শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

প্রতারণাতন্ত্র নয় গণতন্ত্র চাই


বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতারণা। নেতারা রাজনীতির ব্যবসা করেন। গণতন্ত্রের নামে দেশে প্রতারণাতন্ত্র চলছে। যে কারণে দেশ হতে নিরক্ষরতা ও দরিদ্রতা যায়নি। ’কিনতু হাজার হাজার কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার সময় কোটি নয়, কোন লাখপতিও ছিল না।
পথভ্রষ্ট ছাত্রদের মানবতা, মানবিক দায়িত্ব, কর্তব্য ও গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষাবিদরা। যে কারণে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে নিজেরাই মারপিট করে। সন্দেহ হচ্ছে কথিত তিনটি বিষয়ে অধ্যাপকরা সচেতন আছে কিনা।
রাজনৈতিক কোন দলেই গণতন্ত্র নেই। কণ্ঠভোটে নেতা নির্বাচিত হয়। কণ্ঠভোটে নেতা নির্বাচন একটি প্রতারণা। কে কে ভোট দেয়নি চিনে রাখা। তাই অনেকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়ে ভয়ে কণ্ঠ মেলাতে থাকেন।
কণ্ঠভোটে সংসদে আইন পাস হতে পারে, কিন্তু দলীয় নেতা নির্বাচন জাতির জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। দেশে যোগ্য নতুন নেতার আত্মপ্রকাশ হচ্ছে না। এটা জাতির অপূরণীয় ক্ষতি; উন্নতির পথে বাধা।
রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকার কারণে অনেকেই মস্তান পোষে। সততা ও ন্যায়বিচার না থাকায় প্রশাসনের অধিকাংশ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারী হতাশ হয়ে অপকর্মের ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত দলের কর্মীদের মধ্যে আত্মঘাতী সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং হচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই চলছে গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা। জীবনসায়াহ্নে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ থেকে প্রতারণাতন্ত্র ঝেড়ে ফেলে সুস্থ রাজনীতির লক্ষ্যে এভাবে গণতন্ত্র চর্চা করলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। পদ্ধতিটি কোন দলে চালু আছে কিনা, জানা নেই। ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা নির্দেশ করে যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র এভাবে থাকা উচিত।
নি¤œতম সংগঠন, ইউনিয়ন অফিসে সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে। সদস্য হওয়ার কিছু শর্তাবলী অবশ্যই থাকতে হবে যার একটি হচ্ছে মাসিক বা ত্রৈমাসিক চাঁদা দান করা, যার রশিদ দিতে হবে।
সদস্যদের গোপন ভোটে ইউনিয়ন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে। গ্রাম বা এলাকা থেকে  গোপন ভোটের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করতে হবে। কোন পদের জন্যই প্রার্থী থাকবে না। ভোটাররা যে যাকে যোগ্য মনে করেন, ভোট দেবেন। যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন।
কেউ নেতা হওয়ার জন্য ভোটারদের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন প্রমাণিত হলে, তাকে ভোট দেয়া যাবে না। নির্বাচনের মুহূর্তে ভোটারদের জানিয়ে দিতে হবে।
উপজেলায়ও এভাবেই নির্বাচন হবে, তবে ভোটারদের সুবিধার্থে তিনজনের প্যানেল তৈরি করে দিলে ভালো হয়। কিন্তু প্যানেলের বাইরেও ভোটারদের বিবেচনায় যোগ্যতর ব্যক্তি থাকলে তাকেও ভোট দিতে পারবেন এবং তিনি বেশি ভোট পেলে তিনিই নির্বাচিত হবেন। প্যানেল তৈরি হবে ইউনিয়নসমূহের নির্বিাচিত প্রতিনিধিদের গোপন ভোটে।
এভাবেই জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা গণতন্ত্রের দাবি। যে কোন প্যানেল তৈরি হবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গোপন ভোটে।
সভাপতি, সেক্রেটারি ও সহ-সম্পাদকের পদে নিয়োগ দেবেন কর্মপরিষদের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে।
সকল জেলা ও বিভাগের সভাপতি কেন্দ্রীয় পরামর্শসভার সদস্য হবেন এবং তাদের গোপন ভোটে নির্বাচিত আরও কয়েকজন সদস্য নেবেন।
চেয়ারপাসন চার-পাঁচজন উপদেষ্টা নেবেন কর্মপরিষদের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে।
বিদেশে যাদের ব্যবসা অথবা ব্যাংক একাউন্ট আছে অথবা আমদানি বা রফতানি করেন কিংবা বিদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। কিংবা বিদেশী স্ত্রী বা স্বামী গ্রহণ করেছেন তারা নেতৃত্বের পদ পাবেন না।
সংগঠন পদ্ধতি বা গঠনতন্ত্রের বিষয়টি দীর্ঘ বিধায় আমার সংক্ষিপ্ত আবেদন এখানেই শেষ করছি।
দেশের নির্বাচন কমিশন যদি দলীয় না হত তাহলে সুবিধাবাদী দলগুলোকে গণতন্ত্রের পদ্ধতি অনুসরণ করতে বাধ্য করে ছাড়ত।
অবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিনীত আবেদন, সঠিক গণতন্ত্রের পথে চলুন, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। মনে রাখবেন, দরিদ্র জনগণের আহাজারি থেকে বিধাতা আপনাদের রেহাই দেবে না। সুতরাং অবিলম্বে প্রতারণা ত্যাগ করে মানবতার পথ ধরুন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads