রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কেউ বললেই কি পুলিশ গুলী করতে বাধ্য?


বিস্ময়ের বোধ হয় শেষ নেই! ‘গুলী না করায় ওসিকে মারলেন আ’লীগ নেতা’- খবরের এমন শিরোনাম কি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয়? গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংগ্রামে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়: সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকর্মীদের মধ্যে  সংঘর্ষের সময় বিএনপিকর্মীদের ওপর গুলী না করায় পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার উপজেলা যুবদল নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা অর্ধদিবস হরতাল চলাকালে পৌরশহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ যুবদল-ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। এদিকে হরতাল চলাকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পৌরশহরে প্রায় অর্ধশত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, সোনাগাজীতে হরতালের সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে যুবদল-ছাত্রদলকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা প্রায় অর্ধশত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহরে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আমরা জানি, এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি সন্ত্রাসমূলক কাজ। তাই সন্ত্রাসের অভিযোগে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা ছিল পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু পুলিশ সেই কর্তব্য পালন করেনি। সরকারী ঘরানার লোকদের বিরুদ্ধে পুিলশ কেন কর্তব্য পালন করে না তা আমাদের জানার বিষয়। কিন্তু সোনাগাজীতে লক্ষ্য করা গেল আরো বিস্ময়কর ঘটনা! সরকারী দলের লোকদের আব্দার অনুযায়ী বিরোধীদলের লোকদের ওপার পুলিশ গুলী না করায় আওয়ামী লীগ নেতারা ফুঁসে ওঠে এবং সোনাগাজী বাজারের ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে প্রকাশ্যে ওসিকে মারধর করে তারা। এমন দৃশ্যে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। প্রশ্ন জাগে, পুলিশ কি রাষ্ট্রের ও জনগণের সেবক, নাকি আওয়ামী লীগের কোনো পৌষ্য বাহিনী? আমরা জানি, পুলিশ কোনো দলের বাহিনী নয়, বরং রাষ্ট্রের বাহিনী। দলমত নির্বিশেষে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে পুলিশকে তেমন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও সরকারী দলের ভ্রান্তনীতির কারণে পুলিশ আজ বিরোধীদলকে ঠেঙানোর বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় পুলিশের ইমেজ যেমন বিনষ্ট হয়, তেমনি পুলিশ হারায় তার সক্ষমতাও। একারণেই সরকারী দলের স্থানীয় নেতারা একজন ওসির ওপর হামলা চালাবার সাহস পায়। জনগণ পুলিশবাহিনীর এমন অবমাননা দেখতে চায় না। তাই হামলাকারী সরকার দলীয় নেতাদের আসামীর কাঠগড়ায় দেখতে চায়। আওয়ামী লীগ নেতারা কী করে ভাবেন যে, তারা বললেই পুলিশ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুলী করবে? মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই? গুলী করতে তো কিছু নিয়ম-কানুন লাগে, কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন লাগে? আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কি সেই কর্তৃপক্ষ? আসলে সুশাসনের অভাবে আওয়ামী লীগ দেশটাকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, যার সাথে গণতন্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ আসলে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে? গণআকাংখার সাথে সরকারী দল ও সরকারের আচরণ মিলছেনা, ফারাক বাড়ছে। বিষয়টি কি তারা উপলব্ধি করতে পারছে না?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads