বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫

নীলাদ্রিরা অবিচারের সৃষ্টি, দুঃশাসনের শিকার

নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পরও আমরা গতানুগতিকতার নিন্দাবাদ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আটকে রয়েছি। ব্লগার হওয়া কোনো অপরাধ নয়, তবে ব্লগার হওয়া মানে সবাই মুক্তমনা মানুষ এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই দেশে ব্লগার মানে ধর্মবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িকভাবে অসহিষ্ণুতা লালনকারী কিছু বিকারগ্রস্ত তরুণ। যারা কেউ কোনো ধর্মের বিশ্বাস মাপার যোগ্য নয়। অসংখ্য ব্লগার সমাজে মূল্যবোধের চাষ করছে। তারুণ্যের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাচ্ছে তাদের প্রতি শতকোটি সালাম। সারা পৃথিবীর মানুষ জানে ও মানে মুক্তমনের মানুষ নিজের মতের ব্যাপারে যেমন আন্তরিক, তেমনি অন্যের মতের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তারা কারো মতকে ও বিশ্বাসকে আক্রমণ করে না। নীলাদ্রি কেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গেল তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। নীলাদ্রির ধর্মবিদ্বেষ গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু তাকে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইসলাম যারা মানে তারা বিনা বিচারে মানুষ হত্যার মতো মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করতেই পারে না। কর্তৃপক্ষের উচিত হত্যার কারণ, হত্যাকারীকে শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করা। যারা ধর্মবিদ্বেষ লালন করেন তারা নিরাপদ না হলেও সমাজের জন্য ক্ষতিকর নয়। যারা এই বিদ্বেষ প্রচার করেন এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত দেন, তাদের বিশ্বাস নিয়ে যারা বিদ্রƒপ করেন তারা সবার জন্য ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে চরমপন্থী ও হঠকারীরা শুধু উসকানি পায় না, সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। সভ্য সমাজেও অনাচার ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ুণœ হয়। পুলিশ প্রধানকে ধন্যবাদ, তিনি ব্লগারদের নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য মন্তব্য করলেন। এ ধরনের বক্তব্য মন্ত্রীরাও দিতে পারতেন। নীলাদ্রিরা জন্ম নেয় না, এদের সৃষ্টি করা হয়। মতলববাজরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। শাসক শোষকেরা এদের ব্যবহার করে। নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শেষ পর্যন্ত এদের বলি দেয়। দুর্ভাগ্য রাজনৈতিকশূন্যতা ও বিচারহীনতার যে অপসংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। বিচার না পেলে কিংবা অবিচারের সম্মুখীন হলে মানুষ সংযম হারায়। তার প্রকাশ ঘটে নানা উপায়ে। বিগত সাড়ে তিন বছরে ধর্মের ব্যাপারে অসহিষ্ণু কয়েকজন ব্লগার ছাড়াও ৯৬৮ টি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ২০১২ সালের শুরু থেকে ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত শিশুহত্যার এই তথ্যটি দিয়েছে শিশু অধিকার ফোরাম। শিশুহত্যার এই সংখ্যা শুধু বাড়ছে না, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিও স্ফীত হচ্ছে। নারী ও শিশুসংক্রান্ত প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন পড়ে আছে। কখন এসব মামলার বিচার সম্পন্ন হবে বা বিচার পাওয়া যাবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। শিশুহত্যা, নারী নির্যাতন, শিশু অপহরণ এবং ধর্ষণপ্রক্রিয়ায় এখন নিষ্ঠুরতা ও বীভৎসতার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তা ব্যক্তির মানবিক বৈকল্য পর্যায় নেই, আদিম সমাজের বর্বরতার নিষ্ঠুরতম স্তরে পৌঁছে গেছে। নীলাদ্রির শরীরে ১৪ ঘা হত্যাকারী কত নিষ্ঠুর তার নজির মেলে। নীলাদ্রির পারিবারিক সঙ্কট এ ধরনের হত্যার কারণ নয় তা আমরা কেউ নিশ্চিত নই। তার স্ত্রীর পরিচয়ে যে নারী মুখ খুলেছিল, সে বিবাহিত নয় বলে তার স্বজনদের বক্তব্য গুরুত্বহীন নয়। সব তথ্য ও সত্য সামনে আসুক। বিচার হোক এ দাবি সবার।
এর সাথে শুধু আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রশ্ন উঠছে না। প্রশ্ন উঠছে আমরা এ ধরনের অমানুষ হয়ে যেতে পারছি কিভাবে! পুলিশের নথিতে সব তথ্য যোগ হয় না। মিডিয়ায় সব খবর আসে না। জরিপগুলোর ভেতরও শুভঙ্করের ফাঁকফোকর থাকে। পুলিশ সদর দফতরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে দুই হাজার ৮০ জন খুন হয়েছে। জানুয়ারিতে ৩২৯, ফেব্রুয়ারিতে ৩০৯ ও মার্চ মাসে ৩৩৭ জন। এপ্রিলে সেই সংখ্যা ৩২৭ জন। মে মাসে ৪২০ জনে পৌঁছে যায়। জুনে এসে সেটা দাঁড়ায় ৩৫৮। জুলাইতে চার শতাধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ জন খুন হচ্ছে। এর সাথে রাজনৈতিক সহিংসতার সম্পর্ক নেই বলা যাবে না। তবে অধিকার বলছে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৭ জন গণপিটুনিতে নিহতের খবর বা তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। গণপিটুনির অর্থ মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে।
খ. 
আগেই বলেছিÑ অপরাধের সব তথ্য নথিভুক্ত হয় না। অনেক ঘটনা নথিভুক্ত হওয়ার বাইরে থেকে যায়। এখন অনেক রাজনৈতিক অপরাধ মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে না। আমাদের দেশে ন্যায়বিচার সুবিচার নামে দুটি শব্দ রয়েছে। বাস্তবে বিচার বলতে ন্যায় ও সুবিচারকে বুঝাতে এ ধরনের শব্দ সৃষ্টি করা হলেও এর বাইরে রয়েছে অবিচার। বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ এখন বাস্তবে এবং সামগ্রিক অর্থে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবিচারের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে কি না, এ প্রশ্ন উঠছে। একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন হচ্ছেÑ তদবিরে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এগিয়ে রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন করে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ তুলেছেÑ সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করছেনÑ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্টরা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তো রয়েছেই। তাদের এই অভিযোগ পুরনো। তবে তারা কখনো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেনি। চট্টগ্রামে বৌদ্ধ পল্লীতে আগুনের ঘটনায় সরকারদলীয় লোকেরা জড়িত রয়েছে প্রমাণ হওয়ার পরও সরকার এটাকে বিরোধী দলকে হয়রানির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের হয়রানির সাথে ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়ালরা জড়িত থাকলেও প্রচারণা ও অভিযোগ তোলা হয়েছে বিরোধী দল দমনের কৌশল হিসেবে। 
গ.
কার্যত দেশে গণতন্ত্র নেই। রাজনীতি নেই। ভিন্নমত বিরোধী দলও নেই। ইচ্ছেমতো দল করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। বিনা কারণে গ্রেফতার করে মুচলেকা দিয়ে বলতে বাধ্য করা হচ্ছে কোন দল করা যাবে কোন দল করা যাবে না। ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারার এই মগের মুল্লুক ও বর্গি যুগের নিষ্ঠুরতার ভেতরে যে অবিচার ও জুলুম জনগণকে ঘিরে ধরেছে এর শেষ কোথায়? 
পৈশাচিকতা ব্যক্তির মানসিক রোগ, এটি এক ধরনের মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। এর আসল কারণ ব্যক্তির চিন্তার বৈকল্য, রাষ্ট্রাচারের ভেতর নিষ্ঠুরতার প্রসার ও প্রতিহিংসার রাজনীতি মানুষকে বীভৎস হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে। বিচারহীনহতার অপসংস্কৃতি এর প্রসার ঘটিয়েছে, আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই মানুষ আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। যে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না তারপরও সরকার গঠন হয়, সংসদ বসে, পুতুল খেলার মতো বিরোধী দল সাজানো হয়। সেই দেশে মন্ত্রীদের শপথের নৈতিক ভিত্তি কোথায়। ক্ষমতা যদি লুণ্ঠনের সম্পদ হয় সেই দেশে নাগরিকদের জীবনতো মশা-মাছির চেয়েও অবহেলার বস্তু হবারই কথা।
মানুষ আইন মানে দুকারণে। প্রথমত, বিবেকের তাড়নায় ও নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে। দ্বিতীয়ত, শাস্তি এবং খারাপ পরিণতির ভয়ে। রাষ্ট্রের ভেতর আইন প্রয়োগে যখন দুষ্টের দমন হয় না, শিষ্টের প্রতি সদাচরণ করা হয় না তখন সামর্থ্যবান ও ক্ষমতাধরেরা বেপরোয়া হয়ে যায়, সামর্থ্যহীন ও ক্ষমতাবঞ্চিতরা এক ধরনের মানসিক যাতনা লালন করে। এক সময় বঞ্চনা এসে ঘিরে ধরে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মজলুম মানুষ ভেবে নেয় জানটা ছাড়া তার হারাবার কিইবা থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে সংুব্ধ ব্যক্তি সংযম হারায়, বাড়াবাড়ি করে বসে। এতে সামাজিক অপরাধের আরো বিস্তৃতি ঘটায়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বর্বরতা, পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতার যেসব অভাবনীয় ঘটনাগুলো ঘটছে তা যেন এ সময়েরই প্রতিফলন। এটা শাসক-শাসিতের পাপের ফসল। নির্বিকার মানুষগুলোর সৎ কাজে উৎসাহিত করা অসৎ কাজ বন্ধের উদ্যোগী না হওয়ার খেসারত। 
লাগেজের ভেতর শিশুর লাশ, বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলা, মাতৃ জঠরে গুলিবিদ্ধ হওয়া, কম্প্রেসার দিয়ে হাওয়া ঢুকিয়ে মেরে ফেলা, গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা, মাছের ঘের থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার, উপজাতীয় শিশু ও তরুণী ধর্ষণ, ভাইয়ের হাতে বোনের খুনের ঘটনা কোনোটি স্বস্তিদায়ক খবর নয়।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণধর্ষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াও কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। এক দিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অন্য দিকে সমাজের বিকৃত চেহারার উন্মোচন যেকোনো মানুষকে না ভাবিয়ে পারে না। এটা মূল রোগ নয়, উপসর্গ। তাহলে রোগ নির্ণয় করা জরুরি। অবৈধ ও জোরজবরদস্তির শাসন-শোষণ যত দীর্ঘায়িত হবে এ রোগের আরো বিস্তার ঘটবে।
ব্লগার নীলাদ্রিকে যে নিষ্ঠুর পন্থায় বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হলো; তারপরও কি বলা হবে আমরা ঘরের ভেতরও নিরাপদ আছি। নীলাদ্রি হিন্দু, ইসলাম বিদ্বেষের এজেন্ডা কেন তার মগজে ডুকলি তা জানি না, কিন্তু এই অজুহাতে তাকে হত্যার এখতিয়ার ইসলাম ও প্রচলিত আইন কাউকে দেয়নি। অথচ হত্যার দায় নিরূপণের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। যে দেশে রাজনীতিবিদ গুম হয়ে যায়। অপহরণ করে দিনের পর দিন আটকে রেখে অবশেষে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে গল্প সাজিয়ে আড়াল করা হয়Ñ সে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করবে কে?
ঘ. 
গ্যাটকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদন আদালতে খারিজ হয়েছে। আদালত কাচের ঘর নয়, ক্ষমতার বরও নয়। বিচার সৃষ্টিকর্তার বৈশিষ্ট্যের অংশ। আইনের সমতা, বিচারের সততা নাগরিকের কাছে নমস্য। প্রশ্ন হচ্ছে, একই ধরনের অভিযোগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অব্যাহতি পেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুটি আবেদনই খারিজ করে দেয়া হলো। দুটোই দুদকের করা মামলা, দুটি মামলাই করা হয়েছিল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার আমলে। আইনের চোখে সবাই সমান না হলে বিচার প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। এর প্রতিক্রিয়ায় মানুষ আদালতে যাবে না। হয় নিয়তিনির্ভর হয়ে আইনের আশ্রয়ের বাইরে থাকবে, নয়তো মনের ভেতর সহজাত দ্রোহের আগুন জ্বালাবে। যে আগুন সাধারণ চোখে দেখা যায় না, একসময় সবাইকে পুড়িয়ে মারে।
আমরা একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। সেটা হচ্ছ এই সরকারের সাথে গণতন্ত্র যায় না। আইনের শাসন হাত ধরাধরি করে চলে না। ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। বিচার বিভাগ দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে না। মতের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে না। মিডিয়া হাত পা ছড়িয়ে চলতে পারে না। ভিন্ন মতের সহাবস্থান চলে না। বিরোধী দল জায়গা পায় না। মানবাধিকার পালিয়ে বেড়ায়। প্রশাসন দলবাজ হয়ে যায়। বিরোধী দল না করার মুচলেকা দিয়ে কিংবা সরকারি দল করার অঙ্গীকার করে মামলার হয়রানি থেকে বাঁচতে হয়।
বর্তমান সরকার সমাজের রাষ্ট্রের ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে একটি সুবিধাভোগী কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। এরা ষোলোআনা দুর্নীতিনির্ভর। অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে চলা এদের স্বভাব। এর ফলে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। দুদক কতটা আজ্ঞাবহ ও সেবায়েত তার নজির একই ধরনের মামলার দুরকম পরিণতি। নির্বাচন কমিশন কতটা নতজানু এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত তার প্রমাণ নির্বাচন কমিশন নিজেই তৈরি করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হরিলুট কায়কারবার কার চোখে না পড়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন যে এ কমিশনের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়, তার প্রমাণও জাতির সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনাররা ও সচিব উপস্থাপন করেই রেখেছেন। এ জাতির আবেগ আছে। উপলব্ধিও আছে। সময় মতো প্রতিরোধ করার মতো হিম্মত যে আছে সেটাও প্রমাণিত।
এক-এগারোর সরকার জনগণের সাথে সাত-পাঁচ করে মাইনাস তত্ত্ব ভুলে সাপের দশ পা দেখে বিদায় নিয়ে নির্বাসনে আছে। সেই দুই বছরের সাথে যোগ হলো শেখ হাসিনার পাঁচ বছর। তার সাথে যোগ হলো প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের আরো দেড় বছর। গুণগত পরিবর্তনের কোনো আলামত নেই। মধ্যবর্তী বা নতুন নির্বাচনের আলোচনা মাঝে মধ্যে বিতর্কের ঢেউ তুলছে। আবার সেই বিতর্ক হাওয়ায় মিলিয়েও যাচ্ছে। দেশজুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্য, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতার তাণ্ডব চলছে। এভাবে দেশ চলে না। তাহলে এই অসহনীয় পরিস্থিতি কি একটি অনিবার্য পরিণতি নিশ্চিত করে তুলবে? জনগণ এই একটি মাত্র প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। 
মাসুদ মজুমদার

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads