রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

জঙ্গিবাদের হুমকি নিয়ে আলোচনা সভা : রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তো




আল কায়দা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির কথিত বার্তা খুব বেশি আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে বলা যাবে না। সরকার এখন পর্যন্ত এর সত্যাসত্য যাচাইয়ের কাজ শেষ করতে না পারলেও গেল গেল রব তুলতে পিছিয়ে থাকেননি শাসক দলের নেতা ও দলবাজ ব্যক্তিরা। জঙ্গিবাদের এই উত্থানের শোরগোল থামার আগেই রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে জঙ্গিবাদের হুমকি নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা পত্রপত্রিকায় বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। আল কায়দা প্রধানের নামে প্রচারিত বিবৃতি যদি সত্য মনে করা হয় তাহলে তা মোকাবিলায় যেখানে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি সেখানে ওই আলোচনা সভার কোনো কোনো বক্তা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেভাবে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করেছেন তাতে প্রশ্ন না জেগে পারে না। তবে জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সমালোচনাও উঠে এসেছে বক্তাদের কথায়।
বিভিন্ন সময় সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের কৌশল হিসেবে জঙ্গিবাদের মতো ইস্যু তুলে ধরার ঘটনা মোটেই নতুন নয়। আগেও এ ধরনের ধুয়া তুলে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের প্রয়াস চালিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। নিজেদের রেকর্ড সৃষ্টিকারী দুর্নীতি, দলবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাটে জনসমর্থন হারিয়ে কীভাবে অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-বিষয় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও হামলার ঘটনায় সেটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। খোদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনই শাসক দলের এমন ঘৃণ্য কাজে উদ্বিগ্ন আতঙ্কিত না হয়ে পারেনি। এখন যে একইভাবে জঙ্গিবাদের শোরগোল তোলা হচ্ছে না সেটা নিশ্চিত করে কে বলবে?
তবে সন্ত্রাসী, জঙ্গি দমন অভিযানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যায় মেতে উঠেছে সেটা বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। এভাবে আইনের শাসন ভেঙে পড়ার বিপদ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দেশে-বিদেশে প্রতিবাদ জোরালো হয়ে ওঠায় চাপের মুখে সরকারের আত্মরক্ষার জন্যই যে আল কায়দা ও জঙ্গিবাদের মাতম তোলা হয়নি এটা অস্বীকার করাও কঠিন। কারণ ২০০৯ সাল থেকে শাসক দলের লোকজন বিশেষ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কিছুই করেনি। এভাবে যেখানে ঘরের ভেতরেই সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের মদত যোগানো হয়েছে সেখানে এখন হঠাত্ করে সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী, জঙ্গি বিরোধী গান্ধীবাদী ভূমিকায় সন্দেহ জাগাই স্বাভাবিক।
বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ৯৬ উপজেলার ফলাফলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থকদের ৫৬ চেয়ারম্যান পদে বিজয়ের বিপরীতে আওয়ামী মহাজোটের ৩৩ পদে জয়লাভের ঘটনা সরকারের ঘুম হারাম করে দেয়ায় ষড়যন্ত্রের পথ ধরা অস্বাভাবিক নয়। নির্বাচনের পরবর্তী ধাপের ফলাফল সরকারের পক্ষে নেয়ার লক্ষ্যে জনমতকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। তাই হিসাব করেই মোক্ষম সময়ে জঙ্গিবাদের হুমকির ধুয়া তোলা হতেই পারে। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে জঙ্গিবাদের বিরোধিতার নামে নিজেদের পক্ষে টেনে আনার এই অপচেষ্টার ফলাফল কি হয় সেটা দেখতে অবশ্য ক’টা দিন অপেক্ষা করতেই হবে।
কিন্তু সেই রাখাল বালকের বাঘ এলো বাঘ এলো গল্পের মতোই মানুষ জঙ্গি এলো শোরগোলে কান দেবে বলে মনে হয় না। অন্তত এর মধ্যে পাওয়া উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল এ কথার বাস্তবতাই প্রমাণ করে। গত পাঁচ বছরের দুঃশাসন, দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা, এই পাতানো নির্বাচনে জয়ী করে এনে সংসদে বিরোধী দল সাজিয়ে আবার তাদেরকে মন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা ও বিশেষ দূতের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নজিরবিহীন কূটকৌশল মানুষকে হতবাক করেছে। এ অবস্থায় নতুন করে সরকারের ফাঁদে পা দেয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তবে দলান্ধ ব্যক্তি ও উচ্ছিষ্ট ভোগীর দলকে হুক্কাহুয়ার সঙ্গে গলা মেলাতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সাধারণ ও সচেতন মানুষ জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করায় হাত যে মেলাবে না সেটা সংসদ নির্বাচনে ভোট না দিয়ে এবং উপজেলা নির্বাচনে বিপক্ষে ভোট দিয়ে মানুষ ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে। সরকারের কোনো অপকৌশলেই আর কান দেবে না বাংলার মানুষ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads