সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

পরকীয়ার জেরে রুনিকে সাগর হত্যা করে বলে মাহফুজের মন্তব্য : রহস্য উদঘাটনে এটিএন বাংলা চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি সাংবাদিক নেতাদের



সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি পরকীয়ার বলি মন্তব্যের জন্য বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বক্তব্যের সমালোচনা করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর প্রতি দাবি জানান। এদিকে সাগর-রুনিসহ সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাবেশ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি দেবেন সাংবাদিক নেতারা।
গত ৩০ মে পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, সাগর-রুনি পরকীয়ার বলি। রুনির অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল। সে বাসায় মদের আড্ডা বসাতো। সাংবাদিকরাও সেখানে যেত। তাদের ছোট ছেলে মেঘ প্রথম সাক্ষাত্কারে বলেছে, তার আব্বু তার আম্মুকে খুন করেছে। পরে দুটি গুণ্ডা তার আব্বুকে খুন করেছে। আমি ওর কথায় বিশ্বাস করি। কারণ ছোট শিশু মিথ্যা বলতে পারে না। গত শুক্রবার ব্রিটেনের দুটি জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা সাপ্তাহিক নতুন দিন এবং সাপ্তাহিক বাংলা টাইমসে এ সংক্রান্ত সংবাদটি প্রকাশ হলে মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকরা এ বক্তব্যের নিন্দা জানান। এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর এটিএন বাংলা ইউকে কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করলেও ড. মাহফুজ তার বক্তব্যে ছিলেন নির্বিকার। গতকাল বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল ইটিভি মাহফুজুর রহমানের এ বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রচার করে।
বাংলাদেশে যখন সাংবাদিক নির্যাতন ও সাগর-রুনি দম্পতি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকরা মিছিল-সমাবেশ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন এবং এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেন, তখন লন্ডনে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার এ মন্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এক যৌথ বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা মাহফুজুর রহমানের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তদন্ত চলাকালীন এ ধরনের মন্তব্য শুধু অশালীন ও আপত্তিকরই নয়, আইনেরও বরখেলাপ। এটিএন বাংলার সাংবাদিক রুনি সম্পর্কে সেই সংস্থার মালিকের এ ধরনের উক্তি অমানবিক, অসৌজন্যমূলক ও মানহানিকর। সাগর-রুনি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে বলে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান যে দাবি করেছেন, সেই প্রেক্ষিতে সাংবাদিক নেতারা তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিএফইউজে সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি আবদুস শহিদ ও ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
আজ সাংবাদিক সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান : সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় সাংবাদিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সমাবেশ শেষে জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের কাছে স্মারকলিপি দেবেন সাংবাদিক নেতারা। এ সমাবেশ সফল করতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি আবদুস শহিদ ও ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আখতারুজ্জামান লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক ঈসারফ হোসেন ঈসা।
মাহফুজুর রহমানের যে বক্তব্য নিয়ে চাঞ্চল্য : গত ৩০ মে পূর্ব লন্ডনের ব্লুমন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজুর রহমান সাগর-রুনি পরকীয়ার বলি বলে মন্তব্য করেন। ফেসবুকে সাগর-রুনি হত্যায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, কোনো দুর্নীতি করার মতো লোক আমি নই। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমি সত্য বলা থেকে পিছপা হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না। সংবাদ সম্মেলনে লন্ডনের সাপ্তাহিক নতুন দিন পত্রিকার সাংবাদিক মো. কাওসার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, শুনেছি আপনি নাকি সাগর-রুনি হত্যার সঙ্গে জড়িত—এ ব্যাপারে কিছু বলবেন প্লিজ? জবাবে ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি যতটুকু মনে করি, সাগর-রুনি পরকীয়ার বলি হতে পারে। হত্যাকাণ্ডের পর তাদের ছোট্ট শিশু মেঘের দেয়া একটি বক্তব্য ও ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে আমি এটি প্রচার করব। মাহফুজুর রহমান বলেন, রুনি খুব চঞ্চল এবং প্রাণোচ্ছল প্রকৃতির মেয়ে ছিল; যে কারণে তার অনেক বন্ধুও ছিল। আমি যেটুকু শুনেছি, রুনি তার বাসায় মদের আড্ডা বসাত। তার বাসায় অনেক সাংবাদিক ও তার বন্ধু-বান্ধব মদের ওই আড্ডায় যেত। সাংবাদিকরা তার বাসায় গিয়ে ‘মদটদ’ খেত। তিনি আরও বলেন, রুনির স্বামী সাংবাদিক সাগর জার্মানি থাকাকালে কোনো এক বন্ধুর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে আমি শুনেছি। সে কারণে তাদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্যও চলছিল।
মাহফুজুর রহমান বলেন, তাদের ছেলে মেঘের প্রথম সাক্ষাত্কারের ফুটেজ আমার কাছে আছে। আমি এটি ডিবিকেও দিয়েছি। সেখানে সে বলেছে, ‘প্রথমে আমার আব্বু (সাগর) আমার আম্মুকে (রুনি) খুন করে এবং পরে দুটি গুণ্ডা আমার আব্বুকে মেরেছে।’ বাচ্চা কখনও মিথ্যা কথা বলে না।
মাহফুজুর রহমান ডিবির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ডিবি কখনও বলেছে এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। কোনো সময় বলেছে চোর চুরি করছে। এরকম নানা তথ্য তারা দিচ্ছে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলা ইউকের সিইও হাফিজ আলম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শামসুল আলম লিটন, নিউজ এডিটর আবদুল হাই সঞ্জু। তিনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৬টায় সাগরের বাসায় আসার কথা থাকলেও রাত ২টায় সাগর কাজ ফেলে কেন বাসায় চলে এলেন? নিশ্চয়ই তিনি কিছুু বুঝতে পেরেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া মাহফুজুর রহমানের বক্তব্য সেখানকার বাংলা টিভি, সাপ্তাহিক নতুন দিন, বাংলা টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads