আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা যে কত খারাপ কাজ করছে সেটা এখন আর বিরোধী দলকে বলতে হচ্ছে না। তাদের কাজের নিন্দা সরকারী দলই করছে এবং সরকার তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি কত খারাপ হলে এবং দলের লোকজন কত খারাপ কাজ করলে সরকারকে নিজের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোরতম অ্যাকশন নিতে হয় তার প্রমাণ গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত দু’টি লাশের ছবি। এই দু’টি ছবির একজন হলো আজিবর শেখ এবং আরেকজন হলো আরজু মিয়া। আরজু মিয়া বন্দুকযুদ্ধে খুন হয়েছে ঢাকার হাজারীবাগের গণকটুলীতে, ১৭ বছরের কিশোর রাজা মিয়াকে ঠান্ডা মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করার কারণে। আর আজিবর শেখ খুন হয়েছে নাজমা বেগমের গর্ভস্থ সন্তানের চোখে গুলী করার জন্য। এই লেখাটি শেষ করার পর আরেকটি ক্রস ফায়ারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত বুধবার কুষ্টিয়ায় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের নেতা ইসমাইল হোসেন পাঞ্জের এবং যুবলীগ নেতা সবুজকে হত্যা করেছিলো। জাকির নিহত হওয়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩ জন নিহত হলো।
ছাত্রলীগ যে কি কাজ করছে সেটি খোলা মেলা বর্ণনা করেছেন যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র কারো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় না। ছাত্ররা বক্তব্য শুরু করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি দিয়ে, তারপর তারা জাতীয় রাজনীতির কথা বলে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কিছু বলে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বার বার ছাত্রলীগকে এই কথাগুলো বলেছি। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের কান পর্যন্ত কথাগুলো গেলেও চেতনায় যায় না। কেন ডাকসু নির্বাচন বন্ধ? এত বছরে ৪৮ জন ভিপি-জিএস হতো। ডাকসুসহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এমনটা হতো না। ছাত্র রাজনীতিতে যে অসুস্থ ধারা তা পরিবর্তন হয়ে সুস্থতা ফিরে আসত। সুবাতাস বইত।’ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এখানে না এলেও পারতেন। প্রত্যেক জিনিসের একটা নিজস্বতা ও স্বকীয়তা আছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও এখানে নির্দলীয় শিক্ষার্থীরা থাকে। আপনারা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আসলে নিরপেক্ষতা হারায়।’ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত নেতাদের বিলবোর্ড প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক নেতাকে আমরা চিনিও না। অনেক নতুন মুখ আছে। বিলবোর্ড দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। আসলে তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে না। বঙ্গবন্ধুর উসিলায় আত্মপ্রচার করে। তোমাদের কর্ম বঙ্গবন্ধুকে বড় করবে না। তোমাদের অপকর্ম বঙ্গবন্ধুকে খাটো করবে।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ৪০ বছর পরে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কাঁদো বাঙালি কাঁদো ব্যানার দেয়া ঠিক না। কারণ, বঙ্গবন্ধু একটি সাহসের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি বিপ্লবের নাম।
যখন লেখাটি এই পর্যায়ে এসেছে তখন অনলাইনে একটি খবর দেখলাম। খবরটি বড় হৃদয় বিদারক। খবরটির শিরোনাম, ‘লক্ষ্মীপুরে শিশুকে পিটিয়ে হত্যা’। খবরে বলা হয়েছে, লক্ষ্মীপুরে দোকান মালিক কর্তৃক মোহাম্মদ রমজান (১২) নামে এক শিশুকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজানের মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ লক্ষ্মীপুরের বাগবাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত রমজান উত্তর বাঞ্ছানগর এলাকার তাজল ইসলামের ছেলে। নিহতের পরিবার জানায়, স্থানীয় আলীর দোকানে শিশু রমজান কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রমজানের মাথায় দুইটি দুধের কার্টুন তুলে দেয় দোকান মালিক। ভার সইতে না পারায় রমজানের মাথা থেকে ওই কার্টুনগুলো পড়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানের শার্টারের রড দিয়ে শিশু রমজানকে মারধর করে দোকানের মালিক আলী। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে রমজানকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
॥দুই॥
দেশে শিশু হত্যার ধারাবাহিকতায় এটি গত দেড় মাসে ৫ম ঘটনা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের আমলে শিশু কিশোরের বর্বর ও নৃশংস হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত দেড় মাসে এটি নিয়ে ৫জন শিশু কিশোরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। গত ৪ জুলাই সিলেটে সামিউল আলম রাজন নামে এক শিশুকে মারতে মারতে মেরে ফেলা হয়। চলতি মাসের ৩ তারিখ রাতে খুলনায় মোঃ রাকিব নামে ১২ বছরের এক শিশুকে মধ্য যুগীয় কায়দার চেয়েও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকরা রাকিবের গুহ্যদ্বারে পাম্প মেশিন ঢুকিয়ে ক্রমাগত পাম্প করতে থাকে। একপর্যায়ে তার তলপেটে বাতাস ঢুকে নাড়ি ভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফুসফুস বিদীর্র্ণ হয়। ফলে সে মৃত্যুবরণ করে। এই হত্যাকান্ডের ১ দিন পর গত ৪ জুলাই মাদ্রাসার ছাত্র ১০ বছর বয়সী রবিউল আলমের চোখ প্রথমে উপড়ে ফেলা হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে শেষ করে দেওয়া হয়। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই যে, সে নাকি মাছ চুরি করেছে। গত সোমবার ১৭ই আগস্ট হাজারীবাগ ছাত্রলীগ প্রধান আরজু মিয়া ১৭ বছরের কিশোর রাজা মিয়ার মাথায় ছিদ্র করে তাকে মেরে ফেলে। সব শেষে গত ১৯ আগস্ট বুধবার লক্ষ্মীপুরে ১২ বছরের শিশু রমজানকে তার দোকানের মালিক আলী রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত ১৬ই আগস্ট রবিবার রাতে র্যাব-এর ক্রসফায়ারে আরজু মিয়া নিহত হয়েছে। গত ২৩ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখের গুলিতে এক মায়ের পেট ছিদ্র হয়। ঐ মা তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গুলি তার পেট ভেদ করে গর্ভস্থ শিশুর চোখে আঘাত করে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করে গর্ভের সন্তানকে বের করে আনা হয়। এই মুহূর্ত পর্যন্ত শিশুটি জীবিত এবং সুস্থ আছে। এই কন্যাসন্তানটির নাম দেওয়া হয়েছে সুরাইয়া। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত গত ১৬ই আগস্ট রোববার রাতে পুলিশের ক্রস ফায়ারে আজিবর শেখ নিহত হয়েছে। এখন লক্ষীপুরের এই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেটি দেখার জন্য জনগন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
॥তিন॥
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ‘মানবজমিন’ একটি তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য মোতাবেক, ৬ মাসে খুন ২০৮০, ছিনতাই-ডাকাতি ৫৩২৫, অপহরণ ৪০০, গণপিটুনিতে নিহত ৭৭, ৭ মাসে ধর্ষণ ৩৬৬, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৫৩, আহত ৪৫০০ (তথ্য সূত্র: মানবজমিন, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
আওয়ামী লীগ রাজত্বকালে বিগত সাড়ে ৩ বছরে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৯৬৮ টি। ২০১২ সালে ২০৯ টি, ২০১৩ সালে ২১৮ টি, ২০১৪ সালে ৩৫০ টি, ২০১৫ সালে ১৯১ টি (জুলাই পর্যন্ত) (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ৭ আগস্ট ২০১৫)। আওয়ামী রাজত্বের প্রথম সাড়ে ৫ বছরে গণ পিটুনিতে নিহত হয়েছে ৭১১ জন। ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ১৩৪ জন, ২০১২ সালে ১২৬ জন, ২০১৩ সালে ১২৮ জন, ২০১৪ সালে ১২৭ জন, ২০১৫ (জুন মাস) ৬৯ জন। (তথ্য সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
ধর্ষণের ক্ষেত্রেও আওয়ামী সরকারের আমলে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ১লা আগস্ট থেকে ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত এই ১৩ দিনে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে ৬ নারীকে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম ৬ মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৭৮ জন। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৪ জন।
গত ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবস পালন করার জন্য যুব লীগের এক নেতা চাঁদপুরের কচুয়া মাধ্যমিক স্কুলের হেড মাস্টারের কাছে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। হেড মাস্টার সাহেব চাঁদা দিতে অপারগ হওয়ায় ঐ যুব লীগ নেতা হেড মাস্টারকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এই সময় আরেক জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে পড়ায় যুব লীগ নেতার আক্রমণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফলে এই শিক্ষকের ওপর তারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং রাতে এক দল ছাত্র লীগ ও যুব লীগ কর্মী ঐ শিক্ষকের বাড়িতে হামলা করে এবং তার বাড়িটি তছনছ করে দেয়। এসব ক্রমাগত হামলার প্রতিবাদে পরদিন ১৬ আগাস্ট রবিবার স্কুলের ছাত্ররা মিছিল করে এবং মানববন্ধন রচনা করে। ছাত্রলীগ ও যুব লীগের কর্মীরা ঐ মানববন্ধনের ওপরও প্রচন্ড হামলা চালায়। এর ফলে ৪০ জন ছাত্র আহত হয়। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা গুরুতর এবং তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ৯৬-২০০১ মেয়াদে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্র লীগ নেতা ঐ বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর বীর দর্পে ঘোষণা করে যে এটি নিয়ে তার ধর্ষণের সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো।
॥চার॥
আমাদের সময় ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল গত ১৯ আগস্ট বুধবার ছাত্রলীগের দুই নেতার ক্রস ফায়ারে মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছে, “এতদিন বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীলসমাজ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ভাষায় কথা বলে আসছিলেন ক্রসফায়ার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তেমনি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ আরজু মিয়া হত্যার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ মিডিয়াকে বলেছেন, বিচার বহির্ভূত এ হত্যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এর জবাবও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুত এই প্রবণতা কমে যাবে। ইতিমধ্যেই তারা বার্তা পেয়ে গেছে। এর আগে তারবার্তা চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে”।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের একটি ক্ষমতাসীন মহল কোনো কোনো ক্রস ফায়ারের বিরোধিতা করছেন। এদের একজন হলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি। জনাব তাপস শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র। শেখ মনির আরেক ভাই হলেন, শেখ ফজলুল করীম সেলিম এমপি। সেই ব্যারিস্টার তাপস একটি বাংলা দৈনিকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আরজু নিরীহ-নিরপরাধ ছেলে। তাকে র্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। ওখানে সেদিন তার পরিবারই বলছে যে সে মাদকাসক্ত। সে চুরি করেছে, তাকে হয়তো বা লোকজন একটু মারধর করেছে। পরে তার (রাজার) আত্মীয় শামীম তাকে বেশি মারধর করেছে। শামীম বুকের ওপর এমনভাবে ছেলেটাকে মেরেছে যে পরে সে মারা গেছে। ওটা একটা দুর্ঘটনা। আমরা এ জন্য দুঃখিত। এখানে আরজুর কোনো অপরাধ থাকলে তার জন্য আইন ছিল, বিচার হতো। কিন্তু এরকম একটা ছেলে, যার কোন ব্যাড রেকর্ড নাই, কোনো মামলা-জিডি পর্যন্ত নাই, সেই ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সকাল বেলায় মেরে দিল। এটা কোনো কথা হতে পারে? এটা তো কোনো যৌক্তিক ঘটনা হতে পারে না।’ এটিকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে র্যাব যে দাবি করছে, সে বিষয়ে সংসদ সদস্য তাপস বলেছেন, এটা (বন্দুকযুদ্ধ) একটা তথাকথিত গৎবাঁধা কথা। এটার কোনো মানে হয় না। এটা বিশ্বাসযোগ্যও না। এরকম একটা নিরীহ ছেলের মৃত্যু আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। প্রতিবাদ জানিয়েছে সকলে। আমরা এটার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি তো মনে করি, এটা নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা (সাত খুন) ঘটেছিল সেরকম ঘটনারই পুনরাবৃত্তি, এছাড়া কিছু না”।
আমরা সব সময়ই বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিরোধী। যে তিন জন ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেটি অত্যন্ত গুরুতর। যদি বিচারে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। সুতরাং সংক্ষিপ্ততম সময়ে বিচার করে তাদেরকে দণ্ড দিলে কারও কিছু বলার থাকবে না। এ কথা সত্যি যে, যে গুরুতর অপরাধ তারা করেছে (প্রমাণ সাপেক্ষে) সেটি ক্ষমার অযোগ্য। শুধু এই তিন জন নয়, আরো যে সব শিশু হত্যা এবং নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলির প্রত্যেকটির নিরপেক্ষ বিচার হতে হবে। সেই বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলা দরকার। শুধু আইন করে, ক্রস ফায়ার করে বা অন্য রকম শাস্তি দিয়ে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই বলে আমরা আইন প্রয়োগ এবং বিচারকে স্থগিত করতে বলছি না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। পাশাপাশি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এই জন্য শুধু নৈতিক শিক্ষা নয়, পবিত্র ইসলামের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের এই ভয়াবহ নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে বাঁচার কোনো উপায় নাই। সুতরাং ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজে ইসলামী অনুশাসনের ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।
ছাত্রলীগ যে কি কাজ করছে সেটি খোলা মেলা বর্ণনা করেছেন যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র কারো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় না। ছাত্ররা বক্তব্য শুরু করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি দিয়ে, তারপর তারা জাতীয় রাজনীতির কথা বলে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কিছু বলে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বার বার ছাত্রলীগকে এই কথাগুলো বলেছি। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের কান পর্যন্ত কথাগুলো গেলেও চেতনায় যায় না। কেন ডাকসু নির্বাচন বন্ধ? এত বছরে ৪৮ জন ভিপি-জিএস হতো। ডাকসুসহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এমনটা হতো না। ছাত্র রাজনীতিতে যে অসুস্থ ধারা তা পরিবর্তন হয়ে সুস্থতা ফিরে আসত। সুবাতাস বইত।’ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এখানে না এলেও পারতেন। প্রত্যেক জিনিসের একটা নিজস্বতা ও স্বকীয়তা আছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও এখানে নির্দলীয় শিক্ষার্থীরা থাকে। আপনারা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আসলে নিরপেক্ষতা হারায়।’ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত নেতাদের বিলবোর্ড প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক নেতাকে আমরা চিনিও না। অনেক নতুন মুখ আছে। বিলবোর্ড দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। আসলে তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে না। বঙ্গবন্ধুর উসিলায় আত্মপ্রচার করে। তোমাদের কর্ম বঙ্গবন্ধুকে বড় করবে না। তোমাদের অপকর্ম বঙ্গবন্ধুকে খাটো করবে।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ৪০ বছর পরে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কাঁদো বাঙালি কাঁদো ব্যানার দেয়া ঠিক না। কারণ, বঙ্গবন্ধু একটি সাহসের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি বিপ্লবের নাম।
যখন লেখাটি এই পর্যায়ে এসেছে তখন অনলাইনে একটি খবর দেখলাম। খবরটি বড় হৃদয় বিদারক। খবরটির শিরোনাম, ‘লক্ষ্মীপুরে শিশুকে পিটিয়ে হত্যা’। খবরে বলা হয়েছে, লক্ষ্মীপুরে দোকান মালিক কর্তৃক মোহাম্মদ রমজান (১২) নামে এক শিশুকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজানের মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ লক্ষ্মীপুরের বাগবাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত রমজান উত্তর বাঞ্ছানগর এলাকার তাজল ইসলামের ছেলে। নিহতের পরিবার জানায়, স্থানীয় আলীর দোকানে শিশু রমজান কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রমজানের মাথায় দুইটি দুধের কার্টুন তুলে দেয় দোকান মালিক। ভার সইতে না পারায় রমজানের মাথা থেকে ওই কার্টুনগুলো পড়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানের শার্টারের রড দিয়ে শিশু রমজানকে মারধর করে দোকানের মালিক আলী। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে রমজানকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
॥দুই॥
দেশে শিশু হত্যার ধারাবাহিকতায় এটি গত দেড় মাসে ৫ম ঘটনা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের আমলে শিশু কিশোরের বর্বর ও নৃশংস হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত দেড় মাসে এটি নিয়ে ৫জন শিশু কিশোরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। গত ৪ জুলাই সিলেটে সামিউল আলম রাজন নামে এক শিশুকে মারতে মারতে মেরে ফেলা হয়। চলতি মাসের ৩ তারিখ রাতে খুলনায় মোঃ রাকিব নামে ১২ বছরের এক শিশুকে মধ্য যুগীয় কায়দার চেয়েও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকরা রাকিবের গুহ্যদ্বারে পাম্প মেশিন ঢুকিয়ে ক্রমাগত পাম্প করতে থাকে। একপর্যায়ে তার তলপেটে বাতাস ঢুকে নাড়ি ভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফুসফুস বিদীর্র্ণ হয়। ফলে সে মৃত্যুবরণ করে। এই হত্যাকান্ডের ১ দিন পর গত ৪ জুলাই মাদ্রাসার ছাত্র ১০ বছর বয়সী রবিউল আলমের চোখ প্রথমে উপড়ে ফেলা হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে শেষ করে দেওয়া হয়। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই যে, সে নাকি মাছ চুরি করেছে। গত সোমবার ১৭ই আগস্ট হাজারীবাগ ছাত্রলীগ প্রধান আরজু মিয়া ১৭ বছরের কিশোর রাজা মিয়ার মাথায় ছিদ্র করে তাকে মেরে ফেলে। সব শেষে গত ১৯ আগস্ট বুধবার লক্ষ্মীপুরে ১২ বছরের শিশু রমজানকে তার দোকানের মালিক আলী রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত ১৬ই আগস্ট রবিবার রাতে র্যাব-এর ক্রসফায়ারে আরজু মিয়া নিহত হয়েছে। গত ২৩ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখের গুলিতে এক মায়ের পেট ছিদ্র হয়। ঐ মা তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গুলি তার পেট ভেদ করে গর্ভস্থ শিশুর চোখে আঘাত করে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করে গর্ভের সন্তানকে বের করে আনা হয়। এই মুহূর্ত পর্যন্ত শিশুটি জীবিত এবং সুস্থ আছে। এই কন্যাসন্তানটির নাম দেওয়া হয়েছে সুরাইয়া। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত গত ১৬ই আগস্ট রোববার রাতে পুলিশের ক্রস ফায়ারে আজিবর শেখ নিহত হয়েছে। এখন লক্ষীপুরের এই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেটি দেখার জন্য জনগন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
॥তিন॥
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ‘মানবজমিন’ একটি তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য মোতাবেক, ৬ মাসে খুন ২০৮০, ছিনতাই-ডাকাতি ৫৩২৫, অপহরণ ৪০০, গণপিটুনিতে নিহত ৭৭, ৭ মাসে ধর্ষণ ৩৬৬, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৫৩, আহত ৪৫০০ (তথ্য সূত্র: মানবজমিন, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
আওয়ামী লীগ রাজত্বকালে বিগত সাড়ে ৩ বছরে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৯৬৮ টি। ২০১২ সালে ২০৯ টি, ২০১৩ সালে ২১৮ টি, ২০১৪ সালে ৩৫০ টি, ২০১৫ সালে ১৯১ টি (জুলাই পর্যন্ত) (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ৭ আগস্ট ২০১৫)। আওয়ামী রাজত্বের প্রথম সাড়ে ৫ বছরে গণ পিটুনিতে নিহত হয়েছে ৭১১ জন। ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ১৩৪ জন, ২০১২ সালে ১২৬ জন, ২০১৩ সালে ১২৮ জন, ২০১৪ সালে ১২৭ জন, ২০১৫ (জুন মাস) ৬৯ জন। (তথ্য সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
ধর্ষণের ক্ষেত্রেও আওয়ামী সরকারের আমলে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ১লা আগস্ট থেকে ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত এই ১৩ দিনে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে ৬ নারীকে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম ৬ মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৭৮ জন। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৪ জন।
গত ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবস পালন করার জন্য যুব লীগের এক নেতা চাঁদপুরের কচুয়া মাধ্যমিক স্কুলের হেড মাস্টারের কাছে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। হেড মাস্টার সাহেব চাঁদা দিতে অপারগ হওয়ায় ঐ যুব লীগ নেতা হেড মাস্টারকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এই সময় আরেক জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে পড়ায় যুব লীগ নেতার আক্রমণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফলে এই শিক্ষকের ওপর তারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং রাতে এক দল ছাত্র লীগ ও যুব লীগ কর্মী ঐ শিক্ষকের বাড়িতে হামলা করে এবং তার বাড়িটি তছনছ করে দেয়। এসব ক্রমাগত হামলার প্রতিবাদে পরদিন ১৬ আগাস্ট রবিবার স্কুলের ছাত্ররা মিছিল করে এবং মানববন্ধন রচনা করে। ছাত্রলীগ ও যুব লীগের কর্মীরা ঐ মানববন্ধনের ওপরও প্রচন্ড হামলা চালায়। এর ফলে ৪০ জন ছাত্র আহত হয়। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা গুরুতর এবং তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ৯৬-২০০১ মেয়াদে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্র লীগ নেতা ঐ বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর বীর দর্পে ঘোষণা করে যে এটি নিয়ে তার ধর্ষণের সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো।
॥চার॥
আমাদের সময় ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল গত ১৯ আগস্ট বুধবার ছাত্রলীগের দুই নেতার ক্রস ফায়ারে মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছে, “এতদিন বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীলসমাজ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ভাষায় কথা বলে আসছিলেন ক্রসফায়ার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তেমনি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ আরজু মিয়া হত্যার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ মিডিয়াকে বলেছেন, বিচার বহির্ভূত এ হত্যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এর জবাবও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুত এই প্রবণতা কমে যাবে। ইতিমধ্যেই তারা বার্তা পেয়ে গেছে। এর আগে তারবার্তা চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে”।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের একটি ক্ষমতাসীন মহল কোনো কোনো ক্রস ফায়ারের বিরোধিতা করছেন। এদের একজন হলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি। জনাব তাপস শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র। শেখ মনির আরেক ভাই হলেন, শেখ ফজলুল করীম সেলিম এমপি। সেই ব্যারিস্টার তাপস একটি বাংলা দৈনিকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আরজু নিরীহ-নিরপরাধ ছেলে। তাকে র্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। ওখানে সেদিন তার পরিবারই বলছে যে সে মাদকাসক্ত। সে চুরি করেছে, তাকে হয়তো বা লোকজন একটু মারধর করেছে। পরে তার (রাজার) আত্মীয় শামীম তাকে বেশি মারধর করেছে। শামীম বুকের ওপর এমনভাবে ছেলেটাকে মেরেছে যে পরে সে মারা গেছে। ওটা একটা দুর্ঘটনা। আমরা এ জন্য দুঃখিত। এখানে আরজুর কোনো অপরাধ থাকলে তার জন্য আইন ছিল, বিচার হতো। কিন্তু এরকম একটা ছেলে, যার কোন ব্যাড রেকর্ড নাই, কোনো মামলা-জিডি পর্যন্ত নাই, সেই ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সকাল বেলায় মেরে দিল। এটা কোনো কথা হতে পারে? এটা তো কোনো যৌক্তিক ঘটনা হতে পারে না।’ এটিকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে র্যাব যে দাবি করছে, সে বিষয়ে সংসদ সদস্য তাপস বলেছেন, এটা (বন্দুকযুদ্ধ) একটা তথাকথিত গৎবাঁধা কথা। এটার কোনো মানে হয় না। এটা বিশ্বাসযোগ্যও না। এরকম একটা নিরীহ ছেলের মৃত্যু আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। প্রতিবাদ জানিয়েছে সকলে। আমরা এটার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি তো মনে করি, এটা নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা (সাত খুন) ঘটেছিল সেরকম ঘটনারই পুনরাবৃত্তি, এছাড়া কিছু না”।
আমরা সব সময়ই বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিরোধী। যে তিন জন ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেটি অত্যন্ত গুরুতর। যদি বিচারে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। সুতরাং সংক্ষিপ্ততম সময়ে বিচার করে তাদেরকে দণ্ড দিলে কারও কিছু বলার থাকবে না। এ কথা সত্যি যে, যে গুরুতর অপরাধ তারা করেছে (প্রমাণ সাপেক্ষে) সেটি ক্ষমার অযোগ্য। শুধু এই তিন জন নয়, আরো যে সব শিশু হত্যা এবং নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলির প্রত্যেকটির নিরপেক্ষ বিচার হতে হবে। সেই বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলা দরকার। শুধু আইন করে, ক্রস ফায়ার করে বা অন্য রকম শাস্তি দিয়ে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই বলে আমরা আইন প্রয়োগ এবং বিচারকে স্থগিত করতে বলছি না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। পাশাপাশি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এই জন্য শুধু নৈতিক শিক্ষা নয়, পবিত্র ইসলামের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের এই ভয়াবহ নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে বাঁচার কোনো উপায় নাই। সুতরাং ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজে ইসলামী অনুশাসনের ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন