গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটি নির্মম ঘটনা আমি কিছুতেই স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছি না। একটা নিষ্পাপ শিশু দুনিয়ার বুকে ভূমিষ্ট হবার আগেই মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় তাকে গুলী খেতে হয়েছে। গুলীবিদ্ধ তার মাও কোনো অপরাধ করেনি। মাসহ শিশুটি হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তার এই তুলতুলে শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এবং পাঁচদিন বয়সী শিশুটির শরীরে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় তাকে যারা গুলীবিদ্ধ করেছে তারা পাকিস্তানী সেনা, তাদের সহযোগী অথবা রাজাকার আলবদর বা তাদের সন্তান নয়; তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র ও যুবসংগঠন-ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মী। জাতির দুর্ভাগ্য, এরা এখন আমাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা! বাংলাদেশের মানুষের জান-মাল, সম্পত্তি ও সম্মানের নিরাপত্তার পথে এরা এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হয়। যেখানে চাঁদাবাজি- টেন্ডারবাজি, হত্যা-গুম, ধর্ষণ আর দখলবাজি সেখানেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ। গ্যাং রেপ বা গণধর্ষণের কথা এদেশের মানুষ কখনও শুনেনি যেমন শুনেনি ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালনের কথা- না বৃটিশ আমল না পাকিস্তান আমল। স্বাধীন বাংলাদেশের ‘মুক্ত’ পরিবেশে অবাধে তাদের এই অশ্লীল-অমানবিক ও ন্যক্কারজনক কাজগুলো করতে দেখা যায়। এ কাজে তাদের মুরুব্বী অথবা মুরুব্বী সংগঠনকে বাধা দিতে দেখা যায় না। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মজলুমের পরিবর্তে এই জালিমদের নিরাপত্তা দেয়। তারা যখন হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও মানুষের সম্পত্তি জবর দখল করে, মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং অত্যাচারিতরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা চায় তখন রাষ্ট্রীয় সেবকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। অবস্থার এখন এমন অবনতি ঘটেছে যে, তাদের অত্যাচারের মাত্রা বর্তমান প্রজন্মের গন্ডি পেরিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর গিয়েও পড়ছে। মায়ের পেটের বাচ্চা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্য। তার ওপর অত্যাচারের তাৎপর্য অনেক ব্যাপক। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, এতবড় একটা নির্মমতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে গেল ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের শীর্ষ, মাঝারি বা উল্লেখযোগ্য কোনও নেতা শিশুটি ও তার মায়ের খোঁজ-খবর নিলেন না। অপরাধীদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতারের রেড এলার্টও জারি হতে দেখা যায়নি। এই অবস্থা নমরুদ-ফেরাউনের আমলেও ঘটেছে কিনা সন্দেহ।
(দুই)
বাংলাদেশে বিধ্বস্ত মানবতার এই অবস্থায় সম্প্রতি ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রদত্ত ফাঁসির রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। তার ছেলে হুম্মান কাদের চৌধুরী বলেছেন, তার পিতা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীও একই কথা বলেছেন। তার আইনজীবী বলেছেন যে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে তারা রায় পুনর্বিবেচনা আবেদন করবেন। আমি ইতঃপূর্বে এই কলামে বলেছিলাম যে, তার এলাকায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে দীর্ঘদিন আমি কর্মরত ছিলাম। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল আমি সফর করেছি। এমনকি ’৭১ সালে নিহত কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নতুন চন্দ্র সিংহের পুত্র প্রফুল্ল চন্দ্র ও চিত্তরঞ্জনের সাথে আমার ব্যাপক সদ্ভাব ছিল। কাদের পরিবারের সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে আমি কোথাও কাউকে অভিযোগ করতে শুনিনি। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীদের মূল বাড়ি গহিরায়। এই গহিরাতেই নতুন চন্দ্র সিংহের বাসস্থান এবং কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়। এই ইউনিয়নের চিকদাইর ইউনিয়নের শতকরা ৯০ ভাগ বাসিন্দা অমুসলমান। রাউজান উপজেলার হেডকোয়ার্টার ইউনিয়ন হচ্ছে সুলতানপুর। এই তিনটি ইউনিয়নেই মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু এবং বৌদ্ধরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মুসলমানরা যদি সাম্প্রদায়িক হতেন তাহলে পাকিস্তানের ২৪ বছরে তারা হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারী এলাকায় তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করতেন। কিন্তু তা তারা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখের একটি ঘটনা আমার স্মৃতিপটে সব সময় ভাসে। ঐদিন কুমিল্লার কোটবাড়ীস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে Foundation Training শেষে একদল সরকারি কর্মকর্তার Passing out অনুষ্ঠানে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী শামসুল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারের সচিব এ জেড এম ওবায়দুল্লাহ খান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের একপর্যায়ে এসে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, সরকারের প্রত্যাশা হচ্ছে, তোমরা কর্মস্থলে গিয়ে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুজিববাদের বাণী ছড়িয়ে দেবে। কর্মকর্তাদের ঐ গ্রুপে কাজী ফরিদ আহমদ নামক একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। তার বাড়ি ছিল রাউজানে। তিনি লাফিয়ে উঠলেন। মন্ত্রীর কথা মুখ থেকে পড়তে পড়তেই তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী দয়া করে আমাদের মুজিববাদের পয়গম্বর বানাবেন না। আমার দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ফজলুল কাদের চৌধুরী আমার এলাকার লোক। তিনি ২৪ বছর পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন। ২৪ বছরে তিনি ও তার দল যা করেনি, দুর্ভাগ্যবশত: মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধারা মানুষের উপর তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি অত্যাচার করেছে। তাদের জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মুখ দেখাতে পারি না। বার্ড অডিটরিয়ামে তখন পিন ড্রপ নিরবতা বিরাজ করছিল। কাদের পরিবারের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরে একজন মুক্তিযোদ্ধার উপরোক্ত মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য।
ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডিফেন্ড করা আমার কাজ নয়। এ জন্য তার আইনজীবীরা রয়েছেন, তার পরিবার রয়েছে। আমার উদ্বেগ হচ্ছে তার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে। আমি আশা করি জবারেিত সুবিচার পাবেন।
পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত জনাব কাদেরের বিচার প্রক্রিয়ার যে বিষয়গুলো এসেছে তাতে কয়েকটি বিষয়ে আমি স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছি না।
তিনি দাবি করেছিলেন যে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ‘মাস্টার্স’ পাস করে ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন এবং ১৯৭৪ সালের আগে বাংলাদেশে ফেরেননি। তার কথা যদি সত্য হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ অসত্য হয়ে যায়। জনাব চৌধুরী তার বক্তব্যের সমর্থনে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এবং তার ক্লাসমেট বিচারপতি শামিম হাসনাইন, বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান এবং পাকিস্তানের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী মেনেছিলেন। বিচার প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছিল কিনা আমার কাছে তা পরিষ্কার নয়। যেহেতু বিষয়টি জীবন মরণের সিদ্ধান্তের বিষয় সেহেতু আমি আশা করি জবারি বিচারে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আসবে এবং তিনি ইনসাফ পাবেন।
ভারতের প্রেসিডেন্ট জনাব এপিজে আবদুল কালাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জনাব আবদুল কালাম বিশ্বের একজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ছিলেন। অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের ছেলে আবদুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিই শুধু নয় পেশাগত ক্ষেত্রেও শীর্ষ অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। তার পিতা গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন এবং ক্ষুদ্র ও সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালনা তার পক্ষে কঠিন ছিল। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট ডিঙ্গিয়ে তিনি খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন এবং ভারতের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্টের পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি আস্তিক ছিলেন। তার বিদেহী আত্মার আমি মাগফিরাত কামনা করি।
জনাব কালাম একজন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিই শুধু ছিলেন না তিনি কাজ পাগল মানুষও ছিলেন। তার কিছু স্মরণীয় উক্তি যুবসমাজকে উজ্জীবিত করে। তার উক্তিগুলো আমি এখানে হুবহু তুলে ধরছি: তিনি বলেছেন:
স্বপ্ন সেটা নয় যেটা ঘুমিয়ে দেখা হয়। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।
সূর্যের মতো দিপ্তিমান হতে হলে তোমাকে সূর্যের মতো পুড়তে হবে।
যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর তোমার আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর ফাঁকি দাও তা হলে সবাইকে তোমায় স্যালুট করতে হবে। যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না তাদের অর্জন অন্তঃসার শূন্য। উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে তিক্ততা ছড়ায়। প্রতিদিন ৫টি কথা বলে, আমি সেরা সৃষ্টির সেরা
আমি করতে পারি
আল্লাহ সব সময় আমার সাথে আছেন
আমি জয়ী হবো
আজ দিনটা আমার
ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে। অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে। সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হবে।
জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসাবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধু মাত্র তুমি জয়ী হতে পারবে। আকাশের দিকে তাকাও আমরা একা নই।
উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি আকস্মিক ঘটনা নয়। যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয় তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারেন। তারা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।
প্রেসিডেন্ট আবদুল কালামের উপরোক্ত উপলব্ধিগুলো আমাদের যুব সমাজের জীবনে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
(দুই)
বাংলাদেশে বিধ্বস্ত মানবতার এই অবস্থায় সম্প্রতি ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে প্রদত্ত ফাঁসির রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। তার ছেলে হুম্মান কাদের চৌধুরী বলেছেন, তার পিতা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীও একই কথা বলেছেন। তার আইনজীবী বলেছেন যে, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে তারা রায় পুনর্বিবেচনা আবেদন করবেন। আমি ইতঃপূর্বে এই কলামে বলেছিলাম যে, তার এলাকায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে দীর্ঘদিন আমি কর্মরত ছিলাম। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারীর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল আমি সফর করেছি। এমনকি ’৭১ সালে নিহত কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নতুন চন্দ্র সিংহের পুত্র প্রফুল্ল চন্দ্র ও চিত্তরঞ্জনের সাথে আমার ব্যাপক সদ্ভাব ছিল। কাদের পরিবারের সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে আমি কোথাও কাউকে অভিযোগ করতে শুনিনি। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীদের মূল বাড়ি গহিরায়। এই গহিরাতেই নতুন চন্দ্র সিংহের বাসস্থান এবং কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়। এই ইউনিয়নের চিকদাইর ইউনিয়নের শতকরা ৯০ ভাগ বাসিন্দা অমুসলমান। রাউজান উপজেলার হেডকোয়ার্টার ইউনিয়ন হচ্ছে সুলতানপুর। এই তিনটি ইউনিয়নেই মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু এবং বৌদ্ধরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, মুসলমানরা যদি সাম্প্রদায়িক হতেন তাহলে পাকিস্তানের ২৪ বছরে তারা হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারী এলাকায় তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করতেন। কিন্তু তা তারা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখের একটি ঘটনা আমার স্মৃতিপটে সব সময় ভাসে। ঐদিন কুমিল্লার কোটবাড়ীস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে Foundation Training শেষে একদল সরকারি কর্মকর্তার Passing out অনুষ্ঠানে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী শামসুল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারের সচিব এ জেড এম ওবায়দুল্লাহ খান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যের একপর্যায়ে এসে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, সরকারের প্রত্যাশা হচ্ছে, তোমরা কর্মস্থলে গিয়ে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুজিববাদের বাণী ছড়িয়ে দেবে। কর্মকর্তাদের ঐ গ্রুপে কাজী ফরিদ আহমদ নামক একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। তার বাড়ি ছিল রাউজানে। তিনি লাফিয়ে উঠলেন। মন্ত্রীর কথা মুখ থেকে পড়তে পড়তেই তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী দয়া করে আমাদের মুজিববাদের পয়গম্বর বানাবেন না। আমার দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ফজলুল কাদের চৌধুরী আমার এলাকার লোক। তিনি ২৪ বছর পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন। ২৪ বছরে তিনি ও তার দল যা করেনি, দুর্ভাগ্যবশত: মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধারা মানুষের উপর তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি অত্যাচার করেছে। তাদের জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মুখ দেখাতে পারি না। বার্ড অডিটরিয়ামে তখন পিন ড্রপ নিরবতা বিরাজ করছিল। কাদের পরিবারের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরে একজন মুক্তিযোদ্ধার উপরোক্ত মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য।
ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডিফেন্ড করা আমার কাজ নয়। এ জন্য তার আইনজীবীরা রয়েছেন, তার পরিবার রয়েছে। আমার উদ্বেগ হচ্ছে তার ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে। আমি আশা করি জবারেিত সুবিচার পাবেন।
পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত জনাব কাদেরের বিচার প্রক্রিয়ার যে বিষয়গুলো এসেছে তাতে কয়েকটি বিষয়ে আমি স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছি না।
তিনি দাবি করেছিলেন যে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে ‘মাস্টার্স’ পাস করে ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন এবং ১৯৭৪ সালের আগে বাংলাদেশে ফেরেননি। তার কথা যদি সত্য হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ অসত্য হয়ে যায়। জনাব চৌধুরী তার বক্তব্যের সমর্থনে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এবং তার ক্লাসমেট বিচারপতি শামিম হাসনাইন, বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান এবং পাকিস্তানের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী মেনেছিলেন। বিচার প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছিল কিনা আমার কাছে তা পরিষ্কার নয়। যেহেতু বিষয়টি জীবন মরণের সিদ্ধান্তের বিষয় সেহেতু আমি আশা করি জবারি বিচারে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আসবে এবং তিনি ইনসাফ পাবেন।
ভারতের প্রেসিডেন্ট জনাব এপিজে আবদুল কালাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জনাব আবদুল কালাম বিশ্বের একজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ছিলেন। অত্যন্ত দরিদ্র ঘরের ছেলে আবদুল কালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিই শুধু নয় পেশাগত ক্ষেত্রেও শীর্ষ অবস্থানে চলে গিয়েছিলেন। তার পিতা গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন এবং ক্ষুদ্র ও সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালনা তার পক্ষে কঠিন ছিল। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট ডিঙ্গিয়ে তিনি খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন এবং ভারতের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্টের পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি আস্তিক ছিলেন। তার বিদেহী আত্মার আমি মাগফিরাত কামনা করি।
জনাব কালাম একজন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিই শুধু ছিলেন না তিনি কাজ পাগল মানুষও ছিলেন। তার কিছু স্মরণীয় উক্তি যুবসমাজকে উজ্জীবিত করে। তার উক্তিগুলো আমি এখানে হুবহু তুলে ধরছি: তিনি বলেছেন:
স্বপ্ন সেটা নয় যেটা ঘুমিয়ে দেখা হয়। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।
সূর্যের মতো দিপ্তিমান হতে হলে তোমাকে সূর্যের মতো পুড়তে হবে।
যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর তোমার আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর ফাঁকি দাও তা হলে সবাইকে তোমায় স্যালুট করতে হবে। যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না তাদের অর্জন অন্তঃসার শূন্য। উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে তিক্ততা ছড়ায়। প্রতিদিন ৫টি কথা বলে, আমি সেরা সৃষ্টির সেরা
আমি করতে পারি
আল্লাহ সব সময় আমার সাথে আছেন
আমি জয়ী হবো
আজ দিনটা আমার
ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে। অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে। সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হবে।
জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসাবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধু মাত্র তুমি জয়ী হতে পারবে। আকাশের দিকে তাকাও আমরা একা নই।
উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি আকস্মিক ঘটনা নয়। যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয় তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারেন। তারা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।
প্রেসিডেন্ট আবদুল কালামের উপরোক্ত উপলব্ধিগুলো আমাদের যুব সমাজের জীবনে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন আনতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ড. মোঃ নূরুল আমিন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন