দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে এবং প্রশ্রয় পেয়ে ছাত্রলীগসহ সরকারদলীয় ক্যাডারদের সহিংস আচরণ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রায় প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হচ্ছে পত্র-পত্রিকায়। এখানে তুলে ধরা হচ্ছে গত ৫ জুন প্রকাশিত একটি দৈনিকের কয়েকটি শিরোনাম—‘যশোর এমএম কলেজ শিক্ষকের হাত ভেঙে দিল ছাত্রলীগ ক্যাডাররা’, ‘বিএনপি নেতার বসতঘর খুলে নিল আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা’, ‘নোয়াখালীতে বৃদ্ধকে পিটিয়েছে আ.লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান’, ‘হোমনায় এম কে আনোয়ারের গাড়িতে আওয়ামী লীগের হামলা’, ‘সরকারি দলের হামলা-চাঁদাবাজিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে বলে জোর গলায় দাবি করছেন এবং নিজ দলের কৃতকর্মের পক্ষে সাফাই গাইছেন নেতৃবৃন্দ, তখন আলোচ্য সংবাদ শিরোনামগুলোই প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, তারা আত্মপ্রতারণা করছেন। অর্থাত্ যা বলছেন তার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোনোই মিল নেই।
শিক্ষকের গায়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এবারই প্রথম হাত তোলেনি। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এবার শুধু হাত তোলেনি, হাত ভেঙে দিয়েছে পিটিয়ে। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সহিংসতার কবলে পড়েন তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কলেজের পাশে তার বাসভবনের সামনেই ভবন তৈরির জন্য রেখেছিলেন পাথর ও ইটের খোয়া। ৩ জুন স্থানীয় একটি ছেলে পাথর ছড়াতে শুরু করলে তিনি নিষেধ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত কলেজের সাবেক ছাত্র তার দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে শিক্ষককে প্রহার করে। প্রতিবাদে শিক্ষকরা ক্লাস ও কলেজের পরীক্ষা বর্জন করে এবং শিক্ষকরা মানববন্ধনসহ কালোব্যাজ ধারণ করার কর্মসূচি দেন। এ ঘটনা থেকে সহজেই আঁচ করা যায়, তাণ্ডবে অভ্যস্ত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাত যেন নিশপিশ করছিল। শিক্ষকের হাত ভেঙেও তারা নিশ্চিন্ত যে, তাদের কিছুই হবে না। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ও প্রতিপক্ষ দলনে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অনেকে আগাগোড়াই সিদ্ধহস্ত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই তারা সহসা বলীয়ান হয়ে ওঠে। তারই একটি দৃষ্টান্ত তারা এবার রেখেছে খুলনায়। সেখানে বিএনপি নেতার জমি দখলের লক্ষ্যে নয়জন ভাড়াটিয়ার ঘর ভেঙেছে এবং পুড়িয়ে দিয়েছে। দু’দফা হামলা চালিয়ে তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রতিপক্ষের চালা-বেড়াও খুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা থাকলেও তারা রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। পুলিশ আক্রান্তদের লিখিত অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। এদিকে নোয়াখালীর চরমধুয়া ইউনিয়নের আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান ছাত্রলীগের মতো কোনো শিক্ষককে পেটাননি, পিটিয়েছেন জনৈক বৃদ্ধকে গ্রাম্য সালিশের সুরাহা করতে গিয়ে। বৃদ্ধ এখন হাসপাতালে। এর পরের ঘটনাও মোটেই নতুন কিছু নয়, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বহুলচর্চিত একটি উদ্যোগ এবং এ পর্যন্ত সংঘটিত বিস্তর ঘটনারই একটি নমুনামাত্র। তা হলো—প্রতিপক্ষের নেতার গাড়িবহরে হামলা চালানো। এ ধরনের অপচেষ্টায় হয়তো তারা দৃশ্যত সফলও হয়েছেন, তবে প্রতিটি ঘটনাই আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরয়াণতার নজির হয়ে রয়েছে; যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করার জন্য ঢের বৈকি। রাজনৈতিক কারণে সারাদেশেই ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য ‘বাজি’র খেলা আকছার চলছে প্রায় বাজি ধরে। সর্বশেষ প্রতিপক্ষের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার হোমনায় ৪ জুন। বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং সদ্য জামিনে কারামুক্ত সংসদ সদস্য এমকে আনোয়ারের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। তিনি একটি গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে হোমনায় গেলে উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার গাড়িকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারে কতিপয় দুর্বৃত্ত। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য, নির্ধারিত স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সমাবেশ ঘোষণা দিলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যখন আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কথা বলেই যাচ্ছেন, তখন এ ধরনের সন্ত্রাসমূলক উপদ্রব অব্যাহত থাকা কোন ধরনের উন্নতির আভাস বহন করে? যদি বিরোধীদলীয় একজন শীর্ষ নেতা গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন তাহলে অন্তত একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দমন-পীড়নের পথ সহসা রুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে এখন একটি সমঝোতামূলক নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে আছেন দেশবাসী। এ অবস্থায় সমঝোতা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। এমন প্রশ্নও করছেন অনেকে, ক্ষমতার জোরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে যারা, যারা মন চাইলেই প্রতিপক্ষের ওপর শক্তির অপব্যবহার করছে, তারা কি জাতীয় নির্বাচনেও নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণে তত্পর থাকবে?
শিক্ষকের গায়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এবারই প্রথম হাত তোলেনি। এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এবার শুধু হাত তোলেনি, হাত ভেঙে দিয়েছে পিটিয়ে। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সহিংসতার কবলে পড়েন তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কলেজের পাশে তার বাসভবনের সামনেই ভবন তৈরির জন্য রেখেছিলেন পাথর ও ইটের খোয়া। ৩ জুন স্থানীয় একটি ছেলে পাথর ছড়াতে শুরু করলে তিনি নিষেধ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত কলেজের সাবেক ছাত্র তার দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে শিক্ষককে প্রহার করে। প্রতিবাদে শিক্ষকরা ক্লাস ও কলেজের পরীক্ষা বর্জন করে এবং শিক্ষকরা মানববন্ধনসহ কালোব্যাজ ধারণ করার কর্মসূচি দেন। এ ঘটনা থেকে সহজেই আঁচ করা যায়, তাণ্ডবে অভ্যস্ত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাত যেন নিশপিশ করছিল। শিক্ষকের হাত ভেঙেও তারা নিশ্চিন্ত যে, তাদের কিছুই হবে না। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ও প্রতিপক্ষ দলনে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অনেকে আগাগোড়াই সিদ্ধহস্ত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই তারা সহসা বলীয়ান হয়ে ওঠে। তারই একটি দৃষ্টান্ত তারা এবার রেখেছে খুলনায়। সেখানে বিএনপি নেতার জমি দখলের লক্ষ্যে নয়জন ভাড়াটিয়ার ঘর ভেঙেছে এবং পুড়িয়ে দিয়েছে। দু’দফা হামলা চালিয়ে তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সন্ত্রাসীরা প্রতিপক্ষের চালা-বেড়াও খুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা থাকলেও তারা রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। পুলিশ আক্রান্তদের লিখিত অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। এদিকে নোয়াখালীর চরমধুয়া ইউনিয়নের আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান ছাত্রলীগের মতো কোনো শিক্ষককে পেটাননি, পিটিয়েছেন জনৈক বৃদ্ধকে গ্রাম্য সালিশের সুরাহা করতে গিয়ে। বৃদ্ধ এখন হাসপাতালে। এর পরের ঘটনাও মোটেই নতুন কিছু নয়, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বহুলচর্চিত একটি উদ্যোগ এবং এ পর্যন্ত সংঘটিত বিস্তর ঘটনারই একটি নমুনামাত্র। তা হলো—প্রতিপক্ষের নেতার গাড়িবহরে হামলা চালানো। এ ধরনের অপচেষ্টায় হয়তো তারা দৃশ্যত সফলও হয়েছেন, তবে প্রতিটি ঘটনাই আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরয়াণতার নজির হয়ে রয়েছে; যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করার জন্য ঢের বৈকি। রাজনৈতিক কারণে সারাদেশেই ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য ‘বাজি’র খেলা আকছার চলছে প্রায় বাজি ধরে। সর্বশেষ প্রতিপক্ষের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার হোমনায় ৪ জুন। বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং সদ্য জামিনে কারামুক্ত সংসদ সদস্য এমকে আনোয়ারের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। তিনি একটি গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে হোমনায় গেলে উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার গাড়িকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারে কতিপয় দুর্বৃত্ত। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য, নির্ধারিত স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সমাবেশ ঘোষণা দিলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী যখন আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কথা বলেই যাচ্ছেন, তখন এ ধরনের সন্ত্রাসমূলক উপদ্রব অব্যাহত থাকা কোন ধরনের উন্নতির আভাস বহন করে? যদি বিরোধীদলীয় একজন শীর্ষ নেতা গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন তাহলে অন্তত একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দমন-পীড়নের পথ সহসা রুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে এখন একটি সমঝোতামূলক নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে আছেন দেশবাসী। এ অবস্থায় সমঝোতা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। এমন প্রশ্নও করছেন অনেকে, ক্ষমতার জোরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে যারা, যারা মন চাইলেই প্রতিপক্ষের ওপর শক্তির অপব্যবহার করছে, তারা কি জাতীয় নির্বাচনেও নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণে তত্পর থাকবে?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন