রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ছাত্রলীগের লাগাম টানতে হবে এখনই


 মানুষ যখন তার মনুষত্ব হারিয়ে ফেলে তখন তাকে পশুর সাথে তুলনা করা হয়। বাংলাদেশে ছাত্রলীগ আজ তার মনুষত্ব হারিয়ে সে পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। যারা মনুষত্ব হারিয়ে ফেলেছে অবশ্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পশুর সাথেও তুলনা করতে রাজি হননি, কুরআনে ‘বালহুম আদল’ বলা হয়েছে। বরং আল্লাহ তাদেরকে পশু তথা চতুষ্পদ জন্তু থেকে আরো নি¤œপর্যায়ের বলে উল্লেখ করেছেন। ছাত্র-যুবসমাজ একটি জাতির অহঙ্কার। সমাজ-সভ্যতার কা-ারী। দেশকে এগিয়ে নেবার দিকপাল। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি। কিন্ত সেই শক্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে নোংরা ছাত্ররাজনীতি। নষ্ট ও ভ্রষ্ট ছাত্ররাজনীতির নামে ছাত্রসমাজকে সবচেয়ে কলঙ্কিত, কুলুুষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদের হাতে খাতা-কলমের পরিবর্তে অস্ত্র, মেধার চর্চার পরিবর্তে মদ-গাঁজা, হিরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, ক্লাস-পরীক্ষার বদলে নারী ও অবৈধ টাকা দিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির এই খণিগুলোকে। জাতিবিনাসী এর চেয়ে ভয়ংকর কাজ আর কি হতে পারে?
ছাত্রলীগের নখরে আজ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ ২ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে নারকীয়, পৈশাচিক ও ঘৃণ্য হামলা চালিয়েছে তা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
এই ঘটনায় জাতীয় পত্রিকার ও মিডিয়ার শিরোনাম ছিল প্রায় অভিন্ন- “ছাত্রলীগ-পুলিশের বেপরোয়া অস্ত্রবাজি,আক্রান্ত নিরীহ শিক্ষার্থীরা আহত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ” (কালের কন্ঠ) “রাবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ পুলিশের গুলী : অর্ধশত গুলীবিদ্ধ : সাংবাদিকসহ আহত দু’শতাধিক : বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, ক্যাম্পাসে র‌্যাব-বিজিবি মোতায়েন” (দৈনিক আমার দেশ) “রাবিতে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা, আহত শতাধিক, ভার্সিটি অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা” (প্রথম আলো) “আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলী ককটেল, আহত শতাধিক, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, ছাত্রলীগ-পুলিশের যৌথ হামলা” (বাংলাদেশ প্রতিদিন) “আহত দুই শতাধিক, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, রাবি শিার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের বেপরোয়া গুলী” (দৈনিক নয়া দিগন্ত)  “রাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা গুলী” (দৈনিক যুগান্তর) “অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, রাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা” (দৈনিক ইত্তেফাক)। এই স্পষ্ট ও অভিন্ন শিরোনামের পর বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, কারা এর সাথে জড়িত। ঘটনাটি কত জঘন্য ও অমানবিক!! শুধু তাই নয়, অস্ত্র উচিয়ে ফিল্মী স্টাইলে এ্যাকশানে গুলী করার ছবি, তাদের দলীয় পদ উল্লেখ করে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে- “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যৌথভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পিস্তল উঁচিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ধাওয়া করে, গুলী ছোঁড়ে, ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পাশাপাশি পুলিশও মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। দ্বিমুখী এ হামলার মুখে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ে। ছাত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। দিগি¦দিক ছোটাছুটি করেও তারা রেহাই পায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। গুলী, ককটেল, রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেলে আহত হয় অর্ধশত শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০১২ সালের ২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে মহড়া দিয়েছিল রাবি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ নিয়ে ওই সময় পত্রপত্রিকায় অস্ত্রধারীদের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু সেই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে রাবি প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদের সঙ্গে নিয়েই রাবি প্রশাসন বিভিন্ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করে চলেছে বলে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও সাংগঠনিকভাবে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু কাউকে কাউকে বসানো হয়েছে ক্ষমতায়। এর ফলে ঘুরেফিরে ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজির তালিকায় আসছে সেই অস্ত্রধারীদের নামই। গতকাল শনিবার রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে তা-ব চালানো হয়, এই হামলারও নেতৃত্বে ছিল সেই অস্ত্রধারীদের মধ্যে অনেকেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকালের হামলার মূল নেতৃত্বে ছিলেন রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল তুহিন। তুহিন এর আগে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। (সুত্র : ০৩-০২-১৪ কালের কন্ঠ)
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয়। পরে তারা প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকলে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদ আল হোসেন তুহিন, সহ-সভাপতি চৌধুরী রানা, সুদীপ্ত সালাম ওরফে বাইট্টা সালাম, নাসিম আহমেদ সেতু, ফয়সাল আহমেদ রনু, বিল¬াহ, শামসুজ্জামান ইমন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলী ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ছাত্রলীগ যৌথভাবে শিক্ষার্থীদের বেপরোয়া গুলী, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগি¦দিক ছুটাছুটি করতে থাকে। অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গুলীবিদ্ধসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থী আটকে পরে। এ সময় বেশ কিছু শিক্ষার্থী পুরাতন ফোকলোর মাঠে অবস্থান নিলে ছাত্রলীগ সেখানেও হামলা চালায়। পরে বিভিন্ন আবাসিক হলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ পৃথকভাবে হামলা চালালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন এবং জুলফিকার আলী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আবাসিক হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দুপুর পৌনে দুইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশি হামলায় অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে রবীন্দ্র কলা ভবন, জুবেরী ভবন, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনসহ দুটি মাইক্রোবাস ও চারটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম দফায় পুলিশ-ছাত্রলীগ যৌথ হামলার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আরএমপি পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) প্রলয় সিচিম, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সহকারী প্রক্টর সিরাজুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন এবং জুলফিকার আলীর নির্দেশে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলী নিক্ষেপ করে। এতে দুই সাংবাদিক গুলীবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ সাংবাদিক আহত হয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা তৎক্ষণিকভাবে গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রশাসনকে বিকাল ৫টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন সহকারী প্রক্টরের পদচ্যুত এবং উপ-কমিশনার প্রলয় সিচিমের ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। সাংবাদিকদের দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। ক্যাম্পাসের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই প¬াটুন বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। (সুত্র: দৈনিক আমার দেশ)
কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বললেন, “অস্ত্রধারী সবাই ছাত্রলীগের নয়।” তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বাকীরা কারা? প্রধানমন্ত্রী এক সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের দায়ে অভিভাকত্ব ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বিগত ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে এটা ছিল শুধুই একটি আইওয়াশ মাত্র। সমাজবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে পারবেন- এমন কোনো অপরাধ কি এখনো বাকী আছে যার সাথে ছাত্রলীগ সম্পৃত্ত নয়? হয়তোবা জানা যাবে সমাজের মানুষের এখনো অজানা এমন অনেক অপরাধ করে আসছে ছাত্রলীগ। 
ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads