রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

ইলিয়াস কি ফিরে আসবেন প্রিয় শহর সিলেটে?




 এখনও আশাবাদী সিলেট বিএনপিসহ ইলিয়াস অনুসারীরা। খোঁজ মিলবে প্রিয় নেতা ইলিয়াসের। ফিরে আসবেন প্রিয় শহর সিলেটে। গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথে। সিলেট বিএনপি’র রাজনীতি আবার মাতিয়ে তুলবেন। নেতা-কর্মীরা আবার চাঙ্গা হয়ে নামবেন রাজপথে। বিশ্বনাথের বাড়িতে সব শোকাবহ পরিবেশ ভেঙে জেগে উঠবে নতুন আশা। সিলেট বিএনপি’র কর্মীরা এখনও বিশ্বাস করেন, ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন। এ আশা নিয়েই প্রতিদিন ভোর হয়। সিলেট ও বিশ্বনাথ বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা মনে করেন যে কোন সময় ফিরে আসবেন ইলিয়াস। তবে প্রতীক্ষার প্রহর কাটছে না। মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি’র কর্মীরা কেউ জেলে বসে, কেউ পলাতক থেকে আবার কেউ কেউ মামলার ঘানি টানতে টানতে অপেক্ষায় আছেন ইলিয়াসের। সরকারের ওপর ভরসা নেই তাদের। তারা মনে করেন, সরকারই ইলিয়াসকে নিয়ে নাটক করছে। প্রথম দিকে লোকদেখানো কিছু অনুসন্ধান থাকলেও এখন সব অনুসন্ধানই বন্ধ। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন একাধিক বার বেজে উঠেছে। দু’টি মোবাইল ফোন এসেছে। লন্ডন থেকে ফোন করে অনেকেই ইলিয়াসের মোবাইল খোলা পেয়েছেন। মোবাইল ফোন খোলা পাওয়ার পর এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল চিহ্নিত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু পরে তারা জানান, ইলিয়াস আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কখনও চালু হয়নি। ১৭ই মে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। সঙ্গে নিখোঁজ হন তার গাড়িচালক আনসার আলী। এরপর থেকে ইলিয়াস আলীর কোন খোঁজ নেই। দুই মাস পেরিয়ে গেল। এরপরও মিললো না তার সন্ধান। ওদিকে, সরকারের অনুসন্ধানও বন্ধ। বিশ্বনাথসহ সারাদেশে মারা গেছেন ৫ জন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে চলমান আন্দোলনে বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা জেলে গেছেন। এরপর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ইলিয়াস আলীর সন্ধানে দাবিতে এক দফা আন্দোলন নেই বিএনপিতে। অনেকটা ব্যাকফুটে। কিন্তু বসে নেই সিলেটের নেতা-কর্মীরা। কেবল মাত্র ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে সিলেটে আন্দোলনের প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আলহাজ মকন মিয়া চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান সহ বিএনপির নেতারা নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানে ইতিমধ্যে ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেছেন। গত ১১ই জুন ঢাকায় ১৮ দলের মহাসমাবেশের আগে এই পরিষদ শো-ডাউন করেছে, করেছে মিছিল সমাবেশ। সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদের নেতারা সিলেট বিভাগজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন। ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর নেতা ও সিলেট মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি ইলিয়াস আলী সরকারের কাছেই আছেন। এর কারণ ইলিয়াস আলী জনগণের নেতা। তাকে কোন অপশক্তি স্পর্শ করতে পারে না। আর ইলিয়াস আলীকে নিয়ে সরকারের সব অনুসন্ধান বন্ধ রয়েছে। ইলিয়াস আলীর মুক্তি দাবিতে সিলেটে ৫০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মাঠে নেমেছে। এই কমিটির ব্যানারে আন্দোলনের মাধ্যমে সিলেটের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই জননেতা ইলিয়াস জনতার মাঝে ফিরিয়ে আনবেন বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে এক দফা আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নেতারা। ইতিমধ্যে টানা ২০ দিনের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের টনক না নড়লে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়েছেন জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি জানান, ইলিয়াস আলী বিএনপি’র অবিসংবাদিত নেতা। ইলিয়াসবিহীন সিলেট রাজনীতির কল্পনা করা যায় না। এ ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কান্না থামছে না ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবির। টানা দুই মাস ধরে পুত্রের ফিরে আসার অপেক্ষায় রামধানার বাড়িতে মিলাদ, খতম ও দোয়া মাহফিল করাচ্ছেন। তিনি সরকারের কাছে তার পুত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। সুর্যবান বিবি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা কেবল তারাই বোঝে যারা এরকম ঘটনায় পড়েছে। ইলিয়াস আলী মুক্তি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আহাদ খান জামাল গতকাল জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী নেই- এ কথা কোনভাবেই বিশ্বাস করবে না সিলেট বিএনপি ও সাধারণ মানুষ। সরকারই তাকে গুম করে নানা নাটক সাজিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে চাই। আমাদের এখন এক দফা, ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads