সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

মাহে রমজান ইবাদাতের বসন্তকালে করণীয়-বর্জনীয়


কালের পরিক্রমার পথ ধরে মুসলিম উম্মাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে আবার শুভাগমন করলো পবিত্র মাহে রমজান। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপ পঙ্কিল  পথকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এই রমজান। পবিত্র রমজানের আগমনে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট সাফল্যের সৃষ্টি হয়। রমজান মাস হলো ইবাদাতের বসন্তকাল। আল্লাহপাক এ মাসে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। ইবাদতপাগল বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য সব আয়োজন করে রাখেন। এ মাসে একটি ফরজ আমলের মূল্য অন্য সময় সত্তরটি ফরজ আমলের সমপরিমাণ। রাসূলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে  যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল,  সে  যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর  যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল,  সে  যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’  অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয়ই  রোজা আমার জন্য, আর  রোজার প্রতিদান আমিই দান করি।'
রমজানে আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিনের নেজাম (নিয়ম বা রুটিন) পরবির্তন করেন। তাই আমাদেরও রমজান উপলক্ষে দৈনন্দিন চলার রুটিনে পরিবর্তন আনা উচিত। রমজানে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র  কোরআন  তেলাওয়াত, তারাবির নামাজ আদায়, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের জন্য আলাদা রুটিন করে রাখা অতীব জরুরি। অন্য মাস আর রমজানের মধ্যে পার্থক্য থাকা চাই।  রাসুল (সাঃ) বলেছেন রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি নিয়ামত দান করা হয়েছে যা আগের উম্মতকে  দেওয়া হয়নি (১)  রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে  মেশকের  চেয়ে  বেশী ঘ্রাণযুক্ত (২) ইফতার পর্যন্ত  রোজাদারের জন্য  ফেরেশতারা  দোয়া করেন (৩)  রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয় (৪)  শয়তানকে বন্দি করা হয় (৫) রমজানের  শেষ রাতে সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হয়।
 রোজার মর্যাদা ও উপকারিতা:
১) জাহান্নাম  থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল
২) জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায়
এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ
৩) গুনাহ  মোচনের অন্যতম মাধ্যম
৪)  রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে।
৫)  রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন।
৬)  রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়
৭)  রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে
৮) সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে
৯) এটি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত  গোপন ইবাদত।
তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়।
১০) আল্লাহর ইবাদতের এক অভূতপূর্ব  ট্রেনিং স্বরুপ।
 যেসব কারণে  রোজা নষ্ট হয়:
১.    নাক বা কানে ওষুধ প্রবেশ করালে।
২.    ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
৩.    কুলি করার সময় গলার মধ্যে পানি চলে  গেলে।
৪.    নারী স্পর্শ বা এ সংক্রান্ত  কোনো কারণে বীর্য  বের হলে।
৫.    খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য নয় এমন  কোনো বস্তু গিলে  ফেললে।
৬.    আগরবাতি ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করালে।
৭.    বিড়ি সিগারেট পান করলে।
৮.    ভুলে  খেয়ে  ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাবার  খেলে।
৯.    সুবেহ সাদিকের পর খাবার  খেলে।
১০.   বুঝে  হোক বা না বুঝে সূর্য  ডোবার আগে ইফতার করলে।
১১.    ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করলে।
 যেসব কারণে  রোজা মাকরুহ হয়:
১.    বিনা কারণে জিনিস চিবিয়ে বা লবণ কিংবা  কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা।  যেমন টুথপেস্ট, মাজন, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজা।
২.     গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন  গোসল না করে থাকা।
৩.    শরীরের  কোথাও শিঙ্গা ব্যবহার করা বা রক্তদান করা।
৪.    পরনিন্দা করা।
৫.    ঝগড়া করা।
৬.     রোজাদার নারী  ঠোঁটে রঙিন  কোনো বস্তু লাগালে যা মুখের  ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৭.     রোজা অবস্থায় দাঁত উঠানো বা  দাঁতে ওষুধ ব্যবহার করা, তবে একান্ত প্রয়োজনে তা জায়েয।

 যেসব কারণে  রোজা ভঙ্গ হয় না কিংবা মাকরুহও হয় না:

১.    মিসওয়াক করলে।
২.    মাথায় বা শরীরে তেল লাগালে।
৩.     চোখে ওষুধ বা সুরমা লাগালে।
৪.    গরমের কারণে পিপাসায়  গোসল করলে।
৫.    সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
৬.    ইনজেকশন বা টিকা দিলে।
৭.    ভুলক্রমে পানাহার করলে
৮.    ইচ্ছা ছাড়াই ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করলে।
৯.    কানে পানি প্রবেশ করলে
১০.    দাঁতের  গোড়া  থেকে রক্ত  বের হলে।

রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা  থেকে বিরত থাকা দরকার,  সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
১. বিলম্বে ইফতার করা
২. সাহরী না খাওয়া
৩.  শেষের দশ দিন  কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা
৪. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
৫. অপচয় ও অপব্যয় করা
৬. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
৭. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
৮.  বেশি  বেশি খাওয়া
৯. রিয়া বা  লোক  দেখানো ইবাদত করা
১০.  বেশি  বেশি ঘুমানো
১১. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
১২. অশ্লীল ছবি, নাটক  দেখা
১৩.  বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
১৪. বিদ‘আত করা
১৫. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা ইত্যাদি।
পাপ  মোচন আর সৎ কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমজান। এক অনাবিল শান্তি ও চিরস্থায়ী মুক্তির পয়গাম নিয়ে মাহে রমজান প্রতি বছরই আমাদের সামনে হাজির হয়। কিন্তু প্রতি বছরই এর আহবান থাকে চিরন্তন। এ মাসে ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক। এর আবেদনের  কোন  শেষ নেই।  রোজা ইসলামের  মৌলিক ইবাদাতের মধ্যে অন্যতম। আর এ  রোজা পবিত্র রমজান মাসেই আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো ইবাদাতের বসন্তকাল পবিত্র রমজান মাসকে ক্বদর করা, নিজে উপকৃত হয়ে প্রকৃত  মুমিন হওয়া। আর এটাই হোক মাহে রমজানের শপথ। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে উপরোক্ত কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমীন। 
মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads