বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মাদক ও নেশার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুভ কিছু হোক আর নাই হোক, জাতির জন্য একের পর এক সর্বনাশের দরজা খুলে গেছে। এখনো অশুভ কর্মকাণ্ডের দরজা শুধু খোলা আর খোলানোই হচ্ছে। আশংকার কারণ হলো, যেভাবে চলছে দীর্ঘ মেয়াদে তার পরিণতি কেবল অশুভ নয়, ভয়ংকরও। প্রসঙ্গক্রমে প্রধান একটি বিষয় হিসেবে বেশি আলোচিত হচ্ছে নানা ধরনের নেশার সামগ্রী। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধরা পড়ছে ইয়াবার বড় বড় চালান। এই তো মাত্র ক’দিন আগে, গত ৩১ আগস্ট চট্টগ্রামে প্রায় আড়াই লাখ পিস ইয়াবার চালান আটক করেছে বিজিবি ও কোস্টাল গার্ড (বিসিজি)। কর্ণফুলি নদীর তীরে আটক এসব ইয়াবার বাজার মূল্য নাকি ১০ কোটি টাকা। এর দিন চারেক পরই রাজধানীতে গ্রেফতার করা হয়েছে কক্সবাজারের এক যুবককে। অভিযোগ রয়েছে, সে নাকি ঢাকায় একটি ইয়াবার কারখানা স্থাপন করার কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এদিকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, শুধু আগস্ট মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াই লাখের বেশি ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বছর কয়েক আগে একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর এক ঘনিষ্ঠ স্বজন ইয়াবাসহ ধরা পড়েছিল। সেই থেকে ইয়াবা বাংলাদেশে ব্যাপক ‘জনপ্রিয়তা’(!) অর্জন করেছে। নেশার সামগ্রী হিসেবে ‘অতুলনীয়’(!) ইয়াবার প্রধান ক্রেতা ও ব্যবহারকারী দেশের যুব সমাজ- যাদের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সরকারের দিক থেকে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে না ওঠায় দেখতে দেখতে এরই মধ্যে ইয়াবা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি গ্রামাঞ্চলের পান-বিড়ির দোকানে পর্যন্ত আজকাল ইয়াবা কিনতে পাওয়া যায়। এদিকে বিজিবি ও বিসিজিসহ বিভিন্ন সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে ভারত থেকে এলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবার চালান প্রধানত আসে মিয়ানমার থেকে। বাংলাদেশের নাফ নদীর উল্টোদিকে মংডাউ শহরে নাকি ৪০টির মতো ইয়াবা তৈরির কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত প্রায় সমুদয় ইয়াবাই বাংলাদেশে চালান করা হয়। এ উদ্দেশ্যে চোরাচালানীরা কৌশল হিসেবে নৌপথকে বেছে নিয়েছে। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এবং ট্রলারে করে তারা টেকনাফ ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় চালান পৌঁছে দেয়। ইদানীং টেকনাফের সাবরং, মগপাড়া এবং শিকদারপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় তাদের বেশি তৎপর দেখা যাচ্ছে। প্রতিবার একই এলাকায় বা একই সময়ে তারা আসে না। কখনো রাতের বেলায়, কখনো আবার দিবালোকেই তারা কাজ সেরে চলে যায়। এ যেন অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো ব্যাপার! সে জন্যই চাইলেও বিজিবি ও বিসিজির পক্ষে তাদের পাকড়াও করা সম্ভব হয় না। একই কারণে চোরাচালানও প্রতিহত করা যাচ্ছে না।
এরপর আসে সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়ার কর্মকাণ্ড। এসব কর্মকাণ্ড চালায় এদেশেরই কিছু টাউট ব্যবসায়ী। তারা একদিকে বিদেশী চোরাচালানীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে, অন্যদিকে বখে যাওয়া ছাত্র ও যুবকদের লালন-পালন করে। এই ছাত্র-যুবকরা শুধু মাল পৌঁছে দেয়ার কাজে জড়িত থাকে না, নিজেরাও নেশা করে। ফলে তাদের দিয়ে কম খরচে ব্যবসা ও মুনাফা করতে পারে টাউট ব্যবসায়ীরা। প্রসঙ্গক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও আলোচনা কম হচ্ছে না। কারণ, অভিযোগ রয়েছে, নগদ অর্থে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে চোরাচালানীরা সবাইকে হাতে রাখে। এজন্যই সবকিছু চোখের সামনে ঘটলেও চোরাচালানীদের বিরুদ্ধে কখনো তেমন কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। অবৈধ পথে আনা মালামালও নাকি তখনই কেবল ধরা পড়ে, যখন লেনদেনে সমস্যা হয়। অর্থাৎ চোরাচালানীরা আয়োজন অনুযায়ী ঘুষ দেয় না। বলা হচ্ছে, মূলত সে কারণেই ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক ও নেশার সামগ্রী ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সকল অঞ্চলে।
আমরা মনে করি, নেশা সামগ্রীর এমন চোরাচালান এবং কেনাবেচা কোনোক্রমেই চলতে দেয়া যায় না। কারণ, অবাধে এবং যেখানে সেখানে পাওয়া যায় বলে ছাত্র-যুবকরা শুধু নয়, সমাজের অন্য বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষও নেশার শিকারে পরিণত হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এমনকি অল্পবয়সী মেয়েরাও আজকাল মাদকে ডুবে থাকে। এর ফলে পারিবারিক জীবন থেকে সমাজের প্রতিটি স্তরেই এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, গোটা সমাজেই পচন ধরেছে। অথচ মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের সমাজে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সবই হয়েছে মূলত সরকারের গাফিলতি এবং ভারতসহ বিশেষ দু’একটি দেশের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের কারণে। এই দেশগুলো বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। এজন্য তারা সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ছাত্র-যুবকদের টার্গেট বানিয়েছে। তারা জানে এবং যুগে যুগে একথা প্রমাণিতও হয়েছে যে, দেশের কল্যাণের জন্য ছাত্র-যুবকরাই সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। একই কারণে বাংলাদেশবিরোধী রাষ্ট্র ও শক্তিগুলোও প্রথমে ছাত্র-যুবকদের ধ্বংসের আয়োজন করেছে। তাদের পরিকল্পনা অনেকাংশে সফলও হয়েছে। আমরা মনে করি, ইয়াবাসহ সব ধরনের নেশা ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের উচিত র‌্যাব ও পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়োজিত রাখার পরিবর্তে চোরাচালানী ও টাউট ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে নিয়োজিত করা। সীমান্তের পাহারাও জোরদার করা দরকার। সরকারকে একই সঙ্গে বিশেষ করে দুই প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে, যাতে এ দুটি দেশের সরকার নেশার সামগ্রী তৈরির সকল কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়। যাতে চোরাচালানীরা আর কখনো কোনো সামগ্রী পাচার করতে না পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads