গত বৃহস্পতিবার খ্রিস্টীয় বছর ২০১৫ সাল শেষ হয়েছে। বছরটি বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কিন্তু কোনো সাফল্য কিংবা শুভ কোনো ঘটনার জন্য নয়। বরং এমন কিছু কারণের জন্য, যেগুলো জাতিকে শুধু বিভক্তই করেনি, সংঘাতের দিকেও ঠেলে নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পুরো বছর ধরেই সংঘাত ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই সংঘাতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। বিএনপির চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার নিজের কার্যালয়ে দীর্ঘ ৯২ দিন অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। আবর্জনা আর ইটের ট্রাক দিয়ে কার্যালয় ঘিরে রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। অন্যদিকে দেশজুড়ে চলেছে হত্যা-গ্রেফতার এবং দমনের নিষ্ঠুর অভিযান। ফাঁসিতে প্রাণ হারিয়েছেন জামায়াতে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এই দু’জনেরও আগে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে সরকার। সরকারের ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড বছরের শেষ পর্যন্তও অব্যাহত ছিল। শেষ মাস ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে পৌরসভা নির্বাচনের নামে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছেন ক্ষমতাসীনরা। অর্থনীতির কোনো একটি খাতেই দেশ শুভ কিছু অর্জন করতে পারেনি। দাতারা সাহায্য বন্ধ করেছে, লক্ষ হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে এবং নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। একযোগে সমাজে বেড়েছে অপরাধ। ছিনতাই-ডাকাতি তো বটেই, হত্যাও ডাল-ভাতের মতো সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি ও কার্যক্রমের পরিণতিতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বহুদূর। জাতি বিভক্ত হয়েছে, স্বাধীনতা খুইয়ে ফেলেছে গণমাধ্যম এবং বিচার বিভাগও। কোনোদিকে কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই ২০১৬ সালকে নিয়ে মানুষ মোটেও আশাবাদী হয়ে উঠতে পারছে না।
এ পর্যন্ত এসে থামতেই হলো। কারণ, যা লেখা দরকার তা লেখার মতো অবস্থা নেই দেশে। সে কারণে ইতিহাসের উল্লেখে যাওয়া কিছুটা হলেও নিরাপদ। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর সম্পর্কেই বলা যাক। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়সহ আরো কিছু বিশেষ বিষয় ও ঘটনার জন্যও ডিসেম্বর স্মরণীয় হয়ে আছে। সেগুলো সম্পর্কে আলাদাভাবে বিস্তারিত লেখা একটি মাত্র নিবন্ধে সম্ভব নয়। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের কথাই ধরা যাক। সেবার ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কূটিল ও ধুরন্ধর নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরোধিতার অজুহাত দেখিয়ে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রথমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার মাধ্যমে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তারপর শেখ মুজিবের সঙ্গে সমঝোতা ও আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণের পাশাপাশি গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এই গণহত্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ। সেটাও এক ঐতিহাসিক ঘটনাই, যার পেছনে ছিল বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর। এ প্রসঙ্গে যে কোনো আলোচনায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইতিহাস যেমন আনতে হবে তেমনি তুলে ধরতে হবে নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহও। এতে শুধু শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বললে চলবে না, পাকিস্তান পিপ্লস পার্টি ও দলটির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্ভট আবদার সম্পর্কেও লিখতে হবে। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করে তিনি দুই প্রদেশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছিলেন। সেটাই ছিল সংকটের আশু এবং প্রধান কারণ, যার পরিণতি ছিল পাকিস্তানের ভাঙন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বিষয়টি তথা ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর সম্পর্কে লিখতে হলে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথাও বলতে হবে। কারণ, আগের মাস নবেম্বরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও বিপুল ধ্বংসের পর ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয়ার প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী একদিকে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন, অন্যদিকে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে, ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন’। এটা ছিল প্রকাশ্যে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা। মওলানা ভাসানী এবং প্রদেশের দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করা সম্ভব হতো না, ঘটনাপ্রবাহে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠতো না। সেদিক থেকেও অতুলনীয় হয়ে আছে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর।
১৯৭০ সালে ব্যর্থ হলেও ২০০৮ সালের একই মাস ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত অন্য এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। পার্থক্য হলো, সেবারের মতো এই নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফল ঘটেনি- ঘটতে দেয়া হয়নি। কারণ, এটা ছিল ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত লগি-বৈঠার হত্যা ও নৃশংসতা থেকে জরুরি অবস্থা জারি এবং নির্বাচনের নামে নাটক সাজানো পর্যন্ত সবই করা হয়েছিল সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে, যার নাম ছিল রোডম্যাপ। ঘটনাপ্রবাহেও প্রমাণিত হয়েছে, জেনারেল মইন উ আহমেদ এবং ফখরুদ্দিন আহমদদের আসলে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভেতরে ভেতরে তৈরি করা রোডম্যাপ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েই বন্দুক হাতে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তারা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন চার দলীয় জোটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচনে জিততে এবং ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে হতাশ হয়ে পড়া আওয়ামী লীগও নাচুনে বুড়ির মতো ঢোলের বাড়িতে সাড়া দিয়ে নেচে উঠেছিল। এরপর ছিল গোপনে এবং দেশবিশেষের মধ্যস্থতায় ‘ডিল’ হওয়ার পালা। সে ‘ডিল’ অনুসারেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন হয়েছে, ক্ষমতায় বসানো হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বাংলাদেশের জনগণকে এখনো ওই ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মাশুলই গুনতে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেও রেহাই পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই জনগণের।
এবার আরো এক ডিসেম্বর মাসের প্রসঙ্গ। এই ডিসেম্বর ২০১৩ সালের। পরের মাস অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ তখন উত্তাল। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকে পালিত অবরোধ দেশকে আক্ষরিক অর্থেই অচল করে ফেলেছিল। শহরে-নগরে তো বটেই, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামাঞ্চলেও। প্রতিদিন মৃত্যু ঘটছিল অসংখ্য মানুষের। অনেক জেলায় মনোনয়নপত্র এবং নির্বাচনের কাগজপত্র পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না। বহু এলাকায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ছিলেন জনগণের ধাওয়ার মুখে। কিন্তু অমন এক অবস্থার মধ্যেও একদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা একতরফা নির্বাচন করবেনই বলে জেদ ধরে বসেছিলেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার নামে নাটকীয়তা করলেও তফসিল বাতিলের জন্য ১৮ দলীয় জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তারা সরকারের সেবাদাসের ভূমিকাই পালন করবেন। বেগম খালেদা জিয়া ওই কমিশনকে কেন ‘অথর্ব’ ও ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলেছিলেন তার কারণও তখনই পরিষ্কার হয়েছিল। আসলেও নির্বাচন কমিশন তাল মিলিয়েছিল সরকারের সঙ্গে। কিছুদিন পর্যন্ত নিরপেক্ষতা রক্ষার অভিনয় করলেও নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই ডিসেম্বরেই সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা নির্লজ্জের মতো খোলস ঝেড়ে ফেলেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও সিইসি ও তার সঙ্গী কমিশনাররা আসলে আওয়ামী ঘরানার লোক। এজন্যই কথাও বলেছিলেন তারা ক্ষমতাসীনদের সুরে ও ভাষাতেই। কাজ তো করেছিলেনই। ১৮ দলীয় জোটকেও তাই অবরোধের ডাক দিতে হয়েছিল। ফলে অচল হয়ে পড়েছিল সারা দেশ।
ওদিকে সরকার শুরু করেছিল ঢালাওভাবে গ্রেফতারের অভিযান, যেমনটি চালিয়ে এসেছে মেয়াদের পুরো সময় ধরে। র্যাব ও পুলিশকে দিয়েও সরকার প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরাও র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল আগের মতোই। ডিসেম্বর শুরুর একদিন আগে, ২০১৩ সালের ২৯ নবেম্বর গভীর রাতে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা ও পুলিশের একটি দল রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে রীতিমতো ডাকাতের মতো অভিযান চালিয়েছিল। সাদা পোশাকের দলটি মই বেয়ে দোতালায় উঠে এবং জানালার কাঁচ ভেঙে অফিসের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে পুরো অফিসকেই লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের অফিস কক্ষ থেকে শুরু করে টয়লেটসহ অফিসের কোনো একটি কক্ষ বা স্থানকেই বাদ দেয়নি তারা। সন্ত্রাসীদের মতো ভাঙচুর চালিয়েছে এবং লুটপাট করেছে। কয়েকটি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এবং বিএনপির গোপনীয় সব ফাইল ও কাগজপত্র বগলদাবা করে নিয়ে গেছে তারা। তাদের হাতে অফিসের কর্মচারীরা তো লাঞ্ছিত হয়েছিলই, বাদ পড়েননি এমনকি বেসরকারি কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনরাও। সাদা পোশাকের লোকজন তাদের যথেচ্ছভাবে পিটিয়েছিল, ভেঙে ফেলেছিল সব ক্যামেরা। যাওয়ার সময় গোয়েন্দা ও পুলিশের দলটি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদসহ দু’জন নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, এই রিজভী আহমদ হরতাল ও অবরোধসহ আন্দোলনের দিনগুলোতে দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনিই জনগণকে আন্দোলনের খবর এবং কর্মসূচি সম্পর্কে জানিয়ে আসছিলেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি।
বিএনপি অফিসে চালানো ওই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও সেবার প্রচণ্ড প্রতিবাদ উঠেছিল। কারণ, বিএনপি তখনও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানে থাকায় সে দলের অফিসে অভিযান ও লুণ্ঠন চালানোর জন্য দরকার ছিল নীতিগত সিদ্ধান্তের- যা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়া সরকারের নেয়ার অধিকার ছিল না। অন্যদিকে গোয়েন্দা ও পুলিশকে দিয়ে ভাঙচুর ও লুণ্ঠনের অভিযান চালানো এবং নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বলেই প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি নির্বাচন কমিশনই অভিযান চালানোর হুকুম দিয়েছে? অমন প্রশ্নের কারণও সিইসি নিজেই তৈরি করেছিলেন। অবরোধ আন্দোলনের মধ্যেও ১ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় একাধিকবার তিনি এমনভাবে ‘বিরোধী দল’ বলেছিলেন, যা শুনে মনে হচ্ছিল যেন শেখ হাসিনা বা তার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কথা বলছেন! অথচ সিইসি হিসেবে কোনো দলকেই তিনি ‘বিরোধী দল’ বলতে পারেন না। তার চোখে সব দলেরই রাজনৈতিক দল হওয়ার কথা।
সেবারের ডিসেম্বর মাসের অন্য কিছু তথ্যও উল্লেখ না করে পারা যায় না। যেমন ১ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রীতিমতো সিদ্ধান্ত ঘোষণার স্টাইলে বলেছিলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানায় তাহলে তফসিল পরিবর্তন করা হবে। অথচ এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার অধিকার কোনো মন্ত্রীর থাকতে পারে না- এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। অমন অধিকার কেবল নির্বাচন কমিশনেরই রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিইসি বা তার কোনো সহকর্মীকে টুঁ শব্দটি করতে শোনা যায়নি। এখানেও শেষ নয়। আরেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয় তাহলে দলটির সব নেতাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এটাও ছিল একটি সিদ্ধান্তমূলক ঘোষণা। দু’টি বিষয়েই নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য ছিল হস্তক্ষেপ করা এবং সংবিধান লংঘন করার দায়ে দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু মুখের কথায় দোহাই দিলেও কাজী রকিব সাহেবরা সংবিধানের ধার ধারেননি! তারা চাকরি শুধু নয়, শর্তহীন আনুগত্য করেছেন বলেই সতর্ক করা বা ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাকুক, টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। এ অবস্থার সুযোগ নিয়েই ক্ষমতাসীনরা ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ও একদলীয় নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। তৈরি হয়েছিল ১৫৪ জনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড! বলার অপেক্ষা রাখে না, এখনো- এতদিন পরও নির্বাচন কমিশনাররা তাদের সেবাদাসগিরি এবং লেজুড়বৃত্তি থেকে ‘এক চুল’ পর্যন্ত সরে আসেননি, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে।
এবার ওই একই বছর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের অন্য একটি ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা ছিল ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি। কিন্তু সেদিনও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যথারীতি চরম দুর্ব্যবহার করেছিল সরকার। এর দু’দিন আগে থেকেই পথে ব্যারিকেড দেয়ার পাশাপাশি তার বাসভবন ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। আগের রাতে বালু বোঝাই পাঁচটি ট্রাক এনে বাসভবনে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণরূপেই বন্ধ করা হয়েছিল। তার প্রটোকলের গাড়িও প্রত্যাহার করেছিল। কর্মসূচির দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর সকাল থেকেই বাসভবনের সামনে কয়েক স্তরে দাঁড়িয়ে পড়েছিল পুলিশ। গেটও তারা এমনভাবেই আটকে রেখেছিল যাতে কারো পক্ষেই বাসভবনে ঢোকা বা সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হয়। উদ্দেশ্যে কোনো রাখঢাকই ছিল না। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পুলিশের অসম্মানজনক আচরণ থেকে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তার নয়া পল্টনে যাওয়ার এবং সেখানে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার একদিকে পুরো নয়া পল্টন এলাকাকে মানবশূন্য করে ফেলেছিল, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকেও বাইরে আসতে দেয়নি। সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য বেলা ১২টার দিকে তিনি গাড়িতে উঠেছিলেন। দীর্ঘ তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে সে গাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছিল। এর মধ্যে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা দফায় দফায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ খালেদা জিয়াকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পুলিশের বাধার কারণে সাংবাদিকরাও নেত্রীর কাছে ঘেঁষতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বিকেলের দিকে পাশের বাড়ির দেয়াল টপকে জনাকয়েক সাংবাদিক বাসভবনের ভেতরে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে কিছু কথা বলতে পেরেছিলেন খালেদা জিয়া। টিভি ক্যামেরার সামনে জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি যখন কথা বলছিলেন তখনও বারবার বাধা দিয়েছিল পুলিশ। তারা নেত্রীর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ দুর্ব্যবহারও যথেষ্টই করেছিল।
অন্যদিকে সংযম দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। গাড়ির ভেতরে আটকে রাখার পাশাপাশি পুলিশের ক্রমাগত দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও তিনি গণতন্ত্রসম্মত বলিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন সিকিমের ‘মীর জাফর’ হিসেবে নিন্দিত রাজনীতিক লেন্দুপ দর্জির পরিণতির কথা স্মরণ করতে ও তার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে। এ প্রসঙ্গেই মানুষের মুখে মুখে উঠে এসেছিল লেন্দুপ দর্জির ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে লেন্দুপ দর্জি ভারতের কাছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র সিকিমকে তুলে দিয়েছিলেন। এই রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরবর্তীকালে সিকিমবাসী তাকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান ও বিতাড়িত করেছিল। ভারতের রাজ্যে পরিণত সিকিমের জনগণ তাকে এতটাই ঘৃণা করেছে যে, মৃত্যুর সময়ও লেন্দুপ দর্জি সিকিমে আসতে পারেননি। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও লেন্দুপ দর্জির ভাগ্যই বরণ করতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, যে নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় তাকে নির্বাচন বলা যায় না। এভাবে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা যদি আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের পরিণতি সিকিমের মতো হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া একইসঙ্গে জনগণের দেশপ্রেমের কথাও তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, যে জাতি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে সে জাতিকে কারো পক্ষেই পদানত করা সম্ভব নয়। যারা সে চেষ্টা করবে তাদের পরিণামই বরং অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে কারা লিপ্ত রয়েছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছিলেন খালেদা জিয়া। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আঙুল তুলেছিলেন ক্ষমতাসীনদের দিকে।
বেগম খালেদা জিয়ার সেদিনের বক্তব্যে কোনো ভুল ছিল কি না পাঠকরা তা ভেবে দেখতে পারেন। তারপর মাঝখানে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেও পিলখানা হত্যাকা- থেকে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া অভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন। প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে বিলম্ব করেননি ক্ষমতাসীনরাও। তাকে এমনকি উন্মাদ পর্যন্ত বলে বসেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। নিন্দা-সমালোচনার তুফান যে চলতে থাকবে তা ধরেই নেয়া যায়। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার আশা রইল। বর্তমান নিবন্ধের সমাপ্তি টানার আগে শুধু বলে রাখা দরকার, ডিসেম্বর আসলেও বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। কে জানে, বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ বক্তব্য এবং পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরেও ডিসেম্বর নতুন করে ঐতিহাসিক গুরুত্ব অর্জন করবে কি না!
এ পর্যন্ত এসে থামতেই হলো। কারণ, যা লেখা দরকার তা লেখার মতো অবস্থা নেই দেশে। সে কারণে ইতিহাসের উল্লেখে যাওয়া কিছুটা হলেও নিরাপদ। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর সম্পর্কেই বলা যাক। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়সহ আরো কিছু বিশেষ বিষয় ও ঘটনার জন্যও ডিসেম্বর স্মরণীয় হয়ে আছে। সেগুলো সম্পর্কে আলাদাভাবে বিস্তারিত লেখা একটি মাত্র নিবন্ধে সম্ভব নয়। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের কথাই ধরা যাক। সেবার ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কূটিল ও ধুরন্ধর নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরোধিতার অজুহাত দেখিয়ে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রথমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার মাধ্যমে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তারপর শেখ মুজিবের সঙ্গে সমঝোতা ও আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণের পাশাপাশি গণহত্যা চালানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এই গণহত্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ। সেটাও এক ঐতিহাসিক ঘটনাই, যার পেছনে ছিল বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর। এ প্রসঙ্গে যে কোনো আলোচনায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইতিহাস যেমন আনতে হবে তেমনি তুলে ধরতে হবে নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহও। এতে শুধু শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বললে চলবে না, পাকিস্তান পিপ্লস পার্টি ও দলটির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্ভট আবদার সম্পর্কেও লিখতে হবে। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করে তিনি দুই প্রদেশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছিলেন। সেটাই ছিল সংকটের আশু এবং প্রধান কারণ, যার পরিণতি ছিল পাকিস্তানের ভাঙন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। বিষয়টি তথা ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর সম্পর্কে লিখতে হলে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথাও বলতে হবে। কারণ, আগের মাস নবেম্বরে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও বিপুল ধ্বংসের পর ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয়ার প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী একদিকে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন, অন্যদিকে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে, ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন’। এটা ছিল প্রকাশ্যে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা। মওলানা ভাসানী এবং প্রদেশের দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করা সম্ভব হতো না, ঘটনাপ্রবাহে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠতো না। সেদিক থেকেও অতুলনীয় হয়ে আছে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর।
১৯৭০ সালে ব্যর্থ হলেও ২০০৮ সালের একই মাস ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত অন্য এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। পার্থক্য হলো, সেবারের মতো এই নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফল ঘটেনি- ঘটতে দেয়া হয়নি। কারণ, এটা ছিল ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত লগি-বৈঠার হত্যা ও নৃশংসতা থেকে জরুরি অবস্থা জারি এবং নির্বাচনের নামে নাটক সাজানো পর্যন্ত সবই করা হয়েছিল সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে, যার নাম ছিল রোডম্যাপ। ঘটনাপ্রবাহেও প্রমাণিত হয়েছে, জেনারেল মইন উ আহমেদ এবং ফখরুদ্দিন আহমদদের আসলে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভেতরে ভেতরে তৈরি করা রোডম্যাপ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েই বন্দুক হাতে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তারা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন চার দলীয় জোটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচনে জিততে এবং ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে হতাশ হয়ে পড়া আওয়ামী লীগও নাচুনে বুড়ির মতো ঢোলের বাড়িতে সাড়া দিয়ে নেচে উঠেছিল। এরপর ছিল গোপনে এবং দেশবিশেষের মধ্যস্থতায় ‘ডিল’ হওয়ার পালা। সে ‘ডিল’ অনুসারেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন হয়েছে, ক্ষমতায় বসানো হয়েছে আওয়ামী লীগকে। বাংলাদেশের জনগণকে এখনো ওই ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মাশুলই গুনতে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেও রেহাই পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই জনগণের।
এবার আরো এক ডিসেম্বর মাসের প্রসঙ্গ। এই ডিসেম্বর ২০১৩ সালের। পরের মাস অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ তখন উত্তাল। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকে পালিত অবরোধ দেশকে আক্ষরিক অর্থেই অচল করে ফেলেছিল। শহরে-নগরে তো বটেই, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামাঞ্চলেও। প্রতিদিন মৃত্যু ঘটছিল অসংখ্য মানুষের। অনেক জেলায় মনোনয়নপত্র এবং নির্বাচনের কাগজপত্র পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না। বহু এলাকায় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ছিলেন জনগণের ধাওয়ার মুখে। কিন্তু অমন এক অবস্থার মধ্যেও একদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনরা একতরফা নির্বাচন করবেনই বলে জেদ ধরে বসেছিলেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার নামে নাটকীয়তা করলেও তফসিল বাতিলের জন্য ১৮ দলীয় জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তারা সরকারের সেবাদাসের ভূমিকাই পালন করবেন। বেগম খালেদা জিয়া ওই কমিশনকে কেন ‘অথর্ব’ ও ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলেছিলেন তার কারণও তখনই পরিষ্কার হয়েছিল। আসলেও নির্বাচন কমিশন তাল মিলিয়েছিল সরকারের সঙ্গে। কিছুদিন পর্যন্ত নিরপেক্ষতা রক্ষার অভিনয় করলেও নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই ডিসেম্বরেই সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা নির্লজ্জের মতো খোলস ঝেড়ে ফেলেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও সিইসি ও তার সঙ্গী কমিশনাররা আসলে আওয়ামী ঘরানার লোক। এজন্যই কথাও বলেছিলেন তারা ক্ষমতাসীনদের সুরে ও ভাষাতেই। কাজ তো করেছিলেনই। ১৮ দলীয় জোটকেও তাই অবরোধের ডাক দিতে হয়েছিল। ফলে অচল হয়ে পড়েছিল সারা দেশ।
ওদিকে সরকার শুরু করেছিল ঢালাওভাবে গ্রেফতারের অভিযান, যেমনটি চালিয়ে এসেছে মেয়াদের পুরো সময় ধরে। র্যাব ও পুলিশকে দিয়েও সরকার প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গুণ্ডা-সন্ত্রাসীরাও র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল আগের মতোই। ডিসেম্বর শুরুর একদিন আগে, ২০১৩ সালের ২৯ নবেম্বর গভীর রাতে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা ও পুলিশের একটি দল রাজধানীর নয়াপল্টনে অবস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে রীতিমতো ডাকাতের মতো অভিযান চালিয়েছিল। সাদা পোশাকের দলটি মই বেয়ে দোতালায় উঠে এবং জানালার কাঁচ ভেঙে অফিসের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে পুরো অফিসকেই লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। চেয়ারপার্সন ও মহাসচিবের অফিস কক্ষ থেকে শুরু করে টয়লেটসহ অফিসের কোনো একটি কক্ষ বা স্থানকেই বাদ দেয়নি তারা। সন্ত্রাসীদের মতো ভাঙচুর চালিয়েছে এবং লুটপাট করেছে। কয়েকটি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এবং বিএনপির গোপনীয় সব ফাইল ও কাগজপত্র বগলদাবা করে নিয়ে গেছে তারা। তাদের হাতে অফিসের কর্মচারীরা তো লাঞ্ছিত হয়েছিলই, বাদ পড়েননি এমনকি বেসরকারি কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনরাও। সাদা পোশাকের লোকজন তাদের যথেচ্ছভাবে পিটিয়েছিল, ভেঙে ফেলেছিল সব ক্যামেরা। যাওয়ার সময় গোয়েন্দা ও পুলিশের দলটি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদসহ দু’জন নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, এই রিজভী আহমদ হরতাল ও অবরোধসহ আন্দোলনের দিনগুলোতে দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনিই জনগণকে আন্দোলনের খবর এবং কর্মসূচি সম্পর্কে জানিয়ে আসছিলেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি।
বিএনপি অফিসে চালানো ওই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও সেবার প্রচণ্ড প্রতিবাদ উঠেছিল। কারণ, বিএনপি তখনও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানে থাকায় সে দলের অফিসে অভিযান ও লুণ্ঠন চালানোর জন্য দরকার ছিল নীতিগত সিদ্ধান্তের- যা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়া সরকারের নেয়ার অধিকার ছিল না। অন্যদিকে গোয়েন্দা ও পুলিশকে দিয়ে ভাঙচুর ও লুণ্ঠনের অভিযান চালানো এবং নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বলেই প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি নির্বাচন কমিশনই অভিযান চালানোর হুকুম দিয়েছে? অমন প্রশ্নের কারণও সিইসি নিজেই তৈরি করেছিলেন। অবরোধ আন্দোলনের মধ্যেও ১ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় একাধিকবার তিনি এমনভাবে ‘বিরোধী দল’ বলেছিলেন, যা শুনে মনে হচ্ছিল যেন শেখ হাসিনা বা তার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কথা বলছেন! অথচ সিইসি হিসেবে কোনো দলকেই তিনি ‘বিরোধী দল’ বলতে পারেন না। তার চোখে সব দলেরই রাজনৈতিক দল হওয়ার কথা।
সেবারের ডিসেম্বর মাসের অন্য কিছু তথ্যও উল্লেখ না করে পারা যায় না। যেমন ১ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু রীতিমতো সিদ্ধান্ত ঘোষণার স্টাইলে বলেছিলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানায় তাহলে তফসিল পরিবর্তন করা হবে। অথচ এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার অধিকার কোনো মন্ত্রীর থাকতে পারে না- এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। অমন অধিকার কেবল নির্বাচন কমিশনেরই রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিইসি বা তার কোনো সহকর্মীকে টুঁ শব্দটি করতে শোনা যায়নি। এখানেও শেষ নয়। আরেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয় তাহলে দলটির সব নেতাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এটাও ছিল একটি সিদ্ধান্তমূলক ঘোষণা। দু’টি বিষয়েই নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য ছিল হস্তক্ষেপ করা এবং সংবিধান লংঘন করার দায়ে দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু মুখের কথায় দোহাই দিলেও কাজী রকিব সাহেবরা সংবিধানের ধার ধারেননি! তারা চাকরি শুধু নয়, শর্তহীন আনুগত্য করেছেন বলেই সতর্ক করা বা ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাকুক, টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। এ অবস্থার সুযোগ নিয়েই ক্ষমতাসীনরা ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ও একদলীয় নির্বাচন করতে পেরেছিলেন। তৈরি হয়েছিল ১৫৪ জনের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড! বলার অপেক্ষা রাখে না, এখনো- এতদিন পরও নির্বাচন কমিশনাররা তাদের সেবাদাসগিরি এবং লেজুড়বৃত্তি থেকে ‘এক চুল’ পর্যন্ত সরে আসেননি, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে।
এবার ওই একই বছর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের অন্য একটি ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, নির্বাচন বাতিলের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়া ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটা ছিল ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি। কিন্তু সেদিনও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যথারীতি চরম দুর্ব্যবহার করেছিল সরকার। এর দু’দিন আগে থেকেই পথে ব্যারিকেড দেয়ার পাশাপাশি তার বাসভবন ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। আগের রাতে বালু বোঝাই পাঁচটি ট্রাক এনে বাসভবনে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণরূপেই বন্ধ করা হয়েছিল। তার প্রটোকলের গাড়িও প্রত্যাহার করেছিল। কর্মসূচির দিন অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর সকাল থেকেই বাসভবনের সামনে কয়েক স্তরে দাঁড়িয়ে পড়েছিল পুলিশ। গেটও তারা এমনভাবেই আটকে রেখেছিল যাতে কারো পক্ষেই বাসভবনে ঢোকা বা সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হয়। উদ্দেশ্যে কোনো রাখঢাকই ছিল না। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পুলিশের অসম্মানজনক আচরণ থেকে। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তার নয়া পল্টনে যাওয়ার এবং সেখানে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে ভাষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার একদিকে পুরো নয়া পল্টন এলাকাকে মানবশূন্য করে ফেলেছিল, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকেও বাইরে আসতে দেয়নি। সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য বেলা ১২টার দিকে তিনি গাড়িতে উঠেছিলেন। দীর্ঘ তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে সে গাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছিল। এর মধ্যে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা দফায় দফায় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ খালেদা জিয়াকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পুলিশের বাধার কারণে সাংবাদিকরাও নেত্রীর কাছে ঘেঁষতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বিকেলের দিকে পাশের বাড়ির দেয়াল টপকে জনাকয়েক সাংবাদিক বাসভবনের ভেতরে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে কিছু কথা বলতে পেরেছিলেন খালেদা জিয়া। টিভি ক্যামেরার সামনে জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি যখন কথা বলছিলেন তখনও বারবার বাধা দিয়েছিল পুলিশ। তারা নেত্রীর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ দুর্ব্যবহারও যথেষ্টই করেছিল।
অন্যদিকে সংযম দেখিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। গাড়ির ভেতরে আটকে রাখার পাশাপাশি পুলিশের ক্রমাগত দুর্ব্যবহার সত্ত্বেও তিনি গণতন্ত্রসম্মত বলিষ্ঠ অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন সিকিমের ‘মীর জাফর’ হিসেবে নিন্দিত রাজনীতিক লেন্দুপ দর্জির পরিণতির কথা স্মরণ করতে ও তার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে। এ প্রসঙ্গেই মানুষের মুখে মুখে উঠে এসেছিল লেন্দুপ দর্জির ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে লেন্দুপ দর্জি ভারতের কাছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র সিকিমকে তুলে দিয়েছিলেন। এই রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরবর্তীকালে সিকিমবাসী তাকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান ও বিতাড়িত করেছিল। ভারতের রাজ্যে পরিণত সিকিমের জনগণ তাকে এতটাই ঘৃণা করেছে যে, মৃত্যুর সময়ও লেন্দুপ দর্জি সিকিমে আসতে পারেননি। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও লেন্দুপ দর্জির ভাগ্যই বরণ করতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, যে নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় তাকে নির্বাচন বলা যায় না। এভাবে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা যদি আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের পরিণতি সিকিমের মতো হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া একইসঙ্গে জনগণের দেশপ্রেমের কথাও তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, যে জাতি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে সে জাতিকে কারো পক্ষেই পদানত করা সম্ভব নয়। যারা সে চেষ্টা করবে তাদের পরিণামই বরং অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে কারা লিপ্ত রয়েছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছিলেন খালেদা জিয়া। ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আঙুল তুলেছিলেন ক্ষমতাসীনদের দিকে।
বেগম খালেদা জিয়ার সেদিনের বক্তব্যে কোনো ভুল ছিল কি না পাঠকরা তা ভেবে দেখতে পারেন। তারপর মাঝখানে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেও পিলখানা হত্যাকা- থেকে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া অভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন। প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে বিলম্ব করেননি ক্ষমতাসীনরাও। তাকে এমনকি উন্মাদ পর্যন্ত বলে বসেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। নিন্দা-সমালোচনার তুফান যে চলতে থাকবে তা ধরেই নেয়া যায়। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার আশা রইল। বর্তমান নিবন্ধের সমাপ্তি টানার আগে শুধু বলে রাখা দরকার, ডিসেম্বর আসলেও বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। কে জানে, বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ বক্তব্য এবং পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরেও ডিসেম্বর নতুন করে ঐতিহাসিক গুরুত্ব অর্জন করবে কি না!
আশিকুল হামিদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন