সোমবার, ২ জুন, ২০১৪

শিক্ষামন্ত্রীর আশংকা


গত রোববার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘কোচিং বন্ধ করতে পারছি না। দেশে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং ব্যবসা। এটা বন্ধ করলে হয়তো আমাকে মেরে ফেলার জন্য ১০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলতে পারে।’
দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যা ও বাধার ব্যাপারে নাগরিকরা কমবেশি অবগত আছেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও কম হয় না। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নাগরিকদের সমালোচনার জবাবও দিয়ে থাকেন। দিনকয়েক আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে আমরা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে শিক্ষাবিদ ও লেখক মোহাম্মদ জাফর ইকবালের বাক ও কলমযুদ্ধ লক্ষ্য করেছি। প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অনশন পালন করেন জাফর ইকবাল। তার সাথে যোগ দেন অনেক শিক্ষক ও ছাত্র। এমন চিত্র থেকে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট উপলব্ধি করা যায়। শিক্ষাঙ্গনে লেখাপড়ার স্বাভাবিক অবস্থা ও নৈতিক মান বজায় থাকলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটতে পারে না। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসতো এখন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘৃণ্য এই কাজের সাথে শুধু বিশেষ চক্রই জড়িত নয়, সার্টিফিকেটধারী আলোকিত মানুষরাও যুক্ত হয়ে গেছেন। ছাত্র-শিক্ষক এবং প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের লোকজনও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজ করছেন। এই তালিকায় কোচিং সেন্টারও বাদ যায়নি। বিদ্যাচর্চার বদলে যদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অন্যায় চর্চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলে আমাদের শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
আমরা জানি, দেশে কোচিং সেন্টারগুলো ব্যবসার কাজ ভালই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা ছাত্রদের মেধার বিকাশ ও বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে কী অবদান রাখছে সেই বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, অভিযোগও আছে। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীও বললেন, দেশে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং ব্যবসা। এর চাইতেও ভয়ংকর বিষয় হলো, কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতে গেলে হয়তো ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে শিক্ষামন্ত্রীকে হত্যা করা হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রীর এমন আশংকা আমাদের জন্য এক ভয়ংকর বার্তা বহন করে। দেশে সরকার আছে, পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে, তারপরও স্বয়ং মন্ত্রীবাহাদুর যদি এমন আতংকের মধ্যে থাকেন, তাহলে সাধারণ নাগরিকরা কোথায় যাবে? আতংক ও সন্ত্রাস দমনের ক্ষমতা কি সরকারের নেই? তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে কে? আমরা এমন অবস্থার অবসান চাই এবং সেই দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তায়। বিষয়টি সরকার উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads