বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

সরেজমিন প্রতিবেদন ভালুকায় তারেক রহমানের পরশ পাওয়া মোতালেবের বাগানে এখন খেজুরের সমারোহ,বেসুমার উচ্ছাস তার পরিবারে



 উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁওয়ে মোতালেবের খেজুরবাগানে এখন খেজুরের সমারোহ।প্রতিদিনই আগন্তকরা আসছে বাগান দেখতে।খুশী মোতালেব,আনন্দ পরিবারেও।খেজুর চাষই মোতালেবের ভাগ্যকে এখন পরিবর্তন করে দিয়েছে।যে বাগানের গোঁড়াপত্তন ঘটেছিল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাত ধরেই
প্রকাশ,ভালুকার নিভৃত পল্লীর নাম পাড়াগাঁও আর এ গ্রামেরই বাসিন্দা মোতালেব ১৯৯৮ সালে জীবিকার অন্নেষনে সৌদি আরব যায়।সেখানে একটি খেজুর বাগানের তদারকির চাকুরী পায় সে।দু’বছর চাকুরী করে অর্থের বদলে খেজুর নিয়ে বাড়িতে এসে হাজির হয় সে।পরিকল্পনা নিজ এলাকায় সে খেজুরের বাগান করবে।কারন সে দেখেছে সৌদির মাটিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজ হাতে লাগানো নিম গাছের চারা আমাদের দেশী গাছেই মতই বড় দেখতে হয়েছে।এ থেকেই তার মধ্যে কৌতুহলের জন্ম।সে মাফিক দেশে ফিরে খেজুর বাগানের কথা পারিবারিক ভাবে প্রকাশ করার পর সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়।পিতা,মাতা,স্ত্রী,সন্তান সকলেরই মনে আঘাত লাগে মোতালেব করলটাকি।টাকা না এনে খেজুর নিয়ে এসেছে।এলাকায় এ কথা চারিদিকে চাউর হওয়ার পর এলাকাবাসী মোতালেব ’পাগল’হয়ে গেছে বলে প্রচার শুরু করে।সংকল্পে অটুট মোতালেব হাল ছাড়েনি বাগান সে করবেই।সকলের নিন্দা ও উপহাসকে পিছু ফেলে মাত্র ৭৫ শতাংশ জমিতে শুরু করে তার স্বপ্নের খেজুর বাগান।২৭৫টি চারা নিয়ে বাগানের যাত্রা শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ১০০০ চারায় রুপান্তরিত হয় বাগান। রাতের আঁধারে বাগানের চারা উপড়ানো,বাধা কেটে ফেলা ইত্যাদি উপদ্রবে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকে মোতালেব।এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের আনুকুল্যে তার বাগান পরিচর্যা চলতে থাকে।প্রশাসনিক চোখ পড়ায় কিছুতা অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেও সীমিত অর্থে বাগান পরিচর্চা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।এ সময় ’দৈনিক দিনকাল’সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় বাগান নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন ’বাংলাদেশের মাটিতে সৌদির খেজুর’।রিপোর্ট গুলো দৃষ্ঠি কাড়তে সক্ষম হয় বিএনপি’র তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের।স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন খেজুর বাগান পরিদর্শন করতে তিনি আসবেন।তৎকালীন ইউএনও মোতালেবকে ডেকে এ সংবাদ জানানোর পর আনন্দে অনুভুতি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলে মোতালেব।২০০৪সালের ১৬জুন বিকেলে বাগানে এসে হাজির হন তারেক রহমান।মোতালেবের বাড়ী সংলগ্ন বাগানটি তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেন।তারেক রহমানের অগমনের সংবাদে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদেরও ভীড় লেগে যায়।তবে বাগানে যত্রতত্র প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়ে কেবল সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেন নিরাপত্তা কর্মীরা।বাগান ঘুরে তারেক রহমান মোতালেবের কাঁধে হাত রেখে বাগান করার ইতিহাস ও নেপথ্য কথা শুনেন মনোযোগ দিয়ে। মোতালেবের বর্ননায় তিনি আনন্দিত ও বিস্মিতও হন।বাগান পরিচর্চার নানাবিধ অসঙ্গতি ও সমস্যাবলীর খোঁজখবর জানতে চাইলে মোতালেব প্রয়োজনীয় উপাদান ও কারিগরি সমস্যার পাশাপাশি এলাকায় বিদ্যুতায়ন এবং রাস্তা পাকা করনের জোর দাবী করে তারেক রহমানের কাছে।বার বার একই দাবী করায় তারেক রহমান হেসে দিয়ে বলেন ঠিক আছে এ সমস্যার সমাধান হবে।বছর ঘুরার আগেই বিদ্যুৎ লাইনের কাজ চলতে থাকে এবং সম্পন্নও হয়ে যায়। বাগানকে ঘিরে হলেও বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয় পুরো এলাকা।রাস্তাটি আগে থেকেই জনবহুল থাকলেও কিন্তু পিচঢালা হওয়ায় ফিরে পায় তার স্বকিয়তা¡। সিডস্টোর বাজার থেকে প্রায় ৭কি.মি এলাকায় বিদ্যুতায়ন ঘটে। অন্ধকার ঘর আলোকিত করে কয়েক হাজার পরিবারকে।সম্প্রতি বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাজীপুরের ৭/৮জন লোক তার ঘরে বসে কথা বলছে।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই কমবেশী লোকজনের আনাগোনা লেগেই আছে।বিরক্ত হয়না সে।আগন্তকদের জন্য আলাদা কক্ষই তৈরী করে রেখেছে।বাস্তবতা এমন যেন ডাক্তারের কাছে রোগীর আগমন। এ সময় মোতালেব ছাড়াও কথা হয় পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লাহ লিটন,শফিউল্লাহ আনসারী ও লালন মাস্টারসহ আরো অনেকের সাথেই।দীর্ঘ আলাপচারিতায় তারেক রহমানের নানাবিধ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন তারা।তিন জনই পেশায় শিক্ষক। পাড়াগাঁও গ্রামের বিদ্যুৎ ও সিডস্টোর-সখীপুর রাস্তা তারেক রহমানের অবদান এবং এ বিষয়ে কারও কোন দ্বিধা নেই এ কথা জড়তাহীন ভাবেই উল্লেখ করেন তারা।বিদ্যুৎ কত দ্রুত এসেছে সেটিরও বর্ননা দেন লালন মাস্টার।তারেক রহমানের আগমনের বদৌলতেই এবং বাগানকে কেন্দ্র করেই এটি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।তাদের মতে এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই এ ঘটনায় তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে দৃষ্ঠি আকর্ষন করা হলে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভালুকা উপজেলার সভাপতি ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু বলেন,দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী,কৃষক,শ্রমিক ও সাধারন মানুষকে সক্ষম করে তোলতে তারেক রহমানের যে প্রয়াস সেটিকে দেশের মানুষ আদর্শ হিসেবে গ্রহন করতে শুরু করেছিল যা দেখে একটি ঈর্ষান্বিত মহল আতংকিত হয়ে পড়ে।তাঁর এ কর্মস্পৃহা বিএনপির প্রতিটি কর্মীর ভিতর প্রবেশ করাতে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। ফখরউদ্দিন বাচ্চু উল্লেখ করেন,ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ষড়যন্ত্রকারীরা সাময়িক সুবিধা পেলেও কখনোই সফল হয়নি তারেক রহমানকে নিয়েও হবেনা।তিনি এতদিন আমাদের মাঝে থাকলে এ রকম আরো অনেক মোতালেবের ভাগ্যই পরিবর্তিত হতে পারতো।
মোতালেব জানায়,ঐ সময় তারেক রহমানের পৃষ্টপোষকতা না পেলে বাগান নিয়ে সফলতার মুখ দেখতে পেতনা সে।বাগান পরিচর্চা করতে সেলোমেশিন সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সহায়তা দেয়ায় বাগানকে দাঁড় করাতে পেরেছে সে।বর্তমানে তার বাগানের আয়তন বেড়ে ১একর ৩২ শতাংশে বিস্তৃতি লাভ করেছে।ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫২০টি গাছ রয়েছে এবং ৩৫টিতে খেজুর ঝুঁলে আছে।চারার পরিমানও প্রায় ৭/৮হাজারের মতো।মাস খানেকের মধ্যেই এ মৌসুমের খেজুর গুলো খাওয়ার উপযোগী হবে।ক’বছর যাবৎ খেজুর বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে বাগানের বাউন্ডারী ওয়াল তৈরী করেছে।তাতে প্রায় ৩/৮লাখ টাকা খরচ হয়েছে।চারা ও খেজুর বিক্রি করে তার সংসার চলছে ভালো ভাবেই।দেশের বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিদের আগমন ঘটছে । মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার প্রচার হচ্ছে।দেশের স্বনামখ্যাত ব্যাক্তিদের সাহচার্য পাচ্ছে সব মিলিয়ে মোতালেব এখন বেসুমার উচ্ছাসে।সকলের কাছেই এখন সে প্রিয় মুখ।এক ছেলে ৮ম শ্রেনীতে ও অপর ছেলে ২য় শ্রেনীতে অধ্যয়নরত।একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়ে গেছে।সব মিলিয়ে সাজানো গোছানো হয়ে গেছে মোতালেবের পুরো পরিবার কেবল বাগান দিয়েই।বাগানে ফল ধরেছে এ মুহুর্তে তারেক রহমানের কথা মনে পড়ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মোতালেবের স্পষ্ট উচ্চারন’তারেক রহমান আবারো আসবেন’ তার বাগানে এবং এ বাগানের উৎপন্ন হওয়া খেজুর তিনি নিজ হাতে ছিঁড়ে খাবেন।মোতালেব যেমন আশাবাদী তেমন আশাবাদী এলাকাবাসীও।তারাও অধির আগ্রহে আছেন শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া যোগ্য উত্তরসুরী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যত কর্নধারকে বাগানের ওছিলায় সাদাসিধে বেশে আবার দেখবেন।আবারো কোন বৃদ্ধ মাথায় ভুলানোর সুযোগ পাবেন,বলবেন বাবা তুমি একদিন অনেক বড় হবে। এলাকাবাসীর মতে,দেশে হাজারো মোতালেব তৈরীর সুনিপুন ’কারিগর’ তারেক রহমানের অপেক্ষা করছে দেশ জুড়েই।কারন তিনি কেবল পাড়াগাঁও গ্রামেই না ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।তৈরী করেছেন অসংখ্য মোতালেবকে হয়ত আরো তৈরী হতে পারত। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads