বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে বা উত্থান ঘটার আশঙ্কা আছে-এরকম একটি নাটক বহুকাল ধরেই শেখ হাসিনা সরকার মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করছে। অনির্বাচিত এই সরকার পশ্চিমা বিশ্বের কোথায়ও কোনো স্বীকৃতি লাভ করেনি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বই বলেছে যে, এ সরকার জনপ্রতিনিধিত্বহীন। অতএব, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখানে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাদের মন যোগাবার একটি সরল পথ ধরে শেখ হাসিনা সরকার হেঁটে থাকেন। আর সেটি হলো বাংলাদেশে হুজি, জেএমবি এবং সাম্প্রতিক আইএস জঙ্গীরা ঘাপটি মেরে আছে। বিএনপি-জামায়াত এই জঙ্গীদের সহযোগী। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই এদেশ থেকে কার্যকরভাবে জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে পারে। অতএব অনির্বাচিত এই সরকারকে বিশ্ব যেনো স্বীকার করে নেয়।
এই কৌশল ব্যবহার করতে করতে একেবারে ভোতা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কৌশল ব্যবহার চলছেই। কারও মুখে যদি দাঁড়ি থাকে, মাথায় যদি টুপি থাকে, আর পরনে যদি থাকে লম্বা কুর্তা- তাহলে কোনো না কোনোভাবে সরকার তাদেরকে জঙ্গীবাদী বলে অভিহিত করার চেষ্টা করে। এতে নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়, সাজানো নাটকে বহু সাধারণ তরুণের জীবন ও তাদের পরিবার ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। এসব ঘটনা ধারাবাহিক ও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মৌলিক অধিকার- সবকিছুই পদদলিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্রই যেনো বদলে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন দলীয়, পুলিশ দলীয়, অন্যসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়, বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার জন্য অনির্বাচিত সংসদের হাতে নেয়া হয়েছে বিচারপতি অভিশংসন ক্ষমতা। শুধু বিচারপতিদেরই নয় নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ অন্য সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। তার উপর কথা বলার বা মত প্রকাশের অধিকার হরণ করার জন্য একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। করা হয়েছে সম্প্রচার নীতিমালা, করা হচ্ছে অনলাইন নীতিমালা। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করে সংবাদপত্রের উপরও খড়্গ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়েছে। তারই অংশ জঙ্গীবাদের নাটক।
সম্প্রতি এর নিষ্ঠুর শিকার কয়েকজন তরুণ। গত আগস্ট মাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫ জন তরুণকে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তারপর মাস দেড়েক অতিবাহিত হলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঐ ৫জনকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদের একজন খায়রুল ইসলাম। সে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার বাবা আবুল কাশেম স্কুল শিক্ষক। গত ৯ আগস্ট র্যাব সদস্য পরিচয়ে গাজীপুরের কাউলতালিয়ার বাড়ী থেকে খায়রুলকে তুলে নেয়া হয়। পিতা আবুল কাশেম জানান যে, তুলে নেয়ার সময় তার পরিবারের সদস্যদের গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে র্যাব ও স্থানীয় থানা, পুলিশের কেউ খায়রুল সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। ১০ আগস্ট খায়রুলের বাবা জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং ৭৬২। আবুল কাশেম বলেছেন, ‘আমার ছেলে প্রচ- ভীতু স্বভাবের। রক্ত দেখলেই ভয় পায়। অথচ পুলিশ বলছে, আমার ছেলে নাকি জঙ্গী’। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে যখন আটক করা হয়, তখন তার মুখে দাঁড়ি ছিলো না। দীর্ঘদিন আটক রাখার পর যখন জঙ্গী হিসেবে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়, তখন ছেলের মুখ ভর্তি দাঁড়ি’।
অপরজন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালামের পুত্র আসিফ আদনান। তাকেও একইভাবে আগস্ট মাসে তুলে নিয়ে গেছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতারের সময় তারও মুখে দাঁড়ি ছিলো না। কিন্তু যখন তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জনসমক্ষে হাজির করা হয়, তখন তার মুখ ভর্তি দাঁড়ি দেখা যায়। ডিবি অফিসে ছেলেকে দেখতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐ বিচারপতি। গ্রেফতারকৃত অপর এক তরুণ ফজলে এলাহী তানজিল। তার মা উম্মে ফাতেমা সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। তারও দাবি তার ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জঙ্গী সাজানো হয়েছে।
এর আগে গতবছর ১৫ই ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নির্দোষ দাবি করা হয়। কিন্তু পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেফতারকৃতরা যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য তা তাদের জবানবন্দিতে পরিষ্কার হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সব অভিভাবকের কাছেই তাদের সন্তান নিরপরাধ। কিন্তু কখন কে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তা অনেক অভিভাবকও জানেন না। ফলে তারা এটিবি’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং সুপ্ত সেলের মাধ্যমে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত হয়।
খায়রুলের বাবা স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম যুগান্তরকে জানান যে, ৯ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি গাজীপুরের কাউলতলিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় তাদের বাড়ীতে গিয়ে আইনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপও তারা নিয়ে যায়। ঐ সময়ে খায়রুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলে। ছেলেকে তুলে নেয়ার সময় তিনি তাদের সঙ্গে সড়ক পর্যন্ত এসেছিলেন। ছেলেকে ছেড়ে দিতে অনেক অনুনয়, বিনয় করেন। কিন্তু তাদের মন গলেনি। ঐসময় প্রধান সড়কে তিনি আরও দু’টি মাইক্রোবাস ও দু’টি জিপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। প্রথম গাড়ীতে তারা খায়রুলকে উঠিয়ে নিয়ে একসঙ্গে চলে যায়। এ ব্যাপারে তিনি থানা ও র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের সন্ধান পাননি। জয়দেবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, থানায় ডায়েরী হওয়া ‘সাধারণ ডায়েরীটি’ তিনি নিজেই তদন্ত করেছেন। অফিসিয়ালি র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে তখন কেউই খায়রুলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে তদন্তে নাকি খায়রুলের সন্ধান পাওয়া না গেলেও তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু খায়রুলের বাবার দাবি, তাদের পরিবারের সবাই দীর্ঘকাল ধরেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি নিজে আওয়ামী লীগের গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার চাচা ও ভাইয়েরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। খায়রুলও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৮ দিন পর পুলিশ জানিয়েছে, তাকে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার দেখানো শফিককে ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজের সম্মুখ থেকে তুলে নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। ১৩ আগস্ট টাঙ্গাইলের মিরের বেতাগী মাদ্রাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষক আহসানুল্লাহকে। পরিবারের এ সব কথাই অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
এই সমস্ত পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের ফলে পুলিশের কোনো ভাষ্যই এখন আর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। অর্থাৎ সরকারের জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা প্রমাণের জন্য এবং বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে খুশি নাটক সাজাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরের আগে আগে এরকম ‘নাটক’ যেনো আরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো, যাতে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলতে পারেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ আছে। ঘটনা যেনো কাকতালীয়ভাবে সেরকম হয়েছে। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গীবাদ সম্পর্কে গরম বক্তব্য দিয়েছেন।
কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান প্রতিক্রিয়া আছে। আর সত্য ধামাচাপা দেয়া যায় না। প্রকাশিত সত্য ও প্রতিক্রিয়ার ভার বহন করা সরকারের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করি।
এই কৌশল ব্যবহার করতে করতে একেবারে ভোতা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কৌশল ব্যবহার চলছেই। কারও মুখে যদি দাঁড়ি থাকে, মাথায় যদি টুপি থাকে, আর পরনে যদি থাকে লম্বা কুর্তা- তাহলে কোনো না কোনোভাবে সরকার তাদেরকে জঙ্গীবাদী বলে অভিহিত করার চেষ্টা করে। এতে নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়, সাজানো নাটকে বহু সাধারণ তরুণের জীবন ও তাদের পরিবার ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। এসব ঘটনা ধারাবাহিক ও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মৌলিক অধিকার- সবকিছুই পদদলিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্রই যেনো বদলে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন দলীয়, পুলিশ দলীয়, অন্যসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়, বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার জন্য অনির্বাচিত সংসদের হাতে নেয়া হয়েছে বিচারপতি অভিশংসন ক্ষমতা। শুধু বিচারপতিদেরই নয় নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ অন্য সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। তার উপর কথা বলার বা মত প্রকাশের অধিকার হরণ করার জন্য একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। করা হয়েছে সম্প্রচার নীতিমালা, করা হচ্ছে অনলাইন নীতিমালা। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করে সংবাদপত্রের উপরও খড়্গ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়েছে। তারই অংশ জঙ্গীবাদের নাটক।
সম্প্রতি এর নিষ্ঠুর শিকার কয়েকজন তরুণ। গত আগস্ট মাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫ জন তরুণকে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তারপর মাস দেড়েক অতিবাহিত হলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঐ ৫জনকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদের একজন খায়রুল ইসলাম। সে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার বাবা আবুল কাশেম স্কুল শিক্ষক। গত ৯ আগস্ট র্যাব সদস্য পরিচয়ে গাজীপুরের কাউলতালিয়ার বাড়ী থেকে খায়রুলকে তুলে নেয়া হয়। পিতা আবুল কাশেম জানান যে, তুলে নেয়ার সময় তার পরিবারের সদস্যদের গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে র্যাব ও স্থানীয় থানা, পুলিশের কেউ খায়রুল সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। ১০ আগস্ট খায়রুলের বাবা জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং ৭৬২। আবুল কাশেম বলেছেন, ‘আমার ছেলে প্রচ- ভীতু স্বভাবের। রক্ত দেখলেই ভয় পায়। অথচ পুলিশ বলছে, আমার ছেলে নাকি জঙ্গী’। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে যখন আটক করা হয়, তখন তার মুখে দাঁড়ি ছিলো না। দীর্ঘদিন আটক রাখার পর যখন জঙ্গী হিসেবে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়, তখন ছেলের মুখ ভর্তি দাঁড়ি’।
অপরজন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালামের পুত্র আসিফ আদনান। তাকেও একইভাবে আগস্ট মাসে তুলে নিয়ে গেছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতারের সময় তারও মুখে দাঁড়ি ছিলো না। কিন্তু যখন তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জনসমক্ষে হাজির করা হয়, তখন তার মুখ ভর্তি দাঁড়ি দেখা যায়। ডিবি অফিসে ছেলেকে দেখতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐ বিচারপতি। গ্রেফতারকৃত অপর এক তরুণ ফজলে এলাহী তানজিল। তার মা উম্মে ফাতেমা সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। তারও দাবি তার ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জঙ্গী সাজানো হয়েছে।
এর আগে গতবছর ১৫ই ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নির্দোষ দাবি করা হয়। কিন্তু পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেফতারকৃতরা যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য তা তাদের জবানবন্দিতে পরিষ্কার হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সব অভিভাবকের কাছেই তাদের সন্তান নিরপরাধ। কিন্তু কখন কে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তা অনেক অভিভাবকও জানেন না। ফলে তারা এটিবি’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং সুপ্ত সেলের মাধ্যমে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত হয়।
খায়রুলের বাবা স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম যুগান্তরকে জানান যে, ৯ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি গাজীপুরের কাউলতলিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় তাদের বাড়ীতে গিয়ে আইনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপও তারা নিয়ে যায়। ঐ সময়ে খায়রুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলে। ছেলেকে তুলে নেয়ার সময় তিনি তাদের সঙ্গে সড়ক পর্যন্ত এসেছিলেন। ছেলেকে ছেড়ে দিতে অনেক অনুনয়, বিনয় করেন। কিন্তু তাদের মন গলেনি। ঐসময় প্রধান সড়কে তিনি আরও দু’টি মাইক্রোবাস ও দু’টি জিপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। প্রথম গাড়ীতে তারা খায়রুলকে উঠিয়ে নিয়ে একসঙ্গে চলে যায়। এ ব্যাপারে তিনি থানা ও র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের সন্ধান পাননি। জয়দেবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, থানায় ডায়েরী হওয়া ‘সাধারণ ডায়েরীটি’ তিনি নিজেই তদন্ত করেছেন। অফিসিয়ালি র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে তখন কেউই খায়রুলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে তদন্তে নাকি খায়রুলের সন্ধান পাওয়া না গেলেও তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু খায়রুলের বাবার দাবি, তাদের পরিবারের সবাই দীর্ঘকাল ধরেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি নিজে আওয়ামী লীগের গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার চাচা ও ভাইয়েরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। খায়রুলও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৮ দিন পর পুলিশ জানিয়েছে, তাকে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার দেখানো শফিককে ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজের সম্মুখ থেকে তুলে নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। ১৩ আগস্ট টাঙ্গাইলের মিরের বেতাগী মাদ্রাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষক আহসানুল্লাহকে। পরিবারের এ সব কথাই অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
এই সমস্ত পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের ফলে পুলিশের কোনো ভাষ্যই এখন আর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। অর্থাৎ সরকারের জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা প্রমাণের জন্য এবং বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে খুশি নাটক সাজাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরের আগে আগে এরকম ‘নাটক’ যেনো আরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো, যাতে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলতে পারেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ আছে। ঘটনা যেনো কাকতালীয়ভাবে সেরকম হয়েছে। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গীবাদ সম্পর্কে গরম বক্তব্য দিয়েছেন।
কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান প্রতিক্রিয়া আছে। আর সত্য ধামাচাপা দেয়া যায় না। প্রকাশিত সত্য ও প্রতিক্রিয়ার ভার বহন করা সরকারের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করি।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী