সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে ঐ জেলারই জামায়াত আমীর জনাব নজরুল ইসলাম বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত ঘোষণাও করেছেন। কিন্তু মেয়র হিসেবে নির্দিষ্ট তারিখে তাকে শপথ নিতে দেয়া হয়নি পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তার সাথে জামায়াত সমর্থিত বিপুল ভোটে নির্বাচিত তিনজন মহিলা কমিশনারকেও সরকারি নির্দেশে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তাদের শপথ গ্রহণ বাধাগ্রস্ত করেছে। দেশে পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে এই খবর ফলাওভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। কি কারণে এবং কি অপরাধে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদসমূহে তার কোনো উল্লেখ ছিল না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার গত ত্রিশ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এখানে যারা পৌর চেয়ারম্যান অথবা পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বেশিরভাগ সময় জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়ে এ দায়িত্ব পালন করেছেন আবার ওয়ার্ড কমিশনার বা কাউন্সিলর হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন জামায়াতেরই প্রতিনিধি। বলাবাহুল্য, জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি দল এবং এ প্রেক্ষিতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং জনগণের সামনে তাদের কর্মসূচি তুলে ধরা ও তাদের সেবা করাকে জামায়াতের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে মানুষ শুরু থেকেই লক্ষ্য করে আসছে। এবারের নির্বাচনের আগেও জামায়াতের একজন প্রতিনিধি নবাবগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে কিছুটা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় জামায়াত থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এই অবস্থায় ঐ বহিষ্কৃত ব্যক্তি অন্য দলে যোগ দিয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় এবং এবং সরকারি নির্দেশে জামায়াতের নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন বাতিল করায় দলটি দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারেনি বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় নির্বাচনে অংশ নেয়। সরকার ও সরকারি দল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও জামায়াত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেয়নি। কিন্তু তথাপিও জামায়াত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং সরকারের বিরাগভাজন হন। নির্বাচিত মেয়রসহ তিনজন মহিলা কাউন্সিলরকেও তারা গ্রেফতার করেন। মহিলাদের বিশেষ করে পর্দানশীন মহিলাদের সম্মান করা এবং সামাজিক কাজে তাদের উৎসাহ প্রদান এ দেশের একটি ঐতিহ্য ছিল। Gender Development -এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোপেনহেগেন বেইজিং ও উন্নত অনুন্নত বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে এবং সেইসব দেশে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহেও স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের প্রতি সরকারি অবজ্ঞা ও তাদের গ্রেফতার-নির্যাতন বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে যেমন ধূলিসাৎ করছে এমনটি আর কোথাও হতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মালিক জনগণ এবং ক্ষমতার উৎসও তারা। এই কথাটি আমাদের সংবিধানে অত্যন্ত সুন্দরভাবে লেখা রয়েছে। আমরা আমাদের দেশের নাম রেখেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অর্থাৎ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক শাসিত একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। Government of the people, by the people and for the people এটিই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। জনগণ যাকে নির্বাচিত করেছে সরকার তাদের ভোটাধিকার ও রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান পোষণ করার এটিই নিয়ম। বাংলাদেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতে এই নিয়মের ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না এবং তার ওপর পদাঘাত করা হচ্ছে। সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা বদরুদ্দীন আহমদ কামরান অসংখ্য অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন। কিন্তু বিপুল ভোটে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হবার পর জনরায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি যথারীতি শপথ নেন এবং মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এ ধরনের ঘটনা স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে এ অঞ্চলে আরও ঘটেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর যা ঘটছে তা নজিরবিহীন। বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, তাদের এলাকার প্রতি বরাদ্দ বৈষম্য, কারণে-অকারণে তাদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও বরখাস্তকরণ সর্বোপরি তাদের স্থলে শাসক দলের গণধিকৃত ও পরাজিত প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজীপুরসহ সিটি করপোরেশনসমূহে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। নতুন নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে; ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হামলা-মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতন, কারচুপি, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ক্ষমতাসীন প্রার্থীদের অনুকূলে সিল মারা প্রভৃতিসহ নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় দেখিয়ে আসন দখল করা হয়েছে। জনাব নজরুলের গ্রেফতার ও মহিলা কমিশনারসহ গণপ্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণে বাধা প্রদান সরকারের চ-নীতিরই একটি অভিব্যক্তি। এর ফল শুভ হতে পারে না।
গত পৌরসভা নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের তালিকায় চোখ বুলাচ্ছিলাম। হঠাৎ নাটোরের বনগ্রাম, পৌরসভার মেয়রের নামের ওপর এসে আমার দৃষ্টি থেমে গেল। মনে হচ্ছিল, এই ভদ্রলোককে চিনি এবং পত্র-পত্রিকায় তার নাম এর আগে দেখেছি। খোঁজ নিয়ে দেখলাম এই ব্যক্তিটি বহুল আলোচিত সমালোচিত আওয়ামী লীগের কুখ্যাত একজন নেতা। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মরহুম চেয়ারম্যান ছানাউল্লাহ বাবু হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী জাকির হোসেন। টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় পিটিয়ে বাবুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার দৃশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। কেন করেননি তা আজও মানুষের কাছে অজানা। প্রধান আসামীসহ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যারা জড়িত ছিল তাদের গ্রেফতার করে আবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তারা যত অপরাধই করুক না কেন তাদের কোন শাস্তি হয় না। তাদের সাত খুন মাফ। নারায়ণগঞ্জ এখন নতুন একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। ক্ষমতাসীন দল সেখানে সকল অপরাধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য সারা দেশের অবস্থাও একই। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা কে না জানে? সাত খুন বলা হলেও নদীতে ফেলে দেয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শী একজন মাঝিকে হত্যার পর এটি আট খুনে রূপান্তরিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্যও নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন। তাদের হত্যাকারীদের বিচার আদৌ হবে কিনা মানুষ সন্দিহান।
কিছু কিছু বিচারের ক্ষেত্রে সরকার বলেছিলেন যে, ঐ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়নি। বিচার হলে কলঙ্কমুক্ত হবে এবং অপরাধ প্রবণতা, খুন-খারাবি কমে যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, আগের আমলের অপরাধের বিচার হয়েছে কিন্তু অপরাধের মাত্রা, খুন-খারাবি বর্তমান আমলে কয়েকশ গুণ বেড়ে গেছে। এর সাথে সরকারি দল এমনকি থানা-পুলিশের সম্পৃক্ততাও অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে, অপরাধীদের পরিবর্তে যারা নিরপরাধ তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে অথবা বিচারের নামে প্রহসন চলেছে। অবস্থা যাই হোক আমরা মনে করি ভদ্র ও সভ্য সমাজ ছেড়ে অসভ্য ও ইতর সমাজের প্রতি ধাবিত হচ্ছি। এর আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।
একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা এখানে না বলে পারছি না। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইদি আমিন। তার মুখে এমন অনেক কথা শোনা যেত যা একজন রাষ্ট্র্ বা সরকার প্রধানের ভাব-মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল ছিল না। অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তিনি এমন সব কথা বলতেন যা সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরস সৃষ্টি করত কিন্তু বিবেকবান মানুষকে আহত করত। কেননা, তার কথার মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রমাণ পাওয়া যেত না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তাকে কমনওয়েলথ সভায় যোগদানের জন্য দাওয়াত পাঠিয়েছিলেন। তিনি রানীর কাছে তার জুতার মাপ দিয়ে এই মর্মে পত্র পাঠিয়েছিলেন যে, যদি তার পায়ের মাপ অনুযায়ী জুতা বানিয়ে তার কাছে পাঠানো না হয় তাহল তিনি সম্মেলনে যোগ দেবেন না। এই ইদি আমিন পরবর্তীকালে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন এবং সৌদি আরবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের দেশসহ সারা দুনিয়ার স্বাধীন দেশগুলোর সরকার পরিচালনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বেপরোয়া কথাবার্তা না বলাই ভালো এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্র হত্যা করে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থেকে অশালীন ও গর্হিত আচরণ শোভনীয় হতে পারে
গত পৌরসভা নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের তালিকায় চোখ বুলাচ্ছিলাম। হঠাৎ নাটোরের বনগ্রাম, পৌরসভার মেয়রের নামের ওপর এসে আমার দৃষ্টি থেমে গেল। মনে হচ্ছিল, এই ভদ্রলোককে চিনি এবং পত্র-পত্রিকায় তার নাম এর আগে দেখেছি। খোঁজ নিয়ে দেখলাম এই ব্যক্তিটি বহুল আলোচিত সমালোচিত আওয়ামী লীগের কুখ্যাত একজন নেতা। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মরহুম চেয়ারম্যান ছানাউল্লাহ বাবু হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী জাকির হোসেন। টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় পিটিয়ে বাবুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার দৃশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ার মানুষ দেখেছে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। কেন করেননি তা আজও মানুষের কাছে অজানা। প্রধান আসামীসহ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যারা জড়িত ছিল তাদের গ্রেফতার করে আবার ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মানুষের মধ্যে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে তারা যত অপরাধই করুক না কেন তাদের কোন শাস্তি হয় না। তাদের সাত খুন মাফ। নারায়ণগঞ্জ এখন নতুন একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। ক্ষমতাসীন দল সেখানে সকল অপরাধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য সারা দেশের অবস্থাও একই। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা কে না জানে? সাত খুন বলা হলেও নদীতে ফেলে দেয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শী একজন মাঝিকে হত্যার পর এটি আট খুনে রূপান্তরিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্যও নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন। তাদের হত্যাকারীদের বিচার আদৌ হবে কিনা মানুষ সন্দিহান।
কিছু কিছু বিচারের ক্ষেত্রে সরকার বলেছিলেন যে, ঐ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়নি। বিচার হলে কলঙ্কমুক্ত হবে এবং অপরাধ প্রবণতা, খুন-খারাবি কমে যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, আগের আমলের অপরাধের বিচার হয়েছে কিন্তু অপরাধের মাত্রা, খুন-খারাবি বর্তমান আমলে কয়েকশ গুণ বেড়ে গেছে। এর সাথে সরকারি দল এমনকি থানা-পুলিশের সম্পৃক্ততাও অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে, অপরাধীদের পরিবর্তে যারা নিরপরাধ তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে অথবা বিচারের নামে প্রহসন চলেছে। অবস্থা যাই হোক আমরা মনে করি ভদ্র ও সভ্য সমাজ ছেড়ে অসভ্য ও ইতর সমাজের প্রতি ধাবিত হচ্ছি। এর আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।
একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা এখানে না বলে পারছি না। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইদি আমিন। তার মুখে এমন অনেক কথা শোনা যেত যা একজন রাষ্ট্র্ বা সরকার প্রধানের ভাব-মর্যাদার সাথে সঙ্গতিশীল ছিল না। অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তিনি এমন সব কথা বলতেন যা সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরস সৃষ্টি করত কিন্তু বিবেকবান মানুষকে আহত করত। কেননা, তার কথার মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রমাণ পাওয়া যেত না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তাকে কমনওয়েলথ সভায় যোগদানের জন্য দাওয়াত পাঠিয়েছিলেন। তিনি রানীর কাছে তার জুতার মাপ দিয়ে এই মর্মে পত্র পাঠিয়েছিলেন যে, যদি তার পায়ের মাপ অনুযায়ী জুতা বানিয়ে তার কাছে পাঠানো না হয় তাহল তিনি সম্মেলনে যোগ দেবেন না। এই ইদি আমিন পরবর্তীকালে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন এবং সৌদি আরবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের দেশসহ সারা দুনিয়ার স্বাধীন দেশগুলোর সরকার পরিচালনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের বেপরোয়া কথাবার্তা না বলাই ভালো এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্র হত্যা করে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থেকে অশালীন ও গর্হিত আচরণ শোভনীয় হতে পারে
মোঃ নূরুল আমিন
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন