যারা ফারুকী হত্যার মতো মর্মান্তিক ও
নারকীয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে মতান্ধ রাজনীতি করতে চাচ্ছেন, তারা ভুল করছেন। এসব মতান্ধ রাজনীতির লোকেরা কি চাচ্ছেন, রাজনীতির ডামাডোলে ফারুকী হত্যা চাপা পড়ে যাক! প্রকৃত অপরাধী
ছাড় পেয়ে যাক। আমরা তা চাইতে পারি না। এ ধরনের হত্যা কিংবা খুন মেনে নিলে খোদা
নারাজ হবেন। মানুষের মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে। কারণ, বিনাবিচারে মানুষ হত্যার এখতিয়ার আল্লাহ কোনো মানুষকে দেননি।
তা ছাড়া মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর কিছু তর্কিত বিষয়ে ভিন্নমত ছাড়া কোনো প্রকাশ্য অপরাধ আমাদের জানা নেই। তিনি হজবিষয়ক ব্যবসায়-বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন কি ছিলেন না, সেটাও আমাদের জানা নেই। উদ্দেশ্যমূলক তথ্যবিভ্রাট ও ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করলে ভিন্নমত পোষণ করা মানুষের অধিকার। তিনি একজন আলোচিত টিভি উপস্থাপক। আলাচক হিসেবেও তার বগ্মিতা প্রশংসনীয়। তার বক্তব্যের যুক্তি, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সত্যাসত্য আলাদা বিষয়। তিনি ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে কতটা প্রজ্ঞাসম্পন্ন ছিলেন, সেটা বিচার করার মতো ইসলামি জ্ঞান আমার নেই। কথিত আধুনিক শিক্ষিত হিসেবে তার বক্তব্য আমার কাছে কখনো কখনো যৌক্তিক মনে হয়েছে, আবার বিশেষ কোনো মত যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি। যেকোনো মানুষের এমনটি হতে পারে। দীর্ঘ দিন উপস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলেও বিগত ক’বছরে তাকে কিছু তর্কিত বিষয় নিয়ে বেশি জোর দিতে দেখতাম। আলেম-ওলামারা মনে করেন এবং বলেন, মৌলিক বিষয় ছাড়া আলেমদের ভেতর মতদ্বৈধতাও এক ধরনের রহমত। কারণ, তারা কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে বিতর্ক করেন না। বিতর্ক করেন বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও কিছু আমলের বিষয় নিয়ে; যা কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। তা ছাড়া প্রাজ্ঞ ইসলামি বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের ভিন্নমত পোষণকে কখনো এড়িয়ে যান না। তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে উম্মাহকে সংযত জীবনযাপনের উপদেশ দেন। ভালোকে ভালো বলেন, মন্দকে মন্দ বলেন। আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের ভাষা কখনো অসঙ্গত হয় না। তারা বাচাল কিংবা বাহুল্য কথনে আগ্রহী হন না। এই উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান চিন্তাবিদ সম্পর্কে আরেকজনের ভিন্নমতের মন্তব্য ছিলÑ তার বক্তব্য আমার পছন্দ হয় না। হজরত ফরিদপুরী ভিন্নমত পোষণ করলে বলতেনÑ তার সাথে একমত হতে পারলাম না। হজরত হাফেজ্জী হুজুর কলেমাগো মুসলমান অর্থাৎ শুধু কলেমার মিলের জন্য ঐক্যবোধ করাকে জরুরি মনে করতেন। আরো দু-একটা উপমা দেয়া যায়। ভারত বিভক্তির সময় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও হোসাইন আহমদ মদনী র: ছাড়া প্রায় সব আলেম পাকিস্তান প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছেন। এ দুই খ্যাতিমান মনে করতেন, তাতে ভারতের সব প্রান্তের সব মুসলমানের বেশি উপকার হবে না। এই নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু প্রজ্ঞাবান আলেমরা ইসলাম-মুসলমান নিয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু এই রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কেউ কেউ সমালোচিত হয়েছেন, কেউ নিন্দিত হননি।
আইয়ুব খানকে যখন কেউ পছন্দ করছিল না, নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে কিছু রিজারভেশন নিয়েও মিস ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন জোগালেন এ দেশের প্রায় সব আলেম। তবে প্রকাশ্যে নয়, সম্মতিতে। ব্যতিক্রম ছিলেন তৎকালীন পীর সাহেব শর্ষীণা। তিনি কেন আইয়ুবকে পছন্দ করেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘লেংটা থেকে লেংটি ভালো’। ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তার দৃষ্টিতে আইয়ুব খান এবং ফাতেমা জিন্নাহ দু’জনই আক্ষরিক অর্থে না হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে উদোম। মানুষকে দুটো মন্দ থেকে একটি বাছাই করতে দিলে মন্দের ভালোটা বাচাই করাই যৌক্তিক। আমি মন্দের ভালো বাছাই করতে গিয়ে তাই করেছি। আরো একটি উপমা দেয়া যায়, গত রমজানে এটিএন বাংলায় রমজানের অনুষ্ঠানে তারাবির নামাজের রাকায়াত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রজ্ঞাবান আলেম মাওলানা কামাল উদ্দীন জাফরী বললেন, দুটো আমল আছে, দুটোই সমর্থনযোগ্য। মক্কা-মদিনার আমলটি করাই শ্রেয়, তবে এ নিয়ে বিতর্ক অকল্যাণকর। অন্য একটি প্রসঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত জবাব ছিলÑ এমন কথা আমি কুরআন-হাদিসে পাইনি। দু’টি রাজনৈতিক বিতর্ক একটি শরয়ি বিতণ্ডা নিয়ে আলোচনা করে বুঝাতে চেয়েছি, আমাদের আলেমসমাজ কখনো সীমা অতিক্রম করেন না। যারা বাড়াবাড়ি করেন তাদের কথা আলাদা।
এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মভীরু। একই সাথে বিভিন্ন মত ও অন্য ধর্মের ব্যাপারে সহিষ্ণু। তাই আবহমানকাল ধরে এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালিত হয়ে আসছে। তা ছাড়া এই দেশে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, দোয়াল্লিন-জোয়াল্লিন, কওমি-আলিয়া, দেওবন্দী, ওহাবি-সুন্নি, মাজারপন্থী, বেদাতি, পীরপন্থী, লা-মাজহাবিসহ নানা মতের সহ-অবস্থান রয়েছে। এ দেশে মিলাদ পড়ার তরিকা নিয়েও বিতণ্ডা হয়। তারাবি, বেতের, জুমাসহ অনেক ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কাপড় পরার ধরন ও সাইজ নিয়েও কথা হয়, কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে কেউ বাড়াবাড়ির সীমা অতিক্রম করে না। সাধারণ মানুষ ওইসব নিয়ে বেশি ভাবেও না। তাই বাংলা ভাই, শায়খ রহমানরা যখন চরমপন্থার দিকে এগোলেন তখন আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-খতিব সবাই একযোগে নিন্দাবাদ দিয়ে সরকারকে সমর্থন জোগালেন বলেই চারদলীয় জোট সরকার জঙ্গি ও চরমপন্থী হঠকারিতা দমনে সফল হয়েছে। জনগণ সরকারের কথায় মেরুবদ্ধ হয়নি, আলেম-ওলামাদের কথায় সমর্থন জুগিয়েছে। জোট সরকার ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বিবদমান গ্রুপগুলো নিয়ে রাজনীতি করেনি, এক গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানি দেয়নি। এ সরকার এই ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। তারা ধর্মীয় বিদ্বেষ কাজে লাগাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পুরো কাঠামোর অপব্যবহার করেছে। সরকারের বদখেয়াল চরমপন্থীদের মনে সুড়সুড়ি দিয়েছে। কিছু দরবারি আলেম তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। নানাভাবে মূল ধারার আলেমদের অসম্মান করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কওমি মাদরাসা জঙ্গি প্রজননকেন্দ্রের মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার লোকদের প্রসার ঘটেছে; যা এই মাটি ও মানুষের চিরায়ত চিন্তা ও চেতনাকে আহত করেছে।
বিচ্ছিন্ন কিছু ভিন্নমত নিয়েও ফারুকী টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনের সুবাদে বাংলাদেশে ইসলামের মুখপাত্রদের একজন ছিলেন। তার সাথে কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে কারো দ্বিমত ছিল, এমন তথ্য আমার জানা নেই। যে বিষয়গুলো তর্কিত বিষয়, তার সাথে ভিন্নমত নিয়েও সহ-অবস্থান এ দেশের আলেমদের রয়েছে। এসব ব্যাপারে তাদের ধৈর্যের বাঁধনের বিষয়টি পরীক্ষিত। তাই যারা উসকানির ভূমিকায় নেমেছেন, তাদের অন্য কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে। ইসলামের কল্যাণে কোনো কল্যাণধর্মী ও যৌক্তিক বিষয় থাকতে পারে, তা মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফারুকী উপস্থাপনায় কবর, মাজার, মিলাদসহ কিছু বিষয়ে সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করতেন। আবার পীরপূজা ও কবরপূজাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানও করতেন। তার কিছু মত ও রাজনৈতিক পরিচিতি কোনো আলেমের ভিন্নমত পোষণ ছাড়া গা-জ্বালার কারণ হওয়ার কথা নয়।
এ দেশের মাটি ও মানুষ আলেম বলতে বুঝায় ফরায়েজি আন্দোলন নেতা পীর দুদু মিয়া, মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, মাওলানা ইসলামাবাদী, খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মুফতি দ্বীন মোহাম্মদ, ফখরে বাঙ্গাল মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মাসুম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসান যশোরী, মাওলানা মোশাহেদুল ইসলাম, মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী, শায়েখে কৌড়িয়া সিলেট, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রমুখ। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন অনেকেই। তার বাইরে আছেন হকপরস্ত বেশ ক’জন পীর। যাদের মধ্যে গহরডাঙ্গা, শর্ষীণা, বাহাদুরপুর, ফুলফুর, চরমোনাই, বায়তুশ শরফ, ফুরফুরা, হামিদী নগর, কাসিয়ানীসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানতুল্য সিলসিলা। যাদের ব্যাপারে জনগণ উৎসাহী। যারা এই তল্লাটের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ হিসেবে পরিচিত। তারা সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার অনুসারী। এর বাইরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে যারা সক্রিয়, তারাও ইসলামের খেদমতগার হিসেবে পরিচিত।
এর বাইরেও অসংখ্য অলি-আল্লাহ, পীর-দরবেশের পরশ সমৃদ্ধ, স্মৃতিধন্য এ জমিনে মাওলানা ফারুকী হত্যার বিচার নিয়ে প্রহসন কিভাবে মানা যেতে পারে। এটা নারায়ণগঞ্জের মতো ত্বকী কিংবা সাত খুনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় যে, সরকারি ইচ্ছায় শামীমদের আড়ালে রাখবেন। এটা ফেনীর ঘটনা নয় যে, একরাম হত্যায় অভিযুক্ত নিজাম হাজারীর মতো লোকেরা আড়ালে চলে যাবেন, রাজনৈতিক কারণে মিনার চৌধুরীরা আসামি হয়ে যাবেন।
ফারুকীর সাথে আমার তেমন জানাশোনা ছিল না। একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল বিটিভি ভবনে। মাওলানা নুরুজ্জামান ফারুকী তখন উপস্থাপক। সেই অনুষ্ঠানের প্রযোজক ছিলেন আলাউদ্দীন ভাই। আমি এবং ভাষাসৈনিক আবদুল গফুর সাহেব সম্ভবত কোনো এক ঐতিহাসিক দিবসের আলোচক। যদ্দূর মনে পড়ে নুরুল ইসলাম ফারুকীর সাথে নুরুজ্জামান ফারুকী পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলন সেই ’৯৩ সালের দিকে। তখন তিনি ছিলেন নবীন আলেম, বিনয়ী এবং কিছুটা আত্মপ্রত্যয়ীও; কিন্তু তখন তিনি কোনো মতপ্রধান মানুষ ছিলেন বলে মনে পড়ে না, বরং নুরুল ইসলাম ফারুকী নুরুজ্জামান ফারুকীর হাত ধরেই নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ হিসেবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পা রাখছিলেন।
আজ ফারুকী নেই। তার মৃত্যু ঘটেছে অসহনীয় ও মর্মান্তিকভাবে। যা মেনে নেয়া যায় না। তার দুই স্ত্রী, স্বজন ও সুহৃদরা চাইবেন তার হত্যাকারীদের ন্যায়সঙ্গত বিচার। তারচেয়েও বেশি চাইবেন তার রুহুর মাগফিরাত। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, আবার আদর্শিক চৈতন্যকে সম্মান করি, আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধার আসনে দেখতে চাই, মতদ্বৈধতাকে একাডেমিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী; তারা শেষ দিন পর্যন্ত ফারুকী হত্যার বিচার দাবি করে যাবো। তার মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি, ব্লেমগেম প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করবে। তার মর্মান্তিক ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডকে বাহানা করে যে মতেরই হোক কেন, সম্মানিত আলেম অসম্মানিত হলে ফারুকীর আত্মাও কষ্ট পাবে, আমরাও সেটার প্রতিবাদ করব।
ইসলামের অনুসারী হলেই যেকোনো মানুষ সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে যায় না। তারপরও পৃথিবীর সব ধর্মের ধার্মিক মানুষ যে ধর্মেরই অনুসরণকারী হোক, তারা এখন পর্যন্ত মন্দলোকের ভিড়ে ভালো মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে বসে যারা হঠকারিতা প্রদর্শন করে তারা বাস্তবে থাকে না। যারা বাস্তবে থাকে তারা সেটা সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে সাড়া জাগায় না। তাই দেশের কোনো আলেমকে এবং ধার্মিক মানুষকে অসম্মান ও অপমান করা সবার জন্য ক্ষতিকর। পুলিশ সদস্য বাদশা মিয়া হত্যায় শায়খুল হাদিসকে আওয়ামী লীগ সরকার একবার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কপাল পুড়িয়েছিল, সেটা সবাইকে স্মরণে রাখতে হবে। ধার্মিক মাত্রই সত্যবাদী হতে চান। আমানত রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিশ্রুতি পূরণেও তারা হন যতœশীল। তাই ধার্মিক মানুষকে ব্যবহার করে অধার্মিক ফায়দা তুলতে চাইলে তা হতে দেয়া যায় না। জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থীদের নানামুখী বিষাক্ত ছোবলে দংশিত হওয়ার মতো হঠকারিতা সবার জন্য ক্ষতিকর। ন্যায়নিষ্ঠ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার মতো তৎপরতাও শুভ ফল বয়ে আনে না। তাই তদন্তের আগে দোষী সাব্যস্ত করা, বিচারের আগে রায় ঘোষণার মতো অপকর্ম থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
ভুলে গেলে চলবে না, অবিচার, অপশাসন, জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের উদর থেকে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থী হঠকারিতা এবং অগণতান্ত্রিক অপশক্তি জন্ম নেয়। প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সুযোগ না থাকলে অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় পথচলার এক ধরনের রোমাঞ্চকর হঠকারিতার ভেতর থেকেই বাড়াবাড়ি করার পথ খুঁজে পেতে চায় মানুষ। সেটাই বিপদগামিতার পথ রচনা করতে সাহায্য করে। তাই সুশাসন, সুবিচার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিনাবাধায় ও অবারিত মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করাই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থী হঠকারিতা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
তা ছাড়া মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীর কিছু তর্কিত বিষয়ে ভিন্নমত ছাড়া কোনো প্রকাশ্য অপরাধ আমাদের জানা নেই। তিনি হজবিষয়ক ব্যবসায়-বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন কি ছিলেন না, সেটাও আমাদের জানা নেই। উদ্দেশ্যমূলক তথ্যবিভ্রাট ও ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করলে ভিন্নমত পোষণ করা মানুষের অধিকার। তিনি একজন আলোচিত টিভি উপস্থাপক। আলাচক হিসেবেও তার বগ্মিতা প্রশংসনীয়। তার বক্তব্যের যুক্তি, বস্তুনিষ্ঠতা এবং সত্যাসত্য আলাদা বিষয়। তিনি ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে কতটা প্রজ্ঞাসম্পন্ন ছিলেন, সেটা বিচার করার মতো ইসলামি জ্ঞান আমার নেই। কথিত আধুনিক শিক্ষিত হিসেবে তার বক্তব্য আমার কাছে কখনো কখনো যৌক্তিক মনে হয়েছে, আবার বিশেষ কোনো মত যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি। যেকোনো মানুষের এমনটি হতে পারে। দীর্ঘ দিন উপস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলেও বিগত ক’বছরে তাকে কিছু তর্কিত বিষয় নিয়ে বেশি জোর দিতে দেখতাম। আলেম-ওলামারা মনে করেন এবং বলেন, মৌলিক বিষয় ছাড়া আলেমদের ভেতর মতদ্বৈধতাও এক ধরনের রহমত। কারণ, তারা কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে বিতর্ক করেন না। বিতর্ক করেন বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও কিছু আমলের বিষয় নিয়ে; যা কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। তা ছাড়া প্রাজ্ঞ ইসলামি বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের ভিন্নমত পোষণকে কখনো এড়িয়ে যান না। তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে উম্মাহকে সংযত জীবনযাপনের উপদেশ দেন। ভালোকে ভালো বলেন, মন্দকে মন্দ বলেন। আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের ভাষা কখনো অসঙ্গত হয় না। তারা বাচাল কিংবা বাহুল্য কথনে আগ্রহী হন না। এই উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান চিন্তাবিদ সম্পর্কে আরেকজনের ভিন্নমতের মন্তব্য ছিলÑ তার বক্তব্য আমার পছন্দ হয় না। হজরত ফরিদপুরী ভিন্নমত পোষণ করলে বলতেনÑ তার সাথে একমত হতে পারলাম না। হজরত হাফেজ্জী হুজুর কলেমাগো মুসলমান অর্থাৎ শুধু কলেমার মিলের জন্য ঐক্যবোধ করাকে জরুরি মনে করতেন। আরো দু-একটা উপমা দেয়া যায়। ভারত বিভক্তির সময় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও হোসাইন আহমদ মদনী র: ছাড়া প্রায় সব আলেম পাকিস্তান প্রস্তাবকে সমর্থন দিয়েছেন। এ দুই খ্যাতিমান মনে করতেন, তাতে ভারতের সব প্রান্তের সব মুসলমানের বেশি উপকার হবে না। এই নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, কিন্তু প্রজ্ঞাবান আলেমরা ইসলাম-মুসলমান নিয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু এই রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কেউ কেউ সমালোচিত হয়েছেন, কেউ নিন্দিত হননি।
আইয়ুব খানকে যখন কেউ পছন্দ করছিল না, নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে কিছু রিজারভেশন নিয়েও মিস ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন জোগালেন এ দেশের প্রায় সব আলেম। তবে প্রকাশ্যে নয়, সম্মতিতে। ব্যতিক্রম ছিলেন তৎকালীন পীর সাহেব শর্ষীণা। তিনি কেন আইয়ুবকে পছন্দ করেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘লেংটা থেকে লেংটি ভালো’। ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তার দৃষ্টিতে আইয়ুব খান এবং ফাতেমা জিন্নাহ দু’জনই আক্ষরিক অর্থে না হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে উদোম। মানুষকে দুটো মন্দ থেকে একটি বাছাই করতে দিলে মন্দের ভালোটা বাচাই করাই যৌক্তিক। আমি মন্দের ভালো বাছাই করতে গিয়ে তাই করেছি। আরো একটি উপমা দেয়া যায়, গত রমজানে এটিএন বাংলায় রমজানের অনুষ্ঠানে তারাবির নামাজের রাকায়াত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রজ্ঞাবান আলেম মাওলানা কামাল উদ্দীন জাফরী বললেন, দুটো আমল আছে, দুটোই সমর্থনযোগ্য। মক্কা-মদিনার আমলটি করাই শ্রেয়, তবে এ নিয়ে বিতর্ক অকল্যাণকর। অন্য একটি প্রসঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত জবাব ছিলÑ এমন কথা আমি কুরআন-হাদিসে পাইনি। দু’টি রাজনৈতিক বিতর্ক একটি শরয়ি বিতণ্ডা নিয়ে আলোচনা করে বুঝাতে চেয়েছি, আমাদের আলেমসমাজ কখনো সীমা অতিক্রম করেন না। যারা বাড়াবাড়ি করেন তাদের কথা আলাদা।
এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মভীরু। একই সাথে বিভিন্ন মত ও অন্য ধর্মের ব্যাপারে সহিষ্ণু। তাই আবহমানকাল ধরে এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালিত হয়ে আসছে। তা ছাড়া এই দেশে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, দোয়াল্লিন-জোয়াল্লিন, কওমি-আলিয়া, দেওবন্দী, ওহাবি-সুন্নি, মাজারপন্থী, বেদাতি, পীরপন্থী, লা-মাজহাবিসহ নানা মতের সহ-অবস্থান রয়েছে। এ দেশে মিলাদ পড়ার তরিকা নিয়েও বিতণ্ডা হয়। তারাবি, বেতের, জুমাসহ অনেক ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কাপড় পরার ধরন ও সাইজ নিয়েও কথা হয়, কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে কেউ বাড়াবাড়ির সীমা অতিক্রম করে না। সাধারণ মানুষ ওইসব নিয়ে বেশি ভাবেও না। তাই বাংলা ভাই, শায়খ রহমানরা যখন চরমপন্থার দিকে এগোলেন তখন আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-খতিব সবাই একযোগে নিন্দাবাদ দিয়ে সরকারকে সমর্থন জোগালেন বলেই চারদলীয় জোট সরকার জঙ্গি ও চরমপন্থী হঠকারিতা দমনে সফল হয়েছে। জনগণ সরকারের কথায় মেরুবদ্ধ হয়নি, আলেম-ওলামাদের কথায় সমর্থন জুগিয়েছে। জোট সরকার ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বিবদমান গ্রুপগুলো নিয়ে রাজনীতি করেনি, এক গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানি দেয়নি। এ সরকার এই ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। তারা ধর্মীয় বিদ্বেষ কাজে লাগাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পুরো কাঠামোর অপব্যবহার করেছে। সরকারের বদখেয়াল চরমপন্থীদের মনে সুড়সুড়ি দিয়েছে। কিছু দরবারি আলেম তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। নানাভাবে মূল ধারার আলেমদের অসম্মান করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কওমি মাদরাসা জঙ্গি প্রজননকেন্দ্রের মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার লোকদের প্রসার ঘটেছে; যা এই মাটি ও মানুষের চিরায়ত চিন্তা ও চেতনাকে আহত করেছে।
বিচ্ছিন্ন কিছু ভিন্নমত নিয়েও ফারুকী টিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনের সুবাদে বাংলাদেশে ইসলামের মুখপাত্রদের একজন ছিলেন। তার সাথে কুরআন-সুন্নাহ নিয়ে কারো দ্বিমত ছিল, এমন তথ্য আমার জানা নেই। যে বিষয়গুলো তর্কিত বিষয়, তার সাথে ভিন্নমত নিয়েও সহ-অবস্থান এ দেশের আলেমদের রয়েছে। এসব ব্যাপারে তাদের ধৈর্যের বাঁধনের বিষয়টি পরীক্ষিত। তাই যারা উসকানির ভূমিকায় নেমেছেন, তাদের অন্য কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে। ইসলামের কল্যাণে কোনো কল্যাণধর্মী ও যৌক্তিক বিষয় থাকতে পারে, তা মনে করার কোনো কারণ দেখি না। ফারুকী উপস্থাপনায় কবর, মাজার, মিলাদসহ কিছু বিষয়ে সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করতেন। আবার পীরপূজা ও কবরপূজাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানও করতেন। তার কিছু মত ও রাজনৈতিক পরিচিতি কোনো আলেমের ভিন্নমত পোষণ ছাড়া গা-জ্বালার কারণ হওয়ার কথা নয়।
এ দেশের মাটি ও মানুষ আলেম বলতে বুঝায় ফরায়েজি আন্দোলন নেতা পীর দুদু মিয়া, মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, মাওলানা ইসলামাবাদী, খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মুফতি দ্বীন মোহাম্মদ, ফখরে বাঙ্গাল মাওলানা তাজুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মাসুম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসান যশোরী, মাওলানা মোশাহেদুল ইসলাম, মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী, শায়েখে কৌড়িয়া সিলেট, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, খতিব মাওলানা ওবায়দুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রমুখ। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন অনেকেই। তার বাইরে আছেন হকপরস্ত বেশ ক’জন পীর। যাদের মধ্যে গহরডাঙ্গা, শর্ষীণা, বাহাদুরপুর, ফুলফুর, চরমোনাই, বায়তুশ শরফ, ফুরফুরা, হামিদী নগর, কাসিয়ানীসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানতুল্য সিলসিলা। যাদের ব্যাপারে জনগণ উৎসাহী। যারা এই তল্লাটের আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ হিসেবে পরিচিত। তারা সবাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদার অনুসারী। এর বাইরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত নামে যারা সক্রিয়, তারাও ইসলামের খেদমতগার হিসেবে পরিচিত।
এর বাইরেও অসংখ্য অলি-আল্লাহ, পীর-দরবেশের পরশ সমৃদ্ধ, স্মৃতিধন্য এ জমিনে মাওলানা ফারুকী হত্যার বিচার নিয়ে প্রহসন কিভাবে মানা যেতে পারে। এটা নারায়ণগঞ্জের মতো ত্বকী কিংবা সাত খুনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় যে, সরকারি ইচ্ছায় শামীমদের আড়ালে রাখবেন। এটা ফেনীর ঘটনা নয় যে, একরাম হত্যায় অভিযুক্ত নিজাম হাজারীর মতো লোকেরা আড়ালে চলে যাবেন, রাজনৈতিক কারণে মিনার চৌধুরীরা আসামি হয়ে যাবেন।
ফারুকীর সাথে আমার তেমন জানাশোনা ছিল না। একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল বিটিভি ভবনে। মাওলানা নুরুজ্জামান ফারুকী তখন উপস্থাপক। সেই অনুষ্ঠানের প্রযোজক ছিলেন আলাউদ্দীন ভাই। আমি এবং ভাষাসৈনিক আবদুল গফুর সাহেব সম্ভবত কোনো এক ঐতিহাসিক দিবসের আলোচক। যদ্দূর মনে পড়ে নুরুল ইসলাম ফারুকীর সাথে নুরুজ্জামান ফারুকী পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলন সেই ’৯৩ সালের দিকে। তখন তিনি ছিলেন নবীন আলেম, বিনয়ী এবং কিছুটা আত্মপ্রত্যয়ীও; কিন্তু তখন তিনি কোনো মতপ্রধান মানুষ ছিলেন বলে মনে পড়ে না, বরং নুরুল ইসলাম ফারুকী নুরুজ্জামান ফারুকীর হাত ধরেই নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ হিসেবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পা রাখছিলেন।
আজ ফারুকী নেই। তার মৃত্যু ঘটেছে অসহনীয় ও মর্মান্তিকভাবে। যা মেনে নেয়া যায় না। তার দুই স্ত্রী, স্বজন ও সুহৃদরা চাইবেন তার হত্যাকারীদের ন্যায়সঙ্গত বিচার। তারচেয়েও বেশি চাইবেন তার রুহুর মাগফিরাত। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, আবার আদর্শিক চৈতন্যকে সম্মান করি, আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধার আসনে দেখতে চাই, মতদ্বৈধতাকে একাডেমিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী; তারা শেষ দিন পর্যন্ত ফারুকী হত্যার বিচার দাবি করে যাবো। তার মৃত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি, ব্লেমগেম প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করবে। তার মর্মান্তিক ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডকে বাহানা করে যে মতেরই হোক কেন, সম্মানিত আলেম অসম্মানিত হলে ফারুকীর আত্মাও কষ্ট পাবে, আমরাও সেটার প্রতিবাদ করব।
ইসলামের অনুসারী হলেই যেকোনো মানুষ সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে যায় না। তারপরও পৃথিবীর সব ধর্মের ধার্মিক মানুষ যে ধর্মেরই অনুসরণকারী হোক, তারা এখন পর্যন্ত মন্দলোকের ভিড়ে ভালো মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে বসে যারা হঠকারিতা প্রদর্শন করে তারা বাস্তবে থাকে না। যারা বাস্তবে থাকে তারা সেটা সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে সাড়া জাগায় না। তাই দেশের কোনো আলেমকে এবং ধার্মিক মানুষকে অসম্মান ও অপমান করা সবার জন্য ক্ষতিকর। পুলিশ সদস্য বাদশা মিয়া হত্যায় শায়খুল হাদিসকে আওয়ামী লীগ সরকার একবার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কপাল পুড়িয়েছিল, সেটা সবাইকে স্মরণে রাখতে হবে। ধার্মিক মাত্রই সত্যবাদী হতে চান। আমানত রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিশ্রুতি পূরণেও তারা হন যতœশীল। তাই ধার্মিক মানুষকে ব্যবহার করে অধার্মিক ফায়দা তুলতে চাইলে তা হতে দেয়া যায় না। জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থীদের নানামুখী বিষাক্ত ছোবলে দংশিত হওয়ার মতো হঠকারিতা সবার জন্য ক্ষতিকর। ন্যায়নিষ্ঠ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার মতো তৎপরতাও শুভ ফল বয়ে আনে না। তাই তদন্তের আগে দোষী সাব্যস্ত করা, বিচারের আগে রায় ঘোষণার মতো অপকর্ম থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
ভুলে গেলে চলবে না, অবিচার, অপশাসন, জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের উদর থেকে জঙ্গিবাদ, চরমপন্থী হঠকারিতা এবং অগণতান্ত্রিক অপশক্তি জন্ম নেয়। প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সুযোগ না থাকলে অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় পথচলার এক ধরনের রোমাঞ্চকর হঠকারিতার ভেতর থেকেই বাড়াবাড়ি করার পথ খুঁজে পেতে চায় মানুষ। সেটাই বিপদগামিতার পথ রচনা করতে সাহায্য করে। তাই সুশাসন, সুবিচার ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিনাবাধায় ও অবারিত মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করাই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থী হঠকারিতা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।
মাসুদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন