শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

১৩ উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অন্তত ১৩টি উপজেলায় ভোট বর্জন ও পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এসব উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনেন। এসব স্থানে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে এসব উপজেলায় বিজয়ী প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছেন তার ধারে-কাছেও যেতে পারেননি পরাজিত প্রার্থীরা। এসব উপজেলায় সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। ১৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৮৭১টি। ওই ১৩টির ১২টিতেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী। পরাজিত প্রার্থীদের মোট ভোট মাত্র ৩৫৯০৫১। বরিশাল সদর উপজেলায় সহিংসতার জেরে স্থগিত করা হয় ১১টি কেন্দ্রের নির্বাচন। বাকি কেন্দ্রের ফলাফলে বেসরকারিভাবে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদুর রহমান রিন্টুর ভোটসংখ্যা ৭১৮৩৯। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থক এনায়েত হোসেন বাচ্চুর বাক্সে ভোট পড়ে মাত্র ৮৫২৪টি। ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন দুপুরে। দিনশেষে দেখা যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাব্বত জান চৌধুরী পেয়েছেন ৯০৯৯৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেনের বাক্সে ভোট পড়েছে মাত্র ৯০৫৯টি। ওই জেলার চরফ্যাশনেও একই চিত্র দেখা গেছে। বিজয়ী আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী পেয়েছেন ১৪৭২৫১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১২৯৯৫ ভোট। ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী নাজিম মাস্টার পেয়েছেন মাত্র ৭৬২৪০ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীন আহমেদ পেয়েছেন ১৪৬৭৫২ ভোট। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুজ্জামান পেয়েছেন ১৩০১১১ ভোট। বিএনপির মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন ৩৯৬৭৪ ভোট। তিনি অভিযোগ করেন, আগের দিন বিকাল থেকে র‌্যাব-পুলিশ আমার কর্মী এবং নেতাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। ভোর পর্যন্ত এমন হুমকি চলে। সকাল আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভোট চলে শান্তিপূর্ণভাবে। তারপর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুজ্জামান আনিসের ক্যাডাররা সব কেন্দ্র দখল করে নেয়। ভোটাররাও ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। প্রতিবাদে শনিবার মুন্সীগঞ্জ সদরে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ১৫০৩৪ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম পেয়েছেন ১৩৪৮৮৬ ভোট। নোয়াখালীর চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাটে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। চাটখিলে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী ৪৯০১৭ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৪০৯১১ ভোট। কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের কামরুন নাহার শিউলি ৬৩১৬৮ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির মো. ইলিয়াস পেয়েছেন মাত্র ৪৪৪১ ভোট। কোম্পানীগঞ্জে মিজানুর রহমান বাদল ৭৫১০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বিরোধী প্রার্থী হুমায়ন কবির পলাশ পান ১৪৪২৩। কুষ্টিয়ার মিরপুরে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিকাল সাড়ে ৩টায়। পরে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুরও তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ উপজেলায় বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আরেফিন পেয়েছেন ৮৮৯৪৪ ভোট। বিএনপির প্রার্থী পান ৪০৭২১ ভোট। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৬৭৮ ভোট। তারা আগামী শনিবার কুষ্টিয়ার মিরপুরে অর্ধবেলা হরতালের ডাক দিয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোট চললেও বিকালের দিকে ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে দুই প্রার্থী ভোট বয়কট করেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহেদ সরকার ভোট পেয়েছেন ৫৭২৩২টি। বিএনপির দুই প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন ৬৪১৭৯। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী এম এ হান্নান পেয়েছেন ৩২৭৪০ ভোট। কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার ভোটে। জাফর আলম পেয়েছেন ৬৫১৯৩ ভোট। অন্যদিকে দখলের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন ৫৬০৭১ ভোট। ফেনীর পরশুরামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৩৮০ ভোট। বিএনপির পরাজিত প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮২১৮ ভোট। এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, নোয়াখালী সদর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে।

সূত্র- মানাব জমিন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads