শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

রাজনীতির গতিধারা এবং জামায়াত প্রসঙ্গে বেগম জিয়ার বলিষ্ঠ অবস্থান


‘যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল’ বলে দেশে প্রচলিত একটি প্রবাদ রয়েছে। কথাটা মনে পড়ে যাওয়ার কারণ সৃষ্টি হয়েছে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলন এবং ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র কর্মসূচি ও তাকে নিজের বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ দমন-নির্যাতন ও ঢালাওভাবে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার থেকে ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন, সংখ্যালঘুদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সুপরিকল্পিত হামলা এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- পর্যন্ত জাতীয় জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই বলেছেন তিনি। বিরোধী দলকে নির্মূল করে ফেলার সর্বশেষ ভয়ঙ্কর চেষ্টা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন, অবিলম্বে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযান বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। এসবের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কিন্তু প্রবাদ বাক্যটি মনে পড়েছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ জবাব শুনে। মিডিয়া জগতে আওয়ামী ও ভারতপন্থীদের প্রাধান্য সম্পর্কে নিশ্চয়ই নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিনের সংবাদ সম্মেলনেও তাদের সরব উপস্থিতি ও বাড়াবাড়ি রকমের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। তাদের একজনই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। ওই সাংবাদিকের মনে হয়েছে, সরকার ও আওয়ামী লীগসহ ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক’ সব দল-মহলই যেহেতু বিএনপিকে জামায়াতের ‘সঙ্গ’ ত্যাগ করতে বলছে সেহেতু বিএনপির উচিত জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং দলটিকে ১৯ দলীয় জোট থেকে বের করে দেয়া।
এ ব্যাপারেই বেগম জিয়ার চিন্তা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। জোটের নেত্রী হিসেবে উত্তরও যুৎসই-ই দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বলেছিলেন, আমরা কাকে জোটে রাখবো আর কাকে রাখবো না সেটা আমাদের বিষয়। এ বিষয়ে অন্য কারো নির্দেশ দেয়ার অধিকার নেই। কারো নির্দেশেও কোনো কাজ হবে না। তাছাড়া, আওয়ামী লীগও যে দীর্ঘদিন এই জামায়াতকে ‘সঙ্গে’ রেখেছিল এবং জামায়াতের সঙ্গে একযোগে আন্দোলন করেছিল সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার বলিষ্ঠতায় চুপসে গিয়েছিলেন ওই আওয়ামী সাংবাদিক এবং দল বেঁধে আগত অন্যরা। তাদের হয়তো আশা ও ধারণা ছিল, প্রশ্ন শুনে খালেদা জিয়া বিব্রত হবেন, এই সুযোগে তাকে ঘায়েলও করা যাবে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলেও তিনি দেশপ্রেমিক প্রধান জাতীয় নেত্রী। এজন্যই সস্তা রাজনৈতিক কৌশলে তাকে কুপোকাত করা যাবে না। একই কারণে সেদিনের সংবাদ সম্মেলনেও ব্যর্থ হয়েছিলেন আওয়ামী ও ভারতপন্থীরা। খালেদা জিয়ার জবাবে মানুষের বরং ‘যেমন বুনো ওল’ বিষয়ক প্রবাদ বাক্যটি মনে পড়ে গেছে। জনগণের মধ্যেও তার এই জবাব ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছে। এর একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে দৈনিক যুগান্তরের জনমত জরিপে। গতকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৭০ দশমিক ২৯ শতাংশই খালেদা জিয়ার জামায়াত সম্পর্কিত বক্তব্য ও অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। সমর্থন করেননি ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। এখানে বেছে বেছে দৈনিক যুগান্তরের জনমত জরিপের উল্লেখ করার কারণ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (ডিআই) এবং বাংলাদেশের অন্য দু-একটি চিহ্নিত দৈনিক ও প্রতিষ্ঠানের মতো এক-দেড় হাজার বাছাই করা মানুষের অভিমতকেই এখানে ‘জনমত’ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়নি। যুগান্তরের এই জরিপে অংশ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৭৪৬ জন পাঠক। সুতরাং এর মধ্য দিয়ে সঠিক অর্থেই জনমতের প্রকাশ ঘটেছে। একই কারণে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে এক জোটে দেখতে চান। তারাও মনে করেন না যে, যার-তার কথায় ও পরামর্শে বিএনপির জামায়াতের ‘সঙ্গ’ ত্যাগ করা উচিত। তাছাড়া বিএনপির জন্য দরদে উথলে ওঠার ব্যাপারটিকেও মানুষ ভালো চোখে দেখেন না। মাথা যেহেতু বিএনপির সেহেতু ব্যথাটাও তারই। এখানে অন্য কারো নাক গলানোর কোনো অধিকারই থাকতে পারে না। খালেদা জিয়াও তাই কষেই জবাব দিয়েছেন। এটুকুও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বিএনপি ও জামায়াতসহ ১৯ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধই থাকবে। এখানে আওয়ামী লীগ বা তথাকথিত ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক’ কোনো দল ও গোষ্ঠীর কিছু করার নেই।
কথা যখন উঠেছেই তখন বেগম খালেদা জিয়ার ওই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য সম্পর্কেও সংক্ষেপে বলা দরকার। সংবাদ সম্মেলনে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা যায়। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এগোচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের পথে। এভাবে রাষ্ট্রীয় ও ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানবাধিকারের চরম লংঘন করে দেশে মানবিক বিপর্যয় ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। এর ফলে চরমপন্থী ও জঙ্গিবাদী শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। প্রতিবাদী তারুণ্যকে উগ্রবাদী পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহারের মাধ্যমে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে তাদের ঘাতক বাহিনীতে পরিণত করছে সরকার। বাইরের নির্দেশনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিরোধী দল নির্মূলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অরক্ষিত রেখে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের কাজে ব্যবহার করছে। অবস্থা এতটাই বিপদজনক হয়ে পড়েছে যে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও গুম, হত্যা ও গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া এসব ফ্যাসিবাদী কর্মকা- বন্ধ করার দাবি জানানোর পাশাপাশি সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, বর্তমান সভ্য বিশ্বে কেবলই দু-একটি দেশের সার্টিফিকেট জোগাড় করে কোনো অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। পাঁচ শতাংশ ভোটারও যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি সে কথাটাও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, দেশকে যে কোনো উপায়ে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। একই কারণে অবিলম্বে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কিন্তু সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। বেগম খালেদা জিয়া সব বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার এবং বন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়ার এবং ফ্যাসিবাদী হঠকারিতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কেও তিনি সতর্ক করেছেন ক্ষমতাসীনদের। তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ভাববেন না, আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সংলাপের আহবান জানিয়ে যাবো। সময় থাকতে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, জনগণও বেশিদিন সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো একটি বিষয়ে সামান্য বাড়িয়ে বলেননি এই দেশপ্রেমিক প্রধান জাতীয় নেত্রী। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, একমাত্র ভারতের সমর্থন নিয়েই আবারও ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ, জনসমর্থনের তোয়াক্কা করেনি। অথচ জনসমর্থন এবং নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের প্রধান পূর্বশর্ত। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর এবং ভারতের সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছে। উদ্দেশ্যে অসততা রয়েছে বলেই নির্বাচনের পর মুহূর্তে সরকার গুপ্তহত্যা এবং দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মূল করার পথে পা বাড়িয়েছে। এটা গণতন্ত্রবিরোধী এমন একটি পন্থা, যার পরিণতিতে দেশ এমনকি গৃহযুদ্ধের দিকেও এগিয়ে যেতে পারে। এমন গুরুতর মন্তব্য বিদেশী গবেষকরাও করেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, মাত্র ক’দিন আগেই প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’তে ‘বাংলাদেশ ফলস অ্যাপার্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, দেশটির সামনে এখন দুটি মাত্র মন্দ বিকল্প রয়েছে। একটি সামরিক অভ্যুত্থান, অন্যটি গৃহযুদ্ধ। নিবন্ধের লেখক এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশীয় সেন্টারের গবেষক ক্যাথারিন অ্যাওয়ালেক্সিফ এই বলে মন্তব্য করেছেন যে, একবার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে দেশটিকে ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে। এমন গুরুতর মন্তব্যের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। মূল কারণ হিসেবে এসেছে নির্বাচন ও সংবিধানসহ বিভিন্ন প্রশ্নে প্রধান দুটি রাজনৈতিক পক্ষের পরস্পর বিরোধী অবস্থান ও কর্মকা-, ভোটারবিহীন নির্বাচন ও আবারও সরকার গঠন এবং সবশেষে সরকারবিরোধীদের নির্মূল করে ফেলার ভয়ংকর চেষ্টা। লেখক তার অভিমতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা চেয়েছিলেন এরই মধ্যে তা পেয়ে গেছেন। সেটা হলো আরো এক মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে ভারতের অব্যাহত সমর্থন পাওয়া এবং অবশিষ্ট বিশ্বের কাছ থেকে ক্ষীণ স্বরে ভর্ৎসনা শোনা। সাময়িক এ সাফল্য সত্ত্বেও নিবন্ধের লেখক কিন্তু মনে করেননি যে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একদলীয় শাসনকে স্থিতিশীলতা দেয়া বা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটারের স্বল্পতায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনসমর্থন খুবই কম। অন্যদিকে একটি নড়বড়ে স্বৈরশাসনের প্রতিও দরকার অব্যাহত সামরিক ও পুলিশী পৃষ্ঠপোষকতা। এটা এমন একটি বিষয়, শেখ হাসিনা যার ওপর ভরসা করতে পারেন না। ওদিকে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে এবং বিএনপি পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। অথচ বিরোধী দলকে যথেষ্ট মাত্রায় দমন করা ছাড়া স্থিতিশীল একদলীয় শাসন শুরু করাই সম্ভব হবে না। এ প্রসঙ্গে লেখকের স্পষ্ট অভিমত, বিএনপি এবং অন্য বিরোধী দলগুলো এতটাই শক্তিশালী ও জনসমর্থিত যে, তাদের দমন ও নির্মূল করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বরং বিরোধী দলই উল্টো প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। একই কারণে লেখকের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ দ্রুত সিরিয়ার মতো গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে কিংবা দেশটিতে জারি হতে পারে সামরিক শাসন।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, একমাত্র সামরিক শাসনের প্রসঙ্গ বা সম্ভাবনা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াও কিন্তু তার মূল কথায় একই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। তার সামগ্রিক বক্তব্যে দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়নও উপস্থাপিত হয়েছে। বস্তুত ভোটারদের অনুপস্থিতিই প্রমাণ করেছে, জনগণ ৫ জানুয়ারির প্রহসনের একদলীয় নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ই ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একমাত্র ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছ থেকেই প্রধানমন্ত্রী সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি। অনেক চেষ্টায় এবং ভারতের মধ্যস্থতায় দু-একটি দেশের ‘সার্টিফিকেট’ তিনি অবশ্য জোগাড় করতে পেরেছেন। কিন্তু এরকম ‘সার্টিফিকেট’ তাকে বৈধতা দিতে পারেনি। এর মধ্য দিয়ে বরং প্রমাণিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কোনো রাষ্ট্র ও সংস্থা নির্বাচনটিকে গ্রহণ করেনি। এমন প্রতিক্রিয়া সরকারের জন্য মোটেই শুভ হতে পারে না। তা সত্ত্বেও সব বুঝে-শুনেই প্রধানমন্ত্রী তার জেদ পূরণের উদ্দেশ্যে ভোটারবিহীন এ নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন। কারণ, সব জরিপ ও অনুসন্ধানেই জানা গিয়েছিল, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে তার পক্ষে ক্ষমতায় ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এজন্যই একদিকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে সুচিন্তিত কৌশলের ভিত্তিতে বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখেছেন তারা, অন্যদিকে বিরোধী দলের ওপর চালিয়েছেন প্রচ- দমন-নির্যাতন। জনগণকে তবু ভোটকেন্দ্রে নেয়া সম্ভব হয়নি। জনগণ বরং বিরোধী দলের ডাকে সাড়া দিয়ে তামাশার নির্বাচন বর্জন করেছে, প্রধানমন্ত্রীকেও সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছে।
সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও বিভিন্ন দাবিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাসৃষ্টিকারী বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত সময় থাকতে বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ও পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া। এজন্য গুম-খুন, দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে, খুলে দিতে হবে বন্ধ সব গণমাধ্যম। বড়কথা, সংবিধানে সংশোধনী এনে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান যুক্ত করতে হবে। আমরা অবশ্য জানি না, প্রধানমন্ত্রী এবং বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায় তার ‘বাইরের’ উপদেষ্টারা পরিস্থিতির গুরুত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছেন কি না।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads