শনিবার, ১৬ জুন, ২০১২

সারাদেশে সংবাদপত্রের কালো দিবসের আলোচনা : দেশে পঁচাত্তরের মতো গণমাধ্যমের ওপর দমন-নিপীড়ন চলছে



১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে সারাদেশে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, দেশে ’৭৫-এর মতো গণমাধ্যমের ওপর দমন-নিপীড়ন চলছে; তখন সাংবাদিকরা বেকার হলেও খুন হননি। কিন্তু বর্তমানে অহরহ খুন হচ্ছেন সাংবাদিক। এসব রুখতে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাংবাদিক সমাজের পাশাপাশি কয়েকটি জেলায় রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিও সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিস্তারিত আমার দেশ-এর চট্টগ্রাম ব্যুরো, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার অপচেষ্টা রোখা হবে : সিএমইউজে : সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও মিডিয়ার প্রতি চলমান আক্রোশ স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের অস্তিত্ব বিনাশ এবং বিকাশের ধারা বাধাগ্রস্ত করার সংবদ্ধ অপচেষ্টার অংশ। দেশের সাংবাদিক সমাজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার যে কোনো অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে। ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা বলেন, যে মতলব নিয়ে তত্কালীন সরকার ১৯৭৫ সালে ৪টি ছাড়া সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল; বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে বর্তমান সরকার একই মতলব হাসিল করতে চায় বলেই সাগর-রুনি ও ফরায়েজিদের জীবন দিতে হচ্ছে। গতকাল সকালে সিএমইউজের সভাপতি শামসুল হক হায়দরীর সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক মজুমদার নাজিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সিএমইউজে মিলনায়তনে এ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএফইউজের সহ-সভাপতি ইসকান্দর আলী চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি জাহিদুল করিম কচি, যুগ্ম মহাসচিব মুস্তফা নঈম, সিএমইউহেজর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, সদস্য মোহাম্মদ তোয়াহা, সরওয়ার উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, সালেহ নোমান, দিদারুল হক, ছগির আহমদ, আবু জাফর সাঈদ শামীম, শামীম হামিদ, রিমন বড়ুয়া ও এনাম হায়দার প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
এদিকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চায়। রাষ্ট্র ও সমাজের দর্পণ সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকরা আজ শুধু পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর কাছে নিগৃহীত হচ্ছে না, বরং সরকারদলীয় লোকজন দ্বারা হত্যা, হামলা, মামলার শিকার হচ্ছেন। শেখ পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেয়ার সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আজ পুলিশের বুটের তলায় পিষ্ট, সাংবাদিকরা পুলিশের লাঠির আঘাতে বিক্ষত; তাই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার সব ষড়যন্ত্র নস্যাত্ করে মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজসহ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সংবাদপত্র কালো দিবস উপলক্ষে নাছিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ে গতকাল বিকালে সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন এসব কথা বলেন।
সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান শামীম, এম এ ছবুর, অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার, আমার দেশ চট্টগ্রাম ব্যুারো চিফ ও পেশাজীবী নেতা জাহিদুল করিম কচি, এস কে খোদা তোতান, মোশারফ হোসেন দিপ্তী, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, যুবদল কেন্দ্রীয় সদস্য ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, এম এ মতিন, এস এম মফিজ উল্লাহ, আমীনুল ইসলাম তৌহিদ, তানভীর আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম, ফজলুল করিম রকিব, মাইনুদ্দীন মোহাম্মদ শহীদ, একরাম উদ্দিন, এইচ.এম. রাশেদ খান, ছাদেকুর রহমান রিপন, জিয়াউর রহমান জিয়া, খালেদা বোরহান, রেজিয়া বেগম মুন্নি, মেজবাহ উদ্দিন রাজু, আবদুল কাদের জসিম, আবদুর রহমান, বেলাল বেশ কিছু নেতা।
আরইউজে’র আলোচনা সভা : সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, সরকারের সময় যত শেষ হয়ে আসছে সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা ততই বাড়ছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে নিতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার ওপর অযাচিত ও অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের একদলীয় ও বাকশালি চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বক্তারা অবিলম্বে নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির খুনিদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সরকারের পতনের লক্ষ্যে সাংবাদিকরাও রাজপথে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
আরইউজে’র সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক এসএমএ কাদেরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সরদার এম আনিছুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন বিএফইউজে’র সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রাজু, আরইউজে’র সদস্য ফরিদ আকতার পরাগ, মঈন উদ্দিন, আজিবুল হক পার্থ প্রমুখ।
খুলনায় প্রতিবাদ সভা : যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজের শার্শা প্রতিনিধি জামালউদ্দিন খুন ও সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ’৭৫-এর মতো গণমাধ্যমের ওপর দমন-নিপীড়ন চলছে। তখন সাংবাদিকরা বেকার হলেও খুন হননি। কিন্তু বর্তমানে অহরহ খুন হচ্ছে সাংবাদিক। ১৬ জুনের প্রাক্কালে যশোর শার্শার সাংবাদিক জামাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে প্রমাণ করে গণমাধ্যমের ওপর কালো অধ্যায়ের সুনামি চলছে। বক্তারা আরও বলেন, ’৭৫-এর ১৬ জুন সব সংবাদপত্র বন্ধ করে তত্কালীন সরকারের শেষ রক্ষা হয়নি, তেমনি বর্তমান সরকারেরও দমন-নিপীড়ন চালিয়ে তাদের মনোবাসনা পূরণ হবে না। বক্তারা অবিলম্বে সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার ও গণমাধ্যমের ওপর সরকারের দমন-নিপীড়ন বন্ধ করে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধিনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
গতকাল সকাল ১১টায় নগরীর স্যার ইকবাল রোডের প্রেস ক্লাব ইউনিয়ন কার্যালয়ে ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল খালেক আজীজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আবু তৈয়ব। বক্তৃতা করেন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, হারুন অর রশিদ, এরশাদ আলী, এমএ জলিল, মাহবুবুর রহমান মুন্না, আশরাফুল ইসলাম নুর প্রমুখ।
এদিকে খুলনা জেলা বিএনপির সভায় বক্তারা সংবাদপত্র বন্ধের বিরোধিতা করে বলেন, ১৯৭৫ সালে এই দিনে ৪টি সংবাদপত্র রেখে সব পত্রিকা বন্ধ রেখেছিল। এখনও সব মিডিয়া বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে এই জালিম সরকার। বক্তারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখলের তীব্র নিন্দা জানান।
গতকাল সকালে দলীয় কার্যালয়ে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী আবদুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমীর এজাজ খান ও কওছার জমাদ্দার। বগুড়ায় আলোচনা সভা : সংবাদপত্রে কালো দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে বগুড়ায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়া প্রেস ক্লাবে জেইউবির সভাপতি মির্জা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা মহসিন রাজু, জেইউবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজরে রাব্বী ডলার, আবদুল মান্নান, আতিকুর রহমান মিন্টু, ইউনুস আলী, সানাউল হক শুভ, সুমন সরদার প্রমুখ। নেতারা সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জোর করে মিডিয়ার মুখ বন্ধ রাখা যাবে না। সাংবাদিকদের ওপর যত নির্যাতন নেমে আসবে, তত তাড়াতাড়ি সরকারের পতন ঘটবে—এটাই ইতিহাস।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads