠিক নয়, আমরা এর পুনর্বিবেচনা চাই।’ তার অর্থ কোনো ঘুরপথে হলেও বিশ্বব্যাংকের হাতে-পায়ে ধরা অব্যাহত আছে।
এ দিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য কখনো বলেননি যে, বিশ্বব্যাংককে একহাত নিয়ে নেবেন। তিনি বলেছেন, পুরনো গল্পই ‘এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়েছে তবে মালয়েশিয়াকে এখনো না বলা হয়নি। এ ছাড়া চীন থেকে প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো বিবেচনা করা হবে।’ তার অর্থ তিনি স্পষ্টই বোঝেন, এই প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করা সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ায় সরকারের মন্ত্রীরা নতুন এক কল্প ফাঁদতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পারলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সরকার নেবেই না। সরকার যোগাযোগ করতে শুরু করে মালয়েশিয়ার সাথে। মালয়েশিয়ার সরকারের অবকাঠামোবিষয়ক উপদেষ্টা সামি ভ্যলুকে দফায় দফায় দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় এনে সরকার জানায়, আর কোনো চিন্তা নেই। পদ্মা সেতুর সব অর্থ মালয়েশিয়া দেবে। এ দেশের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মালয়েশিয়ায় গিয়ে স্মারক ও সমঝোতা কাগজ সই করে আসেন। সেটাকে আরো আশাপ্রদ করে তোলার জন্য এমওইউ স্বারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজ্জাকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন।
এ রপর বলা হয়, মালয়েশিয়া থেকে পুরো অর্থপ্রাপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বারিত হবে। এ বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এরকম ঢাকঢোল পেটানোর ধুমধাম চলে। সে সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার এক রিপোর্টে বলেছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মালয়েশিয়া এক টাকাও বিনিয়োগ করবে না। তারা ঠিকাদারি করতে আগ্রহী। কার্যত বিশ্বব্যাংকের ওপর চাপ বাড়াতেই সরকার এসব গল্প প্রচার করেছিল। কিন্তু সে কৌশলে কোনো ফল হয়নি। বিশ্বব্যাংক দ্রুত তথ্যপ্রমাণ হাজির করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের চুক্তি বাতিল করে দেয়। চুক্তি বাতিল করে ৩০ জুন এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। ‘দুর্নীতির ঘটনায় বিশ্বব্যাংক চোখ বুজে থাকতে পারে না। তা উচিত নয় এবং থাকবেও না।’
মালয়েশিয়ার ঋণের ঢোল এখন আর তেমন করে পেটানো হচ্ছে না। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বুঝে গেছেন, জনগণের কাছে মালয়েশিয়ার দাওয়াই আর চলবে না। তাই এখন বলছেন, কারো কাছে হাত পাতব না। কেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ার সাথে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বারের কী হলো? আগের সরকারের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছিলেন, বিশ্বব্যাংকের সাথে একটা রফা না হলে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণে সমস্যা আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তো চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। এখন মালয়েশিয়ার সাথে চুক্তি করতে সমস্যা কোথায়? সে প্রশ্নের কেউ জবাব দিচ্ছে না। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটাই ধোঁকা ছিল বলে এখন মনে হচ্ছে। আর তাই এখন বলা হচ্ছে, কারো কাছে হাত পাতব না। নিজেদের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আরো একটি বিষয় এখানে প্রাসঙ্গিক, সেটি হলো প্রধানমন্ত্রী তার সরকারকে সাফফান সাফফা বলে দাবি করছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নিজে বলেছেন, দেশে ঘুষ ছাড়া এখন কোনো কাজই হয় না। সেটি পুলিশকে ১০ টাকা ঘুষ দেয়ার মতো নয়, এর বিস্তার অনেক ওপরে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চাকরিবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তিনি কী আর তা নিজ হাতে নিয়েছেন? অনেক হাত ঘুরে তার বাসার অভিমুখে যাওয়ার সময় এক কিস্তিতে ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়ে। ড্রাইভার বিজিবির গেটে গাড়িটি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এভাবে কত কিস্তি টাকা বাসায় গেছে সে কথা আমরা বলতে পারি না। সে দিনও যদি ড্রাইভার গাড়িটি বিজিবির গেটে না ঢুকিয়ে দিত তাহলে নিরাপদে এই টাকাগুলো সুরঞ্জিতের বাসায় যেত। পৃথিবীর কোনো কাকপীয় সেটি টের পেত না। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, তারপর থেকে সেই ড্রাইভার নিখোঁজ। সম্ভবত গুম হয়ে গেছে সে। এ পর্যন্ত এই সরকারের আমলে কোনো গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। এই পুরো দুর্নীতির ঘটনা সরকার ঢোঁক মেরে গিলে ফেলবে। পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ এলো না। সুরঞ্জিতের এপিএসের ওই ৭০ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হলো। এত টাকা জমা নিতে ব্যাংকের কর্তব্য হলো এই যে, অর্থের উৎস জানা। ব্যাংক তার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু অদৃশ্যের নির্দেশে ব্যাংক সে দিন ওই অনুপার্জিত টাকা জমা নিতে বাধ্য হয়। সে টাকা এখনো ব্যাংকেই আছে না যথাস্থানে নির্বিঘেœ পৌঁছে গেছে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।
এই সরকারপ্রধানের সে কী বড় গলা! ঝগড়াটে মেয়েদের মতো তিনিই বরং বলে বসলেন, বিশ্বব্যাংকই দুর্নীতিবাজ, মহাদুর্নীতিবাজ। অথচ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজ কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের মতো ঋণনির্ভর দারিদ্র্যপীড়িত দেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়। বিশ্বব্যাংক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকে ঋণ নিলে নির্ধারিত সুদে নির্দিষ্ট সময়ে সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, এটাই হিসাব। এ রীতি এমনকি আমাদের দেশেও প্রচলিত। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো শিল্পোদ্যোক্তাদের নির্ধারিত সুদে ঋণ দেয়। সে ঋণ সুদসহ নির্ধারিত সময়ে উদ্যোক্তারা পরিশোধ করে যান। ওই ব্যাংকে কী দুর্নীতি হয়েছে না হয়েছে তা দেখার দায়িত্ব ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের, ঋণগ্রহীতাদের নয়। বাংলাদেশের ৪১ বছরের ইতিহাসে কোনো ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যাংককে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দিয়েছে এমন কথা শুনিনি। ব্যাংকিংব্যবস্থা প্রচলনের পর এ রকম উন্মাদ বচন এটাই প্রথম।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এলোমেলো হিসেবে বাদ দিলে অন্য মন্ত্রীদের কথায় মনে হয় যে, তারা ঋণটিন এখন বিভিন্ন দেশের কাছে চাইবে। তবে আমার ভয় হয়, কোনো দেশই আর বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সাহস পাবে না। কারণ তারা যদি ঋণ দিতে গিয়ে শর্ত হিসেবে বলে যে, আমাদের অর্থায়নের প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি চলবে না, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত দিতে হবে। তাহলেই তো এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একেবারে জিহাদ ঘোষণা করবেন। বলবেন, কী, এত বড় সাহস! বাংলাদেশে দুর্নীতি হতে পারে এমন কথা ওই রাষ্ট্র উচ্চারণ করল, ওই রাষ্ট্রই মহাদুর্নীতিবাজ। তাদের অডিট রিপোর্ট প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট আমাদের হাতে দিতে হবে। তখন নিঃশংসয়ে ওই রাষ্ট্র ঋণদান থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যাবে। তখন কোথায় যাবে বাংলাদেশ।
গত ৪১ বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কয়েক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ তা অত্যন্ত নিয়মিত পরিশোধও করেছে। এখনো বিশ্বব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকা ঋণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প চালু আছে। ভয় পাচ্ছি, কখন নাকি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হুট করে বলে বসে, যাহ বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ থেকে বের হ। তোদের যেসব টাকা এখন বাকি আছে সেগুলো আর কোনো দিন ফেরত পাবি না। তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? বিশ্বব্যাংক কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ন্যূনতম ধারণা আছে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন না, বিশ্বব্যাংকের পুঁজি কিভাবে গঠিত হয়েছে। এ পুঁজি আসমান থেকে আসেনি। বিভিন্ন দেশের উদ্বৃত্ত অর্থের বিনিয়োগে বিশ্বব্যাংকের মূল পুঁজি গড়ে উঠেছে। তারপর তারা ঋণদান শুরু করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র আছে, ব্রিটেন-ফ্রান্স আছে, জার্মানি আছে, অন্যান্য ধনী দেশও আছে। এমনকি সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও আছে। বিশ্বব্যাংক যখন কোথাও বিনিয়োগ করে, তখন যে দেশে টাকা বিনিয়োজিত হবে সে দেশের সম্মতি নেয়া হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, সে টাকাও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি দেশের ছিল না। সেখানে সব দেশেরই কম-বেশি বিনিয়োগ সম্ভবত ছিল। আজকে যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দূর হ বিশ্বব্যাংক। তোদের পাওনা টাকা আর দেবো না। যাহ। তাহলে আগের প্রকল্পগুলোতে যেসব দেশের ঋণ ছিল তাদের পুরোটাই লস হয়ে যাবে। তার পরিণতি কী হবে, ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে যে, সেটি বোঝার কোনো বাস্তব বুদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর নেই।
ফলে এখন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে সরকার কিছুতেই বের হতে পারছে না। সে জন্যই ভয় হয়, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ঢাকতে সরকার না জানি আবার কী বড় ধরনের অঘটন ঘটায়। কারণ আমরা দেখেছি, এ রকম ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার তার চেয়ে অনেক বড় ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটিয়ে আসছে। ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার পর বিএনপির মহাসচিবসহ বহু শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করে সরকার এটাকে ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে দিশেহারা সরকার, কি না জানি করে বসে!
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে সরকার এখন বেসামাল। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশি বেসামাল হয়েছেন বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী এমন একটা ভাব করছেন যাতে মনে হতে পারে, তিনি নিজেই যেন বিশ্বব্যাংকের মালিক। বিশ্বব্যাংককে দেখে নেয়া হবে, জবাবদিহি করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এমন সব উদ্ভট, আজগুবি ও অদূরদর্শী বক্তব্য পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যেন ভেবেছেন, এটিও একটি গ্রামীণ ব্যাংক। ইচ্ছা করলে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধানকেও যেকোনো মুহূর্তে কলমের এক খোঁচায় বের করে দিতে পারেন। এর পরিণাম কী হতে পারে? এর ফলে বিশ্বের অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী রূপ দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট কোনো ধারণা আছে এমনটা মনে হচ্ছে না। তবে এই পদ্মা সেতুর বিষয়ে লণীয় শেয়ালের হুক্কা হুয়া ধ্বনির মতো সারা দেশে রোয়াব ওঠেনি। সাধারণত দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী সত্য-মিথ্যা যাই বলেন, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সবাই শতমুখে সেই কথার প্রতিধ্বনি ফুটাতে থাকেন। এই যাত্রায়ই তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেল। এমনকি যেসব মন্ত্রী-নেতা তাদের অভব্য মন্তব্য করার জন্য বিশেষভাবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, তারাও বলতে গেলে চুপ মেরেই আছেন।
দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রণালয় হারানো খামাখা মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাধারণত তার বিরক্তিকর অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করেন তিনিও খামোশ মেরে গেছেন। তবে তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নে ‘অবস্থা বুঝে’ ফিরে আসবে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, সব দাতাগোষ্ঠীর সাহায্য দরকার। এডিবি, আইডিবি ও জাইকাকে সাথে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করা হবে। আমরা সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। তবে এডিবিও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়েছে। জাইকাও বোধ করি একই রকম সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এদের যদি সাথে নিতে হয়, তার অর্থ হলো এদের অর্থ সাহায্য দরকার। যেকোনো প্রকল্পেই অল্প কিছু নিজস্ব ফান্ড থাকতেই হয়। আর শুধু সেটুকু দিয়ে পদ্মা সেতুর দু-চারখানা পিলারও নির্মাণ করা যাবে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলছেন, আর কারো কাছে হাত পাতা হবে না, টাকা চাওয়া হবে না, নিজস্ব অর্থায়নে তিনি নির্মাণ করবেন। তখন সুরঞ্জিত বাবু কিভাবে অমন কথা বললেন সেটি প্রণিধানযোগ্য।
বেদিশা অর্থমন্ত্রী কখন কী বলে বসেন তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। প্রথম দিকে তিনি বলেছিলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে ফয়সালা হয়ে যাবে। তারপর বললেন, পদ্মা সেতু ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংককে আর কোনো অনুরোধ করা হবে না। গত বুধবার বলেন, বিশ্বব্যাংকের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে, শিগগিরই তাদের ভুল বুঝতে পারবে এবং অর্থায়ন চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করবে। বিশ্বব্যাংকের কাছে ধরনা দেয়া হবে না। এ কথা বলার ছয় ঘণ্টা পরই জেলা প্রশাসক সম্মেলন থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয় বিশ্বব্যাংককে আর অনুরোধ করা হবে না এটা ঠিক নয়, আমরা এর পুনর্বিবেচনা চাই।’ তার অর্থ কোনো ঘুরপথে হলেও বিশ্বব্যাংকের হাতে-পায়ে ধরা অব্যাহত আছে।
এ দিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য কখনো বলেননি যে, বিশ্বব্যাংককে একহাত নিয়ে নেবেন। তিনি বলেছেন, পুরনো গল্পই ‘এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়েছে তবে মালয়েশিয়াকে এখনো না বলা হয়নি। এ ছাড়া চীন থেকে প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো বিবেচনা করা হবে।’ তার অর্থ তিনি স্পষ্টই বোঝেন, এই প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করা সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ায় সরকারের মন্ত্রীরা নতুন এক কল্প ফাঁদতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পারলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সরকার নেবেই না। সরকার যোগাযোগ করতে শুরু করে মালয়েশিয়ার সাথে। মালয়েশিয়ার সরকারের অবকাঠামোবিষয়ক উপদেষ্টা সামি ভ্যলুকে দফায় দফায় দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় এনে সরকার জানায়, আর কোনো চিন্তা নেই। পদ্মা সেতুর সব অর্থ মালয়েশিয়া দেবে। এ দেশের মানুষকে বোকা বানানোর জন্য যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মালয়েশিয়ায় গিয়ে স্মারক ও সমঝোতা কাগজ সই করে আসেন। সেটাকে আরো আশাপ্রদ করে তোলার জন্য এমওইউ স্বারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব তুন রাজ্জাকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন।
এ রপর বলা হয়, মালয়েশিয়া থেকে পুরো অর্থপ্রাপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বারিত হবে। এ বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এরকম ঢাকঢোল পেটানোর ধুমধাম চলে। সে সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার এক রিপোর্টে বলেছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মালয়েশিয়া এক টাকাও বিনিয়োগ করবে না। তারা ঠিকাদারি করতে আগ্রহী। কার্যত বিশ্বব্যাংকের ওপর চাপ বাড়াতেই সরকার এসব গল্প প্রচার করেছিল। কিন্তু সে কৌশলে কোনো ফল হয়নি। বিশ্বব্যাংক দ্রুত তথ্যপ্রমাণ হাজির করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের চুক্তি বাতিল করে দেয়। চুক্তি বাতিল করে ৩০ জুন এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। ‘দুর্নীতির ঘটনায় বিশ্বব্যাংক চোখ বুজে থাকতে পারে না। তা উচিত নয় এবং থাকবেও না।’
মালয়েশিয়ার ঋণের ঢোল এখন আর তেমন করে পেটানো হচ্ছে না। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বুঝে গেছেন, জনগণের কাছে মালয়েশিয়ার দাওয়াই আর চলবে না। তাই এখন বলছেন, কারো কাছে হাত পাতব না। কেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ার সাথে পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বারের কী হলো? আগের সরকারের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছিলেন, বিশ্বব্যাংকের সাথে একটা রফা না হলে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণে সমস্যা আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তো চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। এখন মালয়েশিয়ার সাথে চুক্তি করতে সমস্যা কোথায়? সে প্রশ্নের কেউ জবাব দিচ্ছে না। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটাই ধোঁকা ছিল বলে এখন মনে হচ্ছে। আর তাই এখন বলা হচ্ছে, কারো কাছে হাত পাতব না। নিজেদের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আরো একটি বিষয় এখানে প্রাসঙ্গিক, সেটি হলো প্রধানমন্ত্রী তার সরকারকে সাফফান সাফফা বলে দাবি করছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নিজে বলেছেন, দেশে ঘুষ ছাড়া এখন কোনো কাজই হয় না। সেটি পুলিশকে ১০ টাকা ঘুষ দেয়ার মতো নয়, এর বিস্তার অনেক ওপরে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চাকরিবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তিনি কী আর তা নিজ হাতে নিয়েছেন? অনেক হাত ঘুরে তার বাসার অভিমুখে যাওয়ার সময় এক কিস্তিতে ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়ে। ড্রাইভার বিজিবির গেটে গাড়িটি ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এভাবে কত কিস্তি টাকা বাসায় গেছে সে কথা আমরা বলতে পারি না। সে দিনও যদি ড্রাইভার গাড়িটি বিজিবির গেটে না ঢুকিয়ে দিত তাহলে নিরাপদে এই টাকাগুলো সুরঞ্জিতের বাসায় যেত। পৃথিবীর কোনো কাকপীয় সেটি টের পেত না। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, তারপর থেকে সেই ড্রাইভার নিখোঁজ। সম্ভবত গুম হয়ে গেছে সে। এ পর্যন্ত এই সরকারের আমলে কোনো গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। এই পুরো দুর্নীতির ঘটনা সরকার ঢোঁক মেরে গিলে ফেলবে। পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ এলো না। সুরঞ্জিতের এপিএসের ওই ৭০ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হলো। এত টাকা জমা নিতে ব্যাংকের কর্তব্য হলো এই যে, অর্থের উৎস জানা। ব্যাংক তার চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু অদৃশ্যের নির্দেশে ব্যাংক সে দিন ওই অনুপার্জিত টাকা জমা নিতে বাধ্য হয়। সে টাকা এখনো ব্যাংকেই আছে না যথাস্থানে নির্বিঘেœ পৌঁছে গেছে সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই।
এই সরকারপ্রধানের সে কী বড় গলা! ঝগড়াটে মেয়েদের মতো তিনিই বরং বলে বসলেন, বিশ্বব্যাংকই দুর্নীতিবাজ, মহাদুর্নীতিবাজ। অথচ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজ কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশের মতো ঋণনির্ভর দারিদ্র্যপীড়িত দেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়। বিশ্বব্যাংক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকে ঋণ নিলে নির্ধারিত সুদে নির্দিষ্ট সময়ে সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, এটাই হিসাব। এ রীতি এমনকি আমাদের দেশেও প্রচলিত। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো শিল্পোদ্যোক্তাদের নির্ধারিত সুদে ঋণ দেয়। সে ঋণ সুদসহ নির্ধারিত সময়ে উদ্যোক্তারা পরিশোধ করে যান। ওই ব্যাংকে কী দুর্নীতি হয়েছে না হয়েছে তা দেখার দায়িত্ব ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের, ঋণগ্রহীতাদের নয়। বাংলাদেশের ৪১ বছরের ইতিহাসে কোনো ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যাংককে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দিয়েছে এমন কথা শুনিনি। ব্যাংকিংব্যবস্থা প্রচলনের পর এ রকম উন্মাদ বচন এটাই প্রথম।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এলোমেলো হিসেবে বাদ দিলে অন্য মন্ত্রীদের কথায় মনে হয় যে, তারা ঋণটিন এখন বিভিন্ন দেশের কাছে চাইবে। তবে আমার ভয় হয়, কোনো দেশই আর বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সাহস পাবে না। কারণ তারা যদি ঋণ দিতে গিয়ে শর্ত হিসেবে বলে যে, আমাদের অর্থায়নের প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি চলবে না, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ফেরত দিতে হবে। তাহলেই তো এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একেবারে জিহাদ ঘোষণা করবেন। বলবেন, কী, এত বড় সাহস! বাংলাদেশে দুর্নীতি হতে পারে এমন কথা ওই রাষ্ট্র উচ্চারণ করল, ওই রাষ্ট্রই মহাদুর্নীতিবাজ। তাদের অডিট রিপোর্ট প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট আমাদের হাতে দিতে হবে। তখন নিঃশংসয়ে ওই রাষ্ট্র ঋণদান থেকে যোজন যোজন দূরে চলে যাবে। তখন কোথায় যাবে বাংলাদেশ।
গত ৪১ বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কয়েক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে এবং বাংলাদেশ তা অত্যন্ত নিয়মিত পরিশোধও করেছে। এখনো বিশ্বব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকা ঋণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প চালু আছে। ভয় পাচ্ছি, কখন নাকি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হুট করে বলে বসে, যাহ বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ থেকে বের হ। তোদের যেসব টাকা এখন বাকি আছে সেগুলো আর কোনো দিন ফেরত পাবি না। তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? বিশ্বব্যাংক কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ন্যূনতম ধারণা আছে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী বুঝতেই পারছেন না, বিশ্বব্যাংকের পুঁজি কিভাবে গঠিত হয়েছে। এ পুঁজি আসমান থেকে আসেনি। বিভিন্ন দেশের উদ্বৃত্ত অর্থের বিনিয়োগে বিশ্বব্যাংকের মূল পুঁজি গড়ে উঠেছে। তারপর তারা ঋণদান শুরু করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র আছে, ব্রিটেন-ফ্রান্স আছে, জার্মানি আছে, অন্যান্য ধনী দেশও আছে। এমনকি সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও আছে। বিশ্বব্যাংক যখন কোথাও বিনিয়োগ করে, তখন যে দেশে টাকা বিনিয়োজিত হবে সে দেশের সম্মতি নেয়া হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, সে টাকাও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একটি দেশের ছিল না। সেখানে সব দেশেরই কম-বেশি বিনিয়োগ সম্ভবত ছিল। আজকে যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, দূর হ বিশ্বব্যাংক। তোদের পাওনা টাকা আর দেবো না। যাহ। তাহলে আগের প্রকল্পগুলোতে যেসব দেশের ঋণ ছিল তাদের পুরোটাই লস হয়ে যাবে। তার পরিণতি কী হবে, ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে যে, সেটি বোঝার কোনো বাস্তব বুদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর নেই।
ফলে এখন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে সরকার কিছুতেই বের হতে পারছে না। সে জন্যই ভয় হয়, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ঢাকতে সরকার না জানি আবার কী বড় ধরনের অঘটন ঘটায়। কারণ আমরা দেখেছি, এ রকম ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার তার চেয়ে অনেক বড় ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটিয়ে আসছে। ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার পর বিএনপির মহাসচিবসহ বহু শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করে সরকার এটাকে ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে দিশেহারা সরকার, কি না জানি করে বসে!
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন