শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ হোক


‘মামলা-জিডি নেই, তবুও জুয়েল সন্ত্রাসী’- এই শিরোনামে ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি খবর মুদ্রিত হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনে। ‘আমার বাবাকে মেরো না। আমার বাবা ভালো মানুষ। তাকে ছেড়ে দাও।’ শিশুর এমন আকুতি মন গলাতে পারেনি পুলিশের। উল্টো পুলিশ তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তায়। সবার সামনেই আটক করে নিয়ে যায় তার বাবাকে। আটকের ১০ মিনিটের মধ্যেই সন্ত্রাসী সালাউদ্দিনের সঙ্গে সুতিখালপাড় বালুর মাঠে নিয়ে জুয়েলকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে পুলিশ। গত সোমবার বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন নিহত জুয়েলের স্ত্রী শিরিন আক্তার রুমি।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত জুয়েলের নামে থানায় কোনো মামলা এমনকি সাধারণ ডায়েরিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিহতের স্বজন এবং এলাকাবাসীর দাবি জুয়েলকে ‘সন্ত্রাসী’ বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি থাকা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় লক্ষ্য করা গেল জুয়েলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা এমনকি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। তাই কারো কথায় জুয়েলকে সন্ত্রাসী ভাবা যায় কী? এই ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর বক্তব্যও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এলাকাবাসী বলেছে, জুয়েলকে সন্ত্রাসী বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী বানিয়ে হত্যার অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়। তাই এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত প্রয়োজন। কারণ প্রকৃত সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াবে আর নির্দোষ নাগরিককে সন্ত্রাসী বানিয়ে হত্যার ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না। আরও প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হলো, আটকের ১০ মিনিটের মধ্যেই একজন নাগরিককে গুলী করে হত্যা করা হবে কেন? এত দ্রুত জীবন হরণের কারণ কী? দেশে কি আইন-আদালত নেই? কেউ অপরাধী হলে তার বিচারতো আইনের আওতায় হতে পারে। পুলিশের আচরণে জনমনে এখন বিরাজ করছে নানা প্রশ্ন। একদিকে আটকের ১০ মিনিটের মধ্যে কাউকে গুলীতে হত্যা করা হয়, অপরদিকে সরকারি ঘরানার সন্ত্রাসীরা  বহু অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। পুলিশের সামনেই তারা পিস্তলে গুলী ভরে এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তায় তারা হামলা চালায়। এভাবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশ ব্যর্থ হওয়ায় দেশে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য কমছে না।
বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু সেই অঙ্গীকার তারা রক্ষা করছেন না। বরং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আমরা জানি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সুশাসনের লক্ষণ নয়, বরং দুঃশাসনের উদাহরণ। এমন দুঃশাসন বন্ধ না হলে সরকারের ইমেজ বিনষ্ট হবে এবং জনমনে বাড়বে ক্ষোভের মাত্রা। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গণতন্ত্রের সাথে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কিংবা তথাকথিত ক্রসফায়ার কোনোভাবেই যায় না। এসব হত্যাকা-ের বাতাবরণে এক শ্রেণীর পুলিশের আতঙ্কবাণিজ্যও রমরমা অবস্থায় আছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, গণতন্ত্র ও দেশের সামগ্রিক স্বার্থে ক্রসফায়ার তথা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সরকার ও প্রশাসন উপলব্ধি করে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads