শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভুয়া পুলিশ!


মহানগরী ঢাকার রামপুরা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ ভুয়া পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি ককটেল, ৪টি মাইক্রোবাস, ১টি মোটরসাইকেল, ডিবি পুলিশের লোগো লাগানো ৩ সেট ড্রেস, ২টি ওয়াকিটকি, ৪ জোড়া হ্যান্ডকাফ, ১টি সিগন্যাল লাইট, ১টি দেশী ওয়ানশুটার গান, ১ রাউন্ড বুলেট, বেতের লাঠি, লেমিনেটিং করা ডিবি পুলিশ লেখা ২টি স্টিকার উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লেমিনেটিং করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লেখা স্টিকারও পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা নানা অপকৌশলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। এরা মানুষকে অপহরণ ও জিম্মি করেও মোটা অঙ্কের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতো। এমনকি হত্যা ও গুমের মতো অপরাধও তারা ঘটাতো। ভুয়া পুলিশ পরিচয় প্রদানকারীদের সঙ্গে বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরাও থাকতে পারে বলে জানানো হয়।
ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া ডিবি পুলিশ সেজে অনেকগুলো চক্র অপরাধ কর্ম ঘটিয়ে চলেছে দীর্ঘদিন থেকেই। এমন খবর প্রায়শ খবরের কাগজে ছাপা হয়। কখনও কখনও টিভি চ্যানেলেও ভুয়া পুলিশ পাকড়াওয়ের খবর দেখানো হয়। পুলিশের পোশাক পরিধান করে, গাড়ি ব্যবহার করে কিংবা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হ্যান্ডকাফ সহকারে অপরাধীরা ঘুরে বেড়ানো এবং সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অথবা তাদের গ্রেফতার করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেবার মতো ঘটনা কতটা উদ্বেগজনকÑ তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে বৈকি। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার দেয়া তথ্যানুসারে ভুয়া পুলিশ সেজে তারা গুম-খুনের মতো মারাত্মক অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না বলে জানা গেছে। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেÑ তা ভেবে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই আমাদের। তবুও মন্দের ভালো যে, শেষমেশ ভুয়া ডিবি পুলিশের ২ গ্রুপের মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এজন্য তাদের ধন্যবাদ অবশ্যই জানাতে হবে। আমরা জানি, আমাদের পুলিশ বাহিনী কিংবা গোয়েন্দা বিভাগে অনেক যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তারা ইচ্ছে করলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে পারেন সহজেই। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের জন্য পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে অপরাধীরা নির্বিঘেœ  তাদের অপতৎপরতা চালাতে সাহসী হয়। এমনকি অনেক সময় ধরা পড়বার পরও প্রভাবশালীদের অশুভ হস্তক্ষেপে ছাড়া পেয়ে যায়। এছাড়া পুলিশের লোগোসহ পোশাক, হ্যান্ডকাফ, অস্ত্র, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচয় লেখা স্টিকার এবং গাড়ি দেখে সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত ও ভীত হয়ে পড়ে সহজেই। ফলে ভুয়া পুলিশের পোশাকে অপরাধ সংঘটকদের প্রতিরোধ করতে সাহসী হয় না তারা। এমতাবস্থায় ভুয়া পরিচয় প্রদানকারীরা নির্বিঘেœ অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের পোশাক, হ্যান্ডকাফ, গাড়ি তারা কিভাবে এবং কোথা থেকে পায়? এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত। এ ধরনের অপরাধীচক্র কেবল মহানগরী ঢাকাতেই তৎপর এমন নয়। ঢাকার বাইরেও তারা অপকর্ম করে চলেছে। আমরা মনে করি, পুলিশ তাদেরও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।
ভুয়া পুলিশ গ্রেফতারের খবরটি নিশ্চয়ই স্বস্তিদায়ক। এজন্য সংশ্লিষ্টদের আমরা আবারও ধন্যবাদ জানাই। তার সঙ্গে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads