সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

রাজনীতির লক্ষ্যে কি রূপান্তর ঘটে গেছে?


মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের কারণে একসময় মানুষ রাজনীতি করতো। তখনকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ছিলেন সদয় ও সংবেদনশীল। কিন্তু এখনকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আচরণে লক্ষ্য করা যায় নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও দায়িত্বহীনতা। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অধঃপতনের চিত্র লক্ষ্য করলে মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের রাজনীতির লক্ষ্যে কি রূপান্তর ঘটে গেছে? অনেকেই বলে থাকেন, মানুষ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ এখন রাজনীতি করে থাকেন অর্থ ও ক্ষমতার লালসায়। এমনসব বিশ্লেষণের বাস্তবতা বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকারি দলের বহু নেতা-কর্মীর আচরণে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এক শ্রেণীর নেতা-কর্মী এখন ব্যস্ত চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি এবং পারস্পরিক খুনোখুনিতে। ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে আমাদের সময় পত্রিকায় ‘নেতার হাতে নেতা খুন’ শিরোনামে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, গত ৪ মাসে রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন দলীয় লোকদের হাতেই। কেন শাসক দলের নেতা কর্মীরা একের পর এক খুন হচ্ছেন? এ সম্পর্কে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন- টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, এলাকার আধিপত্য, মাদক ব্যবসা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ অন্যান্য বিবাদে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। তারা আরো বলেন, স্বার্থের দ্বন্দ্বে রাজধানীসহ অধিকাংশ মহকুমা, জেলা ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগ। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যায় যে,  গত শুক্রবার রাজধানীর আজিমপুরে একটি কাঁচা বাজারে আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত আওয়ামী লীগ কর্মী সাহাবুদ্দিন সাবু ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শ্যামপুরে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম লালুকে গুলী চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শ্যামপুর ইউনিয়ন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরনবী শাওনকে আসামী করে কদমতলী থানায় মামলা করা হয়েছে। এলাকায় চাঁদাবাজ হিসেবে শাওনের কুখ্যাতি রয়েছে। গত বছর ২৯ জুলাই মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড মার্কেটের সামনে গুলী করে হত্যা করা হয় ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কীকে। ওই মার্কেটের গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও দেখে একই সংগঠনের নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেককে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে র‌্যাব। ঘটনার দুই দিন পর র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ তারেক নিহত হন। হত্যাকা-ের আরেক আসামী যুবলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল বিদেশে পলাতক। দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তর্কোন্দলে সরকারি ঘরানার নেতা-কর্মীরা এখন নিজেদের হাতে নিজেরাই নিহত হচ্ছেন।
এসব ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, রাজনৈতিক সুশাসন তৈরি না হলে এগুলো চলবে। রাজনীতিকদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সাধারণত কোনো দল সরকারে এলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। অনেকে টাকা-পয়সা বাড়ানোর সহজ পথ তৈরি করতে গিয়ে এটা করছে। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়লে এগুলো কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। এমন বিশ্লেষণকে সরকারি দলের কর্তাব্যক্তিরা কতটা গুরুত্ব দেবেন জানি না। সরকারি দলের তো দায়িত্ব অনেক। তাদের সরকার চালাতে হয়, দলকেও পরিচালনা করতে হয়। দায়িত্ববোধের আলোকে সরকার ও দল পরিচালনা করতে হলে আইন-কানুন, নীতি-নৈতিকতা ও ন্যায়-অন্যায় বোধকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সরকারি দল আত্মসমালোচনা করে কর্তব্য নির্ধারণ করলে দেশের সাথে দলেরও মঙ্গল হতে পারে। প্রসঙ্গত প্রশ্ন জাগে, অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী না হয়ে ন্যায়ের পথে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে ওয়াদাবদ্ধ সরকার কতটা ওয়াদা পালন করেছেন? ওয়াদা পালন করলে তো দেশে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন হতো। এবং তা হলে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা অর্থ ও ক্ষমতার লোভে এভাবে খুনোখুনিতে মত্ত হতে পারতো না। বিয়ষটি সরকার ও সরকারি দল বিবেচনায় আনে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads