জাতীয় সংসদের হাতে উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের ইম্পিচমেন্ট বা অভিশংসনের ক্ষমতা দিয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনার জন্য সরকারি দল যে উদ্যোগ নিয়েছে তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন বক্তা বলেছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাই শুধু ক্ষুণ্ন হবে না, উচ্চ আদালতও সংসদের আড়ালে ক্ষমতাসীনদের অধীনস্থ হয়ে পড়বে। মাননীয় বিচারপতিদের সব সময় অভিশংসনের মাধ্যমে অসম্মানিত হওয়ার এবং চাকরি হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকতে হবে। ফলে তাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কোনো মামলার রায় দেয়া সম্ভব হবে না- বিশেষ করে যে সব মামলায় ক্ষমতাসীন নেতারা বা তাদের দলীয় লোকজন অভিযুক্ত থাকবেন। বক্তারা সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, ২০০৯ সালে গঠিত সংসদেও আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার বিচারপতিদের অভিশংসন করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার একই দল এমন এক সংসদকে দিয়ে কাজটি করানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যে সংসদের অর্ধেকের বেশি সদস্যই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষিত হয়েছেন। অর্থাৎ এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। অন্যদিকে অমন একটি সংসদকে দিয়েই তড়িঘড়ি করে সংবিধানে অভিশংসন সংক্রান্ত সংশোধনী আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এজন্যই সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদ সভায়ও বক্তারা বলেছেন, পরিকল্পিত ১৬শ সংশোধনীর পেছনে ক্ষমতাসীনদের অসৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য দেশকে আবারও বাকশালের একদলীয় শাসনে ফিরিয়ে নেয়া। সে উদ্দেশ্য থেকে এরই মধ্যে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পর সরকারের দৃষ্টি পড়েছে বিচারপতিদের ওপর। সংসদের হাতে অভিশংসনের ক্ষমতা দিয়ে ক্ষমতাসীনরা বিচার বিভাগকে চাপের মুখে রাখতে চাচ্ছেন, যাতে মাননীয় বিচারপতিরা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সভায় উপস্থাপিত বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করি। বস্তুত বিএনপি ও জামায়াতসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও একই ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছে। বাকশাল ধরনের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তারা অভিন্ন বক্তব্য রেখে এসেছে। এসব বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। প্রসঙ্গক্রমে ক্ষমতাসীনদের প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্য ও কৌশলের দিকেও লক্ষ্য করা দরকার। যুক্তি দেখাতে গিয়ে কথায় কথায় তারা ১৯৭২ সালের সংবিধানকে টেনে আনছেন এবং বোঝাতে চাচ্ছেন যেন দেশকে ওই সংবিধানে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুনতে মন্দ না হলেও ক্ষমতাসীনরা কিন্তু একই সঙ্গে মিথ্যাচারও যথেষ্টই করে চলেছেন। যেমন তারা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই নাকি সংসদের হাত থেকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এবং সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই কাউন্সিলের প্রধান যে জিয়াউর রহমান নিজেই ছিলেন সে কথাটাও প্রচার করে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। কথাটা কিন্তু সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ, সংসদের হাত থেকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা প্রথম ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা তিনি রাষ্ট্রপতির তথা নিজের একার হাতে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান সে ক্ষমতা এনেছিলেন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। এর ফলে অভিশংসনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির নিরংকুশ ক্ষমতা ও এখতিয়ার খর্ব ও বিলুপ্ত হয়েছিল। অথচ সেকালের পরিবেশ এমন ছিল যখন জিয়াউর রহমান চাইলেই সে ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পারতেন। কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীন মর্যাদা নিশ্চিত করার স্বার্থে তিনি সে পথে পা বাড়াননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, নামে রাষ্ট্রপতির হাতে থাকলেও বাস্তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল মাননীয় প্রধান বিচারপতির হাতে। তিনিই আসলে ছিলেন কাউন্সিলের অঘোষিত প্রধান। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা সে সত্যটুকু স্বীকার করতে চান না। তারা বরং বিকৃতভাবে তথ্যের উল্লেখ করেন, একই সাথে মিথ্যাচারও করেন সুচিন্তিতভাবে। আমরা ইতিহাস বিকৃতির এই হীন চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই এবং মনে করি, জাতিকে যদি জানাতেই হয় তবে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসই জানানো উচিত।
আমাদের মতে বর্তমান পর্যায়ে বেশি দরকার ক্ষমতাসীনদের সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা। কারণ, মিথ্যার ওপর ভর করে ক্ষমতাসীনরা আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার এবং উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের নিজেদের অধীনস্থ করে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মুখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললেও প্রথম থেকেই তারা নিম্ন আদালতকে হুকুমের দাসের মতো ব্যবহার করে এসেছেন। এবার তারা উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদেরকেও আজ্ঞাবহ করতে চাচ্ছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার দিকেই এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এই চেষ্টাকে প্রতিহত করা না গেলে বিচার বিভাগই শুধু সেবাদাসে পরিণত হবে না, গণতন্ত্রও বিপন্ন হয়ে পড়বে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে একদলীয় শাসন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সভায় উপস্থাপিত বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করি। বস্তুত বিএনপি ও জামায়াতসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও একই ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছে। বাকশাল ধরনের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তারা অভিন্ন বক্তব্য রেখে এসেছে। এসব বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। প্রসঙ্গক্রমে ক্ষমতাসীনদের প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্য ও কৌশলের দিকেও লক্ষ্য করা দরকার। যুক্তি দেখাতে গিয়ে কথায় কথায় তারা ১৯৭২ সালের সংবিধানকে টেনে আনছেন এবং বোঝাতে চাচ্ছেন যেন দেশকে ওই সংবিধানে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুনতে মন্দ না হলেও ক্ষমতাসীনরা কিন্তু একই সঙ্গে মিথ্যাচারও যথেষ্টই করে চলেছেন। যেমন তারা বলছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই নাকি সংসদের হাত থেকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন এবং সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই কাউন্সিলের প্রধান যে জিয়াউর রহমান নিজেই ছিলেন সে কথাটাও প্রচার করে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। কথাটা কিন্তু সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ, সংসদের হাত থেকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা প্রথম ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বাকশাল সরকারের রাষ্ট্রপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা তিনি রাষ্ট্রপতির তথা নিজের একার হাতে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান সে ক্ষমতা এনেছিলেন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। এর ফলে অভিশংসনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির নিরংকুশ ক্ষমতা ও এখতিয়ার খর্ব ও বিলুপ্ত হয়েছিল। অথচ সেকালের পরিবেশ এমন ছিল যখন জিয়াউর রহমান চাইলেই সে ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পারতেন। কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীন মর্যাদা নিশ্চিত করার স্বার্থে তিনি সে পথে পা বাড়াননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, নামে রাষ্ট্রপতির হাতে থাকলেও বাস্তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল মাননীয় প্রধান বিচারপতির হাতে। তিনিই আসলে ছিলেন কাউন্সিলের অঘোষিত প্রধান। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা সে সত্যটুকু স্বীকার করতে চান না। তারা বরং বিকৃতভাবে তথ্যের উল্লেখ করেন, একই সাথে মিথ্যাচারও করেন সুচিন্তিতভাবে। আমরা ইতিহাস বিকৃতির এই হীন চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই এবং মনে করি, জাতিকে যদি জানাতেই হয় তবে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসই জানানো উচিত।
আমাদের মতে বর্তমান পর্যায়ে বেশি দরকার ক্ষমতাসীনদের সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা। কারণ, মিথ্যার ওপর ভর করে ক্ষমতাসীনরা আসলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার এবং উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের নিজেদের অধীনস্থ করে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মুখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললেও প্রথম থেকেই তারা নিম্ন আদালতকে হুকুমের দাসের মতো ব্যবহার করে এসেছেন। এবার তারা উচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদেরকেও আজ্ঞাবহ করতে চাচ্ছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার দিকেই এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এই চেষ্টাকে প্রতিহত করা না গেলে বিচার বিভাগই শুধু সেবাদাসে পরিণত হবে না, গণতন্ত্রও বিপন্ন হয়ে পড়বে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে একদলীয় শাসন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন