মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

টেন্ডার নিয়ে সড়ক ভবনে বন্দুকযুদ্ধ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গুলিবিদ্ধ ৬




 সড়ক ভবনের টেন্ডার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকলীগের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। দু’পক্ষের মুহুর্মুহু গুলিতে অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধরা হচ্ছেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক এডভোকেট শামীম শাহরিয়ার (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা রিপন (২৬), সড়ক পরিবহন অফিসের গাড়িচালক জাকির হোসেন (৪০), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মশিউর রহমান রাজেশ (৩২), ছাত্রলীগ নেতা কাজী মাসুমুল হক (২৭) ও গোলাম আজমল তৌহিদ (২৮)। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সড়ক ভবনের টেন্ডার নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় আতঙ্কে সড়ক ভবন ও আশপাশের লোকজন আতিঙ্কত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এসময় গুলিবিদ্ধ কয়েকজন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহতদের মধ্যে মাসুমুল হকের ডান হাতে, তৌফিকের ডান পায়ে, রিপনের ডান হাতে এডভোকেট শামীম শাহরিয়ারের পায়ে ও পিঠে, জাকির হোসেনের তলপেটে ও মশিউর রহমান রাজেসের পাঁজরে গুলি লেগেছে। রমনা জোনের ডিসি সৈয়দ  নূরুল ইসলাম বলেন, বিকাল চারটার দিকে  সড়ক ভবনের টেন্ডার দখলকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকলীগের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ ছাত্রলীগ কল্যাণ সমিতির সভাপতি শেখ মো. গোলাম আযম মামুন বলেছেন, সাড়ে তিনটার দিকে সড়ক ভবনের পাওয়ার স্টেশনের কাছে ঠিকাদারি ও ব্যবসায়ী এসোসিয়েশন কার্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে টেন্ডার ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়ে আলোচনা চলছিল সাবেক ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের মধ্যে। গতকাল সকালে সড়ক পরিবহনের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এ সংক্রান্তে একটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছিল। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, কারও একক দখলদারিত্বে টেন্ডার কেনাবেচা করা যাবে না। সারা দেশের সড়ক মেরামতের শ’ শ’ কোটি টাকার কাজ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারদলীয় অঙ্গ সংগঠনের ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। গোলাম আযম মামুন আরও বলেন, এসব বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল ঠিক তখনই সড়ক পরিবহনের অফিস সহকারী খন্দকার কামাল উদ্দন, অফিস স্টাফ ফজলুল হক ও বহিরাগত মাস্তান রফিকের নেতৃত্বে ৭টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রেবাসযোগে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী ঠিকাদারদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাদেরকে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। সড়ক ভবনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রফিকুল আমিন বলেন, ঘটনার এক ঘণ্টা আগেই তিনি সংঘর্ষের খবর পেয়েছিলেন। টুটুল নামে এক ব্যক্তি খবর দিয়েছিল সড়ক ও পরিবহন ভবনের এলেনবাড়ি শাখা কার্যালয় থেকে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য রওনা দিয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পরপরই শাহবাগ থানা পুলিশকে ফোন করে জানানো হয়। তবে ফোন করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটরসাইকেল ও মিনিবাসযোগে সন্ত্রাসীরা ঢুকে কমপক্ষে ৫০ রাউন্ড গুলি করে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ঠিকাদাররা সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা চালালে তারা গুলি করতে করতে দুই গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। দরপত্র পেতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে দেশের যোগাযোগ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সড়ক ভবনে দু’পক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদকসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শামীম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজেশ, রিপন ও তৌহিদুল সড়ক ভবনের ঠিকাদার। আর জাকির হোসেন সড়ক ভবনের গাড়িচালক। বিকাল ৪টার দিকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী সড়ক ভবনের ঢুকে তাদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করে চলে যায়। এ সময় তাদের গায়ে গুলি লাগে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সড়ক ভবনে কোন টেন্ডার ছিল না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহত তৌহিদ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক ভবনের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই  শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে ১০ দিন আগে শাহবাগ থানায় একটি মামলাও হয়েছে। তার দাবি- শ্রমিক লীগের কর্মীরাই এ হামলা চালিয়েছে। সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর অফিস সহকারী ও শ্রমিক লীগ নেতা কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ঠিকাদার কাজী মাসুমুল হক বলেন, সড়ক ভবনের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ৩রা  জুন সড়ক ভবনের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ঠিকাদারদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এরই জের ধরে শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। ঠিকাদার হাবীবুর রহমান লিটু বলেন, সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে সড়ক ভবনে ঢোকে এবং ঠিকাদারদের খুঁজতে থাকে। শ্রমিক লীগ নেতা কামাল ও রফিকের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। কামাল সড়ক ভবন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং একই ভবনের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা জানিয়েছেন, তারা ওই ভবনে বসা অবস্থায় তাদের ওপর হামলা করে শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা। গুলিবর্ষণ করে। এতে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়। তারা জানিয়েছেন, আত্মরক্ষার্থে আমরা ইট-পাটকেল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। রমনা জোনের ডিসি সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক ভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
গুলির ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি: সড়ক ভবনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্য’র কমিটি গঠন করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। গতকাল সন্ধ্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে সড়ক বিভাগ সচিব বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads