ব্যাপক কারচুপি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে আসতে ও অবস্থানে বাধাদান, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও প্রার্থীদের অনুকূলে সিল মারা, শাসক দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ প্রদান, ভোট ক্রয়ের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে অর্থ বিতরণ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য প্রভৃতির মাধ্যমে গত ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। এই নির্বাচনে মেয়র-কাউন্সিল ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের ৩১৪৫টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীসহ মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১২০৪৫ জন। এরমধ্যে মেয়র প্রার্থী ছিলেন ৯৪৩ জন, কাউন্সিলর প্রার্থী ৮৭৮৬ জন এবং মহিলা প্রার্থী ২৪৮০ জন। ৩৫৮২টি ভেট কেন্দ্রের ১৯১৮৭টি বুথে ৬৪০০০ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার) ভোট গ্রহণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এতে ১১৯৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ৪৫০০০ জন পুলিশ, ৯০০০ বিজিবি সদস্য, ৮৮২৪ জন র্যাব, ২৫৫ জন কোস্টগার্ড, ৪৯৭২৮ জন আনসার ভিডিপি সদস্য এবং ৪৫১২ জন ব্যাটেলিয়ান আনসার নির্বাচনী দায়িত্ব পলন করেছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৭০,৯৯১৪৪ জন। এই হিসেবে প্রায় প্রতি ৫৯ জন ভোটারের জন্য নির্বাচন কমিশন একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সম্ভবত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমাবেশের এটিই হচ্ছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এত বিপুলসংখ্যক সদস্য সমাবেশের পরও ভোটারদের এমনকি প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তারা কোনও সার্থক ভূমিকা পালন করতে পারেননি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ এবং সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর এবং প্রার্থীদের অভিযোগ ও পর্যবেক্ষকদের মতামত অনুযায়ী ক্ষমতাসীন এমপির কোন কোন ক্ষেত্রে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে প্রকাশ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে ভোট জালিয়াতি করেছেন। ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরেছেন, টাকা দিয়ে সিল মেরেছেন, অনেক স্থানে ফলাফল ঘোষণায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাধা প্রদান করেছেন। নির্বাচনের আগে ও পরে সংশ্লিষ্ট ভোটার পরিবারসমূহকে দৈনিক ভিত্তিতে ৩০/৪০ টকা হারে ‘ভাতা’ প্রদান এবং ভোটের দিন ভোটার প্রতি ২০০/৩০০ টাকা হারে অর্থ প্রদানের অভিযোগও এসেছে। আবার ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা গরু, খাসি ও মুরগি জবাই করে ভোটারদের পরিবারে বিতরণ করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছরে অর্জিত তাদের অবৈধ অর্থ শুধু ভোটার ক্রয় নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ক্রয়েও তাদের সহযোগিতা করেছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের বিশিষ্টজনরা অভিযোগ করেছেন। সন্ত্রাসী ক্রয় ও প্রতিপক্ষ ঠেঙ্গানোর কাজে তাদের ব্যবহার তো আছেই। ভোট কেন্দ্রের বাইরে সিল মারা ব্যালট পেপার প্রাপ্তি, সিল মারা অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশের সচিত্র ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের অভিযোগও কমিশনের নির্লিপ্ততা এবং পরিণতিতে তাদের ভোট বর্জনের ঘোষণা প্রভৃতি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে ক্ষমতাসীন দল অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যেমন বিশ্বাসী নয়, তেমনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের কোনও আস্থা নেই, ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসই তাদের প্রধান অবলম্বন এবং এর মাধ্যমেই তারা বিরোধীদের দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। এর সাথে তারা অধুনা অর্থবিত্তকে যোগ করেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, সরকারি সম্পদের অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে এবং নামে বেনামে ব্যাংকসমূহ থেকে লোনের নামে অর্থ লুটের মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার কাজে তার অংশ বিশেষ কাজে লাগাচ্ছে। ফলে সমাজের মূল্যবোধ সব খসে পড়ছে এবং মানুষও তাদের বিবেক ও মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে।
এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, এবার পৌরসভাসমূহের নির্বাচন এমন এক সময় ও পরিবেশে সরকার পরিচালনার ব্যবস্থা করেছেন যখন বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পৌরসভার বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেয়র ও কাউন্সিলদের সরকার ঠুনকো অভিযোগে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আসামী বানিয়ে পদচ্যুত করে নিজ দলের লোকদের তাদের স্থানে বসিয়ে দিয়েছেন। তাদের ব্যাপক হারে সাময়িক বরখাস্ত করছেন। শুধু তাই নয়, তারা এবং তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালানোও হচ্ছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, যাতে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারে। সরকারের এই পদক্ষেপগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? এর মাধ্যমে সরকার কি জনগণের কাছে এই চ্যালেঞ্জ দিতে চাননি যে, বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ভোট দিয়ে তোমাদের কোনও লাভ হবে না, কেননা তারা জিতলেও সরকার তাদের পদচ্যুত করছেন এবং করতে পারেন। কাজেই ক্ষমতাসীন দলকেই তোমরা ভোট দাও। এই পরিবেশ সৃষ্টি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিচায়ক নয়, এটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি পদাঘাত এবং নির্বাচকমন্ডলীর প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মান। বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোনও দেশ হলে তাদের নির্বাচনী রায়ের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানকে তারা সহ্য করতেন কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জামায়াত-বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ লোকের বিরুদ্ধে এখন হাজার হাজার মামলা ঝুলছে। কথায় কথায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-নাশকতার মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে মারামারি ও সন্ত্রাস করছে, একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। নারীদের শ্লীলতাহানি করছে, খুন খারাবি রাহাজানি, চাঁদাবাজি, চুরি ডাকাতিতে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না, একটি সভ্য সমাজকে তারা অসভ্য সমাজে পরিণত করছেন। একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হচ্ছে : Municipal Polls: when buzzards feast carrion of democracy.” পৌরসভা নির্বাচন: যখন শকুনরা গণতন্ত্রের মরা লাশ তৃপ্তির সাথে উপভোগ করে।” হ্যাঁ! গণতন্ত্র তো বাংলাদেশে এখন মরা লাশই। পত্রিকাটি তাদের রিপোর্টে একটি মূল্যবান প্রশ্নও রেখেছেন, ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যদি এ ধরনের কারচুপি করতেন তাহলে স্বাধীনতা, আন্দোলন কি হালে পানি পেতো? পানি পেতো কি পেতো না বিশেষজ্ঞরা তার জবাব দিতে পারেন। তবে আমি মনে করি গণতন্ত্রের দাবিদার একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তার যাত্রা শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর ভুরিভুরি প্রমাণ যেমন ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও তারা ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাস নৈরাজ্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্র হচ্ছে তাদের মুখের বুলি, মানুষের সাথে প্রতারণা করার সস্তা ও আকর্ষণীয় একটি শ্লোগান। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তাদের প্রথম সরকারের আমলেই ১৯৭৩ সালে তারা বিরোধী দলবিহীন একটি সংসদ নির্বাচন করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে কিছু স্বতন্ত্রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু তারা তাদের সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ওপর হামলা, পোলিং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধকরণ ও হাইজ্যাক, ফলাফল ঘোষণায় কারচুপি প্রভৃতির মাধ্যমে তারা ঐ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ নির্বচনের একটি এলাকায় রিটার্নিং অফিসার হিসাবে আমাকে কাজ করতে হয়েছিল এবং অবরুদ্ধ প্রিজাইডিং অফিসারদের আওয়ামী লীগ ও তার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দুই প্লাটুন বিডিআর নিয়ে আমাকে অকুস্থলে যেতে হয়েছিল। আমার দু’জন প্রিজাইডিং অফিসার (একজন শিক্ষা অফিসার ও আরেকজন সার্কেল অফিসার, (রেভিনিউ) তিনি আমাকে জড়িয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালেই গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। নির্বাচনের ১ বছর পর তারা সকল দল বেআইনী ও চারটি ছাড়া সকল পত্রপত্রিকা বেআইনী ঘোষণা করে গণতন্ত্রের দাফন সম্পন্ন করেছিল। গণতন্ত্রের দাফনের পর ২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন, পরবর্তীকালের উপজেলা নির্বাচন এবং সর্বশেষ পৌর নির্বাচন আসলে গণতন্ত্রের কোনও চর্চা ছিল না, এটা গণতন্ত্রের কবরের পের তাদের লাফঝাঁফ। গণতন্ত্রের নামে এই প্রহসন এবং কবর থেকে তার পুনরুত্থানে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরি বলে আমি মনে করি।
এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, এবার পৌরসভাসমূহের নির্বাচন এমন এক সময় ও পরিবেশে সরকার পরিচালনার ব্যবস্থা করেছেন যখন বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পৌরসভার বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মেয়র ও কাউন্সিলদের সরকার ঠুনকো অভিযোগে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আসামী বানিয়ে পদচ্যুত করে নিজ দলের লোকদের তাদের স্থানে বসিয়ে দিয়েছেন। তাদের ব্যাপক হারে সাময়িক বরখাস্ত করছেন। শুধু তাই নয়, তারা এবং তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালানোও হচ্ছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, যাতে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারে। সরকারের এই পদক্ষেপগুলো কিসের ইঙ্গিত বহন করে? এর মাধ্যমে সরকার কি জনগণের কাছে এই চ্যালেঞ্জ দিতে চাননি যে, বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ভোট দিয়ে তোমাদের কোনও লাভ হবে না, কেননা তারা জিতলেও সরকার তাদের পদচ্যুত করছেন এবং করতে পারেন। কাজেই ক্ষমতাসীন দলকেই তোমরা ভোট দাও। এই পরিবেশ সৃষ্টি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিচায়ক নয়, এটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি পদাঘাত এবং নির্বাচকমন্ডলীর প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মান। বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোনও দেশ হলে তাদের নির্বাচনী রায়ের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানকে তারা সহ্য করতেন কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জামায়াত-বিএনপিসহ বিরোধী দলের লাখ লাখ লোকের বিরুদ্ধে এখন হাজার হাজার মামলা ঝুলছে। কথায় কথায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-নাশকতার মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিনিয়ত ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে মারামারি ও সন্ত্রাস করছে, একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। নারীদের শ্লীলতাহানি করছে, খুন খারাবি রাহাজানি, চাঁদাবাজি, চুরি ডাকাতিতে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না, একটি সভ্য সমাজকে তারা অসভ্য সমাজে পরিণত করছেন। একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হচ্ছে : Municipal Polls: when buzzards feast carrion of democracy.” পৌরসভা নির্বাচন: যখন শকুনরা গণতন্ত্রের মরা লাশ তৃপ্তির সাথে উপভোগ করে।” হ্যাঁ! গণতন্ত্র তো বাংলাদেশে এখন মরা লাশই। পত্রিকাটি তাদের রিপোর্টে একটি মূল্যবান প্রশ্নও রেখেছেন, ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যদি এ ধরনের কারচুপি করতেন তাহলে স্বাধীনতা, আন্দোলন কি হালে পানি পেতো? পানি পেতো কি পেতো না বিশেষজ্ঞরা তার জবাব দিতে পারেন। তবে আমি মনে করি গণতন্ত্রের দাবিদার একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তার যাত্রা শুরু থেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর ভুরিভুরি প্রমাণ যেমন ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও তারা ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাস নৈরাজ্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্র হচ্ছে তাদের মুখের বুলি, মানুষের সাথে প্রতারণা করার সস্তা ও আকর্ষণীয় একটি শ্লোগান। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তাদের প্রথম সরকারের আমলেই ১৯৭৩ সালে তারা বিরোধী দলবিহীন একটি সংসদ নির্বাচন করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে কিছু স্বতন্ত্রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু তারা তাদের সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ওপর হামলা, পোলিং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধকরণ ও হাইজ্যাক, ফলাফল ঘোষণায় কারচুপি প্রভৃতির মাধ্যমে তারা ঐ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ নির্বচনের একটি এলাকায় রিটার্নিং অফিসার হিসাবে আমাকে কাজ করতে হয়েছিল এবং অবরুদ্ধ প্রিজাইডিং অফিসারদের আওয়ামী লীগ ও তার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দুই প্লাটুন বিডিআর নিয়ে আমাকে অকুস্থলে যেতে হয়েছিল। আমার দু’জন প্রিজাইডিং অফিসার (একজন শিক্ষা অফিসার ও আরেকজন সার্কেল অফিসার, (রেভিনিউ) তিনি আমাকে জড়িয়ে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালেই গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। নির্বাচনের ১ বছর পর তারা সকল দল বেআইনী ও চারটি ছাড়া সকল পত্রপত্রিকা বেআইনী ঘোষণা করে গণতন্ত্রের দাফন সম্পন্ন করেছিল। গণতন্ত্রের দাফনের পর ২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন, পরবর্তীকালের উপজেলা নির্বাচন এবং সর্বশেষ পৌর নির্বাচন আসলে গণতন্ত্রের কোনও চর্চা ছিল না, এটা গণতন্ত্রের কবরের পের তাদের লাফঝাঁফ। গণতন্ত্রের নামে এই প্রহসন এবং কবর থেকে তার পুনরুত্থানে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসা জরুরি বলে আমি মনে করি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন