সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

দরকার আরেকটি নির্বাচন


সব চড়াই-উতরাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করেই ছেড়েছে ৫ জানুয়ারি। বোমায় মানুষ পুড়ে মরল, পুড়ল অবলা পশু, গাড়ি-বাড়ি-সম্পদ। গুলিবিদ্ধ আর ঝলসে যাওয়া মানুষ কাতরিয়েছে হাসপাতালে। হাজতখানা-জেলখানাগুলো সাধারণ মানুষে ঠাসা। হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ- সর্বোপরি বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হয়েছে। জনমনে ভয় ছিল, নির্বাচনের দিন প্রচণ্ড সহিংসতা হবে এবং বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না; হলেও তা স্বতঃস্ফূর্ত নয়। এক দিকে কনকনে ঠাণ্ডা, তার মধ্যে এই আতঙ্কের পরিবেশ। ভোটের উৎসবমুখর ছবিই গিয়েছিল হারিয়ে।

নির্বাচন হয়েছে কোনো মতে। সরকার গঠনও হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, আরেকটি নির্বাচন দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীরা এগিয়ে এলে মাস কয়েক পরে সবাইকে নিয়ে ফের নির্বাচন হতে পারে। আরো একবার মানুষ নতুন সরকার বেছে নেবে। এবার নির্বাচনের আগের দিন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সেই প্রত্যাশিত নির্বাচনের কথাই বলেছেন। মানুষের যেটুকু আশা ও আগ্রহ, তা পরেরবারের সে ভোট নিয়েই। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ৫ জানুয়ারির ভোটে যে অশান্তি ঘুচবে না, বরং হরতাল-অবরোধ নতুন মাত্রা পাবে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে ব্যবসায় বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সাম্প্রতিককালে।

সব দলের অশংগ্রহণে নির্বাচন হলে যে সর্বোত্তম হতো, এ কথা যে কেউ বলবে। বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিলে সে নির্বাচন হতো প্রাণবন্ত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাহলে দেশের সব মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতো। দেশ-বিদেশে সে নির্বাচন শতভাগ গ্রহণযোগ্য হতো। সরকারি দল বলেছে, গণতন্ত্র ও সংবিধান মোতাবেক ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে, এ নির্বাচনে আইনি জটিলতাও নেই; কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট এবং বিরোধী দলসহ ১৯ দলের মধ্যে চরম দ্বিমত রয়েছে। তা থেকে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ, নাশকতার পথে চলেছে দেশ। বেশ কয়েক মাস ধরেই তা অব্যাহত ছিল। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি সঙ্ঘাতে মারা গেছে। আহত ৩০ হাজার লোক। জনগণের কষ্ট বাড়বে যদি প্রধান দুই দলের নেতৃত্ব বাস্তবতা উপলব্ধি না করেন। ক্ষমতার রাজনীতিতে বিভোর হয়ে থাকা নয়, নিছক জেতার জন্য জেতা নয়। ক্ষমতার কুরসি নয়, জনগণের হৃদয়ে আসন অনুসন্ধান করুন নেতানেত্রীরা। ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতা নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্থায়ী হওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। গুটিকয়েক দলীয় লোক নয়, দেশের গণমানুষের হৃৎস্পন্দন উপলব্ধি করুন। রাজনৈতিক সহিংসতা দেশজুড়ে মানুষকে বিপন্ন করেছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। মানব হত্যা নয়, সম্পদ, শিক্ষা, অর্থনীতি ধ্বংস নয়; মানবকল্যাণে নিয়োজিত হয়ে জনগণের ভালোবাসা আদায়ে সচেষ্ট হোন সবাই।

সরকারদলীয় এক নেতা সেদিন বলেছেন, ‘পুরো ঢাকা শহর ঘুরে না দেখলে আওয়ামী সরকারের উন্নয়ন আঁচ করা যাবে না। ঢাকার রূপ বদলেছে, সমস্যা কমেনি। হালে টিআইবির রিপোর্টে দুর্নীতিও কিছুটা কমেছে সত্য। বেশ কিছু প্রাপ্তির মধ্যে কিছু ঘটনা সব ম্লান করে দিয়েছে। সরকার এটা স্বীকার করুক আর নাই করুক- পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার ধস আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করে দিয়েছে বৈকি। আর ছাত্রলীগ? গত পাঁচ বছরের সব ঘটনা টেনে আনতে চাই না। এক বিশ্বজিৎ হত্যা ইস্যুর পর সংগঠনটির প্রাপ্তি কতটা থাকে? নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের অতিকথনও জনগণের অসন্তোষের জন্য কম দায়ী নয়। অনেক বিজ্ঞনেতাও গলাবাজিতে কম যাননি। এমনকি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ঠেলা-ধাক্কায় রানা প্লাজা ধসে গেছে। এসব কারণে সরকারের সুনাম যে ভাটির দিকে, তা কিন্তু দেশের বিজ্ঞজনদের অভিমতে আগেই প্রকাশ পেয়েছে। সব বিতর্ক ঊর্ধ্বে রেখে সংসদ নির্বাচন করা গেলে দেশ উপকৃত হতো। নিজেও এবার নির্বাচনে ভোট দিতে যাইনি। অবশ্য কেউ যদি সংবিধানের কথা, আইনের কথা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ওই সব দিক দিয়ে টেকনিক্যালি ঠিক আছে; কিন্তু শুধু এটুকুই যথেষ্ট নয়।

দুই নেত্রীর কাছে অনুরোধ, আপনাদের কাছেই দেশের ভালো-মন্দ, দেশের মানুষের শান্তি ও অশান্তি নির্ভর করছে। সঙ্ঘাতের পথ ছেড়ে দিন। নিষ্ঠুর রাজনীতির কাছে দেশের মানুষ আজ চরম অসহায়। কারো নিরাপত্তা নেই। প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা জনগণের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থ। গণতন্ত্র আজ স্বপ্নবিলাসী এবং ক্ষমতার জন্য দৌড় ছাড়া কিছু নয়। যারা শুধু দলীয় বা গোষ্ঠী স্বার্থে, ক্ষমতার জন্য সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়; হত্যা করে- তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। আমরা সবাই দেশের শান্তি চাই।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads