উজ্জ্বল প্রভাতের পূর্বে রাত যেমন গভীর ও অন্ধকার হয়, তেমনি আমাদের ওপর নেমে এসেছে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ মহাজোট সরকারের গুম, খুন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টিমরোলার। একদলীয় বাকশালের পরিণতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হওয়া এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য, এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও ভালো ফল বয়ে আনেনি। আমাদের সবার রাজনীতি যেহেতু দেশের কল্যাণার্থেই হওয়া উচিত, তাই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে যাত্রা না করে কেন আমরা আবার সেই অরাজক অতীতে ফিরে যাবো?
সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই থাকতে হবে এমন নয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের অধীনেও নির্বাচন হতে পারে। তার এই বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে অনেকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে পিছু হটেছেন। কেউ বলেছেন, আসলে খালেদা জিয়া ভিন্ন নামে তত্ত্বাবধায়কই চাইছেন। কারও মতে, বিএনপি যখন বুঝতে পেরেছে, নির্বাচন হলে তারাই জিতবে, তখন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতেও তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়।
২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে. এম. হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। অভিযোগ করা হয়েছিল বিচারপতি কে.এম. হাসান বিএনপিপন্থী। অথচ ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন, তিনি কেবল অনিরপেক্ষই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার আবশ্যকতা ছিল?
আমার স্বদেশ এখন- ‘বাংলাদেশ নামের জেলখানা’। পুরো বাংলাদেশ এখন কার্যত একটা অন্তহীন কারাগার। ভিন্ন অর্থে জল্লাদখানা বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। আর এ অবস্থার জোরালো সূচনা করা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৫ অক্টেবর থেকে। ১০ম সংসদের তফসিল ঘোষণার পর এ ক’দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল একশ’, আহতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের ঘর অতিক্রম করেছিল। মামলার সংখ্যা বেশুমার, গুমের তালিকা বাড়ছে। এভাবে পাখিরমতো গুলী করে মানুষ হত্যার নজির এই দেশে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। বর্বর পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের যুদ্ধকালীন গণহত্যার ঘটনাগুলো যেন এখনও হার মানছে। আওয়ামী লীগ এবং গৃহপালিত বামপন্থীরা প্রথম মুক্তিযুদ্ধ অসমাপ্ত রেখেই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা কেন তার কোনো সদুত্তর নেই।
‘দালাল’ খতম করার এই রক্ত উৎসব কোন ধরনের মুক্তিযুদ্ধ তারও ক্যামেস্ট্রি বুঝতে অক্ষম। মুক্ত মানুষকে রাষ্ট্রশক্তির জোরে, জনগণের খাজনা ট্যাক্সের টাকায় লালিত পালিত পুলিশ-র্যাব দিয়ে হত্যা করিয়ে সরকার কাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে! সীমান্ত অরক্ষিত রেখে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী বিডিআর যা কি না এখন বিজিবি তাদের দিয়ে বিরোধী দল দাবড়ানোর এই খেলাও জনগণকে দেখতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন, দুদক ও অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থা অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করে বসে আছে।
তারা শর্তহীন আনুগত্য প্রদর্শন করছে-সরকার যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দণ্ডে মুণ্ডের মালিক সেজে তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য আদায় করতে চায়। অবস্থা এমন যে হয় পোষ মানতে হবে, নয়তো গুলীর মুখে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হবে-এ ধরনের বর্বরতার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পাওয়া যাবে কি?
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আমেরিকার জন কেরি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনো প্রতিনিধির অভিমত ও পরামর্শকে দেখা হচ্ছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের দৃষ্টিতে। বাংলাদেশের শাসকদের আচরণ মিসরের সাবেক ও বনেদি একনায়কদের দম্ভ-অহমিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের খ্যাতিমান ও নামী-দামি পত্রিকাগুলোর মন্তব্য নিয়ে আমাদের শাসনকর্তারা টিপ্পনি কাটেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরামর্শ নিয়ে বিদ্রুপ করেন।
আগে জানতাম খলের ছলের অভাব হয় না। এখন দেখছি শাসকের ছলনারও শেষ নেই। এখন ক্ষমতার কোনো ব্যাকরণ থাকতে হয় না। আইন মানতে হয় না। কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। জনগণকে এভাবে ছাগল ভেড়া ভেবে কোনো দেশের সরকারই এমন যুক্তিহীন আচরণ করে না। এখন আইন আদালতের কাছে তো বটেই জনগণের সামনে কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না। এরপরও ক্ষমতার লোকদের দেশপ্রেম নাকি উথলে উঠছে। সংবিধানের মায়াকান্না থামছে না। গণতন্ত্র প্রেমের বিলাসী তাজমহল গড়তে তাদের যেন জুড়ি নেই।
দেশের সব মানুষের মানবিক অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়নি। বস্তুত সম্মানিত লোকেরা এই সরকারের আমলে অতীতে যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন- তারা অবশিষ্ট সম্মানটুকু নিয়ে বাঁচতে চান। এই দেশের ভিন্ন মতাবলম্বী সব বুদ্ধিজীবী, সুশীল, এনজিও ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী- বার বার ক্ষমতার সংযমহীন লকলকে জিহ্বা থেকে নিঃসরিত বিষাক্ত লালায় ভিজেছেন। তারা আর কোনো বিড়ম্বনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চান না। কেউ বোবা হয়ে থাকাকে ভাবছেন নিরাপদ। কেউ দৃষ্টির আড়ালে পড়ে থাকাকে ভাবছেন সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার একটা উপায়। এটাই গণতন্ত্রহীন অন্ধকার রাজনীতির বড় আলামত। এভাবে আত্মগোপন বা স্বেচ্ছা নির্বাসনের পথ ধরা কতটা সমীচীন এবং বিবেকের সাথে প্রতারণা কি না সেই প্রশ্ন এখন গৌণ।
দেশবাসী দেখছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ফায়দা তুলতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলার জন্য সরকারের পেটুয়া বাহিনী কি ভূমিকাই না পালন করছে? সাম্প্রদায়িক উস্কানির এই কুৎসিত খেলার দায় চাপানো হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর। ঠান্ডা মাথায় গুলী করে দোষ দেয়া হচ্ছে বিরোধী দলের মাঠকর্মীদের ঘাড়ে। সরকারের লোকজনের যেকোনো কর্মকা-ে প্রতিপক্ষের সব প্রতিবাদ নাশকতা, সহিংসতা, পাশবিকতা, নৃশংসতা। বোমা ছুড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে সরকারি দলের কর্মী, নাম হয় বিরোধী দলের। শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে ধরা পড়ে সরকার অনুগত কর্মী, দোষ চাপে মৌলবাদের ওপর। বোমার কারখানার সন্ধান মিলে পুলিশকে দিয়ে তোতা পাখিরমতো বলানো হয়, বিরোধী দলের বিপক্ষে। বোমা বানাতে গিয়ে হাতের কব্জি উড়ে যায় সরকারি দলের লোকদের, দোষ চাপানো হয় বিরোধী পক্ষের ওপর। পুলিশের জ্যাকেট পরে, বন্দুক হাতে, পুলিশের কাতারে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালনরত বিরোধী দলের কর্মীদের গুলী ছুড়ে সরকারদলীয় ক্যাডার, জাতীয় দৈনিকে ছবি ছাপা হয়, কারো কোনো টনক নড়ে না।
একসময় এ ধরনের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বহারা চরমপন্থীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নক্সালবাদের জন্ম নিয়েছে। চারু মজুমদাররা অস্ত্রহাতে লড়েছেন আমৃত্যু। ভারতে সেই খ- যুদ্ধের চিত্র কয়েক বছর আগেও ছত্রিশগড়ে প্রত্যক্ষ করা গেল। আমাদের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদে সর্বহারাদের তৎপরতা সবার জানা। এখন জনমনে, পেশা নির্বিশেষ সর্বস্তরে, এমনকি প্রশাসনেও অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছে। দেশ যেভাবে কারাগার ও নিপীড়নের দোজখখানায় রূপান্তরিত হয়েছে, রাষ্ট্রের সন্তানতুল্য নাগরিক হত্যা করে যেভাবে পৈশাচিক উল্লাস ও ক্ষমতার দম্ভ জাহির করা হচ্ছে তাতে আমাদের জাতির ভাগ্য বিড়ম্বনা, জনগণের দুর্গতি ও শাসককুলের মন্দ বরাতের কোনো হেরফের হওয়ার কথা নয়। সব প্রহসন ও তামাশার একটা জের আছে, সব হিংস্রতারও একটা পরিণতি আছে। জোর জবরদস্তির ক্ষমতারও শেষ আছে। সব বাড়াবাড়ির একটা পরিসমাপ্তি আছে। সাধারণ মানুষ, দোকানী থেকে খেটে খাওয়া মুটে মজুর, সবার আহাজারি- হে মহাশক্তিমান ও শাশ্বত সত্যবাদীদের প্রভু, এই সরকারের অন্যায্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হিংসাত্মক রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত এই জনপদ থেকে উদ্ধার করো। ত্রাণকর্তা পাঠাও এবং জুলুম-অত্যাচার, নিপীড়ন ও দুঃশাসনের কারাগার থেকে মুক্ত করো। এই আহাজারির আওয়াজ আরশের প্রভুর দরবারে পৌঁছে গেলে রহমত কিংবা গজব দু’টোই অনিবার্য হয়ে যাবে।
বিশ্বসম্প্রদায় ‘না’ বলা শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কূটনীতিকরা ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্মৃতিসৌধে গরহাজির থেকে জানান দিলেন- তারা কী ভাবছেন। ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ কমনওয়েলথ মহাসচিব এক চিঠিতে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন। কমনওয়েলথ মহাসচিবের চিঠিতে বলা হয়- নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং পরিবেশ না থাকায় তারা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন না। ২ ডিসেম্বর ২০১৩ নির্বাচন কমিশন থেকে কমনওয়েলথ মহাসচিবের কাছে পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
একই কারণ দেখিয়ে ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক ও নিরাপত্তা নীতিমালা সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ক্যাথরিন অ্যাস্টনের মুখপাত্র ব্রাসেলসে থেকে এক বিবৃতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার কথা ছিল। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি এক বিবৃতিতে জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
জেন সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে-এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার একটি সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, এমন একটি নির্বাচন আয়োজনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। পরে অনুকূল পরিবেশে আমরা আমাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাতে তৈরি আছি।’
সাকি বলেন, সংলাপ অব্যাহত রাখা এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য যথোপযোগী সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ ত্বরান্বিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রধান দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, একটি সহিংসতামুক্ত ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে নিজেদের জাতীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং যারা নেতৃত্ব প্রদানের আকাক্সক্ষা পোষণ করেন, তাদের আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশী নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুপ্রাণিত করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, সব দলের ও বাংলাদেশী নাগরিকদের অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই মতামত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। একইভাবে এই সুযোগ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা বিরোধী দলের দায়িত্ব।
১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করেন। জামায়াতকে নিয়ে তা-ব ঘটাচ্ছেন। ভাবছেন, অনেক কিছু করে ফেলবেন। বাংলার মানুষ তা মেনে নেবে না। অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। মা-শিশুকে একসাথে হত্যা করবেন। তা বসে বসে দেখবো না। তা সহ্য করবো এটা হয় না। আমরা আরো কঠোর হবো।’
প্রধানমন্ত্রী আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণার পর দিনই মন্ত্রিপরিষদের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দেশের যেসব জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে সেসব জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান চালানো হবে। সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে বলা হয়। বনমন্ত্রী হাসান মাহমুদ তো দেখামাত্র গুলীর নির্দেশের কথাই বলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ তার দলীয় কর্মীদের দেশের সর্বত্র সরকার বিরোধীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই থাকতে হবে এমন নয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকারের অধীনেও নির্বাচন হতে পারে। তার এই বক্তব্য নির্বাচন নিয়ে অনেকে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে পিছু হটেছেন। কেউ বলেছেন, আসলে খালেদা জিয়া ভিন্ন নামে তত্ত্বাবধায়কই চাইছেন। কারও মতে, বিএনপি যখন বুঝতে পেরেছে, নির্বাচন হলে তারাই জিতবে, তখন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতেও তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়।
২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে. এম. হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। অভিযোগ করা হয়েছিল বিচারপতি কে.এম. হাসান বিএনপিপন্থী। অথচ ২০১৩ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন, তিনি কেবল অনিরপেক্ষই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার আবশ্যকতা ছিল?
আমার স্বদেশ এখন- ‘বাংলাদেশ নামের জেলখানা’। পুরো বাংলাদেশ এখন কার্যত একটা অন্তহীন কারাগার। ভিন্ন অর্থে জল্লাদখানা বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। আর এ অবস্থার জোরালো সূচনা করা হয়েছে ২০১৩ সালের ২৫ অক্টেবর থেকে। ১০ম সংসদের তফসিল ঘোষণার পর এ ক’দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল একশ’, আহতের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের ঘর অতিক্রম করেছিল। মামলার সংখ্যা বেশুমার, গুমের তালিকা বাড়ছে। এভাবে পাখিরমতো গুলী করে মানুষ হত্যার নজির এই দেশে এর আগে কখনো দেখা যায়নি। বর্বর পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের যুদ্ধকালীন গণহত্যার ঘটনাগুলো যেন এখনও হার মানছে। আওয়ামী লীগ এবং গৃহপালিত বামপন্থীরা প্রথম মুক্তিযুদ্ধ অসমাপ্ত রেখেই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা কেন তার কোনো সদুত্তর নেই।
‘দালাল’ খতম করার এই রক্ত উৎসব কোন ধরনের মুক্তিযুদ্ধ তারও ক্যামেস্ট্রি বুঝতে অক্ষম। মুক্ত মানুষকে রাষ্ট্রশক্তির জোরে, জনগণের খাজনা ট্যাক্সের টাকায় লালিত পালিত পুলিশ-র্যাব দিয়ে হত্যা করিয়ে সরকার কাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে! সীমান্ত অরক্ষিত রেখে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী বিডিআর যা কি না এখন বিজিবি তাদের দিয়ে বিরোধী দল দাবড়ানোর এই খেলাও জনগণকে দেখতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন, দুদক ও অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থা অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করে বসে আছে।
তারা শর্তহীন আনুগত্য প্রদর্শন করছে-সরকার যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দণ্ডে মুণ্ডের মালিক সেজে তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য আদায় করতে চায়। অবস্থা এমন যে হয় পোষ মানতে হবে, নয়তো গুলীর মুখে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হবে-এ ধরনের বর্বরতার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পাওয়া যাবে কি?
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, আমেরিকার জন কেরি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেকোনো প্রতিনিধির অভিমত ও পরামর্শকে দেখা হচ্ছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের দৃষ্টিতে। বাংলাদেশের শাসকদের আচরণ মিসরের সাবেক ও বনেদি একনায়কদের দম্ভ-অহমিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের খ্যাতিমান ও নামী-দামি পত্রিকাগুলোর মন্তব্য নিয়ে আমাদের শাসনকর্তারা টিপ্পনি কাটেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরামর্শ নিয়ে বিদ্রুপ করেন।
আগে জানতাম খলের ছলের অভাব হয় না। এখন দেখছি শাসকের ছলনারও শেষ নেই। এখন ক্ষমতার কোনো ব্যাকরণ থাকতে হয় না। আইন মানতে হয় না। কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। জনগণকে এভাবে ছাগল ভেড়া ভেবে কোনো দেশের সরকারই এমন যুক্তিহীন আচরণ করে না। এখন আইন আদালতের কাছে তো বটেই জনগণের সামনে কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না। এরপরও ক্ষমতার লোকদের দেশপ্রেম নাকি উথলে উঠছে। সংবিধানের মায়াকান্না থামছে না। গণতন্ত্র প্রেমের বিলাসী তাজমহল গড়তে তাদের যেন জুড়ি নেই।
দেশের সব মানুষের মানবিক অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়নি। বস্তুত সম্মানিত লোকেরা এই সরকারের আমলে অতীতে যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন- তারা অবশিষ্ট সম্মানটুকু নিয়ে বাঁচতে চান। এই দেশের ভিন্ন মতাবলম্বী সব বুদ্ধিজীবী, সুশীল, এনজিও ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী- বার বার ক্ষমতার সংযমহীন লকলকে জিহ্বা থেকে নিঃসরিত বিষাক্ত লালায় ভিজেছেন। তারা আর কোনো বিড়ম্বনাকে আমন্ত্রণ জানাতে চান না। কেউ বোবা হয়ে থাকাকে ভাবছেন নিরাপদ। কেউ দৃষ্টির আড়ালে পড়ে থাকাকে ভাবছেন সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার একটা উপায়। এটাই গণতন্ত্রহীন অন্ধকার রাজনীতির বড় আলামত। এভাবে আত্মগোপন বা স্বেচ্ছা নির্বাসনের পথ ধরা কতটা সমীচীন এবং বিবেকের সাথে প্রতারণা কি না সেই প্রশ্ন এখন গৌণ।
দেশবাসী দেখছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ফায়দা তুলতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলার জন্য সরকারের পেটুয়া বাহিনী কি ভূমিকাই না পালন করছে? সাম্প্রদায়িক উস্কানির এই কুৎসিত খেলার দায় চাপানো হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর। ঠান্ডা মাথায় গুলী করে দোষ দেয়া হচ্ছে বিরোধী দলের মাঠকর্মীদের ঘাড়ে। সরকারের লোকজনের যেকোনো কর্মকা-ে প্রতিপক্ষের সব প্রতিবাদ নাশকতা, সহিংসতা, পাশবিকতা, নৃশংসতা। বোমা ছুড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে সরকারি দলের কর্মী, নাম হয় বিরোধী দলের। শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে ধরা পড়ে সরকার অনুগত কর্মী, দোষ চাপে মৌলবাদের ওপর। বোমার কারখানার সন্ধান মিলে পুলিশকে দিয়ে তোতা পাখিরমতো বলানো হয়, বিরোধী দলের বিপক্ষে। বোমা বানাতে গিয়ে হাতের কব্জি উড়ে যায় সরকারি দলের লোকদের, দোষ চাপানো হয় বিরোধী পক্ষের ওপর। পুলিশের জ্যাকেট পরে, বন্দুক হাতে, পুলিশের কাতারে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালনরত বিরোধী দলের কর্মীদের গুলী ছুড়ে সরকারদলীয় ক্যাডার, জাতীয় দৈনিকে ছবি ছাপা হয়, কারো কোনো টনক নড়ে না।
একসময় এ ধরনের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বহারা চরমপন্থীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নক্সালবাদের জন্ম নিয়েছে। চারু মজুমদাররা অস্ত্রহাতে লড়েছেন আমৃত্যু। ভারতে সেই খ- যুদ্ধের চিত্র কয়েক বছর আগেও ছত্রিশগড়ে প্রত্যক্ষ করা গেল। আমাদের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদে সর্বহারাদের তৎপরতা সবার জানা। এখন জনমনে, পেশা নির্বিশেষ সর্বস্তরে, এমনকি প্রশাসনেও অজানা আতঙ্ক গ্রাস করেছে। দেশ যেভাবে কারাগার ও নিপীড়নের দোজখখানায় রূপান্তরিত হয়েছে, রাষ্ট্রের সন্তানতুল্য নাগরিক হত্যা করে যেভাবে পৈশাচিক উল্লাস ও ক্ষমতার দম্ভ জাহির করা হচ্ছে তাতে আমাদের জাতির ভাগ্য বিড়ম্বনা, জনগণের দুর্গতি ও শাসককুলের মন্দ বরাতের কোনো হেরফের হওয়ার কথা নয়। সব প্রহসন ও তামাশার একটা জের আছে, সব হিংস্রতারও একটা পরিণতি আছে। জোর জবরদস্তির ক্ষমতারও শেষ আছে। সব বাড়াবাড়ির একটা পরিসমাপ্তি আছে। সাধারণ মানুষ, দোকানী থেকে খেটে খাওয়া মুটে মজুর, সবার আহাজারি- হে মহাশক্তিমান ও শাশ্বত সত্যবাদীদের প্রভু, এই সরকারের অন্যায্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হিংসাত্মক রাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত এই জনপদ থেকে উদ্ধার করো। ত্রাণকর্তা পাঠাও এবং জুলুম-অত্যাচার, নিপীড়ন ও দুঃশাসনের কারাগার থেকে মুক্ত করো। এই আহাজারির আওয়াজ আরশের প্রভুর দরবারে পৌঁছে গেলে রহমত কিংবা গজব দু’টোই অনিবার্য হয়ে যাবে।
বিশ্বসম্প্রদায় ‘না’ বলা শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কূটনীতিকরা ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্মৃতিসৌধে গরহাজির থেকে জানান দিলেন- তারা কী ভাবছেন। ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ কমনওয়েলথ মহাসচিব এক চিঠিতে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন। কমনওয়েলথ মহাসচিবের চিঠিতে বলা হয়- নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং পরিবেশ না থাকায় তারা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন না। ২ ডিসেম্বর ২০১৩ নির্বাচন কমিশন থেকে কমনওয়েলথ মহাসচিবের কাছে পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
একই কারণ দেখিয়ে ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক ও নিরাপত্তা নীতিমালা সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ক্যাথরিন অ্যাস্টনের মুখপাত্র ব্রাসেলসে থেকে এক বিবৃতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার কথা ছিল। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি এক বিবৃতিতে জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং অর্ধেকের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
জেন সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে-এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার একটি সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, এমন একটি নির্বাচন আয়োজনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। পরে অনুকূল পরিবেশে আমরা আমাদের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাতে তৈরি আছি।’
সাকি বলেন, সংলাপ অব্যাহত রাখা এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য যথোপযোগী সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ ত্বরান্বিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রধান দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, একটি সহিংসতামুক্ত ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে নিজেদের জাতীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং যারা নেতৃত্ব প্রদানের আকাক্সক্ষা পোষণ করেন, তাদের আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও বাংলাদেশী নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুপ্রাণিত করে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, সব দলের ও বাংলাদেশী নাগরিকদের অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই মতামত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। একইভাবে এই সুযোগ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা বিরোধী দলের দায়িত্ব।
১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করেন। জামায়াতকে নিয়ে তা-ব ঘটাচ্ছেন। ভাবছেন, অনেক কিছু করে ফেলবেন। বাংলার মানুষ তা মেনে নেবে না। অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। মা-শিশুকে একসাথে হত্যা করবেন। তা বসে বসে দেখবো না। তা সহ্য করবো এটা হয় না। আমরা আরো কঠোর হবো।’
প্রধানমন্ত্রী আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণার পর দিনই মন্ত্রিপরিষদের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দেশের যেসব জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে সেসব জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান চালানো হবে। সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে বলা হয়। বনমন্ত্রী হাসান মাহমুদ তো দেখামাত্র গুলীর নির্দেশের কথাই বলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ তার দলীয় কর্মীদের দেশের সর্বত্র সরকার বিরোধীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।
জিবলু রহমান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন