বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০১৪

ঘিরে ধরেছে ভয়-আতঙ্ক


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা অস্ত্র তাক করে রয়েছেন। নিচে খবর দেয়া হয়েছে সীমান্ত প্রহরী বিজিবির এক সদস্য নিহত। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। একটি পত্রিকা প্রথম পাতার ওপরের অংশে অর্ধেকজুড়ে ছবি ও খবর ছেপেছে। অন্যান্য পত্রিকাও গুরুত্বের সাথে এ খবর দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে বিজিবির তৎপরতা নিয়ে অনেক খবর এসেছে, সেগুলো সীমান্ত পাহারা নিয়ে নয়। যদিও প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশীদের লাশ পড়ছে সীমান্তে। এ সময় তারা দেশের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে সশস্ত্র অভিযানে ব্যস্ত ছিল। ব্যাপারটা এমন ছিল, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্তরক্ষীদের কাজ বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করা। বিজিবিরও একই দায়িত্ব, তবে বিএসএফ ও নাসকা যেহেতু বাংলাদেশের সীমান্তে এ কাজ করছে, তাই বিজিবি সেটা করছে দেশের অভ্যন্তরে এসে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ সময় প্রথম এক দিনে ৫০ জনের বেশি মানুষ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। 

নাসাকা চালানো আকস্মিক আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। একটি জাতীয় দৈনিক ঠিক এভাবে বর্ণনা দিয়েছে। সহকর্মীর লাশটি কুড়িয়ে আনা যায়নি। লাশ ফেরতের জন্য কয়েক দিন ধরে তাদের কাছে ধরনা দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার বিজিবি ও পুলিশ সদস্যকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা। বাংলাদেশের বাহিনীগুলোর অবস্থা আমাদের প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত প্রহরীরা ভালো করেই জানে। বিডিআরের শৌর্যবীর্য ও সাহসিকতার দীর্ঘ ইতিহাস পিলখানায় দুমড়েমুচড়ে গেছে। নাম বদল করে তাদের মর্যাদার এক ধাপ অবনমন করা হয়। দুরন্ত রাইফেলসেরমর্যাদা নেমে আসে স্থবির গার্ডে। বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ছিল সাহসিকতা, গতি আর ক্ষীপ্রতার প্রতীক। নামটি পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড’, যা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নামের কাছাকাছি। 

এ বাহিনীর হারানো মনোবল দ্রুত ফিরিয়ে আনা যখন সবচেয়ে জরুরি ছিল, তখন কয়েক বছর ধরে বিজিবি সদস্যদের হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করা হয়েছে। বিজিবির অনেক সদস্যের রহস্যজনক মৃত্যুও এ সময় ঘটেছে। প্রতিযোগী বাহিনীগুলো দেখেছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে চৌকস বাহিনীর পেছনে কিভাবে জিল্লতি আর মানসিক দুর্বলতা নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে বাইরের পৃথিবীতে তাদের সম্মান গৌরব মলিন হয়ে যায়। ঠিক এ সময় আমাদের সীমান্তরক্ষীরা দেশের অভ্যন্তরে ক্রসফায়ার, গানফাইট, বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য অন্য বাহিনীগুলোর সাথে অভিযুক্ত হয়। দেশের অভ্যন্তরে তারা হয়ে ওঠে মূর্তিমান আতঙ্ক। নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে আধুনিক শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে দাঁড়ালে সবাই বীর। মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে সেই অভিযানে বিজিবির ভূমিকা সমালোচিত হয়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড গুলি ও বোমার মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ শুধু সমাবেশে অংশগ্রহকারীদের নয়, পুরো ঢাকা শহরে চরম ভীতি ছড়িয়ে দেয়। কোনো শত্রুবাহিনীর আক্রমণ ছাড়াই ঢাকাকে তখন মনে হয়েছিল যুদ্ধ-আক্রান্ত। 

সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেন সশস্ত্র অভিযান চালাল, সে দিন অনেকেই সে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যা, খুন, গুম ও নৃশংসতার শিকার বাংলাদেশী নাগরিকেরা নিরাপত্তার জন্য জোরালো ভূমিকা চায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে। অন্য দিকে একটি বিতর্কিত অভিযানে তারা অংশ নিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বিজিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সে দিন রাজনৈতিক দলের সমান্তরাল বক্তব্য দিয়ে সবাইকে হতবাক করে দেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা শত্রুমিত্র চিহ্নিত করতে পারছি না। লিপ্ত হয়েছি আত্মবিনাশী অন্তর্ঘাতী একটি যুদ্ধে। যেখানে প্রতিপক্ষ নিজের দেশের নাগরিক যারা সশস্ত্র নয়; তারা যুদ্ধের কোনো কৌশলও জানে না। অন্য দিকে যারা নিরস্ত্রদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযানে বীরত্ব প্রদর্শন অর্থহীন। প্রকৃত সশস্ত্রবাহিনীকে মোকাবেলা করা এ ধরনের বীরদের জন্য পরে কঠিন হয়ে যায়।

প্রতিপক্ষ আমাদের দুর্বলতা ঠিকই চিহ্নিত করেছে। এখন তাই পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানালে গোলাবর্ষণ করে তার জবাব দেয়া হচ্ছে। আমরা কোনো ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহের পক্ষে নই। উৎসাহী কোনো সামরিক অভিযানেরও বিপক্ষে আমরা। তবে যারা এগুলো চাপাতে চাইছে তাদের ঠেকানোর জন্য যে মনোবল দরকার তা অটুট রাখার পক্ষে আমরা। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে মেরে হাত পাকালে ভর করে ভীরু কাপুরুষতা। পরে সশস্ত্র আধুনিক কোনো বাহিনীকে মোকাবেলা করতে গেলে চেপে ধরবে মানসিক দুর্বলতা। দেশপ্রেম জাগ্রত হওয়া তো অনেক দূরের বিষয়। এখন অর্থের বিনিময় দেশের নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে সশস্ত্রবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। অবশ্য নিজস্ব বাহিনী থেকে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের বিচার এখন প্রক্রিয়াধীন। এর বাইরে আরো অনেকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করে আসছে স্বজন হারানোরা। 

পুতরে কেন তরে বিদেশে পাঠাইলামশিরোনামের ওপর শোকের রঙ্গ কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা কালিতে লেখা, ‘কফিন জড়িয়ে স্বজনদের কান্না। তার ওপর একটি ছবি বুকফাটা আর্তনাদের। সৌদি আরবে কারখানায় আগুন লেগে নিহত ছয়জনের লাশ দেশে এসেছে। সব পত্রিকা সপ্তাহের প্রথম দিন এ খবর দিয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশীদের জীবনের নিরাপত্তা নেই। যে দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিজের নাগরিকদের হত্যা করে তার নাগরিকদের বিদেশীরাও নিরাপত্তা দেয়ার গরজ অনুভব করে না। 

মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে সরকার যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখন অপর সীমান্তে থেকে হুমকির খবর আসছে। আসাম বিজেপির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে অবৈধ বাংলাদেশীবিতাড়নের কার্যক্রম শুরু করার। একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের আসাম ছাড়ার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচন পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় প্রচারাভিযানে এ বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। 

এখন দেশের ভেতরে পরিস্থিতিটা দেখা যাক। আমরা শুধু সপ্তাহের প্রথম দিন শনিবারের পত্রিকার প্রথম পাতার সংবাদগুলো দেখছি। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হুমায়ুন কবীরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। তার ডান হাত ও ডান পা কুপিয়ে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা। হুমায়ুনের বাবা এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তার হাত-পায়ের রগও কেটে দেয়।

১০ সেকেন্ডে কিভাবে কিলিং মিশন সমাপ্ত হলো তার বর্ণনা দিয়েছে সিঙ্গেল কলামে। সরস বর্ণনা আর ফিল্মি অভিযানের এই হত্যাকাণ্ড সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হতে পারত। হত্যা, খুন, গুম দুর্যোগের ঘনঘটার মধ্যে পত্রিকা এটিকে সিঙ্গেল কলামে জায়গা দিতেও বেগ পেতে হয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘বেলা ১১টা। মকবুল প্লাজার ঠিক সামনে চায়ের দোকানের পাশে একটি পালসার মোটরসাইকেলে দুজন এসে দাঁড়ালেন। দুটি ফাঁকা গুলি করলেন মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা ব্যক্তি। এরপর মোটরসাইকেল থেকে নেমে সুলতান আহমদকে লক্ষ্য করে আরো তিনটি গুলি করে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই দুই ব্যক্তি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সুলতান প্রাণ হারান।

ঘটনার উত্তেজনাকর ফিল্মি স্টাইলের বর্ণনা দিতে গেলে জায়গা হবে না। সংক্ষেপে হত্যার পেছনে যে কারণ পত্রিকা বর্ণনা করেছে তা জানা প্রয়োজন। সুলতান আহমদ দীর্ঘ দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ঘনিষ্ঠ আফজাল হোসেনের সাথে তার বিরোধ চলছিল। এর মধ্যেই সাত কোটি টাকার একটি কাজ পান সুলতান। এ কাজের জন্য আফজাল তার কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেয়ে সুলতানকে অপহরণ করা হয়। সেই মামলার বিচারে ভরা কোর্টে সুলতানকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন আফজাল। এভাবে রাস্তায় হত্যা করার মাধ্যমে তার সেই হুমকি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে খবরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। 

পাঁচ টাকা দামের পত্রিকাটির এদিন প্রধান শিরোনাম খুন-আতঙ্কে আওয়ামী লীগ। বিস্তারিত বিবরণে পত্রিকাটি লিখেছে, খুন-আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে আওয়ামী লীগকে। কোন্দলে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। রাজপথ থেকে শুরু করে মাঠঘাট সবুজ প্রান্তর সর্বত্রই নিজেদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কি নেতা, কি তৃণমূল কর্মী রক্ত ঝরছে সবারই। পত্রিকাটির প্রথম পাতায় আর চারটি সংবাদ শিরোনাম যথাক্রমে গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত; রাসেলের হুকুমে গুলি করে রিপন; হত্যার কিছুক্ষণ আগে একরামের গাড়ি থেকে নামেন বেলাল এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুন র‌্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তা ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে।

পত্রিকাটির প্রথম পাতায় আর তিনটি সংবাদের একটি সেনা অভ্যুত্থান সংক্রান্ত। একজন পাঠকের মনে হতে পারে এটি একটি অপরাধসংক্রান্ত পত্রিকা। উন্নত দেশে এ ধরনের বিশেষায়িত দৈনিক রয়েছে। খুন হত্যার দুষ্প্রাপ্যতার জন্য সেসব দেশে অপরাধসংক্রান্ত বেশির ভাগ পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পথে। আর বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলো একপলক দেখে মনে হবে এগুলো সব অপরাধবিষয়ক পত্রিকা। প্রকৃতপক্ষে যা নয়। খুন হত্যা গুমের মধ্যে যে ভয়াল পরিবেশ বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে জাতীয় গনমাধ্যমে তারই প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে। 

শনিবারের প্রত্যেকটি পত্রিকা শুরু হয়েছে হত্যা ও মৃত্যুর খবর দিয়ে। একটি পত্রিকা শেষও হয়েছে ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত বাংলাদেশের খবর দিয়ে, যা বাংলাদেশের জাতীয় বিনাশের চিত্র তুলে ধরেছে। শেষের পাতার নিচে পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে, ‘সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে দেশ। তার ওপর চার কলাম ছবিতে দেখা যাচ্ছে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদ জানাতে স্ত্রীসহ তিনি হাজির হয়েছেন জাতীয় শহীদ মিনারে। তার ভাবভঙ্গিতে জোর দেয়া হচ্ছে অপরাধের প্রতি। কারা এ অপরাধ করছে তার বিরুদ্ধে তিনি জোরালো কোনো বক্তব্য এখনো দেননি। ছবির পাশে আর একটি মাত্র খবর দিয়ে পত্রিকাটি শেষ হয়েছে তার শিরোনাম, ‘এবার শিক্ষক নিবন্ধন প্রশ্ন ফাঁস রাজশাহীতে। সম্ভবত প্রশ্ন ফাঁসের তালিকায় এই একটি মাত্র পরীক্ষা বাদ ছিল। জাফর ইকবালের প্রতিবাদী অবস্থানের দিন সেই প্রশ্নটিও ফাঁস হলো। 

অন্য একটি পত্রিকা প্রথম পাতার প্রথম কলামের ওপরে শিরোনাম করেছে খুন-খারাবির চেয়েও মারাত্মক অপরাধ প্রশ্ন ফাঁস। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মন্তব্য আতঙ্ক বাড়িয়ে দেবে। তিনি বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নকলপ্রবণতার চেয়েও ভয়াবহ বিষয়।... সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সরকারের পক্ষ থেকে লুকানোর কোনো বিষয় নয়, বরং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত, না হলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরিণতি ব্যাখ্যা করে বলেন, এ ধরনের পরীক্ষায় যারা পাস করেছে তাদের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কে পেয়েছে না পেয়েছে তা বিবেচনায় না এনে সবার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়। যারা নিয়মিত পড়াশোনা করে তারা সারাক্ষণই একটা ভয়ের মধ্যে থাকে যে অন্য কেউ পড়াশোনা না করেই ভালো ফল করতে পারে। যার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীর অনাস্থা সৃষ্টি হয়। ফাঁকি দিয়ে পাস করে কেউ ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে পারে না। তারা নিজেরাই এর মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতি করছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে একধরনের নকলের প্রবণতা তৈরি হয়। নকলের চেয়েও প্রশ্নপত্র ফাঁস বেশি মারাত্মক ও ক্ষতিকর।

একই দিন সিরাজুল ইসলামের পাশেই শিক্ষামন্ত্রীর ছবিসহ ‘প্রশ্নফাঁস আমরাই উদঘাটন করেছিশিরোনামে মন্ত্রীর মন্তব্য ছাপা হয়। শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নফাঁসউদঘাটনের দাবি করে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলছেন। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আর শিক্ষামন্ত্রী সুদূর অতীতের কোনো একটা সফলতা নিয়ে খুশিতে ডগমগ। যোগ্য শিক্ষামন্ত্রীই বলতে হবে বৈকি! 

পরের দিনের পত্রিকার একটি খবর দিয়ে শেষ করছি। ভবিষ্যতে এ দেশে বীভৎসতা কোন দিকে যাবে তার ইঙ্গিত তাতে রয়েছে। জীবন্ত মানুষের একটি পা নিয়ে চলে গেছে সন্ত্রাসীরা। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার পা ওটি। হত্যা করে শরীর কয়েক টুকরো করে বীভৎসতা দেখানো বাংলাদেশে একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। এবার মানুষকে জীবিত রেখে পা কেটে নেয়ার রেওয়াজ চালু হলো। চার দিকে যখন বিপদের ঘনঘটা জাতীয় রাজনীতিতে তখন চলছে ফরমালিন কমেডি। একজন আরেকজনকে কথার ঘোরপ্যাঁচে ফেলে মহা তুষ্ট।

জসিম উদ্দিন


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads