সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ : আসুন ছাত্রলীগকে বেআইনী ঘোষণার দাবি তুলি


সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও খ্যাতনামা লেখক-কলামিস্ট ড. জাফর ইকবালের একটি খেদোক্তি এবং মন্তব্য আমাকে বিশেষভাবে মর্মাহত করেছে। বলাবাহুল্য গত পরশু শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। এই হামলায় ড. জাফর ইকবালের স্ত্রী ও ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সিনিয়র শিক্ষিকা ড. ইয়াসমিন হকসহ অন্তত ১০ জন শিক্ষক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী ড. জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেছেন, “যে ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে তারা আমার ছাত্র হয়ে থাকলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিত।” তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে। যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুক্ত হয়েছিল সেই স্লোগানের এত বড় অপমান আমি আমার জীবনে দেখিনি।’ জাতীয় দৈনিকগুলো এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা, মারধরসহ তাদের লাঞ্ছিত করার সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশের পাশাপাশি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব, ক্ষুব্ধ ও অপমানিত শিক্ষক ড. জাফর ইকবালের বৃষ্টির মধ্যে ছাতা গুটিয়ে বসে থাকার একটি ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। ছবিতে মনে হচ্ছিল তিনি কাঁদছেন, তবে বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় তার চোখ মুখ থেকে পড়া পানি কান্নার না বৃষ্টির তা বুঝা যাচ্ছিল না। যাই হোক শিক্ষকদের উপর হামলা ও তার অবস্থা দেখে আমি দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছি। তার উপলব্ধি এবং গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাবার ইচ্ছা আমার হৃদয়কে দারুণভাবে আলোড়িত করেছে। এক সময় আমি শিক্ষকতা করতাম, ছাত্রদের তরফ থেকে অপমানিত হওয়া একজন শিক্ষকের জন্য কত বড় আঘাত তা আমি বুঝতে পারি। আমার শিক্ষকতা জীবনে একটা ঘটনা ঘটেছিল যেই ঘটনা আমাকে শিক্ষকতা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। এই ঘটনার পেছনেও ছাত্রলীগের একজন নেতা জড়িত ছিলেন। সময়টা ছিল ১৯৭০ সাল। তখন আমি ঢাকার কায়েদে আজম কলেজে অধ্যাপনা করি। ঐ বছর ডিগ্রী পরীক্ষায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে আমার ইনভিজিলেশান ডিউটি পড়েছিল। জগন্নাথ কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক আবদুল মতিন এবং আমার একই হলে ডিউটি পড়েছিল। ঐ কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি ঐ হলে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। নকল করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন। তার খাতা জব্দ করতে গিয়ে তাকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম কেন তিনি নকল করছেন তার সহজ উত্তর ছিল, আমি নকল করছি না, বই দেখে আসলটা লিখছি। তিনি বল প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। তবে তার উত্তরটি আমার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। যে শিক্ষা আসল নকল তথা মূল্যবোধ শেখাতে পারে না সে শিক্ষা জাতির কল্যাণে আসতে পারে না। আমার তখনি মনে হয়েছিল ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ মানুষ নয় গরু তৈরি করছে। আবার গরু চরানো সবার কাজ নয়। এর দু’বছর পর আমি শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এর মধ্যে গঙ্গা যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। অধঃপতিত ছাত্রলীগের ইমেজ তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ এখন প্রকৃত ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল কোনও সংগঠন নয়। এটি এখন একটি আতঙ্ক আর কলঙ্কের নাম। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, হোস্টেলের সিট বাণিজ্য, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, তাদের গুম ও হত্যা, মেয়েদের শ্লীলতাহানি প্রভৃতি এখন তাদের প্রধান কাজ, শিক্ষা নয়। ড. জাফর ইকবাল সাহেবদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আস্কারা দিয়ে শুরু থেকে তারা যদি ছাত্রলীগকে মাথায় না উঠাতেন তাহলে পরিস্থিতি হয়ত আজকের এই অবস্থায় পৌঁছাতো না। ছাত্রলীগ যখন ছাত্রদল, শিবিরসহ প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উৎখাতের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছিল এবং করছে তখন আজকের আক্রান্ত শিক্ষকরাই তাদের উৎসাহ দিয়েছেন এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্রলীগ নেতারা যখন প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছে তখন এই শিক্ষকরা চুপ থেকে তাদের সমর্থন যুগিয়েছেন, অনেকে সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গসুখ পাবার আশায় তাদের সহায়তা কামনা করেছেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অনৈতিক কাজে অংশগ্রহণে অনিচ্ছুক ও অত্যাচারে ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা যখন কয়েক বছর আগে প্রেস কনফারেন্স করে তাদের কীর্তি ফাঁস করলো তখন নির্যাতিতা ছাত্রীদের সমর্থনে একজন শিক্ষক কি এগিয়ে এসেছিলেন? এই শিক্ষকদের অনেককে আমরা চিনি যারা ছাত্রীদের পরীক্ষার খাতা ও ক্লাস পাওয়াকে জিম্মি করে তাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সাথে জড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করেছেন অথবা পড়েছেন। আবার আদর্শিক কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল ম্যানিপুলেট করার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই। ১৯৯৯-২০০০ সেশনে অর্থনীতি বিভাগের একটি মেয়ে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী পেয়েছিল। ফরিদা ইয়াসমীন নামক ঐ মেয়েটির প্রাপ্ত স্কোর ছিল ২.৯৯৫। তার প্রথম শ্রেণী প্রাপ্তির অনুকূলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তও ছিল। কিন্তু শিক্ষকরা তার বিরোধিতা করে তার .০০৫ নম্বর কম প্রাপ্তি দেখিয়ে তাকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছেন। কারণ ছিল আদর্শিক; মেয়েটি নামায পড়তো এবং হিজাবের অনুসারী ছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, মেয়েটিকে প্রথম শ্রেণী দেয়া হলে তার মেধাবী ক্যারিয়ারের প্রেক্ষাপটে যদি ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে সে আসে তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তাদের দলের প্রাধান্য থাকবে না। তাদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য ছাত্রলীগের তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়েদের প্রথম শ্রেণী দিয়ে শিক্ষকতার পেশায় নেয়ার অনেক অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এ অবস্থায় ড. জাফর ইকবালসহ শিক্ষকদের মধ্যে যারা ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে হতাশ হচ্ছেন অথবা আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন তাদের জন্য আমার করুণা হয়। তাদের উচিত এ ধরনের সংগঠনের উপর থেকে অবিলম্বে সমর্থন প্রত্যাহার করে এমন একটি সংগঠনকে সমর্থন করা যার নেতাকর্মীরা সুকৃতি প্রতিষ্ঠা করে এবং দুষ্কৃতিকে প্রতিরোধ করে ও শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করে।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশেষ করে গত কয়েক বছরে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রলীগ সরকারি ছত্রছায়ায় যে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে আসছে ড. জাফর ইকবালের দলভুক্ত কয়জন শিক্ষক তার প্রতিবাদ করেছেন ? শিক্ষকতা পেশা থেকে সরে দঁাঁড়িয়েছেন ? কিছু আলঙ্কারিক পদ থেকে কয়েক বছর আগে কয়েকজনের পদত্যাগের কথা শুনেছিলাম। কিন্তু দেশবাসী ঐ ঘটনাকেও নাটক বলেছিলেন। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায় ইতোমধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার যারা নিন্দা  করেছেন তাদের সৎ সাহসের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। নিন্দার খাতিরে নিন্দা করে লাভ নেই। নিন্দা ফলপ্রসূ হওয়া দরকার। ছাত্রলীগের নিন্দায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার মুখর হয়েছিলেন এবং সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আবার ঐ পদেই ফিরে এসেছেন। তাদের চরিত্রের কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে? অবশ্যই না। ছাত্রলীগের ব্যাপারে সিলেটের মানুষের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের হোস্টেলকে পুড়িয়ে দিয়েছিল। কালের সাক্ষী ঐ হোস্টেলটি ছিল উপমহাদেশের বহু জ্ঞানী-গুণীর স্মৃতিধন্য একটি ভবন। মেধার ভিত্তিতে এ হোস্টেলে সীট বণ্টনের রীতি ছিল। এই মানদ-ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছাত্ররা এই হোস্টেলের বেশির ভাগ আসন পায় এবং ছাত্রলীগ মেধার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় বঞ্চিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত আগুন লাগিয়ে তা জ্বালিয়ে দেয়। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এর নিন্দা করেছিলেন। কেউ কেউ চোখের পানিও ফেলেছিলেন। ছাত্রলীগের অপরাধীরা আজো শাস্তি পায়নি। কেন পায়নি সরকারই ভাল বলতে পারবেন। বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী অপরাধ না করেও এমনকি জেলখানায় বন্দী থাকা অবস্থায়ও অগ্নিসংযোগের মামলায় চার্জশিট পাচ্ছেন; মিথ্যা মামলায় জেল খাটছেন। অগ্নিসংযোগকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজকীয় হালতে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করছেন। মানুষ বিস্মিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা অথবা বৃষ্টিতে ভিজে কান্নাকাটি করলে অবস্থার কোনও উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। কাজেই আসুন আমরা সবাই মিলে ছাত্রলীগকে বেআইনি ঘোষণার দাবি তুলি এবং এমন সংগঠনকে সমর্থন করি যার নেতাকর্মীরা সৎ, নিষ্ঠাবান, পড়া-লেখায় মনোযোগী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও বেআদবি করে না এবং গোড়া নয় কিন্তু ধর্মপ্রাণ। এরা আমাদের সম্পদ। সাহস থাকলে এগিয়ে আসুন।
ড. মোঃ নূরুল আমিন

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আরও একটি মন্দ উদাহরণ


গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করার জন্য বৈশ্বিক নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। সময় নষ্ট না করে এখনই তা করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। এ ক্ষেত্রে গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজন, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন সহায়তাকারী ও অনুসন্ধানে জড়িতদের নিরাপত্তা দিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডে অব দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স (আন্তর্জাতিক গুম দিবস) উপলক্ষে ৩০ আগস্ট এমন আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দুটি গ্রুপ। উল্লেখ্য যে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটে এশিয়ায়। এ বিষয়ে জাতিসংঘে রিপোর্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে।
যে পরিবারের সদস্যকে গুম করা হয় তারা জানেন নিষ্ঠুর ও অমানবিক এই কাজের বেদনা কত গভীর ও মর্মান্তিক। একজনের গুমের ঘটনায় একটি পরিবার অচল হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবন থেকে শান্তি বিদায় নিয়ে আতঙ্ক ভর করে থাকে। বাংলাদেশেও আমরা দেখেছি রাজনৈতিক কারণে এবং সম্পত্তির লোভ ও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে গুমের বহু নিষ্ঠুর ঘটনা। এদিকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে খসড়া চুক্তি করাসহ পদ্ধতিগতভাবে সব রকম ব্যবস্থা নিতে সরকারসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি অন এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস ও দ্য ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিরেন্সেস। জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত দু’বছরে সারা বিশ্বে মোট ২৬৪টি গুমের ঘটনা নিয়ে তারা কাজ করেছেন। পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় যে, এই বর্বরোচিত কর্মকা-ের চর্চা অনেকগুলো দেশেই চলছে। হাজার হাজার এ রকম ঘটনার মধ্যে এ সংখ্যা সামান্যই। বাকি ঘটনাগুলোর কথা প্রতিশোধ ও নিরাপত্তাভীতির কারণে রিপোর্ট করা হয়নি। গুমের এ রকম অনেক ঘটনা জাতিসংঘের কাছেও রিপোর্ট করা হয়নি।
আমরা জানি যে, কোনো সভ্য দেশে গুমের ঘটনা চলতে পারে না। তারপরও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে গুমের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ তো গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছে, সরকারসমূহকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আহ্বানের বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ। মানবজমিনে প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়, ৩০ আগস্ট প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার, আফাদ, এএলআরসি, এফআইডিএইচ ও অধিকার যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল। অধিকার টিম ও ভিকটিম পরিবারগুলো জানিয়েছেন, পূর্বনির্ধারিত ওই অনুষ্ঠানে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সাক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কথা ছিল। এ অনুষ্ঠান করার জন্য গত ১১ জুলাই প্রেস ক্লাব অডিটারিয়াম বুকিং দেয়া হয়েছিল এবং হল ভাড়াও পরিশোধ করা হয়েছিল। ২৯ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অধিকারে ফোন করে প্রেস ক্লাবের এক কর্মচারী জানান যে, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামের নির্দেশে অডিটোরিয়ামের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এর আগে দুপুরে গুমের শিকার ব্যক্তিদের কয়েকটি পরিবারকে বিভিন্ন অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন করে উল্লেখিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ ছাড়া শনিবার বিকালে সাদা পোশাকধারী লোক অধিকার অফিসের মূল গেটে এসে সংগঠনের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানের অবস্থান জানতে চায়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, গুমের শিকার পরিবারগুলো তাদের মর্মবেদনার কথা দেশের মানুষ কিংবা সরকারকে জানাতে পারলো না। বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবসটি পালন করতে পারলো না দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর চাইতে দুঃখের বিষয় আর কী হতে পারে? বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি কেমন করে সৃষ্টি হলো? আমরা তো এ কথা জানি যে, সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব সব সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে এবং স্বাধীন মত প্রকাশের পক্ষে সাহসী ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু এবার এমন কি হয়েছে যে গুমের শিকার পরিবারগুলোর অনুষ্ঠান বাতিল করে দিল প্রেস ক্লাব? এমন ঘটনায় জাতির সামনে মাথা হেঁট হয়ে গেছে সাংবাদিক সমাজের। অনেকে বলছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের বর্তমান কর্তৃপক্ষ তো প্রেস ক্লাবের সদস্যদের ভোটে বৈধভাবে নির্বাচিত কোনো কর্তৃপক্ষ নয়। তাই এমন কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্তের দায় সাংবাদিক সমাজ নিতে পারে না। যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দায় শুধু তাদের ওপরই বর্তাবে। দেশের নাগরিকরাও হয়তো বিষয়টি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জাসদ নিয়ে ঝড় : পেছনে কোন মতলব?


আজ জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি অংশের রাজনৈতিক গোলা নিক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। অবশ্য আমরা যেটাকে বলি Topical subject  সেটি হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি।  সেটার ওপরই লেখার কথা। কিন্তু দেখলাম, সব পত্রপত্রিকাই এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করছে। এছাড়া বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ এবং পলিটিশিয়ানরা এ ব্যাপারে তাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন। সুতরাং আমার ধারণা, পাঠক ভাইয়েরা এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই একটি  ধারণা গঠন করে নিয়েছেন। তাই জাসদ নিয়েই আজ আলোচনা করব। তবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে একটি কথা অবশ্য এখনই বলতে হবে। সেটি হলো, কিছুদিন আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি ১২০ ডলার। এখন সেটি নেমে এসেছে ৪০ ডলারে। তাহলে আমাদের তেলের দাম যা আছে তার দুই তৃতীয়াংশ কমা উচিত। সেটি না হয়ে উল্টো তেলের দামও বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের দামও  বেড়েছে। আর গ্যাসের তো কথাই নাই।
বাবু সুরঞ্জিত  সেনগুপ্তের রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। তার কথা বলার ধরন ধারণ আমর বিরক্তি উৎপাদন করে। শুধু তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজই নয়, তার মুখের জবানগুলোও Irritating, অর্থাৎ গা জ্বালা ধরায়। কিন্তু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে তার একটি উক্তি আমার পছন্দ হয়েছে। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে সরকার সাথে সাথেই সে পণ্যটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের বৃদ্ধির আনুপাতিক হারের চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন কোনো পণ্যের দাম কমে যায় তখন সরকার সে পণ্যটির দাম দেশের অভ্যন্তরে কমায় না। এটি কোনো ভাল নীতি নয়। আজকের মত জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে এটুকু বলে জাসদ প্রসঙ্গে ফিরে যাচ্ছি।
জাসদের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক গোলা নিক্ষেপ সম্পর্কে সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয় The first political salvo was fired by AL leader Sheikh Selim. অর্থাৎ প্রথম রাজনৈতিক গোলাটি নিক্ষেপ করেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম। শেখ সেলিম একজন এমপি এবং শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া তিনি যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শেখ ফজলুল হক মনির আপন ছোট ভাই।  শেখ হাসিনা এবং তারা ফার্স্ট কাজিন। সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র এবং শেখ সেলিমের ভাতিজা। এসব বর্ণনা থেকেই শেখ সেলিমের রাজনৈতিক অবস্থান বোঝা যায়।
সেই শেখ সেলিম কিন্তু তার আক্রমণটা শুরু করেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান এবং মুক্তিযুদ্ধ কালে এস  ফোর্সের অধিনায়ক জেনারেল শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মুক্তিযুদ্ধ কালে ৩ জন কমান্ডারের নামে তিনটি বাহিনী গঠিত হয়। এরা হলেন (১) জেনারেল জিয়াউর রহমানের নামে ‘জেড ফোর্স’, (২) জোনারেল খালেদ মোশাররফের নামে ‘কে ফোর্স’ এবং (৩) জেনারেল শফিউল্লাহর নামে ‘এস ফোর্স’।  শেখ মুজিব হত্যার সময় জেনারেল শফিউল্লাহ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। শেখ সেলিম শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে শেখ মুজিব হত্যার সময় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আনেন এবং তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আক্রমণ রচনা করেন। তিনি এতদূরও বলেন যে, ঐ সময় জেনারেল জিয়া যদি সেনা বাহিনীর প্রধান থাকতেন তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধুকে এমন করুণভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। একই বক্তৃতায় এরপর তিনি রাজনৈতিক আঘাত হানেন জাসদের বিরুদ্ধে।
॥দুই॥
 শেখ ফজলুল করিম  সেলিম অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি  মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য  বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।
 শেখ  সেলিম বলেন, কর্নেল তাহের জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সহানুভূতিশীল হয়ে যাকে বিআইডব্লিউটিএর  চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন, তিনিও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাহেরের কী পরিণতি হয়েছিল, তা সবাই  দেখেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার  প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক  শেষ  না হতেই একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ  অভিযোগ করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপসহ তৎকালীন বাম সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার  প্রেক্ষাপট  তৈরি করেছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর  সেদিন যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল জাতি তাদের ভুলেনি। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়  শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি জাসদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল, কথিত  সেই বিপ্লবীদের কথা আমরা ভুলিনি। পঁচাত্তরের আগে বিপ্লবের নামে রাজনীতিতে অস্থির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে সামরিক বাহিনী হত্যা করতে সাহস  পেয়েছিল। মঙ্গলবার ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে হল শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
দল নিরপেক্ষ শিক্ষিত সমাজ ভেবে পাচ্ছেন না যে, ৪০ বছর পর জাসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতার এই আক্রমণ কেন? এখানে সবচেয়ে বড় স্ববিরোধিতার বিষয় এই যে, মাহবুব উল আলম হানিফ এবং অন্যেরা শুধু জাসদ নয়, সমস্ত বাম পন্থী দল এবং নেতার বিরুদ্ধে অনুরূপ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই পটভূমিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জনাব হাফিজউদ্দিন একটি মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা সশস্ত্র তৎপরতা এবং শেখ মুজিবের পতনের পথ প্রশস্ত করার যে অভিযোগ করেছেন সেগুলো সবই ঠিক। তাহলে সেই সব ব্যক্তিকে নিয়ে আবার মন্ত্রিসভা গঠন কেন? এসব অভিযোগের পরেও তারা মন্ত্রী থাকেন কিভাবে?
হঠাৎ করে জাসদ এবং বামপন্থীদের বিরুদ্ধে এই বিষোদগার কেন, সে প্রশ্ন এখন সুধী সমাজ এবং রাজনৈতিক মহলে উত্তপ্ত রাজনীতির টপিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কিছুক্ষণ পরে কথা বলব। কিন্তু এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাসদের দুই নেতা সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই তথ্যটি এখন হট ডিসকাশনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর  চন্দ্র রায় বলেছেন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার  হোসেন ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলীবর্ষণ করেন। তিনি বলেন, গুলীটা প্রথম আনোয়ার  হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর  নেতৃত্বেই শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয়  প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, ১৯৭৪ সালে আমি জাসদে ছিলাম। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হল, আমরা  গ্রেফতার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি  ঘেরাও করব। কিন্তু  ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা জানতাম, মন্ত্রীর বাড়ির  গেটের সামনে যাব, সরকারের পক্ষ  থেকে  কেউ আসবে, স্মারকলিপি  নেবে। কিন্তু গুলীটা প্রথম আনোয়ার  হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর  নেতৃত্বেই শুরু হল। ইনি হলেন, সেই আনোয়ার হোসেন যিনি কিছুদিন আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি কর্নেল তাহেরের আপন ছোট ভাই। যখন আত্মরক্ষার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসভবন  থেকে পাল্টা গুলী এল, তখন আমরা দিগি¦দিক  ছোটাছুটি করছি। কারও হাত  নেই, কারও পা  নেই। কতজন মারা  গেছেÑ তখন জানার সুযোগ ছিল না। গয়েশ্বর আরো বলেন, ’৭৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক  দেয় জাসদ।  সেই হরতালে  বোমা ব্যবহারের জন্য  বোমা বানানোর দায়িত্ব  দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নিখিল চন্দ্র সাহাকে। যাত্রাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে নিখিল  বোমা বানাতে যায়।  বোমাতে  মেশানো জিনিস  কোনটা আগে দিতে হয়, পরে দিতে হয়Ñ এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মধ্যে একটা  বোমা ফাটে। নিখিলের সম্মানার্থে  পেট্রোল  বোমার নাম রাখা হল ‘নিখিল’। আপনারা তথ্য মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করবেন,  বোমার অপর নাম নিখিল ছিল কি না? বিএনপি এই  নেতা অভিযোগ করেন, হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র রাজনীতি শুরু করেছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য।’
॥তিন॥
এখন সেই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। এত বছর পর হঠাৎ করে জাসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ক্ষেপে গেল কেন? এ সম্পর্কে বাজারে অনেক গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। গুজবকে গুজব বলেই আমি বিবেচনা করি। কিন্তু এবারের গুজবে দেখলাম একটি রহস্যময়তা এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস। একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, আওয়ামী লীগের অনেক পদবঞ্চিত নেতা মনে করেন যে, অনেক বামপন্থী ও কমিউনিস্ট আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে এবং মন্ত্রিসভায় উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এরা হলেন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান এবং শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর ফলে শেখ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শেখ সেলিম এবং শেখ মনির ছেলে ব্যারিস্টার তাপসসহ আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মন্ত্রী হতে পারেন নি। এখন তারা মনে করছেন যে, এসব বামপন্থী এবং কমিউনিস্ট নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে বের করে দিতে পারলে মন্ত্রিসভায় তাদের সুযোগ মিলতে পারে। এ জন্যই জাসদের বিরুদ্ধে এই আক্রোশ।
এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের আগেই একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিক মহল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কারণ তারা মনে করে যে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা। প্রধান বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপিসহ সমস্ত বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। বিদেশীদের কাছে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য সরকার নাকি নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু সেই নির্বাচনে যাতে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত না হয়ে সরকার ইলেকশন  দেবে না।
সরকার নাকি এরকম চিন্তা ভাবনা করছে যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেগম জিয়াসহ বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার বিচার করা হবে এবং বিচারে দ-প্রাপ্ত হলে তারা নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান মহাজোটেরই একটি অংশ অর্থাৎ ইনুর জাসদ, মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি, দীলিপ বড়–য়ার সাম্যবাদী দল এবং এরশাদের জাতীয় পার্টিকে কিছু আসন দিয়ে বিরোধী দলে রাখা হবে। সেটির মহড়া হিসেবে বামপন্থী মন্ত্রীদেরকে কেবিনেট থেকে সরানো হবে। তাদেরকে পরবর্তী নির্বাচনে জিতিয়ে এনে তাদেরকে দিয়েই বিরোধী দল গঠন করা হবে। সে জন্যই অর্থাৎ কমিউনিস্টদেরকে ড্রপ করার জন্যই জাসদ ও গণবাহিনীর  নেতা হাসানুল হক ইনু এবং অন্যান্য বামপন্থী নেতার বিরুদ্ধে সরকারি দল থেকেই মারাত্মক সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ মন্ত্রিসভা  থেকে জাসদ সভাপতিকে সরিয়ে তার দলকে আগামী দিনের নির্বাচনী ময়দানে  ঠেলে  দেয়ার সরকারি পরিকল্পনারই অংশ। গত শুক্রবার একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে আওয়ামী ঘরানারই একজন কলামিস্ট লিখেছেন, ইনুর নিজের ও দলের  কোন গণভিত্তি না থাকলেও  দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি  নেত্রী  বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি  থেকে মাইনাস করতে বলেছিলেন।  সেই ইনুকেই আজ সরকার  থেকে মাইনাসের নকশা অনুসারে এই বিতর্কের ঝড়  তোলা হয়েছে।
ঐ কলামিস্ট লিখেছেন, ১৫ই আগস্ট না ঘটলেও গণবাহিনী মুজিব সরকার উৎখাতের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান ঘটিয়ে  ফেলতো। আজকের সরকারের পার্টনার রাশেদ খান  মেনন, দীলিপ বড়ুয়াদের চীনাপন্থী রাজনীতির তৎপরতাও কম ছিল না।  সেদিন সিপিবি আর ন্যাপ গণমানুষের আকাক্সক্ষার বিপরীতে ক্ষমতার দাসত্ব বরণ করেছিল। ভাঙনের পথে পথে  যে জাসদ রিক্ত-নিঃস্ব, তাকে মুজিব কন্যা  নৌকায় তুলেই না জাতে এনেছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতো মন্ত্রণালয় জাসদ সভাপতি ইনুর হাতে তুলে দিয়েছেন। এর আগে সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়াকেও মন্ত্রী করেছিলেন। সাম্যবাদী দল বঙ্গবন্ধু হত্যাকে সমর্থনও করেছিল। বর্তমান সরকারে রাশেদ খান  মেননও রয়েছেন। ’৭৫ সালের পরেও এদের রাজনীতি ছিল  শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ বিরোধী। বিএনপির ওপর সরকারের খড়গনীতি চরম পর্যায়ে নিয়ে দলটিকে  যেভাবে মাটিতে শুইয়ে  দেয়া হয়েছে,  সেখানে ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলের মঞ্চে পাঠিয়ে সরকার আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা  শেষ করতে চায় বলে মনে করেন ঐ কলামিস্ট। 
আসিফ আরসালান

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর অভিমত


তিনদিনের সফর শেষে গত ২৫ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েইন বলেছেন, বাংলাদেশে যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে তা মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা, অপরাধে জড়িত দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং তাদের বিচার করা জরুরি। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেছেন, এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষা করা উচিত। তাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। গণমাধ্যম প্রসঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেছেন, গণমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেন বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ দেখতে চায়, যেখানে সক্রিয় নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান সরকারকে জবাবদিহিতায় আনবে। প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েইন অবশ্য সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে গেছেন। বলেছেন, প্রতিটি বিষয়ে সমস্যার সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে, বিদেশী হিসেবে সেগুলো বলে দেয়াটা তার কাজ নয়।
আমরা মনে করি, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর মূল কথাগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ- যেখানে তিনি বলেছেন, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না এবং এ ধরনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বিচার করা জরুরি। লক্ষণীয় যে, দোষীদের পাশাপাশি তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ মন্ত্রী আসলে বুঝিয়েছেন, দৃশ্যত র‌্যাব ও পুলিশের মতো বিশেষ কোনো বাহিনীকে দায়ী মনে হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আর এ সিদ্ধান্ত কেবল সরকারের দিক থেকেই আসতে পারে। সহজবোধ্য কারণে ব্রিটিশ মন্ত্রী শুধু এটুকু বলতেই বাকি রেখেছেন যে, বাস্তবে সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েইন সামান্যও বাড়িয়ে বলেননি। বস্তুত বর্তমান সরকারের আমলে গুম ও গ্রেফতারের পাশাপাশি ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের মতো নানা নামের আড়ালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে কল্পনার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দু’একদিন পরপরই দেশের কোথাও না কোথাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। গুমও করা হচ্ছে অনেককে। ক’দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে এখানে-সেখানে। সম্প্রতি আবার ছাত্রলীগ ও যুবলীগেরও কয়েকজন নেতাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে দেখা গেছে। আপত্তি ও উদ্বেগের কারণ হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম জড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে জনমনে শুধু ভীতি-আতঙ্কই ছড়াচ্ছে না, জীবনের নিরাপত্তার জন্য সরকারের ওপর মানুষের আস্থাও কমে যাচ্ছে। ওদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপলক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারের বাহিনীগুলো তালিকা করে এবং বেছে বেছে দল দু’টির নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই অভিযোগ করেছেন। গত বছরের ৫ জানুয়ারি আয়োজিত ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে-পরে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে ঢুকে হামলা ও ভয়াবহ নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে বেগম জিয়া একথা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না- এরা বাংলাদেশের বাহিনী, না অন্য কোনো রাষ্ট্রের বাহিনী। কারণ বাংলাদেশের পুলিশ, র‌্যাব ও অন্য বাহিনী নিজ দেশের মানুষের ওপর এতটা নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে পারে না। দেশের সার্বভৌমত্ব অটুট তথা অক্ষুণ্ন রয়েছে কিনা- সে প্রশ্নও তুলেছিলেন বেগম জিয়া।
বস্তুত পুলিশের তো বটেই, এলিট বাহিনী হিসেবে পরিকল্পিত র‌্যাবের কর্মকাণ্ড দেখেশুনেও মনে হচ্ছে যেন কয়েকদিন পরপর ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টার ধরনের বিভিন্ন নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা করাটাই এ বাহিনীর প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে! গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে সব মিলিয়েই অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী মাত্রকেই ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে। সে সত্য কথাটাই বেরিয়ে এসেছে ব্রিটিশ মন্ত্রীর মুখ থেকে। কূটনৈতিক সৌজন্য ও রীতি-নীতির কারণে তিনি সরাসরি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও আমরা মনে করি, ঘটনাপ্রবাহে সরকারের জন্য দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাবের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়। এ সত্যও গোপন থাকছে না, সামনে র‌্যাব ও পুলিশকে রাখা হলেও পেছনে আসলে রয়েছে সরকার। সরকারই এ দু’টি বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যার কাজে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থা নিঃসন্দেহে ভীতিকর। ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরাও তাই মনে করি- গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে দেয়া যায় না। সরকারের উচিত অবিলম্বে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া। সরকারকে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করে কঠোর শাস্তি দেয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে। সব মিলিয়েই সরকারের উচিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সুরক্ষা করা- যার পরামর্শ ব্রিটিশ মন্ত্রী দিয়ে গেছেন।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জাতীয় কবির সম্মান এবং ছবি বিষয়ক ভাবনা


অবাক করা বিষয়ই বটে। রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুল বা নজরুলের সাথে রবীন্দ্রনাথ কি দণ্ডায়মান কি উপবিষ্ট এমন কোনো যুগল ছবি অদ্যাবধি অনাবিষ্কৃত। কোনো সভা-সমিতিতেও এদেরকে একত্রে বা কাছাকাছি দেখা যায় না। যদিও বাংলা সাহিত্যের দুই বিস্ময় রবীন্দ্র-নজরুল। বয়সের ব্যবধান যথেষ্ট থাকলেও মেধা ও ধীশক্তির ফারাকটা ক্রমেই নিকটতর হচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনকালেই। পরবর্তী সময় নজরুলের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ-ঔৎসুক্য এবং মমতা, বিপরীতে নজরুলের অনুরাগ এবং শ্রদ্ধা রবীন্দ্রনাথের অর্থাৎ রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রতি বিভিন্নজনের লেখায় এবং উক্তিতে বিষয়টি উঠে এসেছে। যদিও নজরুল-রবীন্দ্রের ব্যক্তিগত দেখা-সাক্ষাৎ খুবই সীমিত হলেও হয়েছে বার কয়েক। যে সময়গুলোতে এই সাক্ষাৎকার ঘটেছে, নজরুল খ্যাতির বিস্ময়কর উত্থান তখন। রবীন্দ্রনাথও বেশ সমীহ করতেন নজরুলকে। নজরুলের কাব্যপ্রতিভার প্রতি রবীন্দ্রনাথের আস্থার প্রকাশ ঘটতে শুরু করেছে লেখা এবং বাক্যে। এতকিছুর পরও এই দুই মহারথীকে কেউ ক্যামেরাবন্দি করেনি এমনটা বিশ্বাসের সীমায় আসছে না। এখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিচু মানসিকতার প্রকাশ কিনা কে জানে। যদিও একথা সত্য, এক সময় দুই কবির একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া সাহিত্য চিন্তার ব্যবধান তো ছিলই। যদিও এমনটা ভাবতে মন চায় না যে, রবীন্দ্রনাথ নিজেই একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করতেন, নজরুলকে এড়িয়ে চলতেন। যে কারণে নজরুলের সাথে রবীন্দ্রনাথের কোন ছবি পাওয়া যায় না। নজরুল শান্তিনিকেতনে গেছেন এক কি দুবার। তখন রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। আদর-আপ্যায়নও করেছেন কবি। যেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি মুহূর্তকেই ধরে রাখার চেষ্টা করেছে তার ভক্তরা। এমন সময়গুলোতে এরা শীতল ছিলেন, তা ভাবতে কষ্ট হয়। তাছাড়া কবি হিসাবে তো বটেই, গানের রাজ্যে তো নজরুল নামের জয়জয়কার। তার নাম আধুনিক বাংলার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে তখন। রবীন্দ্রনাথের তা অজানা ছিল না। এরপরও এমন আচরণ (!) সত্যিই অভিনব। এখানে যে একটা ষড়যন্ত্র ক্রিয়াশীল ছিল তা সহজেই অনুমেয়। কত যদু-মধুর সাথেই তো রবীন্দ্রনাথকে দেখা যায়, ব্যতিক্রম কেবল নজরুল। তার নাম নজরুল এ জন্যেই নিরাপদ দূরত্ব? সে সময়কালের চিত্রটা ছিল সে রকমেরই। যে কারণে নজরুলকে লিখতে হয়েছিল জাত-জালিয়াত খেলছ জুয়া।
আসলে রবীন্দ্রনাথের সাথে ছবি থাকা না-থাকাটা কোনো ব্যাপার নয়। নজরুল তো নজরুলই। কারো সাথে তিনি একাকার নন। আপন ঔজ্জ্বল্য এবং মহিমায় দীপ্যমান। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথও প্রতিভা খ্যাতি এবং নিজস্বতায় ভাস্বর। তাই এই দুই ব্যক্তিত্বের হাস্যোজ্জ্বল ছবি তার ভক্তরা প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু আফসোসের খবর হলো, তেমনটা ঘটেনি এবং ঘটার সুযোগ দেয়া হয়নি হয়তোবা। এই না ঘটার পশ্চাতে কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি কাজ করে থাকলে থাকতেও পারে। কারণ তৎকালীন রবীন্দ্রবলয়ের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন সমাজ যে ওয়াকিবহাল নন এমনটা তো নয়। প্রতি সপ্তাহে ‘শনিবারের চিঠি’র ঘেউ ঘেউ নজরুলকে শুনতে হয়েছে। যে জন্যে তাকে লিখতে হয়েছিল ‘আমি বলি প্রিয়ে হাটে ভাঙ্গি হাঁড়ি/ অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি’। এক ধরনের ঈর্ষার নজর পড়েছিল নজরুলের উপর। সুভাষ বসুর নেতৃত্বে নজরুলকে সংবর্ধিত করা হয়েছিল জাতির পক্ষ থেকে। সে সভা জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে তাকে। তখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবিত। যদিও দুই কবির বয়সের ব্যবধান অনেক। এরপরও রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে কবি হিসাবে মান্য করতেন, স্নেহ করতেন। বই উৎসর্গ, অনশন ভাঙ্গার জন্যে চিঠি এবং ধূমকেতু পত্রিকার জন্য আশীর্বাদ বাণী পাঠানোর মধ্য দিয়েই তিনি তার স্নেহ-ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। বিপরীতে নজরুলও রবীন্দ্রনাথের প্রতি ছিলেন সশ্রদ্ধ। কবিতা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। রবীন্দ্র প্রয়াণের পর নজরুল যে গান রচনা করেছিলেন তা এখনও তুলনারহিত। নজরুল সে গানটিতে ইলা মিত্রের সাথে নিজেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন। যা গীত হয়েছিল আকাশবাণীতে। একটি কবিতাও রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর। সেটিও স্বকণ্ঠে আবৃত্তি করেছিলেন আকাশবাণীতে। যা ছিল একজন অগ্রজকবির প্রতি আর একজন অনুজের ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার প্রকাশ। এত ঘটনা-অঘটনার পরও নজরুলের সাথে রবীন্দ্রনাথের ছবি পাওয়া যায় না। এক প্রকার দুষ্করই বলতে হবে। থাকলে তো কোথাও না কোথাও তা প্রদর্শিত হতো। একবার নাকি নজরুলের সব ইসলামী গান ধ্বংস করে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। দুই কবিকে তফাতে রাখার এমনি কোন ষড়যন্ত্র হয়েছিল কিনা কে জানে।
কবি নজরুল এখন একটি স্বাধীন দেশ এবং জাতির জাতীয় কবি। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথও ভিন্ন একটি দেশের জাতীয় কবি। আশ্চর্যের বিষয় হলো উভয়ই বাংলাভাষার কবি। একজন বাংলাদেশের অন্যজন ভারতের। এটি বঙ্গবাসীদের জন্য গরিমার বিষয়। এই গরিমার ভূমিতে বিভেদ রেখা টেনে দিতে ব্যস্ত কেউ কেউ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রিয় কবি এবং ভালবাসার কবি। ভিন্নদিকে নজরুল কেবল প্রিয়ই নন আমাদের জাতীয় কবিও বটে। তাই দেশ ও জাতির কাছে জাতীয় কবির সম্মানটা আলাদা থাকাটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক শব্দটির উপরই শ্যেন নজর পড়ছে কারো কারো। যে কারণে নজরুলকে আড়ালে ফেলে দেয়ার প্রয়াস দেখা যায় মাঝে মধ্যে। নজরুল জন্ম-মৃত্যুতে আগের মতো তেমন ধুমধাম নেই। এ ব্যাপারে আগ্রহের অভাবটাই যেন প্রকট হচ্ছে দিন দিন। উৎসব-উৎসবভাবে ভাটার টান। জীবৎকালে যেমন নজরুল রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন মৃত্যুর পরও নিচু মানসিকতার রাজনীতি তার পিছু ছাড়েনি। রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনা সঙ্গীত প্রচারে কোন বাধা না থাকলেও নজরুলের ইসলামী বা জাগরণমূলক সঙ্গীতে যেন অলিখিত একটি নিষেধের খড়গ ঝুলছে। যে কারণে প্রচারমাধ্যমগুলোতে স্বাভাবিক নিয়মে তেমন সঙ্গীত প্রচারিত একপ্রকার হয় না বললেই চলে। সে গানগুলো এখন মৌসুমী হয়ে গেছে। ঈদ বা এ জাতীয় কোন পার্বণে সিলেক্টেড কিছু গান গীত হয়ে থাকে। জাগরণী গান বিশেষ করে ইসলাম-মুসলমান বিষয়ক, সেগুলোতো অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় একেবারেই নিষেধের তালিকায়। পরিবেশটাই বর্তমানে এমন করে রাখা হয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও অনেক নজরুল সঙ্গীতশিল্পী দ্বিধান্বিত কেবল পরিবেশের কারণে। সঙ্গীতে নজরুল তুলনা রহিত। নজরুলের শ্যামা সঙ্গীত কীর্তনতো এক অনন্য উচ্চতায়। তাই নজরুল সঙ্গীত উপমহাদেশের উভয় সম্প্রদায়কেই তৃপ্ত করে। অন্যদিকে রবীন্দ্র সঙ্গীতে সেই সুযোগটি নেই। সেখানে একদেশদর্শিতাই বিষয় ভাবনা। তাই নজরুলের ঔদার্য পরিমাপহীন।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল। এখানে জাতীয় শব্দটি একটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। যে কবির লেখালেখি জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে, হৃদয়ের স্পন্দনকে জাগ্রত করে, দৃষ্টিকে করে প্রসারিত, তাকেই জাতি বরিত করে জাতীয় কবির আসনে। সেদিক থেকে নজরুলের গ্রহণযোগ্যতা সবার ঊর্ধ্বে। সাহিত্যে যেমন গ্রহণ বর্জনের একটা রীতি চালু আছে, সামাজিক আচার বিচারেও এই গ্রহণ বর্জন সুমনোভঙ্গিরই পরিচায়ক। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রিয় কবি ভালবাসার কবি। বাংলা সাহিত্যের বড় কবি তা দ্বিধাহীনভাবেই উচ্চারণ করা যায়। অন্যদিকে নজরুল প্রিয় এবং ভালবাসার কবি তো বটেই উপরন্তু বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাছাড়া বড় কবি তো অবশ্যই। তাই জাতির কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্মান অন্য কবির চেয়ে একটু আলাদা তো হবেই। এই হওয়াটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতায় যারা অন্য কিছুর সন্ধান করে তারা হয় ষড়যন্ত্রকারী, না হয় আহম্মক। এখানে বড়-ছোট অবান্তর। এই যেমন ধানমণ্ডি লেকের পাশে একটি চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্র সরোবর। এমন হতেই পারে। কারণ রবীন্দ্রনাথ আমাদের অনাত্মীয় নন। বিপরীতে অন্য একটি চত্বরকে নজরুল সরোবর নামে ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল। যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নামকরণের দাবি রাখে। কিন্তু অদ্যাবধি এর কোন ফায়সালা করেনি কর্তৃপক্ষ। শোনা গেছে বিষয়টি নিয়ে নাকি ফাইল চালাচালি হয়েছে, এক সময় ফাইলও নাকি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নজরুল সরোবরের বিষয়টি এখন শব্দহীন। নজরুল নামের প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে কতটা সোচ্চার কে জানে। এদের শীতলতা বিষয়টিকে আরো পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে হয়। শোনা যাচ্ছে এলাকাবাসীর আপত্তির কারণে নাকি উদ্যোগটি পথ হারিয়েছে। ধানমন্ডি লেকের চারধার জুড়েই তো আবাসিক এলাকা। আবাসিক এলাকায় (?) রবীন্দ্র সরোবর স্থাপিত হতে কোন আপত্তি উত্থিত না হলে নজরুল সরোবরের বেলায় আপত্তি উঠছে কেন? এখানে এলাকাবাসীর আপত্তি না অন্য কোন ষড়যন্ত্রের কালোথাবা, বিষয়টি খোলাসা করা প্রয়োজন। এই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপটি নিতে অগণন নজরুল ভক্ত এবং নজরুল নামের প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে। পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। জাতীয় কবির প্রতি এ ধরনের ধৃষ্টতা কোন অবস্থায়ই বরদাস্ত করা উচিত নয়, সমীচীন নয়।
নজরুল-রবীন্দ্রনাথকে ক্যামেরাবন্দী করতে তৎকালীন সমাজের কারো কারো আপত্তি বা যড়যন্ত্র থাকলেও বর্তমানকালের সমাজ রবীন্দ্র-নজরুল সরোবর পাশাপাশি রাখতে আপত্তি যে করবে না তা বলাই বাহুল্য। তাই কর্তৃপক্ষ এই জন ইচ্ছার দিকটির প্রতি সুনজর দেবেন হয়তো সহসা। কারণ জাতীয় কবির সম্মান এর সাথে জড়িত।
সাজজাদ হোসাইন খান 

বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এখন প্রয়োজন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন


দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভাল নয়, তা জনগণ ভাল করেই উপলব্ধি করছে। পর পর কয়েকটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়েছে, তাতে উপলব্ধি করা যায় যে, আমাদের রাজনীতিও ভাল অবস্থায় নেই। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বর্জন করে দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দুর্বল করার যে কৌশল সরকার গ্রহণ করেছে, তার ফল কিন্তু সরকারি দলের জন্যও ভাল হয়নি। আসলে কোনো সরকার যখন অঙ্গীকার ভঙ্গ করে অনুরাগ ও বিরাগের নীতিতে দেশ শাসন করে, তখন একদিকে নিজদলের নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে, অপরদিকে ভেঙে পড়ে আইনের শাসন। তেমন এক পরিস্থিতিতেই আমরা এখন বসবাস করছি। এমন অবস্থায় দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসন নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে- তা মোটেও সুখকর নয়। তিনদিনের সফর শেষে ২৫ আগস্ট, ঢাকা ত্যাগের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক বৃটিশ প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েন বলেছেন, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ্য করা যায় না। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সে কারণে সে কারণে এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও সমুন্নত রাখা জরুরি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে। আইনের শাসন তথা সুশাসনের সংকট নিয়েও উদ্বিগ্ন নাগরিকরা। ‘চ্যালেঞ্জ আইনের শাসনে’ শিরোনামে প্রতিবেদনও মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরও প্রশ্ন এখন আইনের শাসন নিয়ে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকার পক্ষের লোকজন বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল। একই সঙ্গে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। অন্যায়-অপরাধ করলে ছাড় দেওয়া হবে না দলের কাউকে। বর্তমানে এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর মনোভাব নিয়েছে।
সরকার পক্ষের লোকজন বলছেন, সরকার একই সাথে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায়। এটা খুবই ভাল কথা। অবশ্য কিছুদিন আগে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল- উন্নয়ন আগে, না সুশাসন আগে? জনগণ আসলে উন্নয়ন ও সুশাসন দু’টোই চায় এবং চায় একসাথেই। আর উন্নয়নেরও রয়েছে নানা রূপ। গুটি কয়েকের উন্নয়ন কিংবা দুর্বৃত্তদের উন্নয়ন জনগণের কাম্য নয়। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের সব মানুষের উন্নয়ন। শুধু ২২ পরিবারের উন্নয়ন চায়নি বলেই তো দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও জনগণ কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক উন্নয়নের রূপ দেখতে পায়নি। আসলে গণতান্ত্রিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুশাসন তথা আইনের শাসন। এর অভাবে প্রকৃত উন্নয়ন ও স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ এখনো সম্ভব হয়নি।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বন্দুকযুদ্ধে সরকারি ঘরানার কিছু মানুষকে নিহত হতে দেখা গেছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের মত বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে সংকট মোকাবিলার কৌশল গ্রহণ না করে বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। প্রসঙ্গত তারা অনুরাগ ও বিরাগের মনোভাব পরিত্যাগ করে ন্যায়ের চেতনায় সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে, সরকারদলীয় লোকদের এখন ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন? এমন পরিস্থিতিতো একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ঘরানার লোকজন প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়েছে, আইনের শাসনের বদলে তারা দলীয় শাসনের সুখ ভোগ করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখনতো তারা আর কথা শুনতে চায় না- সরকারের ইমেজ নষ্ট হলেও না। অতএব বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার! এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্রসফায়ার আইনের শাসনের বড় অন্তরায়। এতদিন বাংলাদেশের কোনো সরকারই এটা মানেইনি যে, ক্রসফায়ার হচ্ছে। তবে এখন নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই এটা করা হচ্ছে। সরকারের একজন মন্ত্রী এমনভাবেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন যে, দলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আবার সরকারের অন্য একটি অংশ প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করছেন। তবে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, আইন লংঘন করে এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে তার মূল্য সরকারকেই দিতে হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ-র‌্যাবের মধ্যে হত্যা করার একটি সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। এটি যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। অতএব আমরা মনে করি, হুমকির পথ পরিহার করে এখন সরকারের উচিত হবে অনুরাগ-বিরাগ তথা দলকানা মনোভাব বর্জন এবং ন্যায়ের চেতনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়া। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আইনের শাসনের বিকল্পও আইনের শাসনই। এত স্পষ্ট বিষয় তো আমাদের রাজনীতিবিদ কিংবা সরকারের না বোঝার কথা নয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা দেখে মনে হয় না তারা পরিস্থিতির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারছেন। নাকি উপলব্ধি করেও নৈতিক মেরুদণ্ডের অভাবে তারা সঙ্গত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন?
আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিচার বিভাগকে পেছনে ফেলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে না। বিচারহীনতার কারণেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কোনো সভ্য দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন সুরঞ্জিত সেন। এদিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন- দল, সহযোগি ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আরো বলেন, এখনই আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রথমে ছাত্রসংগঠনকে নীতিপরায়ণ ও আদর্শের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য ছাত্রলীগের সাবেক নীতিপরায়ণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের ও সৈয়দ আশরাফের মত ব্যক্তিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। তারা সারাদেশ ঘুরলেই ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনে শ্ঙ্খৃলা, আদর্শ ও নীতিপরায়ণতা ফিরে আসবে।
বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত সেনাগুপ্ত সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নীতি ও আদর্শের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। খুবই সঙ্গত আহ্বান। আসলে নীতি ও আদর্শের পথ ছেড়ে মানুষ কখনো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মানুষ যখন ক্ষমতায় থাকে, লক্ষ্যে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তখন এই সত্য ভুলে যায়। ফলে নীতি ও আদর্শের অবর্তমানে দমন-পীড়ন ও দৌরাত্ম্যের মাত্রা বাড়ে। এতে শুধু দল নয়, দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনেও সহিষ্ণুতার অভাবে দ্বন্দ্বসংঘাতের মাত্রা বাড়ে। আর নীতিহীনতার রাজনীতি দলের জন্য কতটা মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে তা হয়তো এখন আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করছে। এ কারণেই এখন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলছেন। সঙ্গত উপলব্ধি দেরীতে হলেও মঙ্গল। তবে দেখার বিষয় হলো, শাসক দল নীতি ও আদর্শের পথে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কতটা এগিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ব্যর্থতার পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গেছে, এবার দিনবদল প্রয়োজন। অঙ্গীকার বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রলীগ-যুবলীগ প্রসঙ্গ : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়


অধুনা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা তাদের পিতৃ ও মাতৃ সংগঠন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বলে মনে হয়। বলাবাহুল্য, তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এতদিন পর্যন্ত দেশবাসী ত্যক্তবিরক্ত হলেও দল ও সরকার ছিলেন নির্বিকার। অনেকের মতে তাদের অপরাধ আমলে নেয়া এবং অপরাধীদের শাস্তি দেয়া অথবা সংশোধন করার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে একটা অনীহা সর্বদা পরিলক্ষিত হয়েছে। গত ৭ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে, যখনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ অথবা ক্ষমতাসীন দলের কোনও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনও বড় ধরনের অপরাধপ্রবণতায় জড়িয়ে পড়েছে তখনি দায়িত্বশীল মহল থেকে তার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে হয় বলা হয়েছে যে শিবির, ছাত্রদল অথবা জামায়াত বিএনপির লোকেরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে ঐ জঘন্য অপরাধ করেছে অথবা অপরাধীদের অপরাধকে আমলে না নিয়েই তাদের আরো অপরাধ করার ‘লাইসেন্স’ দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির-বিএনপির অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য সরকারি দল কমিটিও গঠন করে দিয়েছিল। কিন্তু এই কমিটির রিপোর্ট আর কখনো পাওয়া যায়নি। আর যাবেই বা কেমন করে? অপরাধী জন্ম ও রক্ত সূত্রে যেখানে আওয়ামী পরিবারের সেখানে বিএনপি-জামায়াত আসবে কোত্থেকে? অবশ্য এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতাকর্মীর মধ্যে যে বাস্তব অনুভূতি মোটেই ছিল না তা নয়। ছিল বলেই সাবেক একজন মন্ত্রী ২০১০ সালে পাবনায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে গিয়ে অদ্ভূত একটি প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন এবং তা হচ্ছে নেতৃত্বে ইচ্ছুক ছাত্রদের রক্তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা। তার হয়ত ধারণা ছিল এর মাধ্যমে মাদকাসক্তদের নেতৃত্বে আসা তিনি বন্ধ করতে পারবেন। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। বরং তার এই প্রচেষ্টার পর ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপরাধপ্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা গেছে যে, যেখানে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি, যৌনাচার তথা ইভটিজিং সেখানেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ মাদক ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসা, ভর্তি বাণিজ্য, চাকরি বাণিজ্য, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বলপূর্বক অনৈতিক কাজে ব্যবহার সর্বত্রই তাদের অবাধ বিচরণ। তাদের অপকর্মে যে যেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা তাদের মারধর-অপদস্ত করতে পিছপা হয়নি। শিক্ষক, পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি কর্মকর্তারাও ছাত্রলীগ-যুবলীগের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এর কোনও বিচার হয়নি। আবার দলীয় নেতা বা এমপিরা যেখানে তাদের ঠেকানোর কথা, তারা তা না করে তাদের কেউ কেউ নিজেরাই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে। ফলে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করেছে। যেনতেন প্রকারে অর্থবিত্ত উপার্জন, ভোগ-লালসা, নারীর সম্ভ্রমহানি, চাঁদা ভাগাভাগি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় তারা এতই লিপ্ত হয়ে পড়ে যে তাদের মধ্য থেকে দলীয় ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে লোপ পায় এবং তারা একে অন্যের হত্যাকারীতে পরিণত হয়। গত তিন সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যারা হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে অথবা যাদের পিটিয়ে মারা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কেসগুলো আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতিভাত হয় যে, ক্ষমতাসীনদের আস্কারায় তারা নিজেদের এতই ক্ষমতবান মনে করা শুরু করেছিল যে, তাদের দৃষ্টিতে দেশটি তাদের সা¤্রাজ্য এবং তারা নিজেরা এর স¤্রাটে পরিণত হয়েছিল, যেখানে বসবাস করতে হলে তাদের কথায় উঠতে বসতে হবে এবং সেখানে তাদের কথাই চূড়ান্ত হবে। এ জন্যে যদি কারুর সম্পত্তি, সম্মান-সতীত্ব ও জীবন দিতে হয় তা হলে তাদের কিছু আসে যায় না। এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে; সারা দেশে ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। এটা কারুর জন্যই শুভ হতে পারে না।
কয়েক মাস আগে ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন যে, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরাই ছাত্রলীগ করে। প্রধানমন্ত্রী এক সম্মেলনে ছাত্রলীগকে তার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। গত কয়েক দিনে মন্ত্রীদের অনেকেরই গলার সুর বদলে গেছে। এটা তাদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত বাস্তব উপলব্ধিগত অনুভূতি না সস্তা পপুলারিটি কুড়ানোর কৌশল তা বলা মুশকিল। যদি বাস্তব উপলব্ধি হয় তাহলে তাদের অনেক কিছুই করার আছে বলে মনে হয়। কেননা বানরকে মাথায় তুলতে নেই। অবশ্য তাদের সবাই যে বানর তা আমি মনে করি না।
সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর একটি উক্তি দেশবাসীকে হতাশ করেছে। তিনি বলেছেন যে, লম্পট ছেলেরাই শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ করে। কথাটার তাৎপর্য কি তিনি নিশ্চয়ই তা বুঝেন। তার এই মন্তব্যের পর অন্য কোন মন্ত্রী, এমপি অথবা ছাত্রলীগ-যুবলীগের কোনও নেতাকর্মী প্রতিবাদ করেননি। এই দু’টি সংগঠনের অপরাধের মাত্রা হয়ত এত তুঙ্গে উঠেছে যে তার মন্তব্যটির প্রতিবাদ করার ক্ষেত্র ও যৌক্তিকতা তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। বাস্তবতা যাই হোক আমি এ ধরনের প্রান্তিক মন্তব্যে হতাশ। ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সরবরাহকারী দু’টি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দু’টি যদি লম্পটদের প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কি তা সহজেই অনুমেয়। আমার ধারণা, প্রতিষ্ঠান দু’টিতে অনেক ভাল ভাল ছেলেও আছে, তবে তাদের মূল্যায়ন নেই, এখানে গ্রেসাম্স্ ল্ হয়ত কাজ করেছে। ইধফ সড়হবু ফৎরাবং মড়ড়ফ সড়হবু ড়ঁঃ ড়ভ পরৎপঁষধঃরড়হ.  যারা নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সংখ্যা এত বেশি যে হয়ত ভাল ছেলেরা নিজেদের এসার্ট করতে পারছে না। আওয়ামী লীগকে তার প্রয়োজন ও অস্তিত্বের স্বার্থে ভাল ছেলেদের উপরে তুলে আনা প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম-হত্যা, গুম প্রভৃতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল নেতৃত্ব শূন্য করছেন। নিজ দলও যদি গুণী নেতৃত্ব হারায় তাহলে এদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়তে বাধ্য।
গত ২০ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকসহ জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত একটি খবর অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ‘একশানে সরকার : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের কোনও ছাড় নয়। কঠোর ব্যবস্থা নিতে এসপিদের কাছে পুলিশ সদর দফতরের ই-মেইল’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টটি তাৎপর্যপূর্ণ। কথাটি যদি সত্য হয় এবং দল-মত-নির্বিশেষে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পায় তা হলে শুধু সরকার নয় দেশের ইমেজও উদ্ধার হবে। একটি স্বাধীন দেশের সরকার বাইরের শক্তির উপর নির্ভর করে বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। নিজ দেশের জনগণের সমর্থন তার বেশি দরকার। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এই সমর্থন নিশ্চিত হয়। এই মুহূর্তে সরকারের জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
সম্প্রতি পুলিশ-র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতার নিহত হবার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনকে আলোড়িত করে তুলেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত কিছু কিছু নেতা বলবার চেষ্টা করছেন যে আমরা একশন শুরু করে দিয়েছি। নিজ দলের লোকদেরও ক্ষমা করছি না। কেউ কেউ আবার বলছেন যে, বিষয়টি লেফাফাদুরস্তির মতো হচ্ছে। এতোদিন বিরোধীদলীয় কর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার বানানো হয়েছে এবং এতে সরকার দেশে-বিদেশে বিরাট সমালোচনার মুখে পড়েছে। এখন নিজ দলের কিছু লোককে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার বানিয়ে তারা বিরোধী নিধনযজ্ঞকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। আমি বিচারবহির্ভূত যে কোন হত্যাকাণ্ডের বিরোধী। প্রতিটি গুলীর হিসাব থাকা দরকার। যারা অপরাধী তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে আইন অনুযায়ী জেল-ফাঁসি দেয়াই আইনের শাসনের চাহিদা। এর ব্যতিক্রম হলে দেশ মগেরমুল্লুক হয়ে যায়। আইনী প্রক্রিয়ার বাইরে মানুষের জীবন যাতে বিপন্ন না হয় তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। ছাত্রলীগ-যুবলীগের কেউ যদি অপরাধী হয় আইন অনুযায়ীই তাদের বিচার হওয়া উচিত এবং এ ক্ষেত্রে কারুর প্রভাব যাতে বিচারের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, অপরাধী কাউকে ছাড় না দেয়ার ঘোষণা এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এসপিদের পুলিশ সদর দফতরের ই-মেলকে আমি ইতিবাচক বলে মনে করি। অবশ্য এ ধরনের নির্দেশনা ও ঘোষণার কথা আমরা আগেও শুনেছি। কিন্তু তার আমল হতে দেখিনি। ফলে হতাশ হতে হয়েছে। আমি যুবলীগ-ছাত্রলীগের দেশব্যাপী হাজার হাজার অপকর্মের মধ্যে মাত্র দু’টি উল্লেখযোগ্য কেইস এখানে উল্লেখ করতে চাই। একটি হচ্ছে মতিঝিল মেট্রোপলিটান পুলিশ সদর দফতরের অতি নিকটে ৮৯ ও ৮৯/১, আরামবাগে। ডিসিসি দক্ষিণের একজন কাউন্সিলার ও যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী উপরোক্ত দু’টি হোল্ডিং -এ অবস্থিত বাংলাদেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের তিনটি ভবন জবর-দখল করে গত দেড় মাস ধরে ভাড়াটিয়াদের জিম্মি করে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা প্রদান, অপরাধীদের শাস্তি প্রদান এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাবার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা সেই সহযোগিতা এখনো পাচ্ছে না। দ্বিতীয় কেইসটি হচ্ছে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া বাজারের। সেখানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কয়েকটি হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি জবর-দখল করে রেখেছে। সেখানে থানা পুলিশ দখল মুক্ত করার জন্য গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়ে থানায় এসে মামলা করেছে। ইনসেটে এই মামলার বিবরণী পাঠকদের সুবিধার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো অতি সাম্প্রতিক। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে আইনের শাসন শক্তিশালী হবে। সরকারের দুর্নাম ঘুচবে।­
ড. মোঃ নূরুল আমিন

রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আইনের শাসনের বিকল্পও আইনের শাসন


আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে। আইনের শাসন তথা সুশাসনের সঙ্কট নিয়েও উদ্বিগ্ন নাগরিকরা। ‘চ্যালেঞ্জ আইনের শাসনে’ শিরোনামে প্রতিবেদনও মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরও প্রশ্ন এখন আইনের শাসন নিয়ে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারপক্ষের লোকজন বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। একই সঙ্গে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। অন্যায়-অপরাধ করলে ছাড় দেয়া হবে না দলের কাউকে। বর্তমানে এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর মনোভাব নিয়েছে।
সরকারপক্ষের লোকজন বলছেন, সরকার একই সাথে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করতে চায়। এটা খুবই ভালো কথা। অবশ্য কিছুদিন আগে একটা বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল উন্নয়ন আগে, না সুশাসন আগে? জনগণ আসলে উন্নয়ন ও সুশাসন দুটোই চায় এবং চায় একসাথেই। আর উন্নয়নেরও রয়েছে নানা রূপ। গুটি কয়েকের উন্নয়ন কিংবা দুর্বৃত্তদের উন্নয়ন জনগণের কাম্য নয়। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের সব মানুষের উন্নয়ন। শুধু ২২ পরিবারের উন্নয়ন চায়নি বলেই তো দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও জনগণ কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক উন্নয়নের রূপ দেখতে পায়নি। আসলে গণতান্ত্রিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুশাসন তথা আইনের শাসন। এর অভাবে প্রকৃত উন্নয়ন ও স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ এখনো সম্ভব হয়নি।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার এখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে বলা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বন্দুকযুদ্ধে সরকারি ঘরানার কিছু মানুষকে নিহত হতে দেখা গেছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে সঙ্কট মোকাবিলার কৌশল গ্রহণ না করে বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে সরকারের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। প্রসঙ্গত তারা অনুরাগ ও বিরাগের মনোভাব পরিত্যাগ করে ন্যায়ের চেতনায় সংবিধানের আলোকে দেশ পরিচালনার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে, সরকারদলীয় লোকদের এখন ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন? এমন পরিস্থিতি তো একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ঘরানার লোকজন প্রশাসনের প্রশ্রয় পেয়েছে, আইনের শাসনের বদলে তারা দলীয় শাসনের সুখ ভোগ করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন তো তারা আর কথা শুনতে চায় না- সরকারের ইমেজ নষ্ট হলেও না। অতএব, বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ক্রসফায়ার আইনের শাসনের বড় অন্তরায়। এতদিন বাংলাদেশের কোনো সরকারই এটা মানেইনি যে, ক্রসফায়ার হচ্ছে। তবে এখন নতুন মাত্রা দেখা যাচ্ছে, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই এটা করা হচ্ছে। সরকারের একজন মন্ত্রী এমনভাবেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন যে, দলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আবার সরকারের অন্য একটি অংশ প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করছেন। তবে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, আইন লঙ্ঘন করে এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে তার মূল্য সরকারকেই দিতে হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ-র‌্যাবের মধ্যে হত্যা করার একটি সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। এটি যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। অতএব, আমরা মনে করি, হুমকির পথ পরিহার করে এখন সরকারের উচিত হবে অনুরাগ-বিরাগ তথা দলকানা মনোভাব বর্জন এবং ন্যায়ের চেতনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়া। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আইনের শাসনের বিকল্পও আইনের শাসনই।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে এবার আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই গৃহ বিবাদ


আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা যে কত খারাপ কাজ করছে সেটা এখন আর বিরোধী দলকে বলতে হচ্ছে না। তাদের কাজের নিন্দা সরকারী দলই করছে এবং সরকার তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি কত খারাপ হলে এবং দলের লোকজন কত খারাপ কাজ করলে সরকারকে নিজের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোরতম অ্যাকশন নিতে হয় তার প্রমাণ গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত দু’টি লাশের ছবি। এই দু’টি ছবির একজন হলো আজিবর শেখ এবং আরেকজন হলো আরজু মিয়া। আরজু মিয়া বন্দুকযুদ্ধে খুন হয়েছে ঢাকার হাজারীবাগের গণকটুলীতে, ১৭ বছরের কিশোর রাজা মিয়াকে ঠান্ডা মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করার কারণে। আর আজিবর শেখ খুন হয়েছে নাজমা বেগমের গর্ভস্থ সন্তানের চোখে গুলী করার জন্য। এই লেখাটি শেষ করার পর আরেকটি ক্রস ফায়ারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত বুধবার কুষ্টিয়ায় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের নেতা ইসমাইল হোসেন পাঞ্জের এবং যুবলীগ নেতা সবুজকে হত্যা করেছিলো। জাকির নিহত হওয়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩ জন নিহত হলো।
ছাত্রলীগ যে কি  কাজ করছে সেটি খোলা মেলা বর্ণনা করেছেন যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র কারো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় না। ছাত্ররা বক্তব্য শুরু করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি দিয়ে, তারপর তারা জাতীয় রাজনীতির কথা বলে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কিছু বলে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বার বার ছাত্রলীগকে এই কথাগুলো বলেছি। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের কান পর্যন্ত কথাগুলো গেলেও চেতনায় যায় না। কেন ডাকসু নির্বাচন বন্ধ? এত বছরে ৪৮ জন ভিপি-জিএস হতো। ডাকসুসহ সারা বাংলাদেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এমনটা হতো না। ছাত্র রাজনীতিতে যে অসুস্থ ধারা তা পরিবর্তন হয়ে সুস্থতা ফিরে আসত। সুবাতাস বইত।’ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এখানে না এলেও পারতেন। প্রত্যেক জিনিসের একটা নিজস্বতা ও স্বকীয়তা আছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও এখানে নির্দলীয় শিক্ষার্থীরা থাকে। আপনারা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আসলে নিরপেক্ষতা হারায়।’ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত নেতাদের বিলবোর্ড প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক নেতাকে আমরা চিনিও না। অনেক নতুন মুখ আছে। বিলবোর্ড দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। আসলে তারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে না। বঙ্গবন্ধুর উসিলায় আত্মপ্রচার করে। তোমাদের কর্ম বঙ্গবন্ধুকে বড় করবে না। তোমাদের অপকর্ম বঙ্গবন্ধুকে খাটো করবে।’ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ৪০ বছর পরে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কাঁদো বাঙালি কাঁদো ব্যানার দেয়া ঠিক না। কারণ, বঙ্গবন্ধু একটি সাহসের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধু একটি বিপ্লবের নাম।
যখন লেখাটি এই পর্যায়ে এসেছে তখন অনলাইনে একটি খবর দেখলাম। খবরটি বড় হৃদয় বিদারক। খবরটির শিরোনাম, ‘লক্ষ্মীপুরে শিশুকে পিটিয়ে হত্যা’। খবরে বলা হয়েছে, লক্ষ্মীপুরে দোকান মালিক কর্তৃক মোহাম্মদ রমজান (১২) নামে এক শিশুকে রড দিয়ে পিটিয়ে  হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজানের মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ লক্ষ্মীপুরের বাগবাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত রমজান উত্তর বাঞ্ছানগর এলাকার তাজল ইসলামের ছেলে। নিহতের পরিবার জানায়, স্থানীয় আলীর দোকানে শিশু রমজান কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রমজানের মাথায় দুইটি দুধের কার্টুন তুলে দেয়  দোকান মালিক। ভার সইতে না পারায় রমজানের মাথা থেকে ওই কার্টুনগুলো পড়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানের শার্টারের রড দিয়ে শিশু রমজানকে মারধর করে দোকানের মালিক আলী। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে রমজানকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর মঙ্গলবার তার মৃত্যু হয়।
॥দুই॥
দেশে শিশু হত্যার ধারাবাহিকতায় এটি গত দেড় মাসে ৫ম ঘটনা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের আমলে শিশু কিশোরের বর্বর ও নৃশংস হত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত দেড় মাসে এটি নিয়ে ৫জন শিশু কিশোরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। গত ৪ জুলাই সিলেটে সামিউল আলম রাজন নামে এক শিশুকে মারতে মারতে মেরে ফেলা হয়। চলতি মাসের ৩ তারিখ রাতে খুলনায় মোঃ রাকিব নামে ১২ বছরের এক শিশুকে মধ্য যুগীয় কায়দার চেয়েও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকরা রাকিবের গুহ্যদ্বারে পাম্প মেশিন ঢুকিয়ে ক্রমাগত পাম্প করতে থাকে। একপর্যায়ে তার তলপেটে বাতাস ঢুকে নাড়ি ভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ফুসফুস বিদীর্র্ণ হয়। ফলে সে মৃত্যুবরণ করে। এই হত্যাকান্ডের ১ দিন পর গত ৪ জুলাই মাদ্রাসার ছাত্র ১০ বছর বয়সী রবিউল আলমের চোখ প্রথমে উপড়ে ফেলা হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে শেষ করে দেওয়া হয়। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই যে, সে নাকি মাছ চুরি করেছে। গত সোমবার ১৭ই আগস্ট হাজারীবাগ ছাত্রলীগ প্রধান আরজু মিয়া ১৭ বছরের কিশোর রাজা মিয়ার মাথায় ছিদ্র করে তাকে মেরে ফেলে। সব শেষে গত ১৯ আগস্ট বুধবার লক্ষ্মীপুরে ১২ বছরের শিশু রমজানকে তার দোকানের মালিক আলী রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত ১৬ই আগস্ট রবিবার রাতে র‌্যাব-এর ক্রসফায়ারে আরজু মিয়া নিহত হয়েছে। গত ২৩ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখের গুলিতে এক মায়ের পেট ছিদ্র হয়। ঐ মা তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গুলি তার পেট ভেদ করে গর্ভস্থ শিশুর চোখে আঘাত করে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করে গর্ভের সন্তানকে বের করে আনা হয়। এই মুহূর্ত পর্যন্ত শিশুটি জীবিত এবং সুস্থ আছে। এই কন্যাসন্তানটির নাম দেওয়া হয়েছে সুরাইয়া। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত গত ১৬ই আগস্ট রোববার রাতে পুলিশের ক্রস ফায়ারে আজিবর শেখ নিহত হয়েছে। এখন লক্ষীপুরের এই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেটি দেখার জন্য জনগন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
॥তিন॥
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ‘মানবজমিন’ একটি তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য মোতাবেক, ৬ মাসে খুন ২০৮০, ছিনতাই-ডাকাতি ৫৩২৫, অপহরণ ৪০০, গণপিটুনিতে নিহত ৭৭, ৭ মাসে ধর্ষণ ৩৬৬, রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৫৩, আহত ৪৫০০ (তথ্য সূত্র: মানবজমিন, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
আওয়ামী লীগ রাজত্বকালে বিগত সাড়ে ৩ বছরে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৯৬৮ টি। ২০১২ সালে ২০৯ টি, ২০১৩ সালে ২১৮ টি, ২০১৪ সালে ৩৫০ টি, ২০১৫ সালে ১৯১ টি (জুলাই পর্যন্ত) (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ৭ আগস্ট ২০১৫)। আওয়ামী রাজত্বের প্রথম সাড়ে ৫ বছরে গণ পিটুনিতে নিহত হয়েছে ৭১১ জন। ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ১৩৪ জন, ২০১২ সালে ১২৬ জন, ২০১৩ সালে ১২৮ জন, ২০১৪ সালে ১২৭ জন, ২০১৫ (জুন মাস) ৬৯ জন।  (তথ্য সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, ৭ আগস্ট ২০১৫)।
ধর্ষণের ক্ষেত্রেও আওয়ামী সরকারের আমলে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ১লা আগস্ট থেকে ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত এই ১৩ দিনে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে ৬ নারীকে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম ৬ মাসে নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৭৮ জন। এই বছরের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৪ জন।
গত ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের মৃত্যু দিবস পালন করার জন্য যুব লীগের এক নেতা চাঁদপুরের কচুয়া মাধ্যমিক স্কুলের হেড মাস্টারের কাছে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। হেড মাস্টার সাহেব চাঁদা দিতে অপারগ হওয়ায় ঐ যুব লীগ নেতা হেড মাস্টারকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। এই সময় আরেক জন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে পড়ায় যুব লীগ নেতার আক্রমণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফলে এই শিক্ষকের ওপর তারা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং রাতে এক দল ছাত্র লীগ ও যুব লীগ কর্মী ঐ শিক্ষকের বাড়িতে হামলা করে এবং তার বাড়িটি তছনছ করে দেয়। এসব ক্রমাগত হামলার প্রতিবাদে পরদিন ১৬ আগাস্ট রবিবার স্কুলের ছাত্ররা মিছিল করে এবং মানববন্ধন রচনা করে। ছাত্রলীগ ও যুব লীগের কর্মীরা ঐ মানববন্ধনের ওপরও প্রচন্ড হামলা চালায়। এর ফলে ৪০ জন ছাত্র আহত হয়। এদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা গুরুতর এবং তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ৯৬-২০০১ মেয়াদে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্র লীগ নেতা ঐ বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর বীর দর্পে ঘোষণা করে যে এটি নিয়ে তার ধর্ষণের সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো।
॥চার॥
আমাদের সময় ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল গত ১৯ আগস্ট বুধবার ছাত্রলীগের দুই নেতার ক্রস ফায়ারে মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছে, “এতদিন বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীলসমাজ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ভাষায় কথা বলে আসছিলেন ক্রসফায়ার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তেমনি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ আরজু মিয়া হত্যার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ মিডিয়াকে বলেছেন, বিচার বহির্ভূত এ হত্যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে এর জবাবও দিয়ে দেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুত এই প্রবণতা কমে যাবে। ইতিমধ্যেই তারা বার্তা পেয়ে গেছে। এর আগে তারবার্তা চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে”।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের একটি ক্ষমতাসীন মহল কোনো কোনো ক্রস ফায়ারের বিরোধিতা করছেন। এদের একজন হলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি। জনাব তাপস শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মনির পুত্র। শেখ মনির আরেক ভাই হলেন, শেখ ফজলুল করীম সেলিম এমপি। সেই ব্যারিস্টার তাপস একটি বাংলা দৈনিকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আরজু নিরীহ-নিরপরাধ ছেলে। তাকে র‌্যাব ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে। ওখানে সেদিন তার পরিবারই বলছে যে সে মাদকাসক্ত। সে চুরি করেছে, তাকে হয়তো বা লোকজন একটু মারধর করেছে। পরে তার (রাজার) আত্মীয় শামীম তাকে বেশি মারধর করেছে। শামীম বুকের ওপর এমনভাবে ছেলেটাকে মেরেছে যে পরে সে মারা গেছে। ওটা একটা দুর্ঘটনা। আমরা  এ জন্য দুঃখিত। এখানে আরজুর কোনো অপরাধ থাকলে তার জন্য আইন ছিল, বিচার হতো। কিন্তু এরকম একটা ছেলে, যার কোন ব্যাড রেকর্ড নাই, কোনো মামলা-জিডি পর্যন্ত নাই, সেই ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সকাল বেলায় মেরে দিল। এটা কোনো কথা হতে পারে? এটা তো কোনো যৌক্তিক ঘটনা হতে পারে না।’ এটিকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে র‌্যাব যে দাবি করছে, সে বিষয়ে সংসদ সদস্য তাপস বলেছেন, এটা (বন্দুকযুদ্ধ) একটা তথাকথিত গৎবাঁধা কথা। এটার কোনো মানে হয় না। এটা বিশ্বাসযোগ্যও না। এরকম একটা নিরীহ ছেলের মৃত্যু আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। প্রতিবাদ জানিয়েছে সকলে। আমরা এটার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি তো মনে করি, এটা নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনা (সাত খুন) ঘটেছিল সেরকম ঘটনারই পুনরাবৃত্তি, এছাড়া কিছু না”।
আমরা সব সময়ই বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিরোধী। যে তিন জন ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেটি অত্যন্ত গুরুতর। যদি বিচারে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। সুতরাং সংক্ষিপ্ততম সময়ে বিচার করে তাদেরকে দণ্ড দিলে কারও কিছু বলার থাকবে না। এ কথা সত্যি যে, যে গুরুতর অপরাধ তারা করেছে (প্রমাণ সাপেক্ষে) সেটি ক্ষমার অযোগ্য। শুধু এই তিন জন নয়, আরো যে সব শিশু হত্যা এবং নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলির প্রত্যেকটির নিরপেক্ষ বিচার হতে হবে। সেই বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলা দরকার। শুধু আইন করে, ক্রস ফায়ার করে বা অন্য রকম শাস্তি দিয়ে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তাই বলে আমরা আইন প্রয়োগ এবং বিচারকে স্থগিত করতে বলছি না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক। পাশাপাশি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। এই জন্য শুধু নৈতিক শিক্ষা নয়, পবিত্র ইসলামের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের এই ভয়াবহ নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে বাঁচার কোনো উপায় নাই। সুতরাং ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজে ইসলামী অনুশাসনের ভিত্তিতে নৈতিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে হবে।

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ভারতের নেহরু থেকে সিকিমের লেন্দুপ দর্জি


ব্রিটিশ শাসনমুক্ত স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুর একটি স্বপ্ন বা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বিশেষ করে বাংলাদেশে নতুন পর্যায়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। অমন আলোচনা অবশ্যই বিনা কারণে শুরু হয়নি। আলোচনার পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সকল মহলে উদ্বেগ-আশংকাও প্রবলভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। কেন- সে প্রশ্নের উত্তর এই নিবন্ধ পড়লে পাঠকরা নিজেরাই পেয়ে যাবেন। সেদিকে যাওয়ার আগে পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু সম্পর্কে সংক্ষেপে জানানো দরকার। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশরা বিদায় নেয়ার পর এই নেহরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। নামে গণতন্ত্রের পূজারী হলেও পদটিতে ছিলেন তিনি ১৯৬৪ সালে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত। ওই সময়কালে পাঁচ বছর পর পর জাতীয় তথা লোকসভা ও রাজ্যসভার নির্বাচন নিয়মিতভাবেই হয়েছে, কিন্তু মিস্টার নেহরুকে কেউ সরাতে পারেননি। দুর্দান্ত ক্ষমতাধর নেহরুর ক্ষমতালিপ্সাও যথেষ্টই ছিল। বাংলাদেশের স্টাইলে পারিবারিক রাজত্বের ভিত্তিও তিনিই স্থাপন করে গেছেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে শত শত যোগ্য, ত্যাগী, সংগ্রামী ও অভিজ্ঞ নেতা থাকা সত্ত্বেও নিজের মেয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে তিনি দলের প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন। সে অবস্থানের সূত্র ধরেই ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ইন্দিরার পর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তার ছেলে রাজিব গান্ধী। কংগ্রেসের বর্তমান নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ। এখন প্রস্তুতি চলছে ইন্দিরার নাতি ও সোনিয়া-রাজিবের ছেলে রাহুল গান্ধীকে দলের নেতৃত্বে আনার এবং সম্ভব হলে প্রধানমন্ত্রী বানানোর। গত বছরের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটায় রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হতে না পারলেও ভারত এখনো নেহরু ডাইনেস্টির রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। ইতিহাসের এই প্রেক্ষাপটে তাই বলা যায়, জওয়াহেরলাল নেহরু সাধারণ কোনো নেতা ছিলেন না। ‘মহাত্মা’ নামে পরিচিত মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধীর আবির্ভাব না ঘটলে ভারতীয়দের জাতির পিতার আসনটিও নেহরুর দখলেই চলে যেতো। সে যোগ্যতা তার ছিল।
এবার পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরুকে টেনে আনার কারণ সম্পর্কে বলা যাক। বিটিশরা বিদায় নিলেও মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান যাতে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে সে ব্যাপারে গান্ধী ও নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস এবং ভারতীয় হিন্দুরা শেষ পর্যন্তও চেষ্টা করেছিল। দাঙ্গার অড়ালে তাদের হাতে হাজার হাজার মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুর অসহায় মৃত্যু ঘটেছে। এত কিছুর পরও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় দলের ভেতরে-বাইরে তীব্র নিন্দা-সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন গান্ধী ও নেহরু। মিস্টার গান্ধীকে তো মেরেই ফেলা হয়েছিল। অমন এক অবস্থার মধ্যেই নেহরু তার ঐতিহাসিক ভিশন বা স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘ভারত মাতার’ এই বিভক্তি নিতান্তই সাময়িক ব্যাপার। ভারতকে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ এক রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে- ‘ভারত মাতা’ অখ-ই থাকবে। নেহরুর এ ‘ভিশন’কে দলীয় প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করেছিল কংগ্রেস। এটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের মাস ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নেতৃত্বে ‘ভারত মাতাকে’ অখণ্ড তথা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কর্মকাণ্ডও শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের ঢাকাকেন্দ্রিক নতুন প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ছয় মাসের জন্য কোলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছিলেন, ছয় মাসের প্রশ্ন ওঠে না, ছয় ঘণ্টার জন্যও ঢাকাকে কোলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আগ্রহী পাঠকরা এসব বিষয়ে জানার জন্য আবুল মনসুর আহমদের ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ দুটি পড়ে দেখতে পারেন। দেখবেন, পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে কতটা ভয়ংকর ও হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করতেন নেহরুসহ ভারতের হিন্দু নেতারা।   
এভাবেই শুরু হয়েছিল। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনো। পাকিস্তানের ভাংগন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভব ঘটার পর ভারতীয়দের তৎপরতা সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয়দের সম্প্রসারণবাদী নীতি-কৌশল ও অসংখ্য কর্মকা-ের উল্লেখ করা সম্ভব। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ মোদীর ঢাকা সফরকেন্দ্রিক আলোচনা এখনো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বের সঙ্গেই চলছে। মিস্টার মোদীর এ সফরকালে স্বাক্ষরিত ডজন ডজন চুক্তি ও সমঝোতাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ আদৌ কিছু পেয়েছে কি না, নাকি নেহরুর সেই ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভারতই সবকিছু নিয়ে গেছে- এসব প্রশ্নও প্রাধান্যে উঠে এসেছে। উদ্বিগ্ন দেশপ্রেমিকরা প্রসঙ্গক্রমে ‘সিকিম সিনড্রম’-এর কথা তুলেছেন। সেই সাথে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে লেন্দুপ দর্জির নামও। এই  লেন্দুপ দর্জি ছিলেন হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র সিকিমের শেষ প্রধানমন্ত্রী। সিকিমের ‘মির জাফর’ হিসেবে নিন্দিত ও ঘৃণিত রাজনীতিক লেন্দুপ দর্জির পরিণতির কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেকে তার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো কোনো বিশেষজনকে লেন্দুপ দর্জির ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
হঠাৎ কেন ‘সিকিম সিনড্রম’ নিয়ে আলোচনা প্রাধান্যে এসেছে এবং লেন্দুপ দর্জির নামই বা কেন বারবার উঠে আসছে তার কারণ জানার জন্য ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সিকিমও স্বাধীন রাষ্ট্রের অবস্থান অর্জন করেছিল। গায়ের জোরে হায়দরাবাদসহ ক্ষুদ্র কয়েকটি রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করলেও কৌশল হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু সিকিমের স্বাধীনতা হরণ করা থেকে বিরত ছিলেন। অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছিল ১৯৬৮ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং গঠিত হওয়ার পর। ‘র’ সিকিম ও ভুটানকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৬৮ সালেই জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়ে যাওয়ায় ভুটান ‘র’-এর হাতছাড়া হয়ে যায়। ‘র’ তখন সিকিমের দিকে হাত বাড়ায় এবং দালাল হিসেবে বেছে নেয় রাজনীতিক লেন্দুপ দর্জিকে। লেন্দুপ ছিলেন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস (সিএনসি)-এর নেতা। ‘র’-এর প্ররোচনায় সিএনসি রাজা চোগিয়ালের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সিকিমবাসীকে বোঝানো হয়, রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো গেলেই তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। গবেষণায় ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিএনসির সে আন্দোলনে ‘র’ প্রায় প্রকাশ্যেই অংশ নিয়েছিল। হাজার হাজার ভারতীয় সেনাকে সে সময় মিছিলে ও সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু সিকিমবাসীর মতো একই পার্বত্য চেহারার ছিল বলে তাদের পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়নি।
রাজতন্ত্র বিরোধী ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সিএনসি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দেশটির সংসদে ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টিতে বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী হন লেন্দুপ দর্জি। নিরংকুশ এ বিজয়কেই লেন্দুপ দর্জি ভারতের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। সংসদের মাধ্যমে প্রথমে তিনি রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়েছিলেন সিকিমকে ভারতের রাজ্য বানানোর পদক্ষেপ। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১৪ এপ্রিল একটি লোক দেখানো গণভোটের আয়োজন করা হলেও ‘র’-এর সর্বাত্মক হস্তক্ষেপ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সাধারণ সিকিমবাসী ভোট দেয়ারই সুযোগ পায়নি। ফলে তথাকথিত গণভোটে ভারতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব পাস হয়েছিল। ক’দিন পর, ১৯৭৫ সালেরই ২৬ এপ্রিল সিকিমের সংসদ সিকিমকে ভারতের রাজ্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছিল। সে অনুরোধের ভিত্তিতে সিকিমকে ভারতের ২২তম রাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুগ্রহে সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লেন্দুপ দর্জি। এভাবেই জাতীয় পর্যায়ের একজন জনপ্রিয় নেতার বিশ্বাসঘাতকতায় স্বাধীনতা খুইয়েছিল সিকিম। সর্বাত্মকভাবে ভারতের দালালি করলেও লেন্দুপ দর্জিকে অবশ্য মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হতে হয়েছিল। মাত্র চার বছরের মধ্যে ১৯৭৯ সালেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে সিকিমবাসী তাকে ঘৃণার সঙ্গে বিতাড়িত করেছিল। জনগণ তাকে এতটাই ঘৃণা করেছে যে, মৃত্যুর সময়ও লেন্দুপ দর্জি সিকিমে আসতে পারেননি। ভারতের কলিমপঙে ২০০৭ সালে তাকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। মৃত্যুর আগে দেয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলে গেছেন, দিল্লি অর্থাৎ ভারত সরকার তাকে আগের মতো সম্মান দেখানো দূরে থাকুক, সামান্য পাত্তাও দেয় না। দ্বিতীয় সারির কোনো ভারতীয় নেতার সঙ্গে কথা বলার জন্যও তাকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়।
বর্তমান বাংলাদেশে কেন সিকিম এবং লেন্দুপ দর্জিকে নিয়ে জোর আলোচনা চলছে তার কারণ সম্ভবত পৃথকভাবে উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সর্বশেষ একতরফা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত লক্ষ্য করলেই আশংকার কারণ পরিষ্কার হয়ে উঠবে। সেবার লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে ‘রোডম্যাপ’-এর পটভূমি রচনা করা হয়েছিল। সবশেষে শেখ হাসিনার ‘আন্দোলনের ফসল’ ক্ষমতা দখলকারী মইন-ফখরুদ্দিনরা এমন এক নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন যে নির্বাচনে মিনিটে ১৭ জন পর্যন্ত ভোটার ভোট দিয়েছে বলে দেখানো হয়েছিল। এ ছিল এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কারণ, নিজের ভোটার নাম্বার ও নাম-ঠিকানা জানিয়ে ও মুরি বইতে স্বাক্ষর দিয়ে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করা, আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগানো, পোলিং বুথের ভেতরে যাওয়া, পছন্দের প্রার্থীর ঘরে সিল মারা এবং ব্যালট পেপার ভাঁজ করে স্বচ্ছ বাক্সে ফেলা পর্যন্ত কাজগুলো সারতে হলে কম করে হলেও পাঁচ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগার কথা। সুতরাং প্রতি মিনিটে ১৭ জন করে ভোটারের পক্ষে ভোট দেয়া একেবারেই সম্ভব নয়। প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার ভোটের ব্যবধানও চৌর্যবৃত্তির বিষয়টিকে পরিষ্কার করেছিল।  ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এক কোটি ৫৮ লাখ এবং বিএনপি এক কোটি ৪২ লাখ ভোট পেয়েছিল। ব্যবধান ছিল ১৬ লাখ ভোটের। এর পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই কোটি ২৩ লাখ এবং বিএনপি দুই কোটি ২৮ লাখ ভোট পেয়েছিল। ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখ ভোটের। এটাও স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ২০০৮-এর নির্বাচনে দুই প্রধান দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান দেখানো হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ! দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ভোট যেখানে বেড়েছে এক কোটি ১৯ লাখ, বিএনপির সেখানে বেড়েছিল মাত্র তিন লাখ! এত বিরাট ব্যবধান শুধু অস্বাভাবিক নয়, অগ্রহণযোগ্যও। কিন্তু সেটাই ঘটানো হয়েছিল। ঠিক কোন দেশ এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেছিল সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষও জেনে গেছে অনেক আগেই। সে দেশের সে ঋণই শোধ করা হচ্ছে  বিগত প্রায় সাত বছর ধরে।
এরই ধারাবাহিকতায়ই আয়োজিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিল অনেক আগে থেকে। মোটামুটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের পতন ঘটবে বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করেছে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পর্কিত রায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পাশাপাশি সংবিধানে এমনভাবেই নানা সংশোধনী আনা হয়েছে যার ফলে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার বাইরে কারো পক্ষেই নির্বাচনে জিতে আসা এবং সরকার গঠন করা সম্ভব হবে না। এতকিছুর পরও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি ক্ষমতাসীনরা। তার সরকার তাই র‌্যাব পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদেরও মাঠে নামিয়েছিল। গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালানো হয়েছে গুম ও হত্যার অভিযান। একযোগে প্রতারণার কৌশলও নিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনরা। সংলাপ ও সমঝোতার আড়ালে একদিকে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছেন, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ঠেলে দিয়েছেন নির্বাচনের বাইরে। ১৫৩ জন এমপিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ করার রেকর্ড গড়েই থেমে যাননি তারা, একই সঙ্গে ভোট জালিয়াতিও করেছেন যথেচ্ছভাবে। পাঁচ থেকে সাত শতাংশের বেশি ভোট না পড়লেও দাবি করেছেন, ভোট নাকি পড়েছে ৪০ শতাংশ! স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কথাটা এমনভাবে বলেছেন, যেন ওটা ৪০ নয়, ৮০ শতাংশ! অনন্দে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্যই করেননি যে, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়ার মধ্যে আর যা-ই হোক, গর্বের কিছু থাকতে পারে না। কারণ, ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়ার অর্থ হলো, বাকি ৬০ শতাংশ ভোটার তাকে ভোট দেননি। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই অংকে এতটা কাঁচা নন যে ৪০ এবং ৬০-এর মধ্যকার পার্থক্যটুকু তিনি বুঝতে পারবেন না। তা সত্ত্বেও একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায় ‘অথর্ব’ ও ‘মেরুদণ্ডহীন’ নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য এবং সম্ভবত তারই নির্দেশে ৩৯ দশমিক ৮৯ শতাংশের একটা হিসাব দাঁড় করিয়েছে, অন্যদিকে লজ্জা-শরমের মুণ্ডু চিবিয়ে খেয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও সে হিসাবটিকেই আঁকড়ে ধরেছেন। জনগণকেও তিনি সে কথাটাই শুনিয়ে ছেড়েছেন।
দেশপ্রেমিকদের মধ্যে উদ্বেগ-আশংকাও ছড়িয়ে পড়েছে এই মিথ্যাচারের কারণে, সেজন্যই প্রাধান্যে এসেছে ‘সিকিম সিনড্রম’ ও লেন্দুপ দর্জির প্রসঙ্গ। কারণ, এ শুধু প্রতিপক্ষগুলোর অভিযোগ নয়, ঘটনাপ্রবাহেও প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীনরা এগোচ্ছেন দেশকে একদলীয় শাসনের অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। সংবিধানের আড়াল নিয়ে ক্ষমতাসীনরা আসলে সেটাই নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতে দেশে গণতন্ত্রই শুধু ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে না, জনগণের ওপর আবারও চেপে বসতে পারে বাকশালের মতো একদলীয় শাসন। আর গণতন্ত্র যদি না থাকে তাহলে এক পর্যায়ে টান পড়তে পারে দেশের সমগ্র অস্তিত্ব নিয়েও। পরিণতিতে বিপন্ন হতে পারে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এখানেই এসেছে সিকিম এবং লেন্দুপ দর্জির বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। এ কথাটা বলে জনগণকে সাবধান করে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়াও। তিনি  সিকিম এবং লেন্দুপ দর্জির উদাহরণ দিয়ে যা বোঝানোর তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।  লেন্দুপ দর্জির পরিণতি ও সিকিমের ইতিহাস থেকে বেছে বেছে বিশেষ একজনকেই কেন তিনি  শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তার কারণ নিয়ে সম্ভবত কথা বাড়ানোর দরকার পড়ে না।
এতক্ষণে পাঠকরা সম্ভবত নিবন্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। শেষ করার আগে শুধু এটুকু জানিয়ে রাখাই যথেষ্ট যে, দেশপ্রেমিকরা অবশ্য বাংলাদেশকে কারও পক্ষে গিলে খাওয়ার বিষয়টি সহজে সম্ভব হবে বলে মনে করেন না। কারণ, মওলানা ভাসানী থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত এমন অনেক নেতাই এদেশে রাজনীতি করে গেছেন, যারা কখনো সম্প্রসারণবাদী শক্তির কাছে মাথা নত করেননি। কথাটা ভারতীয়দের মতো লেন্দুপ দর্জি হতে ইচ্ছুকদেরও নিশ্চয়ই জানা রয়েছে।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মুক্ত মতামত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে


সংবাদ মাধ্যমের সত্যিকারের কিছু স্বাধীনতা প্রথম আসে যুক্তরাষ্ট্রে। তাও ক্ষণস্থায়ী হয়। কারণ শিগগিরই সংবাদ মাধ্যমগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠীর মুখপাত্র হবার কারণে, তাদের স্বাধীনতার স্বরূপ বিভিন্নœভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। তবুও মার্কিন সংবাদমাধ্যম তাদের অভ্যন্তরীণ তথ্য প্রবাহে নির্মোহতা আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তথ্য প্রবাহের সংকট তাতে কখনোই যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয় অনেকগুলো কালজয়ী ছবি, যেখানে শৃঙ্খলিত মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ও নিয়ন্ত্রিত সংবাদ প্রবাহের অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরে মার্কিনীদের পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন শক্তিতে তাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। এখানে তারা তাদের স্বদেশের ব্যাপারে নিরপেক্ষ, নির্মোহ হবার চেষ্টা করেছে। কিšুÍ সারা বহির্বিশ্বের জন্য তারা ব্যবহৃত হয় বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদের তথ্য হাতিয়ার হিসেবে।
সংবাদপত্র চলে তথ্য বিক্রি করে। পাঠক যিনি, তিনি তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংবাদপত্রে খোঁজেন। সেই তথ্য পাওয়ার জন্য পয়সা দিয়ে তারা সংবাদপত্র কিনেন। এভাবে একটা বিনিময় মূল্যের পরিবর্তে পাঠককে যে তথ্য দেয়া হচ্ছে, সেই তথ্য সঠিক হতে হবে। না হলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। অর্ধসত্যের জায়গা সংবাদপত্রে নেই। কারণ, অর্ধসত্য পাঠককে মিথ্যা ও বিভ্রান্তির দিকে ধাবিত করে। দেশ ও সমাজের কাজে লাগবে সে রকম তথ্য অগ্রাধিকার দিয়ে সংবাদপত্রে পরিবেশন করা উচিত। দেশ ও সমাজের কাছে সাংবাদিকরা এভাবেই দায়বদ্ধ।
তথ্য সঞ্চালক হিসেবে সংবাদপত্রের ভূমিকা অসামান্য। এটা পাঠকদের জ্ঞানদান ও সূক্ষ্ম সমালোচনা করতে সাহায্য করে। সংবাদপত্রের তথ্য সঞ্চালকের ভূমিকা কেবলমাত্র স্পেশালাইজড রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, সমকালীন বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে সংবাদপত্রের মাধ্যমে পাঠক তা জানতে পারছে। এছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পাঠকের সামনে এমন সব দ্বার উন্মোচন করে যা হয়তো সংবাদপত্র না থাকলে তাদের কাছে চিরদিনই অজানা ও অচেনা থেকে যেত।
তৃতীয় বিশ্বের সাংবাদিকগণ নিবর্তনমূলক আইনের আওতায় নির্যাতিত হন; আর প্রথম বিশ্বের সাংবাদিকরা (সম্মানজনক ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে) লজ্জিত হচ্ছেন, অন্যায়কে হজম করছেন অথবা আত্মসমর্পণ করছেন আইন ছাড়াই।
মিডিয়াপ্রেমী হওয়া অতটা সহজ নয়। উল্টাপাল্টা রিপোর্ট লিখে সংবাদপত্র যে কাউকে হয়রানি করতে ও যন্ত্রণা দিতে পারে। আবার ব্যক্তিগত জীবনের পর্দা সরানোর মাধ্যমে কারও জীবনকে একেবারে শেষও করে দিতে পারে। আসলে অল্প-বিস্তর ক্ষতি ছাড়া মহৎ কল্যাণকর কোন কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়- এই শাশ্বত সত্যটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিষয়টির সঙ্গেও প্রচ্ছন্নভাবে জড়িত। সংবাদপত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না। এই বোধ তার অবশ্যই থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আসবে সুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টিও।
পাঠকদেরও পরিস্কার ধারণা থাকা উচিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে। তাদেরকেও বুঝতে হবে কেন ও কিভাবে সংবাদপত্র মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করছে, জনসচেতনতা তৈরি করছে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখছে। বহুবিধ কারণেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা জরুরি।
দুর্যোগকালে সংবাদপত্রে প্রতিফলিত জনগণের মতামত জোরালো রাজনৈতিক ইস্যু তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আরও যা করে তা হচ্ছে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য এটা এক ধরনের প্রতিরক্ষাব্যুহ সৃষ্টি করে যা মানুষের নিরাপত্তা প্রদানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কারণে শাসকগোষ্ঠীকে অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সংবাদপত্রে জনগণ কর্তৃক সরকারের সমালোচনা এবং স্বাধীনতা সংবাদপত্রের সঙ্গে অঘোষিত দ্বন্দ্ব সরকারকে বরং সাহায্য করে যথাসময়ে সিদ্ধান্তÍ ও পদক্ষেপ নিতে। এটা তাই কোন অবাক ব্যাপার নয়, যখন স্বাধীন সংবাদপত্র ও সরকারের মধ্যে সুন্দর সমঝোতার কারণে দেশের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ এড়ানো যায়।
আমাদের দেশে গণমাধ্যম যে ভূমিকা পালন করছে তা জনগণের ভরসার জায়গা। কারণ, আমাদের দেশে যখন যে দলের সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তারা তাদের ইচ্ছামতো অনেক কাজ করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে সরকারের জবাবদিহি পরিলক্ষিত হয় না। গণমাধ্যম সরকারের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে জবাবদিহির একটি ক্ষেত্র তৈরি করে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির যুগেও সংবাদপত্র শিল্পসহ সব গণমাধ্যমকে নানা পন্থায় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিকদের মতে, একসময় সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়া কঠিন ছিল। ঢাকা শহরে সাংবাদিকদের বাড়িওয়ালারা বাসা ভাড়া দিতে চাইতেন না। সে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটেছে।
বাংলাদেশে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ওপর আঘাত নতুন নয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর আঘাত এসেছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হরিষ চন্দ্র জেল খেটেছেন।
অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের দায়িত্ব। এখন সংবাদপত্রের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা। কারণ, আগে সংবাদপত্রের ওপর আঘাত এলে সবাই মিলে প্রতিহত করতো। সেই জায়গা এখন নেই। সাংবাদিক ইউনিয়ন এখন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো আন্দোলন করতে পারছে না। এটা খুবই দুঃখজনক।
একজন সাংবাদিক আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘......তারপরও কেন বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে; সাংবাদিকতার প্রত্যাশিত মান বাড়ছে না? সাংবাদিক সমাজের আত্মসম্মান রক্ষা এবং পেশার উৎকর্ষ সাধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যথাযথভাবে নিতে পেরেছে? সম্পাদকদের সংগঠন, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনগুলো কি এ নিয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? নাকি নিজেদের মধ্যে বিভেদ, দলাদলি, সাংবাদিকতার নামে নিজের পছন্দের রাজনৈতিক দলের অনুগত বাহিনীতে আমরা পরিণত হয়েছি? প্রবাদে রয়েছে কাক কাকের গোশত খায় না। কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধা, দলাদলি এবং ব্যক্তিস্বার্থে সাংবাদিকরা নিজ কমিউনিটির গোশত গোগ্রাসে গিলতে দ্বিধা করেন না। রাজনৈতিক বিশ্বাস আর কিছু বৈধ-অবৈধ সুবিধা পাওয়ার আশায় নিজেরা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছি; তেমনি দলকে খুশি করার মানসিকতা নিয়ে কলম ধরছি। এতে করে মিডিয়া রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা পালন থেকে বিচ্যুত হচ্ছে তেমনি আমরা সাংবাদিকরাও জাতির বিবেকের দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। এ অবস্থায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সৃষ্টি হয়েছে কর্পোরেট সাংবাদিকতা। এ সাংবাদিকতার নামে গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের বদলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ রক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিছু মিডিয়া।  (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব ৩ জুলাই ২০১৪)
বাংলাদেশে সংবাদপত্রকে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমত, সরাসরি সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, এটাকে প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। বাকি দুটো পরোক্ষ অথচ অধিকতর কার্যকরী ব্যবস্থা। প্রথমত: বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণাদেশ আরোপ এবং দ্বিতীয়ত: সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ দ্বারা সংবাদপত্রের আর্থিক ক্ষমতায় আঘাত হানা।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বিকাশের ইতিহাসটা সংগ্রামী ইতিহাস। বিশেষ করে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের সিভিল শাসনেই এই সংগ্রাম তীব্রতর হয়েছে। প্রথম দফায় এই সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৭২-১৯৭৫ পূর্ব বাংলাদেশে। সে সময়ে সংবাদপত্রের সংখ্যা সীমিত করা হয় এবং মাত্র ৪টি দৈনিককে প্রকাশনার অধিকার দেয়া হয়। তাও পরিচালনার দায়িত্ব নেয় সরকার। এটা ছিল সোস্যালিস্ট বা কমিউনিস্ট বা একনায়কত্বের দেশের নীতি-আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাকশাল প্রতিষ্ঠার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার ১৯৭৩ সালে অধ্যাদেশ জারি করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আঘাত হেনেছিলেন। ১৯৭৩ সালের করা আইনের পর থেকে নানা অজুহাতে অনেক পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে প্রকাশনা বন্ধ রাখছেন দেশের জেলা প্রশাসকরা। কোনো কোনো পত্রিকা আদালতের রায়ে আবার প্রকাশের সুযোগ পেলেও অনেক পত্রিকা পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে না। এতে ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যম শিল্প যাত্রা শুরুর পর যে শক্তিশালী অবস্থানে এসে পৌঁছায়, সে অবস্থা এখন ধ্বংসের মুখে।
বাংলাদেশে প্রেস মিডিয়ার সাংবাদিকরা এবং ফ্রি ল্যান্সার সাংবাদিকরা অনেকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়মিত সাংবাদিকদের অনেক ক্ষেত্রে ওয়েজ বোর্ড অনুসারে পাওনা দেয়া হচ্ছে। ফ্রি ল্যান্সার সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশিত হবার পর তাদের লেখার সম্মানী প্রাপ্তিও মালিকদের ইচ্ছাধীন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি স্বচ্ছ সাংবাদিকতা তথা সংবাদপত্র বিকাশের এক বিরাট অন্তরায় হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক নিয়মিতই হোক বা ফ্রি ল্যান্সারই হোক এদের দর কষাকষির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সংকট বিদ্যমান। সাংবাদিকদের ঐক্যের মধ্যেও ফাটল ধরানো হয়েছে। ইদানীংকালে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ বিভক্তির দ্বারা একে অপরের সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত। অথচ পেশাগত দিক থেকে তারা এক পেশায় আছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক দৃষ্টান্ত। সাংবাদিকদের বিভাজনে কাজ করছে সরকারি ও বিরোধী দলীয় দর্শন। সরকারদলীয়  দর্শনের সাংবাদিকরা পাচ্ছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, পক্ষান্তরে তারাও এই পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিদান দিচ্ছে।
বর্তমানে সর্বাধিক কার্যকর অস্ত্র হলো নিউজপ্রিন্ট। দেশে উন্নতমানের নিউজপ্রিন্ট উৎপাদিত হয় না বলে সংবাদপত্র শিল্পের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করতে হয়। রাষ্ট্র মালিকানাধীন খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল ছিল। সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যক্তি মালিকানায় কয়েকটি নিউজপ্রিন্ট মিল চালু হলেও তা সংবাদপত্র শিল্পের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। কাগজের মানও সন্তোষজনক নয়। দু’একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া ব্যবসা করছে। দফায় দফায় নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়াচ্ছে।
গণতন্ত্রের বিকাশ, স্থিতিশীলতা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য স্বাধীন, বহুমাত্রিক এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। প্রত্যেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন দেয়ার অঙ্গীকার করলেও আজ পর্যন্ত কোন সরকার তা কার্যকর করেনি। এগুলো এখন সরকারের দলীয় প্রচারের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দিন দিন বেতার ও টিভির জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।
আশি দশক থেকে প্রতিটি সরকার ‘সেলফ সেন্সরশীপ’ নামক একটি দানবের প্রচলন শুরু করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার যে সেল সেন্সরশীপের প্রয়োজন বোধ করেছে এবং করছে সেটা হচ্ছে সরকারকে বাঁচিয়ে কথা বলা। অর্থাৎ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এমন কোনো খবর দেয়া থেকে বিরত থাকা বা তেমন কোনো বিষয়ে রিপোর্টিংকালে ভাষার হেরফের করা। এটা একটা সংবাদপত্রের জন্য স্বাধীনতা খর্ব করার পদ্ধতি মাত্র। অধিকাংশ সংবাদপত্রের নিজস্ব আর্থিক সঙ্গতি কম থাকায় তারা সেলফ সেন্সরশীপের আওতায় রয়েছে। বহু সংবাদপত্রের ওপর বিদেশী প্রভাব রয়েছে। বিদেশী পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো পত্রিকা দলীয়ভাবে চালানো হয় এক ধরনের সেন্সরশীপের অধীনে। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা থাকে না। অনেক সময় সাংবাদিকরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত। জীবিকার তাগিদে এবং সার্বিক দারিদ্র্যের কারণে বহু ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না।
ইদানীং আবার সংবাদপত্রের জগতে আর একটি নতুন উপসর্গ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীন সংবাদপত্র কতটুকু তথাকথিত মৌলবাদ সমর্থক, কতটুকু খোদাদ্রোহী এসব ব্যাপারে মূল্যায়ন হচ্ছে। খোদাদ্রোহী কথাটিকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ‘প্রগ্রেসিভ’ বা ‘প্রগতিশীল’ নামে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ান একটি দেশে আবার মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক, অমুক্তিযোদ্ধা সমর্থক তথাকথিত স্বাধীনতার সমর্থক বা অন্য আদর্শের সমর্থক ইত্যাদি নাম ও আদর্শের নিরিখে সংবাদপত্রের আদর্শ মূল্যায়ন করা হয়। এসবই আসলে রাজনীতির নিরিখে করা হয়। আগে গত গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা বা তথাকথিত প্রতিক্রিয়াশীলতার নিরিখে। সেটাই বর্তমানে তথাকথিত মৌলবাদে রূপান্তরিত। স্বাধীন সংবাদপত্র বলতে তৃতীয় বিশ্বে বর্তমানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সংবাদপত্রের মালিক পক্ষ যে আদর্শে বিশ্বাসী পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদকেও সে আদর্শে বিশ্বাসী হতে হয়। মালিক পক্ষের আদর্শ বিরোধী কিছু হলে আর রক্ষা নেই।
এ দেশে একশ্রেণীর সংবাদপত্র ইসলামী আদর্শের প্রতি কমিটেড সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে এবং ইসলামী আন্দোলনে দায়বদ্ধ দল বা আদর্শ অঙ্গীকারাবদ্ধ দল বা নেতা-নেত্রীবৃন্দকে জনসমক্ষে হেয় করার মানসে অনেক অসৎ ও কল্পিত মিথ্যাচার শুরু করে। এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রকাশিত মন্তব্য ও রিপোর্টের উত্তর দেয়ার পরও ভদ্রতার খাতিরে এসব প্রতিবক্তব্য ও প্রতিবাদপত্র ইসলামবিরোধী সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় ছাপানো হয় না। এসব মিথ্যাচারকেই সংবাদপত্রের পাঠক ও পৃষ্ঠপোষকবৃন্দ সত্য বলে গ্রহণ করে। যেহেতু নীতি-নৈতিকতা বলতে কিছুরই অস্তিত্বে এসব সংবাদপত্র বিশ্বাস করে না। তাই মিথ্যাচার ও আদর্শহীনতাই এসব সংবাদপত্রের মূল আদর্শ। অর্থাৎ মিথ্যাচার, অনৈতিকতাই এসব সংবাদপত্রের মূলধন।
মুক্ত বাজার নীতির আওতায় পত্রিকার প্রকাশনা বাধাগ্রস্ত না হলেও ডিএফপির নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশীপ আওতায় পত্রিকার প্রকাশনা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশে ইদানীংকালে আর এক ধরনের সেন্সরশীপ রয়েছে যা কোনো সিভিল সরকারের জন্য প্রত্যাশিত নয়। এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি সাংবাদিক দলন ও নিপীড়ন নীতি। সম্প্রতি সাংবাদিকরা পেশাগত কাজ করতে বাধাগ্রস্তই শুধু হচ্ছে না, লাঞ্ছিতও হচ্ছে। আর এটা হচ্ছে সরকারের পক্ষ হতে। সরকার কোনো কোনো তথ্য সংবাদপত্র কর্মীদেরকে সরবরাহ করছে না। বা তেমন তথ্য সংগ্রহ করতে দিচ্ছে না। কিন্তু সরকার তার প্রয়োজনের খবরটুকু স্বউদ্যোগে সরবরাহ করছে। কিন্তু যখন সরকারি পুলিশ বা সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, মারপিট করে, তখন সেটিও পড়ে যায় সেন্সরশীপের আওতায়। ইদানীং ফটো সাংবাদিকদের এবং রিপোর্টারদের ওপর এমন বহু ঘটনা ঘটানো হয়েছে যা প্রেস ফ্রিডম বিরোধী। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাংলাদেশে প্রেস ফ্রিডম বজায় নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য অনেক মন্ত্রী এমন পরিস্থিতিকেও বর্ণনা দিচ্ছেন এবং দাবি করছেন সংবাদপত্রের অর্থাৎ প্রেসের ব্যাপক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এমনো বলা হয় যে  ইতঃপূর্বে কখনোই প্রেস স্বাধীনতা ছিল না। সরকারের মতে, এখন প্রেস ফ্রিডমের ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্তভাবে। তথ্য পরিবেশনে তারা অনেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনো রকম জবাবদিহিতা না থাকাই এর কারণ বলে প্রধানমন্ত্রীরও ধারণা জন্মেছে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রকাশিত নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সব ধরনের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহের অবাধ চলাচল সুনিশ্চিত’ করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে প্রতিশ্রুতির উল্টো। একদিকে সরকার পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করছে, অন্যদিকে আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পত্রিকা। আর্থিক সঙ্কটে পতিত হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকাকে সহায়তা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার একের পর এক পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দিচ্ছে।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের কয়েক মাস পর অনিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার অভিযোগে প্রায় ১শ’ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করে দেয় সরকার। পরে ওই বছর বন্ধ হয় আরও কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশনা। ২০১১ সালে পাঁচটি ও ২০১২ সালে প্রায় পনেরটি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়। সরকারের বিজ্ঞাপন বৈষম্য ও রোষানলের শিকার হয়ে বন্ধ আছে সারা দেশের অর্ধশত পত্রিকা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আবারো ক্ষমতাসীন হয়ে পূর্বের ধারা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
প্রতিনিয়তই অপরিশীলিত, অমার্জিত এবং অনাকাক্সিক্ষত ও ঔদ্ধ্যত আচরণের এই কার্যকলাপ প্রায়ই এমনভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, একে দুঃশাসনেরই নামান্তর বলা যায়। সংবিধান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো ‘সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচারের নিশ্চয়তা।’ (দ্রষ্টব্য: সংবিধানের প্রস্তাবনা, পৃষ্ঠা ৯)।
সংবিধান মানলে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’ একই অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারায় আছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচণা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে ক. নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং খ. সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’
যেকোনো অভিযোগেই হোক, দৈনিক আমার দেশের প্রকাশনা এই সরকারের আমলে বন্ধ করা হয়েছে এবং সেটির সম্পাদককে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ইসলামী টিভি, দিগন্ত  টিভি ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে প্রথম চ্যানেল দুটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়নি। এ দেশের সম্প্রচার মাধ্যমের পক্ষে কোনো আইনী সুরক্ষা নেই, টিভি চ্যানেলগুলো চলছে সরকারের মর্জিমাফিক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী আদেশের বলে। কিছুদিন আগে সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য একটি সম্প্রচার নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে, যেটি কার্যকর হলে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর যেটুকু স্বাধীনতা আছে, তা-ও বিলুপ্ত হবে। কিন্তু সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকরা এর যথেষ্ট প্রতিবাদ জানানোরও সাহস পাননি, প্রতিবাদ-সমালোচনা করে যেটুকু লেখালেখি হয়েছে, তার অধিকাংশই হয়েছে সংবাদপত্রগুলোতে। বলা বাহুল্য, সম্প্রচার মাধ্যমের ওপর সরকারের চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি, যেহেতু সরকার ইচ্ছা করলেই যেকোনো টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে পারে। যারা সরকারের সমালোচনা করেন, টিভি টক শোগুলোতে তাদের আমন্ত্রণ না জানানোর ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে চাপ দেয়া হয় এমন অভিযোগ রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। 
জিবলু রহমান 

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আসলেই কি বন্দুকযুদ্ধের নাটক?


কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যাকাণ্ড কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনীতিবিদরা সোচ্চার। সরকারি কিংবা বিরোধী ঘরানার নেতৃবৃন্দ এ ক্ষেত্রে যেন একই কাতারে সামিল। তারপরও দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। ফলে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানী ঢাকায় ও মাগুরায় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক দুই নেতা পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। দু’জনেরই আপনজনরা বলছেন, তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজানো হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেবেন না। আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন- সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, রাজধানীর হাজারীবাগে গত ১৮ আগস্ট ভোর সাড়ে চারটার দিকে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া (২৮)। রাজা মিয়া (১৬) নামে এক কিশোরকে চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামী ছিলেন আরজু মিয়া। আরজুর মাথার ডানে-বাঁয়ে তিনটি ও বুকের বাঁ থেকে ডান পর্যন্ত সারি ধরে আরও তিনটি গুলীর ছিদ্র পাওয়া গেছে। স্বজনদের দাবি, সন্ধ্যায় তাকে ধরে নিয়ে ভোরে হত্যা করেছে র‌্যাব। এদিকে মাগুরায় ছাত্রলীগের গোলাগুলীতে মায়ের জঠরে শিশু গুলীবিদ্ধ ও একজন বৃদ্ধ নিহত হওয়ার মামলায় তিন নম্বর আসামী মেহেদী হাসন ওরফে আজিবর শেখ (৩৪) ১৭ আগস্ট সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাগুরার পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আজিবর মাগুরা পৌর ছাত্রলীগের আগের কমিটির নেতা ছিলেন। নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সোমবার বিকেলে আজিবরকে শালিখা থানা এলাকা থেকে ধরে এনে সদর থানা এলাকায় হত্যা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের  আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় একাধিক খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। বাড্ডায় ঝুট ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতা হত্যা, জাতীয় শোক দিবসের দিন কুষ্টিয়ায় এক যুবলীগ নেতা হত্যা এবং চাঁদপুরের কচুয়ায় চাঁদার দাবিতে স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রীদের ওপর যুবলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। দলীয় নেতা-কর্মীদের এ ধরনের অপরাধপ্রবণতায় ইমেজ সংকটে পড়েছে সরকারি দল ও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে এক অনির্ধারিত আলোচনায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধী দলের হলেও ন্যূনতম কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না বলে জানিয়ে দেন। এরপরই দু’টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটলো। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সরকারের আমলে অনেকগুলো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটলেও দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার সরকারি দলের দুই নেতা-কর্মী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগে ও ছাত্রলীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে  বক্তব্য দিয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেবেন না। অপরদিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন- সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে, অ্যাকশান শুরু হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আবার আলোচনায় চলে এসেছে। অনেকেই বলছেন, আইনের শাসন না থাকায় এবং অনুরাগ ও বিরাগের সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় সরকারি দলের লোকজন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং তারা হত্যা, নির্যাতন ও নানা অপরাধমূলক ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, অপরাধ কিংবা সন্ত্রাসমূলক ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আচরণ হতে পারে না। বরং সুশাসন তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অপরাধ, সন্ত্রাস ও বেপরোয়া মনোভাবের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টাই হবে সরকারের জন্য যৌক্তিক।
বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের চালচিত্র নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন। রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল দেশ ও জনগণের কল্যাণ এবং উন্নত সমাজ বিনির্মাণ। এমন কাজতো আদর্শিক ভাবনা ও নৈতিক মেরুদ- ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যে কোনো প্রকারে ক্ষমতা দখলের বিষয়টি রাজনীতিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠায়, আদর্শ ও নৈতিকতা রাজনৈতিক অঙ্গনে গৌণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে রাজনীতিতে পেশীশক্তি ও দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়নের এই দায় আর কাউকে নয়, রাজনীতিবিদদেরই বহন করতে হবে। এর জবাব একদিন তাদের জনগণের আদালতে দিতে হবে, পরকালে দিতে হবে মহান প্রভুর আদালতে।
সরকারি দল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অপতৎপরতা এখন এতটাই বেড়ে গেছে যে, স্বয়ং মন্ত্রীরাও এখন এর বিরুদ্ধে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন। গত ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মোহসিন আলী বলেছেন, লম্পট ছেলেরা এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ করছে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছুলে মন্ত্রীরাও নিজ দলের কিংবা অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করতে পারেন। আমরা জানি, অযথা কাউকে ছোট কিংবা বড় করা সাংবাদিকদের কাজ নয়। কখনো কখনো পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরতে কিছু চিত্র বা তথ্য তুলে ধরতে হয়। আর আমরা একথাও জানি যে, ব্লেমগেমের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। আর ব্লেমগেম কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের সংস্কৃতি হতে পারে না। তবে রাজনৈতিক সমস্যা বা সংকটের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা প্রয়োজন। সংকটের কারণ ও সমাধান বিশ্লেষণ করতে গেলে কখনো কখনো ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নামও এসে পড়ে। তবে এমন বিশ্লেষণে অনুরাগ ও বিরাগের প্রবণতা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। কারণ দলকানা মনোভাব নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ করা হলে তা অর্থবহ কোনো অবদান রাখতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে আমরা পত্র-পত্রিকা ও টকশোতে দলকানা আলোচনার নানা মাত্রা লক্ষ্য করেছি। বকাবকি, গালাগালি এবং হাতাহাতির অগণতান্ত্রিক প্রবণতাও লক্ষ্য করেছি। এমন অসহিষ্ণুতা ও দলকানা মনোভাবের কারণে অনেক লেখক ও আলোচকরা জনমনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। আসলে দলকানা মনোভাব নিয়ে দল কিংবা দেশের কল্যাণ করা যায় না। কল্যাণের জন্য প্রয়োজন আদর্শের রাজনীতি। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও আর পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরজাগ্রত। বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যত বাধা ও বন্ধুর পথই আসুক না কেন, বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘চিত্রগাঁথায় শোকগাথা’ শীর্ষক ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য পেশ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মানুষকে হত্যা করা গেলেও আদর্শকে কখনো হত্যা করা যায় না। আদর্শ তার আপন মহিমায় প্রোজ্জ্বল থাকে। তবে আদর্শকে ধারণ করতে হয়, চর্চা করতে হয়। আদর্শের চর্চা হলে মানুষ সমৃদ্ধ হয় এবং তার প্রভাব পড়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ও ব্যক্তিগত আচরণে যে সব উত্তম উদাহরণ রেখে গেছেন, তার অনুসরণ বর্তমান সময়েও খুবই প্রাসঙ্গিক। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তাঁরা কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালনে সক্ষম হলে, তাতে শুধু আওয়ামী লীগই সমৃদ্ধ হবে না- উপকৃত হবে দেশ ও জনগণ।
দুঃখের বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শকে ধারণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। ফলে দল ও সরকারকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়। এমনকি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সময়ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে যায়। গত ১৩ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডায় গোলাগুলীর এমন ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে। এমন ঘটনা রাজধানীর বাইরেও লক্ষ্য করা গেছে। কুষ্টিয়ায়ও নিহত হয়েছে ১ জন। বাড্ডার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, গরুর হাটের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ভাবতে অবাক লাগে, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন, দল করেছেন দেশ ও জনগণের স্বার্থে; আর এখন তার অনুসারী বলে দাবিদার অনেকেই দল করছেন প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আত্মস্বার্থে। এমন নেতা-কর্মী দিয়ে আদর্শের রাজনীতি সম্ভব নয়। তাই ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরজাগ্রত’ রাখতে হলে আওয়ামী লীগের এখন ক্ষমতার রাজনীতির চাইতেও আদর্শের রাজনীতির প্রতি অধিকতর মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আর এই বিষয়টি শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে কতটা সাড়া দেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Ads