মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সোনার ছেলেদের চরিত্র


তাদের যে চরিত্র চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে, তাতে তীব্র ক্ষোভে মনটা তেতো হয়ে ওঠে। এসব রাজনৈতিক সোনার ছেলের চরিত্র না থাকলেও তাদের যে অফুরন্ত দৈবশক্তিআছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই শক্তির বলে তারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানাতে পারে।
কিছু দিন আগে দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর বিবেককে নাড়া না দিয়ে পারেনি। খবরটি ছিল এ রকমÑ বাকির টাকা চাইতে গিয়ে মহিলা দোকানি মারপিটের শিকার। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নি হোস্টেলের পাশে অবস্থিত মহিলা দোকানির কাছে বাকিতে খেতো তিনজন ইন্টার্নি ডাক্তার ও দুজন মেডিক্যাল ছাত্র। দোকানি আরজিনা তাদের কাছে বাকির টাকা চাইলে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে দোকানিকে মেরে ক্যাশ বাক্স থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। আরজিনা রাজশাহী প্রেস কাবে এসে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং থানায় মামলা করেছেন।
এটি যে মামুলি ব্যাপার নয়, এ জন্য দৈনিক পত্রিকাটি  বিষয়টিকে লিড নিউজ করেছিল। খবরটি সমাজের ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। ডাক্তারি পেশার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানবসেবা। সেই পেশায় শিক্ষা গ্রহণ করতে এসে একজন গরিব মহিলার পাওনা টাকা পরিশোধ করার মানসিকতা যারা রাখেন না, তাদের কাছে জাতি কী আশা করতে পারে? দোকানির ক্যাশের এক হাজার ২০০ টাকাও তারা নিয়ে গেছে। এরাই ডাক্তার হয়ে রোগীদের পকেট কাটবেন আর ভক্তরা চোখের জলে সোনার ছেলেদের পা ধুয়ে দেবেন। এসব কুশিক্ষিত দেশের অন্যত্রও সর্বোচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে। উচ্চ বিদ্যাপিঠের ভেতরে-বাইরে, আশপাশের দোকানিদের জিজ্ঞেস করলে যা বেরিয়ে আসবে, তাতে লজ্জায় জাতির মাথা কাটা যাবে।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমারও হয়েছিল। সেই সময় খুব কাছ থেকে এই সোনার ছেলেদের অপকর্ম দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। নাশতা শেষ করে ক্যান্টিন ম্যানেজারের টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে দিচ্ছি, এমন সময় এক ছাত্রনেতা আমার পাশে দাঁড়িয়ে। ম্যানেজার তাকে বলছেন, ভাই সাড়ে তিন হাজার টাকা বাকি; খাতায় আর কত লিখব! নেতার জবাব ছিলÑ ‘তা হলে আর লিখিস না।বলে হাত মুছতে মুছতে নির্লিপ্তের মতো চলে গেল। পরে শুনেছি, এ নীতিহীন ছাত্রনেতা একজন বড় মাপের পুলিশ অফিসার হয়েছেন। যারা গরিব দোকানির পাওনা দেন না, বাকি পরিশোধ করার প্রয়োজনবোধ করেন না; তারা রুই মাছের পেটি দেখে লোভ যে সামলাতে পারবেন না; সেটিই স্বাভাবিক। এ ধরনের লোক এখন অনেকেই, দারোগা-পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, নেতা-নেত্রী। সে জন্যই তো আমাদের বিদ্যাপীঠগুলোর করুণ অবস্থা। আর দেশে এত অস্থিরতা।
বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষের সাথে ছাত্রনেতারা যে ব্যবহার করেছেন, তা কোনো সভ্যসমাজ মেনে নিতে পারে না। নাম শুনে বোঝা যায় অধ্যক্ষ ধর্মবিশ্বাসে হিন্দু। যেসব রাজনৈতিক দেবতা হিন্দু ভক্তের নিরাপত্তা আর সম্মান রক্ষার্থে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বলে দাবি করেন এবং তারাও সেটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন; তাদের এ কেমন আচরণ? টিভির পর্দায় সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে সে লজ্জাকর দৃশ্য। ভক্ত শিশু পরাগ মণ্ডলের অমুসলিম বাবার কাছ থেকে সোনার ছেলেরা মুক্তিপণের ৫০ লাখ টাকা প্রসাদ নিয়েছে। বিশ্বজিৎকে খুন করে বিশেষ দলের সোনার ছেলেরা হিন্দু ভক্তদের সাথে শুধু বিশ্বাসঘাতকতাই করেনি; বুঝিয়ে দিয়েছে মন থেকে তারা সংখ্যালঘুদের কখনোই ভালোবাসেন না।
টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, হামলা নির্যাতন, খুন, অপহরণ ছাড়া এসব অপদেবতার যে শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে না, পত্রিকা খুললেই তার প্রমাণ মিলে। ক্ষমতা আর অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি করে বোঝানোর চেষ্টা করে, তারা একে অন্যের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ক্ষমতাপুষ্ট।
নিকট অতীতে সিলেটে বাসদ ও সিপিপির জনসভায় তারাই শক্তির মহড়া দিয়ে জনসভাকে পণ্ড করে দিয়েছে। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads