পকেটের পয়সা খরচ করেই তো মানুষ পত্রিকা কেনে। পত্রিকা পড়ে তারা খবর জানতে চায়, তথ্য জানতে চায়। ভালো খবর পেলে পাঠক আনন্দিত হয়, আশাবাদী হয়। এই আনন্দ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, জীবন-সংগ্রামে সাহায্য করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান সময়ে মানুষ অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো খবর কতটা পায়? বরং পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিন জুলুম-নির্যাতন, হত্যা-নৃশংসতা, লুণ্ঠন-দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার দাপট ও দৌরাত্ম্যের যেসব খবর মুদ্রিত হচ্ছে; তাতে প্রশ্ন জাগে এটা কি মানুষের সমাজ? এমন জীবন-যাপনের জন্যই কি মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছিল, সরকার গঠন করেছিল?
আমাদের রাজনীতি নিয়ে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে, সুশাসন নিয়ে, সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু সমাজের মানুষ এতটা অমানুষ হয়ে গেল কেমন করে? এদেরকে আবার মানুষ করবে কে? এ ব্যাপারে কি পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতি সেবক এবং রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই? নাকি সবাই আত্মস্বার্থ ও আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাবেন এবং ব্লেমগেমে ব্যস্ত থাকবেন- যেমনটি এখন চলছে।
৫ আগস্ট দেশের পত্রিকাগুলোতে একটি খবর খুবই গুরুত্বের সাথে মুদ্রিত হয়েছে। যার শিরোনাম ‘নৃশংস, বর্বর’। খবরটিতে বলা হয় : অভাবের তাড়নায় স্কুলে পড়া ছেড়ে গ্যারেজে কাজ নিয়েছিল ১২ বছরের শিশু রাকিব। কিন্তু কাজ করেও ঠিকমতো পয়সা পেতো না। পান থেকে চুন খসলেই গালাগালি, মারধর। কোমল মন, ছোট্ট দেহে তা সইছিল না। পরে আর একটি গ্যারেজে কাজ নেয় সে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগের গ্যারেজ মালিক ও তার সহযোগী শিশু রাকিবকে ধরে মোটরসাইকেলের চাকা হাওয়া দেয়ার কমপ্রেসার মেশিনের নল ঢুকিয়ে দেয় তার মলদ্বার দিয়ে। এরপর চালু করে দেয়া হয় কমপ্রেসার। নল দিয়ে পেটে বাতাস ঢুকে শিশুটির দেহ ফুলে প্রায় বড়দের মতো হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায় নাড়িভুঁড়ি, ফেটে যায় ফুসফুসও। ফলে মৃত্যু ঘটে তার।
খুলনার টুটপাড়ায় একটি গ্যারেজে এমন বীভৎস কায়দায় হত্যা করা হলো শিশু রাকিবকে। এর আগে চুরির অপরাধ দিয়ে সিলেটে শিশু সামিউলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এর রেশ না কাটতেই আবার হত্যা করা হলো শিশু রাকিবকে। হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে তিনজনকে। সুবিচার হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। নৃশংসতা ও বর্বরতার ঘটনা এখন যেন আর ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। প্রায় প্রতিদিনই ওইসব নিষ্ঠুর খবর আমাদের পড়তে হয়। রাজপথে বাক্সবন্দী নির্যাতিত শিশুর লাশ পাওয়া যায়, পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় শিশুকে, মেরে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয় কিশোরীকে, মায়ের হাতে বিষপানে মারা যায় শিশু, আরও নানাভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোররা। এইসব মৃত্যু আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানব পরিচয়কে ধিক্কার দিচ্ছে।
এমন অধঃপাতে আমরা কী করে পৌঁছলাম? এই প্রসঙ্গে সমাজ বিশ্লেষকরা পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরছেন। এমন পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে গণতন্ত্রবিহীন সংঘাতের রাজনীতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস এবং অনুরাগ ও বিরাগের মন্দ উদাহরণ। এমন অবস্থায় সুশাসন ও সুবিচারের সংস্কৃতি আমাদের অধঃপতন থেকে উদ্ধার করতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এখন দেশে প্রবল হয়ে উঠছে। ফলে শাসন-প্রশাসন কিংবা উন্নয়ন কোনো কিছুই ঠিকপথে চলছে না। আমরা জানি, দেশ ও জনগণের স্বার্থেই উন্নয়ন প্রয়োজন। আর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করতে হয় প্রকল্প। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের কথা শুনলে দেশের জনগণ খুশি হয়। কিন্তু পত্রিকার শিরোনামে যখন দেখা যায় ‘প্রকল্পের নামে হরিলুট’ তখন থমকে যেতে হয়। ২ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনে মুদ্রিত উক্ত শিরোনামের খবরটিতে বলা হয় : নাটোরে কাজ শেষ না করেই এলজিইডির ১৭টি প্রকল্পের পুরো টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে। কাজ শেষ না করলেও অর্থবছর শেষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়ে গেছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুরে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ভিজিএফ কর্মসৃজন প্রকল্পের ১০ ভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। এসব প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছুই জানেন না। এদিকে হবিগঞ্জে নামে-বেনামে ভুয়া প্রকল্প দিয়ে বরাদ্দের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বাছ-বিচার না করেই লুটে নেয়া হয় রাস্তা-ঘাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে বরাদ্দের অর্থ। নাটোর, লক্ষ্মীপুর আর হবিগঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটের এ চিত্র এখন সারা দেশের বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
বিভিন্ন নামের নানা প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের যে চিত্র পওয়া গেল তা খুবই দুঃখজনক। রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রে বলা হয়েছে প্রকল্প হয়, সে প্রকল্পের নামে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়, কিন্তু প্রকল্প আর বাস্তবায়ন হয় না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ও লুটপাটের মহোৎসব শুরু হয় জেলায় জেলায়। জানা গেছে, কোনো কোনো জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে পুরো টাকাই উত্তোলন করে নেয়ার নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিল উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন পিআইও অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা। বিনিময়ে তারা পেয়েছেন প্রকল্পে মোট অংশের ২০ শতাংশ কমিশন। কোনো জেলায় প্রকল্পের ৩০ ভাগ, কোথাও ৭০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার কোনো জেলার মানুষ জানেই না এসব প্রকল্পের খবর। গোপনে লুটপাট করে নেয়া হচ্ছে বরাদ্দের বিপুল অংকের অর্থ। একইভাবে হতদরিদ্রদের জন্য ‘কর্মসৃজন’ কর্মসূচির আওতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা লোপাট করা হয়েছে। একই পরিস্থিতি এলজিইডি প্রকল্পে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলজিইডিতে ৬০ শতাংশ অর্থের কাজ হয়। বাকি ৪০ শতাংশ চলে যায় ঘুষে। অভিযোগে জানা যায়, প্রকল্পের অর্থের অর্ধেক গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে। কাবিখার চাল, গমও দেদার বিক্রি হয়েছে কালোবাজারে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ এবং চাল-গম লুটপাটের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে এ ধরনের দুর্নীতি কোনো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। বিভিন্ন সময় আমাদের নেতা-নেত্রীরা যখন ক্ষমতায় এসেছেন, তখন তারা এমন লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ওইসব আশাপ্রদ কথাবার্তার বাস্তবায়ন তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমান সরকারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এখন সেই প্রত্যয় ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে। আমরা মনে করি, পত্র-পত্রিকায় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের যেসব খবর মুদ্রিত হচ্ছে, তা সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের সাথে তদারক, বিশ্লেষণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কেবল তাহলেই দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হতে পারে এবং দেশ মুক্ত হতে পারে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পলন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। পরিশেষে বলতে হয়- শিশু রাকিব, সামিউলকে নৃশংসভাবে হত্যা কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের মতো বেপরোয়া মনোভাব একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ক্ষমতাবানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মন্দ উদাহরণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা। সেই দেনা পরিশোধের এখনই সময়।
আমাদের রাজনীতি নিয়ে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে, সুশাসন নিয়ে, সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু সমাজের মানুষ এতটা অমানুষ হয়ে গেল কেমন করে? এদেরকে আবার মানুষ করবে কে? এ ব্যাপারে কি পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতি সেবক এবং রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই? নাকি সবাই আত্মস্বার্থ ও আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাবেন এবং ব্লেমগেমে ব্যস্ত থাকবেন- যেমনটি এখন চলছে।
৫ আগস্ট দেশের পত্রিকাগুলোতে একটি খবর খুবই গুরুত্বের সাথে মুদ্রিত হয়েছে। যার শিরোনাম ‘নৃশংস, বর্বর’। খবরটিতে বলা হয় : অভাবের তাড়নায় স্কুলে পড়া ছেড়ে গ্যারেজে কাজ নিয়েছিল ১২ বছরের শিশু রাকিব। কিন্তু কাজ করেও ঠিকমতো পয়সা পেতো না। পান থেকে চুন খসলেই গালাগালি, মারধর। কোমল মন, ছোট্ট দেহে তা সইছিল না। পরে আর একটি গ্যারেজে কাজ নেয় সে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আগের গ্যারেজ মালিক ও তার সহযোগী শিশু রাকিবকে ধরে মোটরসাইকেলের চাকা হাওয়া দেয়ার কমপ্রেসার মেশিনের নল ঢুকিয়ে দেয় তার মলদ্বার দিয়ে। এরপর চালু করে দেয়া হয় কমপ্রেসার। নল দিয়ে পেটে বাতাস ঢুকে শিশুটির দেহ ফুলে প্রায় বড়দের মতো হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায় নাড়িভুঁড়ি, ফেটে যায় ফুসফুসও। ফলে মৃত্যু ঘটে তার।
খুলনার টুটপাড়ায় একটি গ্যারেজে এমন বীভৎস কায়দায় হত্যা করা হলো শিশু রাকিবকে। এর আগে চুরির অপরাধ দিয়ে সিলেটে শিশু সামিউলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এর রেশ না কাটতেই আবার হত্যা করা হলো শিশু রাকিবকে। হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে তিনজনকে। সুবিচার হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। নৃশংসতা ও বর্বরতার ঘটনা এখন যেন আর ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। প্রায় প্রতিদিনই ওইসব নিষ্ঠুর খবর আমাদের পড়তে হয়। রাজপথে বাক্সবন্দী নির্যাতিত শিশুর লাশ পাওয়া যায়, পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় শিশুকে, মেরে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয় কিশোরীকে, মায়ের হাতে বিষপানে মারা যায় শিশু, আরও নানাভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোররা। এইসব মৃত্যু আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানব পরিচয়কে ধিক্কার দিচ্ছে।
এমন অধঃপাতে আমরা কী করে পৌঁছলাম? এই প্রসঙ্গে সমাজ বিশ্লেষকরা পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কথা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরছেন। এমন পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে গণতন্ত্রবিহীন সংঘাতের রাজনীতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস এবং অনুরাগ ও বিরাগের মন্দ উদাহরণ। এমন অবস্থায় সুশাসন ও সুবিচারের সংস্কৃতি আমাদের অধঃপতন থেকে উদ্ধার করতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এখন দেশে প্রবল হয়ে উঠছে। ফলে শাসন-প্রশাসন কিংবা উন্নয়ন কোনো কিছুই ঠিকপথে চলছে না। আমরা জানি, দেশ ও জনগণের স্বার্থেই উন্নয়ন প্রয়োজন। আর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করতে হয় প্রকল্প। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের কথা শুনলে দেশের জনগণ খুশি হয়। কিন্তু পত্রিকার শিরোনামে যখন দেখা যায় ‘প্রকল্পের নামে হরিলুট’ তখন থমকে যেতে হয়। ২ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনে মুদ্রিত উক্ত শিরোনামের খবরটিতে বলা হয় : নাটোরে কাজ শেষ না করেই এলজিইডির ১৭টি প্রকল্পের পুরো টাকাই তুলে নেয়া হয়েছে। কাজ শেষ না করলেও অর্থবছর শেষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়ে গেছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুরে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ভিজিএফ কর্মসৃজন প্রকল্পের ১০ ভাগও বাস্তবায়ন হয়নি। এসব প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছুই জানেন না। এদিকে হবিগঞ্জে নামে-বেনামে ভুয়া প্রকল্প দিয়ে বরাদ্দের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বাছ-বিচার না করেই লুটে নেয়া হয় রাস্তা-ঘাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে বরাদ্দের অর্থ। নাটোর, লক্ষ্মীপুর আর হবিগঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটের এ চিত্র এখন সারা দেশের বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
বিভিন্ন নামের নানা প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের যে চিত্র পওয়া গেল তা খুবই দুঃখজনক। রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রে বলা হয়েছে প্রকল্প হয়, সে প্রকল্পের নামে অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়, কিন্তু প্রকল্প আর বাস্তবায়ন হয় না। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ও লুটপাটের মহোৎসব শুরু হয় জেলায় জেলায়। জানা গেছে, কোনো কোনো জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে পুরো টাকাই উত্তোলন করে নেয়ার নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। এসব বিল উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন পিআইও অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা। বিনিময়ে তারা পেয়েছেন প্রকল্পে মোট অংশের ২০ শতাংশ কমিশন। কোনো জেলায় প্রকল্পের ৩০ ভাগ, কোথাও ৭০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার কোনো জেলার মানুষ জানেই না এসব প্রকল্পের খবর। গোপনে লুটপাট করে নেয়া হচ্ছে বরাদ্দের বিপুল অংকের অর্থ। একইভাবে হতদরিদ্রদের জন্য ‘কর্মসৃজন’ কর্মসূচির আওতায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা লোপাট করা হয়েছে। একই পরিস্থিতি এলজিইডি প্রকল্পে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলজিইডিতে ৬০ শতাংশ অর্থের কাজ হয়। বাকি ৪০ শতাংশ চলে যায় ঘুষে। অভিযোগে জানা যায়, প্রকল্পের অর্থের অর্ধেক গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে। কাবিখার চাল, গমও দেদার বিক্রি হয়েছে কালোবাজারে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ এবং চাল-গম লুটপাটের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে এ ধরনের দুর্নীতি কোনো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। বিভিন্ন সময় আমাদের নেতা-নেত্রীরা যখন ক্ষমতায় এসেছেন, তখন তারা এমন লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, ওইসব আশাপ্রদ কথাবার্তার বাস্তবায়ন তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। বর্তমান সরকারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এখন সেই প্রত্যয় ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে। আমরা মনে করি, পত্র-পত্রিকায় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের যেসব খবর মুদ্রিত হচ্ছে, তা সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের সাথে তদারক, বিশ্লেষণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কেবল তাহলেই দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষিত হতে পারে এবং দেশ মুক্ত হতে পারে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পলন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। পরিশেষে বলতে হয়- শিশু রাকিব, সামিউলকে নৃশংসভাবে হত্যা কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের মতো বেপরোয়া মনোভাব একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ক্ষমতাবানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মন্দ উদাহরণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা। সেই দেনা পরিশোধের এখনই সময়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন