রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪

গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণ করুন


‘গডফাদারদের নবযুগ’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। দেশবাসী এমন শিরোনাম চায়নি। যারা ক্ষমতায়  এসেছেন তারা তো গডফাদারদের প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাও ছিল তাদের অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখে এখন জনগণের মনে হচ্ছে, সব ওয়াদাই যেন ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল। ফলে ক্ষমতাকেন্দ্রিক এ রাজনীতি জনগণের জীবনমান উন্নয়ন কিংবা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কোনটার পক্ষেই যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বক্ষে তুষের আগুনের মত ক্ষোভ লালন করে জীবন কাটাচ্ছে দেশের জনগণ।
‘গডফাদারদের নবযুগ’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় : দেশে খুন-খারাবি, জবরদখল ও মাদক সা¤্রাজ্যের গডফাদারদের নবযুগ শুরু হয়েছে। জনপ্রতিনিধির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এ যুগের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। এ স¤্রাটরা গড়ে তুলেছেন নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক সা¤্রাজ্য। অস্ত্রবাজ, খুনি, সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত পেশাদার অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে চলেছেন তারা। অথচ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার উপায় নেই। এদেরই একজন শেখ আফিলউদ্দিন এমপি। তার নির্বাচনী এলাকা যশোরের শার্শা- বেনাপোল পরিণত হয়েছে খুনোখুনির সা¤্রাজ্যে। সেখানে ধারাবাহিকভাবে চলা খুন-খারাবির প্রধান শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই। কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার এমপি আবুদর রহমান বদি এখন ইয়াবার স¤্রাট হিসেবে পরিচিত। তার অনুগত সহযোগী, আস্থাভাজন ক্যাডার, রাজনৈতিক সহচর সবাই এখন ইয়াবা বাণিজ্যে ভীষণ ব্যস্ত। তার নিয়ন্ত্রণেই মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আমদানিকৃত লাখ লাখ পিস ইয়াবা দেশের সর্বত্র সরবরাহ ও বেচাকেনার বিশাল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। রাজধানীর পল্লবীতে দশ বিহারিকে পুড়িয়ে মারার পৈশাচিকতায় উঠে এসেছে সেখানকার সরকারদলীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার নাম। ওই ঘটনার খোঁজ-খবর নিতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে তার দখলবাজি সা¤্রাজ্যের নানা কাহিনী। তেমনি ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর উঠে আসে এমপি নিজাম হাজারীর নাম।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, দেশে খুন-খারাবি, অন্তঃকোন্দল, জবরদখল ও মাদক সা¤্রাজ্যকে কেন্দ্র করে যেসব গডফাদার সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য। এইসব সংসদ সদস্যের তো দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার কথা ছিল। আর এই কাজ করতে গেলে সংসদ সদস্যদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আদর্শের পথে চলতে হয়। আদর্শ তো অনেক দূরের কথা, সাধারণ চক্ষুলজ্জাও এখন তাদের মধ্যে বর্তমান নেই। নইলে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে কী করে তারা নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরই হত্যা করতে পারেন? কী করে তারা দখলবাজি সা¤্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে গিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারেন? কী করে তারা অবৈধভাবে ইয়াবার মত মানব বিনাশী মাদক আমদানি করে দেশ ও জনগণের এত বড় ক্ষতি করতে পারেন। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, এরা সবাই জনপ্রতিনিধি এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এমপি। এমন এমপিরা কী করে জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করবেন? জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা তো তারা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন। আর গত নির্বাচনে তো অনেকেই জনগণের ভোট ছাড়াই এমপি বনে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনের কার্যকর প্রয়োগ ছাড়া জনগণকে আশাবাদী করা সম্ভব নয়। আর এই দায়িত্ব সঙ্গতভাবেই বর্তায় সরকারের ওপর। যারা মদক ব্যবসা করেন, যারা নিজ দলের নেতাকেও হত্যা করতে কুণ্ঠিত নন, যারা দখলবাজির প্রতাপ দেখাতে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারেন তারা কী করে জনপ্রতিনিধি হন কিংবা দলের প্রশ্রয় পান। আইন তাদের সাথে কেমন আচরণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads