শনিবার, ২১ জুন, ২০১৪

এত ঔদ্ধত্য ভালো নয়


ট্রাফিক সিগন্যালে সভাপতির গাড়ি আটকে পড়ার কারণে পুলিশকে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। মানবজমিনের ২১ জুন সংখ্যায় মুদ্রিত রিপোর্টে বলা হয, ২০ জুন বিকালে রাজধানীর নূর হোসেন চত্বর মোড়ে এ  ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরে রক্তাক্ত হয়েছেন দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত  দিয়ে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, একটি মাইক্রোবাসে করে পুরানা পল্টন হয়ে উত্তরের সিগন্যাল দিয়ে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যাচ্ছিলেন বদিউজ্জামান সোহাগ। গাড়িতে সোহাগসহ তিনজন ছিলেন। পেছনে চারটি মোটর সাইকেলে ছিলেন আরও কয়েকজন। এ সময় পাশের সিগন্যালে যানজটের কারণে ওই সিগন্যাল বন্ধ করে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। সিগন্যাল বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে পেছনে থাকা মোটরসাইকেল থেকে এসে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে মারধর শুরু করেন। এ সময় সোহাগের পাশে বসা আর এক ছাত্রলীগ নেতাও গাড়ি থেকে নেমে বেদম প্রহার করেন কনস্টেবল মামুনকে। তখন উপস্থিত অন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা মামুনকে রক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। মারধরের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের উদ্দেশ্যে আহত কনস্টেবল বলেন, ভাই আপনি থাকতে ওরা আমাকে মারলো। তখন সোহাগ বলেন, আপনি পুলিশ সামলান, নয়তো আরও ঝামেলা হবে।
কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সাথে ঐতিহ্যবাহী একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা যে আচরণ করলেন তা ভেবে দেখার মতো। আমরা তো একথা জানি যে, রাজধানী ঢাকা এখন একটি যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। মানুষ ও যানবাহনের তুলনায় রাজধানীতে সড়কের পরিমাণ কম। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই নগরবাসীরা পথে নামেন। যানজট কিংবা সিগন্যালে গাড়ি আটকে থাকার দৃশ্য রাজধানীতে কোনো নতুন বিষয় নয়। সিগন্যালে ছাত্রলীগ সভাপতির গাড়ি আটকে পড়ায় প্রকাশ্য রাজপথে কর্তব্যরত পুলিশকে প্রহারে প্রহারে রক্তাক্ত করার অধিকার ছাত্রলীগ নেতারা কোত্থেকে পেলেন? তারা শুধু আইনকে হাতে তুলে নেননি, পুলিশ বাহিনীকেও অপমানিত করে ছেড়েছেন। এমন উদাহরণের পর অন্যরা পুলিশকে মান্য করতে চাইবে কী? বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর মানুষ ও পরীক্ষার্থীরা যানজটের জন্য বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে তো ছাত্রলীগ নেতাদের কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি। এখন সভাপতির গাড়ি সিগন্যালে আটকে পড়ায় তারা বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন? রাজধানীর লাখ লাখ নাগরিকের চাইতে তাদের সভাপতি কি আলাদা কিছু? নাকি তারা এই রাষ্ট্রে স্পেশাল কিছু এবং  আইনেরও ঊর্ধ্বে? আমরা জানি, দেশে সরকার আছে, প্রশাসন আছে। ছাত্রলীগ নেতারা প্রকাশ্যে পুলিশ পিটিয়ে সন্ত্রাসের যে বেপরোয়া উদাহরণ সৃষ্টি করলো সে ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ব্যাপারে যদি অনুরাগ কিংবা প্রশ্রয়ের আচরণ করা হয়,তাহলে দেশে শুধু সন্ত্রাসের মাত্রাই বাড়বে না, ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে ছাত্রলীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনকে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads