রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৫

ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে ও ব্লেমগেম!


জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ব্লগার নিলয় হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্মের নামে কোনো ধরনের সন্ত্রাস চলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, যারা ধর্মকে কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না। ৮ আগস্ট দুপুরে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৫তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন বলে আমাদের সময়-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, যারা ধর্মকে কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না। আসলেই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ ধর্মবিরোধী কাজে লিপ্ত হতে পারেন না। তারা আইনকে হাতে তুলে নিতে পারেন না, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করতে পারেন না। তাহলে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে কারা? বিভ্রান্ত কিংবা পথভ্রষ্ঠ মানুষই এমন কাজে জড়িত হতে পারে। এরা মানুষের জন্য, সমাজের জন্য বিপদজনক। তাই এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যায় না। বরং দেশের স্বার্থে এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি বিধানই প্রশাসন তথা সরকারের কর্তব্য।
প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সন্ত্রাস কিংবা যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই সত্যনিষ্ঠ তদন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে প্রকৃত অপরাধীই যেন শাস্তি পায়। কিন্তু এর পরিবর্তে যদি অনুরাগ-বিরাগ কিংবা অন্য কোন বিষয় প্রভাব ফেলার সুযোগ পায়, তাহলে প্রকৃত অপরাধীর বদলে নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তির আওতায় চলে যেতে পারে। এখানে ব্লগার নিলয় হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা এই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করায় যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেখানে আমাদের তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এই হত্যাকান্ডের দায় চাপাতে চাইছেন বিএনপি-জামায়াতের ওপর। তিনি ৮ আগস্ট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় বাগগাড়ীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ব্লগার হত্যার নামে কার্যত তারা আসলে ভিন্নমত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। কোনো তদন্ত কিংবা তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তথ্যমন্ত্রী কী করে ব্লগার হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেন? এ ধরনের আচরণ কি সন্ত্রাস দমনে সাহায্য করবে, নাকি বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার মওকা পাবে? আসলে ব্লেমগেমের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সস্তা প্রপাগান্ডা চালানো গেলেও তা সন্ত্রাস কিংবা অন্য কোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজে আসে না। মন্ত্রী পদমর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও যদি অর্থহীন এইসব কাজে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন কারা? বিষয়টি আমাদের সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখলে ভালো হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads